পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
নীলফামারীর সৈয়দপুরে বিদেশি ফল ড্রাগন চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। উপজেলার কামারপুকুর ইউনিয়নের দুইটি কৃষি ব্লকে ড্রাগন ফলের চাষ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ড্রাগনের আশানুরূপ ফলনও মিলেছে।
উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, সৈয়দপুর উপজেলার ১ নম্বর কামারপুকুর ইউনিয়নের কামারপুকুর এবং ব্রম্মত্তর কৃষি ব্লকে চারজন চাষি ড্রাগন ফলের বাগান করেছেন। চাষি মো. আহসান-উল-হক বাবু জানান, তিনি ইন্টারনেটে কৃষি বিষয়ক ওয়েবসাইড থেকে ড্রাগন ফলের বিষয়ে জানতে পারেন। বিদেশি ড্রাগন ফলে প্রচুর পুষ্টিগুন রয়েছে। আর সে তথ্য জেনেই ড্রাগন ফল চাষে হাত দেন। পরবর্তীতে কৃষি বিভাগ ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে ড্রাগন ফল ও চাষাবাদ বিষয়ে ধারণা পাওয়া যায়।
তিনি জানান, যশোরের চৌগাছা উপজেলা থেকে ড্রাগন ফলের চারা সংগ্রহ করেন। তার আগে বাড়ির পাশের ৬০ শতাংশ উঁচু জমি ড্রাগন চারা লাগানোর জন্য প্রস্তুত করা হয়। ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে চারা লাগানো হয়। পরিমাণ মতো জৈব সার প্রয়োগ ও সঠিক যত্ম ও পরিচর্যায় চারা লাগানোর ১১ মাসের মাথায় গত বছর ড্রাগন বাগানে ফল আসে। প্রথম ধাপে মাত্র ২৫ কেজি ফল মিলেছে। তিনি তার আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশিদের এ ফল খেতে দেন।
আর দ্বিতীয় ধাপে চলতি বছর বাগান থেকে ৭০ কেজি ড্রাগন ফল পেয়েছেন তিনি। বাগানে সর্বোচ্চ একটি ড্রাগন ফল ৫০০ গ্রাম পর্যন্ত পাওয়া গেছে। ওইসব ড্রাগন ফল ৪০০ টাকা কেজি দরে ২৮ হাজার টাকার বিক্রি করেন তিনি। বাবু আরো জানান, একটি ড্রাগন ফল গাছ ২০ থেকে ২২ বছর পর্যন্ত ফল দেয়। বাগানে এক হাজার ২০০টি ড্রাগন ফলের গাছ রয়েছে। সে হিসেবে বাগানে যে ব্যয় হয়েছে তা অল্প কয়েক বছরের মধ্যে উঠে আসবে বলে তিনি আশা করছেন।
আহসান-উল-হক বাবু ছাড়াও উপজেলার কামারপুকুর কৃষি ব্লকে পাকাতিপাড়ার মো. রাশেদুজ্জামান মানিক ও মো. সাজেদুর রহমান লেবু এবং পশ্চিম আইসঢাল গ্রামের মো. আব্দুর রাজ্জাক ১০ শতাংশ করে জমিতে ড্রাগন ফলের বাগান করেছেন। রাশেদুজ্জামান জানান, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরামর্শে ড্রাগন বাগান করেছেন। তার বাগানেও দ্বিতীয় ধাপে বেশ ফল এসছে। সর্বোচ্চ ৮৫০ গ্রাম পর্যন্ত এক একটি ড্রাগন ফল ধরে।
সৈয়দপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোছা. হোমায়রা মন্ডল বলেন, এখানকার আবহাওয়া ও মাটি বিদেশি ফল ড্রাগন চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। উপজেলায় ড্রাগন ফল চাষের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। ইতোমধ্যে কামারপুকুর ইউনিয়নের দুইটি কৃষি ব্লকে চারটি ড্রাগন ফল বাগান করা হয়েছে। শুরুতেই এসব বাগান থেকে ভাল ফলন মিলছে। ড্রাগন বিদেশি ফল হলেও এখানে চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। আর সাধারণ মানুষের কাছে এ ফলের পরিচিত একেবারে কম। তাই ড্রাগন ফল বাজারজাত নিয়ে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ড্রাগন ফলের ব্যাপক পরিচিত ও বাজার সৃষ্টিতে কাজ করা হচ্ছে।
