যেভাবে মাছ ভাজলে ভেঙে যাবে না
বাঙালির প্রতিদিনের খাবারে মাছ তো থাকেই। এটি সব খাবারের মধ্যে পুষ্টির অন্যতম উৎস। তাড়াহুড়ো করে
পুষ্টিগুনে ভরপুর, সুস্বাদু, দেখতে খুবই সুন্দর, আকর্ষনীয় ও অত্যন্ত পুষ্টিকর ফল ড্রাগন। ছোট বড় সকলের নিকট খুবই মজাদার একটি ফল। এ ফলটি খাদ্যকে শক্তিতে রুপান্তর, পেশী সংকোচন, হাড়ের গঠন, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতায় এবং দেহের ডিএনএ তৈরীর জন্য প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া গুলোতে অংশ নেয়। এটি খুবই স্বাদযুক্ত, প্রয়োজনীয় পুষ্টি, প্রিবায়োটিক ফাইবার সমৃদ্ব ফল। এতে ভিটামিন বি, সি, ই, আশঁ, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম শর্করা ও খাদ্যশক্তি প্রচুর পরিমানে পাওয়া যায়। তাছারা এতে ক্যারোটিন লাইকোপিনের মতো অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট পাওয়া যায়। ড্রাগন বিদেশি ফল হলেও আমাদের দেশে প্রচুর চাষ হচ্ছে এবং বাজারে পাওয়া যাচ্ছে।
পরিচিতি: ড্রাগন ফল এক ধরনের ফনী-মনসা প্রজাতির ফল। ড্রাগন ফলের গাছ দেখতে ক্যাক্টাসের মতোই। গাছ ১.৫ Ñ ২.৫ মিটার লম্বা হয়। ড্রাগন গাছে শুধু রাতেফুল ফুটে। ফুল লম্বাটে সাদা ও হলুদ রঙ্গের। ফল ডিম্বাকৃতির উজ্জল গোলাপী রঙ্গের। ফলের ভিতর কালিজিরার মতো ছোট ছোট নরম বীজ থাকে।
পুষ্টি উপাদান: প্রতি ১০০ গ্রাম খাবার উপযোগি ড্রাগন ফলের পুষ্টি উপাাদান নিম্ন রুপ: জলীয় অংশ ৮৭ গ্রাম, প্রেটিন ১.১ গ্রাম, চর্বি ০.৪ গ্রাম, শর্করা ১৩ গ্রাম, আঁশ ৭ গ্রাম, ভিটামিন সি ২১ মিলি গ্রাম, ভিটামিন বি- ১ ০.০৪ মিলি গ্রাম, বি-২ ০.০৫ মিলি গ্রাম, বি-৩ ০.০১৬ মিলি গ্রাম, আয়রন ১.৯ মিলি গ্রাম, ক্যালসিয়াম ৮.৫ মিলি গ্রাম, ফসফরাস ২২.৫ মিলি গ্রাম, ম্যাগনেসিয়াম ১৮ মিলি গ্রাম, ভিটামিন ই ৪ মিলি গ্রাম, খাদ্য শক্তি ৬০ গ্রাম। তাছাড়া এতে ওমেগা -৩ এবং ওমেগা -৯ পাওয়া যায়। জাত ও মাটির গুনাগুনের ওপর পুষ্টি উপাদান কম বেশি হতে পারে।
উপকারিতা: পুষ্টি গুণে ভরা সুস্বাদু ড্রাগন ফল। এ ফলের পুষ্টি উপাদান আমাদের দেহকে নানা রোগ নিরাময়ে সাহায্য করে সুস্থ ও সবল রাখে। ড্রাগন ফলে উচ্চ মাত্রায় ম্যাগনেসিয়াম আছে। যা হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমিয়ে রাখে। হাড়ের গঠনে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। এর ফলে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন সি পাওয়া যায়। যা দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। তাছাড়া আরো যেসব রোগ নিরাময় সাহায্য করে তা নিম্ন রুপ।
* কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে: একটি ড্রাগন ফলে যে পরিমান আঁশ থাকে তা শরীরে জন্য খুবই উপকারি। এতে হজম শক্তি বৃদ্ধি পায় পাকস্থলির কার্যকারিতা বাড়ে। এটি অন্ত্রের বর্জগুলোকে নরম করে পাকস্থলিকে পরিষ্কার রাখে। যাদের পায়খানা শক্ত হয় তাদের জন্য এফলটি খুবই উপকারি।
* হার্টের উপকার করে: ড্রাগন ফলের শাঁস ও বীজ হার্টের জন্য খুবই উপকারি। এতে থাকা ওমেগা-৩, ওমেগা-৯, ফ্যাটি এসিড থাকে। এ উপাদানগুলো ব্যথা-ব্যথনা নাশ করে। ফলে হার্টের রোগের ঝঁকি ও জয়েন্টের ব্যথা কমে যায়।
