Inqilab Logo

শক্রবার ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ কার্তিক ১৪৩১, ০৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

গাবতলীতে জনপ্রিয় হচ্ছে ড্রাগন ফলের চাষ

বাণিজ্যিকভাবে সম্প্রসারণের উজ্জ্বল সম্ভাবনা

প্রকাশের সময় : ৩০ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

আল আমিন মন্ডল, গাবতলী (বগুড়া) থেকে
বাংলাদেশের নতুন ঔষধি-পুষ্টিগুণসম্পন্ন ও উচ্চ ফলনশীল ফল হিসাবে ড্রাগন ফল চাষ এখন দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে। বগুড়ার গাবতলী উপজেলায় বেড়েই চলেছে ড্রাগন ফলের চাষ। অনূকুল আবহাওয়া ও উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় কৃষকরা ড্রাগন ফল চাষে ঝুঁকে পড়ছে। ফলে ড্রাগন ফলের দাম ও চাহিদা বেশি হওয়ায় লাভবান হচ্ছে কৃষক পরিবার। শুধু বাংলাদেশে নয়, বিশ্বের কয়েকটি দেশের মধ্যে অন্যতম মালয়েশিয়া, চীন, শ্রীলংকা, এশিয়ার বিভিন্ন দেশে এখন ড্রাগন ফলের ব্যাপক চাষ করা হচ্ছে। ফলে গাবতলীতে ড্রাগন চাষ ভালো হওয়ায় এখন বাণিজ্যিকভাবে সম্প্রসারণের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। উচ্চ ফলনশীল প্রচুর পুষ্টিগুণ ও বাজারে দাম ভালো থাকায় কৃষকরা অন্যান্য ফসলের পাশাপাশি ড্রাগন চাষ করছে। উঁচু জমিতে ড্রাগন চাষ করতে হয়। লাল রঙয়ের ড্রাগন ফল সাদা শাঁস ও রঙিন শাঁস হয়ে থাকে। গাবতলী রামেশ্বরপুরের জাইগুলি গ্রামে এএইচ আজম খানের কৃষি খামারে পরীক্ষামূলকভাবে ১২ শতক জমিতে চাষ করা হয়েছে ড্রাগন। একইভাবে মহিষাবানের নিশ্চিন্তপুরে আলমগীর হোসেন ১৫ শতক জমিতে চাষ করেছেন ড্রাগন। এভাবে ছড়িয়ে পড়ছে ড্রাগন ফলের চাষ। বগুড়া হটিকালচার ও গাবতলী উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সার্বিক সহযোগিতায় জাইগুলি গ্রামে এএইচ আজম খানের জমিতে লাগানো হয় ড্রাগন ফলের গাছ। এখন ১ বছরের মাথায় ফলন পাওয়া শুরু হয়েছে। যা প্রতিকেজি ৫শ থেকে ৬শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এবছরে ব্যাপক ফল হয়েছে। আশা করা হচ্ছে ২৫ মণ ফল উৎপাদন হবে। উৎপাদন খরচ বাদ দিয়ে ১ লক্ষ টাকা লাভ হবে। ড্রাগন ফল চাষী এএইচ আজম খান জানান, ১২ শতক জমিতে ১শ চারা গাছ লাগিয়েছি। নিবিড় পরিচর্যার ফলে প্রতিটি গাছে ভালো ফল হয়েছে। পরিক্ষামূলকভাবে ড্রাগন ফল চাষে ফলন আরো ভালো হলে আগামী দিনে বাণিজ্যিকভাবে বেশি জমিতে ড্রাগন চাষের পরিকল্পনা রয়েছে। এ ড্রাগন ফল বাগান দেখতে প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকা থেকে কৃষকরা ছুটে আসছেন। ড্রাগন বাগানে সার্বিক পরামর্শ ও তথ্য প্রদান করে আসছেন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আরিফুর রহমান আরিফ। এছাড়াও বাগান পরিচর্যায় সবসময় ব্যস্ত সময় পার করছেন স্বাধীন, শরিফ, বাদশা, কালাম ও ফুকু। তারা আরো জানান, ড্রাগন চাষের পাশাপাশি কৃষি খামারে দেশি-বিদেশি