Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সীতাকু-ে ড্রাগন ফল চাষি ইমন খুলে দিল নতুন সম্ভাবনার দ্বার

প্রকাশের সময় : ২০ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম

সৌমিত্র চক্রবর্তী, সীতাকু- থেকে : সীতাকু-ে প্রথম বারের মতো ড্রাগন ফলের সফল চাষাবাদ করে সবাইকে চমকে দিয়েছেন শৌখিন কৃষক মো. ইমন। শিক্ষিত এই যুবকের কঠোর পরিশ্রম ও আন্তরিকতায় তার জমিতে এখন ড্রাগনের হাসি দেখার মতো, যা শুধু ইমনকেই নয়, অনুপ্রাণিত করেছে কৃষি বিভাগকেও। তার এই সফলতা খুলে দিয়েছে এক নতুন সম্ভাবনার দ্বার, যা এ উপজেলার কৃষিকে আরো এক ধাপ এগিয়ে দিয়েছে বলে অভিমত সংশ্লিষ্টদের।
উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, কৃষিতে সীতাকু-ের চাষীদের সফলতা বরাবরই ঈর্ষণীয়। ধান, শিম, ঝিঙ্গে, বরবটি, কাঁকরোল, মাশরুম, করলাসহ বহুরকম সবজি, পেয়ারা, বাউকূল, আপেল কূল, আ¤্রপালি, গাব, কূল ইত্যাদি ফল ও সবজি উৎপাদনের সীতাকু-ের পরিচিতি রয়েছে দেশ জুড়ে। এ এলাকার উর্বর মাটি ও কৃষকদের আন্তরিকতার কারণে সারাবছর উৎপাদিত ফসলগুলি স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে রপ্তানি হয় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। পাশাপাশি নতুন কিছু করার এক অদম্য স্পৃহা সবসময় বিরাজ করে এই এলাকার কৃষকদের হৃদয়ে। ফলে মাঝে মধ্যেই তারা নতুন নতুন সবজি, ফল চাষাবাদে সাফল্য এনে চমকে দেন সবাইকে। এবার উপজেলার ভাটিয়ারীতে জাহানাবাদ গ্রামে ড্রাগন ফলের সফল চাষাবাদ করে সবাইকে চমকে দিয়েছেন এক যুবক। জানা যায়, শিক্ষিত এই যুবকের নাম মো. সাবের শাহ্ ইমন। চট্টগ্রাম সিটি কলেজ থেকে অ্যাকাউন্টিংয়ে মাস্টার্স ও আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে এমবিএতে অধ্যয়নরত এই যুবক রুক্ষ পাহাড়ের তলদেশে ড্রাগন ফলের বাগান গড়ে তোলেন। প্রথম দিকে ড্রাগন চাষ নিয়ে ইমনের এই চেষ্টাকে এলাকার অনেক কৃষকই বাড়াবাড়ি মনে করেছিলেন। তাদের ধারণা এই এলাকা ড্রাগনের জন্য উপযুক্ত নয়। কিন্তু কঠোর পরিশ্রম আর একাগ্রতা থাকলে অসম্ভবকেও যে জয় করা যায় মাত্র এক বছরেই তা দেখিয়ে দিলেন ইমন।
সরেজমিনে ইমনের ক্ষেতে গিয়ে দেখা যায়, অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে ড্রাগন ফলের বাগানটি গড়ে তোলা হয়েছে। এ বিষয়ে ক্ষেতেই কথা হয় তার সাথে। সফল ড্রাগন ফল চাষী সাবের শাহ্ ইমন বলেন, জ্ঞান অর্জনের জন্য শিক্ষা লাভ করলেও নিজেকে একজন কৃষক ভাবতে খুবই ভালো লাগে তার কাছে। পড়াশোনা করার পাশাপাশি কৃষিতে অবদান রাখার তীব্র বাসনা থেকেই নতুন কিছু চাষাবাদের পরিকল্পনা আসে তার মধ্যে। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী ড্রাগন ফলের আবাদ করতে মাত্র ১০ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে নেমে পড়েন তিনি। অনভিজ্ঞতার কারণে প্রথমবার তার সব গাছ নষ্ট হয়ে যায়। তবে এ ব্যর্থতার পরও থেমে থাকেননি ইমন। বরং মনকে আরো শক্ত করে যেকোন মূল্যে সফলতা পেতে মরিয়া হয়ে উঠেন। এবার তিনি স্থানীয় শামছুল আলম নামক এক ব্যক্তির মাধ্যমে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুশান্ত সাহা ও উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা সুভাষ চন্দ্র নাথের স্বরনাপন্ন হন। তাদের পরামর্শ অনুযায়ী সার্বক্ষণিক যোগাযোগ স্থাপন করেন ভাটিয়ারী ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ঝন্টু কুমার নাথের সাথে। আর পেছনে তাকাতে হয়নি তাকে। ঝন্টু নাথের পরামর্শ ও সহযোগিতা অনুযায়ী গাছের যতœ নিয়ে আসে সফলতা। এখন তার বাগানের প্রতিটি গাছ ফলের উপযুক্ত হয়ে উঠেছে। বাগান ঘুরে দেখা যায়, প্রতিটি গাছেই ড্রাগন ফুল এসেছে। ফলও আসতে শুরু করেছে। এখন যে অবস্থায় আছে তাতে ক্ষেত ও ফল নিয়ে আর কোন চিন্তা করতে হচ্ছে না। শুধু নিয়মিত পরিচর্যা করলেই চলবে। তার এক একর আয়তনের জমিতে ৫শ’টি বার্ড জাতের ড্রাগন ফল গাছ রোপণ করা হয়েছে। প্রত্যেকটি গাছেই ফল আসতে শুরু করেছে। ড্রাগন ফলের ১০ রকম পুষ্টিগুণ রয়েছে। এটি খেতেও খুবই সুস্বাদু। শিক্ষিত এই শৌখিন কৃষক বলেন, কৃষি বিভাগের পরামর্শ মেনে কৃষি কাজ করলে ব্যর্থ হবার কোনো কারণ নেই। তবে নিজের চেষ্টাও থাকতে হবে। তার এই ক্ষেত দেখে এখন এলাকার মানুষ থমকে দাঁড়ায়। অনেকেই এখনো এই ফলের সাথে পরিচিত নন। তারা কৌতুহল প্রকাশ করে জানতে চান।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সীতাকু-ে ড্রাগন ফল চাষি ইমন খুলে দিল নতুন সম্ভাবনার দ্বার
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