ড্রাগন ফল ও গাছের বর্ণনা : বিদেশি ফল ড্রাগন সবচেয়ে বেশি বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন হয় ভিয়েতনামে। বাংলাদেশে এ ফলটি তেমন একটা পরিচিতি নয়। তবে আস্তে আস্তে এর পরিচিতি লাভ করছে। ড্রাগন ফলের বৈজ্ঞানিক নাম Hylocereus undatus (হাইলোসিরিয়াস আনডাটাস)। ক্যাকটাস জাতীয় গাছের সাথে ড্রাগন ফলের গাছের অনেকটা মিল রয়েছে। গাছে পাতা নেই। ফলে হয় সাদা রংয়ের। দেখতে অনেকটাই নাইট কুইন ফুলের মতো। ফুলে দারুন সুগন্ধ রয়েছে। ফুল থেকে লাল রংয়ের ডিমের আকৃতির ফল গঠিত হয়। ড্রাগন ফলের খোসা বেশ নরম। পাকা ফলের শাঁস খুব নরম ও ভেতরে কালো জিরার মতো ছোট ছোট বিচি থাকে। ড্রাগন ফল খেতে হালকা মিষ্টি ও অত্যন্ত পুষ্টিকর। ড্রাগন ফল সাধারণত টক ও মিষ্টি স্বাদের হয়। মিষ্টি স্বাদের ড্রাগন আবার তিন প্রজাতির হয়। লাল ড্রাগন ফল বা পিটাইয়া। এর খোসার রং লাল ও শাঁস সাদা। কোস্টারিকা ড্রাগন ফল। এর খোসা ও শাঁস উভয়ের রং লাল। হলুদ রংয়ের ড্রাগন ফল। এ জাতের ড্রাগন ফলের খোসা হলুদ রংয়ের ও শাঁসের রং লাল হয়।
ড্রাগন ফলের চারা লাগানো সময় : ড্রাগন ফলের চারা ইংরেজি বছরের মার্চ-এপ্রিল (বাংলা চৈত্র-বৈশাখ) মাসে লাগানো হয়। আর জুন থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত ফুল ও ফল হয়। ড্রাগন বাগানের জমিতে অন্যান্য সবজি চাষ করা যায়।
ড্রাগন ফলের পুষ্টিগুন : প্রতি ১০০ গ্রাম ড্রাগন ফলের প্রায় ৫৫ ভাগই খাওয়ার যোগ্য। আর প্রতি ১০০ গ্রাম ড্রাগন ফলে ৮০-৯০ গ্রাম পানি, ০.১৫-০.৫ গ্রাম প্রোটিন, ০.৯-০.১৪ গ্রাম কাবোহাইডেট, ০.১-০.৬ গ্রাম চর্বি, ০.৩-০.৯ গ্রাম আঁশ, ৬ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ০.৩-০.৭ গ্রাম আয়রন, ১৬-৩৬ মিলিগ্রাম ফসফরাস ০.২-০.৪৫ মিলিগ্রাম নায়াসিন এবং ৪-২৫ মিলিগ্রাম ভিটামিন রয়েছে।
ড্রাগন ফলের উপকারিতা : ড্রাগন ফলে ক্যালোরি খুব কম। তাই এ ফল ডায়াবেটিস ও হৃদরোগীরা অনায়াসে খেতে পারেন। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এ ফল উত্তম। ড্রাগন ফলে ভিটামিন সি বেশি থাকায় মানুষের শরীরের সি’র চাহিদা পূরণ হয়। আয়রন থাকায় এই ফলে শরীরের রক্ত শূন্যতাও দূর হয়। নিয়মিত ড্রাগন ফল খেলে রক্তের গ্লকোজ নিয়ন্ত্রণে থাকে। ড্রাগন ফলে প্রচুর পরিমাণে পানি থাকার কারণে এই ফলে শরীরের পানি শূণ্যতা সহজেই দূর হয়। আর এ ফলের শাঁস পিচ্ছিল হওয়ায় মানুষের কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।