অনেক ফল-ফুল ও ঔষধি গাছ রয়েছে। রোপণ করা হয়েছে আম, জাম, লিচু, সরিফা, বেল, কাঁঠাল, পিয়ারা, কারেঙ্গা, জলপায়, আমলকি, করচা, সরপুরী, পেঁপে, কদবেল, জামরুল, দেও, বাদাম, কাট বাদাম। এএইচ আজম খান একটি সফল কৃষি খামার প্রতিষ্ঠা করতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। গাবতলী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আ. জা. মু. আহসান শহীদ সরকার জানান, ড্রাগন ফল চাষে কৃষকদের আগ্রহী করে তোলার জন্য কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর কৃষকদের বিনামূল্যে উপকরণ ও প্রাথমিক খরচ এবং পরামর্শসহ সহায়তা করা হচ্ছে। বর্তমানে গাবতলীতে ড্রাগন ফল চাষ জনপ্রিয় হচ্ছে। এ ফল ঔষধি পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ ও শৌখিন ফল। বসতবাড়ির আঙ্গিনায় ও ভবনের ছাদে ড্রাগন ফল চাষ করা সম্ভব। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. সোহরাব হোসেন জানান, ড্রাগন ফল চাষে কৃষকদের উৎসাহিত করা হচ্ছে। আশা করছি গাবতলী উপজেলায় ড্রাগন চাষ বাংলাদেশের মধ্যে জনপ্রিয় ও মডেল উপজেলা হবে। গাবতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহা. আহসান হাবিব জানান, ড্রাগন একটি পুষ্টিগুণ ও নতুন ফল। এ ফলের চাষ সম্প্রসারণ হলে কৃষকরা বাণিজ্যিভাবে আরো বেশি জমিতে চাষ করবে এবং গাবতলীতে ড্রাগন চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে বহু শিক্ষিত কৃষক স্বাবলম্বী হতে পারবে। কৃষক পরিবারের মুখে ফুটবে হাসি। উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা জুলফিকার আলী হায়দার জানান, জমিতে চারা রোপণের ১ বছর পর ফল আসে। প্রতি বছরে একটি পূর্ণবয়স্ক গাছে ৪০ থেকে ৫০টি ফল পাওয়া যায়। ১ বিঘা জমিতে ড্রাগন ফল চাষে ৯০ হাজার টাকা খরচ হয়। ৯ ফুট পরপর ২টি করে গর্ত খুঁড়ে চারা লাগানো যায়। জৈব ও রাসায়নিক সার নিয়মিত দিতে হয়। ১ বিঘা জমিতে ৩শ’ চারা রোপণ করা সম্ভব। উৎপাদন ব্যয় বাদ দিয়ে ১ বছরে ১ বিঘা জমি থেকে ৩ লাখ টাকা লাভ করা সম্ভব। বর্তমানে বাজারে ৫০ থেকে ১শ’ টাকা ১টি চারা গাছ বিক্রি করা হচ্ছে। উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আরিফুর রহমান আরিফ জানান, ড্রাগন ফল চাষে আগ্রহী করতে কৃষকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ড্রাগন ফল লাল টুকটুকে। ঔষধিগুণ থাকায় উচ্চরক্তচাপ হ্রাস ও ডাইবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী। ডা. নীল রতন দেব এমবিবিএস-বিসিএস (স্বাস্থ্য) জানান, বর্তমানে ড্রাগন ফল ঔষধি কাজে ব্যবহার হচ্ছে। ড্রাগন ফলে ভিটামিন সি, আয়রন, মিনারেল, ফাইবার ছাড়াও অ্যান্টি এক্সিডেন্ট রয়েছে যা শরীরকে সুস্থ ও সবল রাখতে সহায়তা করে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: গাবতলীতে জনপ্রিয় হচ্ছে ড্রাগন ফলের চাষ
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