* হাড় গঠনে সাহায্য কারে: ড্রাগন ফলে ম্যাগনেসিয়াম বেশি থাকে। এ উপাদানটি হাড়ের ঘনত্ব বাড়ায় এবং হাড়ক্ষয় রোগ প্রতিরোধ করে। হাড়ের স্বাস্থ্য ঠিক রাখে ও শক্ত রাখে। যেসব মহিলাদের মাসিক বন্ধ হয়ে গেছে বা মেনোপজ হয়ে গেছে তাদের হাড় ক্ষয়রোগ বেশি হয়। তাদের জন্য এ ফলটি খুবই উপকারি।
* রক্ত সঞ্চালন ঠিক রাখে: ড্রাগন ফলে প্রচুর আয়রন পাওয়া যায় আয়রন দেহে হিমোগ্লোবিন তৈরিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। যা শরীরের কোষ কলা গুলোতে অক্সিজেন পৌছাতে লোহিত রক্ত কনিকাকে সাহায্য করে। ফলে দেহে রক্ত সঞ্চালন ভালো থাকে।
* চুলপড়া প্রতিরোধ করে: দেহে আয়রনের অভাবে অনেক সময় মাথার চুল পড়ে যায়। নিয়মিত পরিমানে ড্রাগন ফল খেলে দেহে আয়রনের পরিমান ঠিক থাকে এবং চুর পড়া সমস্যা কমে যায়।
* রক্ত শূণ্যতা দূর করে: দেহ আয়রন অভাব দেখা দিলে শরীর রোগা রোগা ভাব দেখা দেয়। দেহ অত্যাধিক দুর্বল হয়ে পড়ে, অলসতা দেখা দেয়, চঞ্চলতা, মাথা ব্যথা, হাত-পা ঠান্ডা থাকা ইত্যাদি রোগ দেখা দেয়। দেহে আয়রনের অভাবে এনিমিয়া রোগ দোখা দেয়। ড্রাগন ফল নিয়মিত খেলে রক্ত শূণ্যতা কমে যায় শরীর বলিষ্ঠ হয়।
* রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়: ড্রাগন ফলে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন সি পাওয়া যায়। এটি এন্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করে তোলে। তাছাড়া ভিটামিন সি মুখের ঘা, দাতেঁর মাঢ়ির সমস্যা কমিয়ে চর্মরোগ প্রতিহত করে। নানা ভাইরাসের হাত থেকে দেহকে বাঁচিয়ে রাখে।
* ওজন কমায়: ড্রাগন ফলের যে পরিমান প্রোটিন বা আমিষ থাকে তা দেহের ওজন বাড়তে দেয় না শরীরের জমা চর্বি গলিয়ে মেদ জমতে দেয় না।
* ক্যান্সার প্রতিরোধ করে: ড্রগন ফলে প্রচুর পরিমানে আঁশ, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, ভিটামিন বি থাকে। এছাড়া এমন সব উপাদান এতে থাকে যা দেহের বিষাক্ত টক্সিন পদার্থ গুলো দেহ থেকে বের করে দেয়। ফলে দেহে ক্যান্সার কোষ সৃষ্টি হয় না।
* ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনে: ডায়াবেটিস রোগিদের রক্তে সুগার বা চনির পরিমান বেড়ে যাওয়াটা একটা বিরাট সমস্যা। ড্রাগন ফলের ভিটামিন ও খনিজ উপাদান রক্তের শর্করার পরিমান বা চিনিকে নিয়ন্ত্রনে রাখে। শরীরে ইনসুলিন তৈরিতে সাহয্য করে।
* ম্যাগনেসিয়ামের যোগান দেয়: এক কাপ ড্রাগন ফলে যে পরিমান ম্যাগনেসিয়াম থাকে তা দেহের প্রতিটি কোষে উপস্থিত মধ্যকার ৬০০ টির ও বেশি গুরুত্বপূর্ণ রাসায়নিক বিক্রিয়ায় অংশ নেয়। এ উপাদানটি খাদ্য শক্তিতে রুপান্তরিত করে। পেশী সংকোচন, হাড়ের গঠন, ক্রমোজমের গঠন ও দেহের ডিএনএ তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় বিক্রিয়া গুলোতে সাহায্য করে।
সতর্কতা: ড্রাগন ফল মজা পেয়ে বেশি খাবেন না। এতে ডায়রিয়া হতে পারে। কারো কারো ক্ষেত্রে ড্রাগন ফল খেলে পায়খানা পাতলা হতে পারে। এফল খাওয়ার দরুন যদি কোনো সমস্যা দেখা দেয় তাহলে এই ফল আর খাবেন না।
মো: জহিরুল আলম শাহীন
শিক্ষক ও স্বাস্থ্য বিষয়ক কলাম লেখক
ফুলসাইন্দ দ্বিপাক্ষিক উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ
গোলাপগঞ্জ, সিলেট।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।