Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তিতে নোবেল পেলেন ডেনিস মুকওয়েজি ও নাদিয়া মুরাদ

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৫ অক্টোবর, ২০১৮, ৩:৩৩ পিএম | আপডেট : ৭:৫৪ পিএম, ৫ অক্টোবর, ২০১৮

যুদ্ধক্ষেত্রে যৌন সহিংসতা ও নির্যাতনের শিকার নারীদের সহযোগিতা ও বিশ্বজুড়ে সচেতনতা তৈরির আন্দোলন করে এ বছর শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেলেন কঙ্গোর চিকিৎসক ডেনিস মুকওয়েগে ও জঙ্গিদের হাতে নির্যাতিতা ইরাকি নারী নাদিয়া মুরাদ।
ইরাকের ইয়াজিদি উপজাতি গোষ্ঠীর মেয়ে পঁচিশ বছরের নাদিয়া মুরাদ। আইএস জঙ্গিদের হাতে বারংবার ধর্ষিতা এবং অত্যাচারিত হয়েছিলেন। তবুও থামানো যায়নি নাদিয়াকে। ধর্ষণের বিরুদ্ধে, মেয়েদের ওপর অত্যাচারের বিরুদ্ধে লড়াইতে তিনি এখন সারা দুনিয়ার পরিচিত প্রতিবাদী মুখ। তার সেই লড়াইকে শ্রদ্ধা জানিয়ে ২০১৮ সালের নোবেল শান্তি পুরষ্কারজয়ী হিসেবে তার নাম ঘোষণা করল নোবেল কমিটি।
তার সঙ্গে এই সম্মান ভাগ করে দেয়া হয়েছে কঙ্গোর ৬৩ বছরের স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডেনিস মুকওয়েগে। নিজের উদ্যোগে গৃহযুদ্ধ বিধ্বস্ত কঙ্গোতে অসংখ্য অত্যাচারিত ও ধর্ষিতা নারীকে সুস্থ জীবনে ফিরিয়ে দিয়েছেন তিনি। যৌন অত্যাচারের শিকার মহিলাদের বাঁচাতে দিনে দশটি অপারেশন করার নজিরও আছে এই হার না মানা অক্লান্ত চিকিৎসকের। এক হাজারেরও বেশি মহিলাকে নিজের প্রচেষ্টায় বাঁচিয়ে তোলার অনন্য নজির স্থাপন করেছেন তিনি। অতীতে শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের জন্য বেশ কয়েকবার মনোনয়ন পেয়েছিলেন মুকওয়েগে।
মাত্র পঁচিশ বছর বয়সে দ্বিতীয় সর্বকনিষ্ঠ হিসেবে নোবেল শান্তি পুরষ্কারে সম্মানিত হলেন নাদিয়া মুরাদ। ২০১৪ সালে নোবেল শান্তি পুরষ্কার পেয়েছিলেন ১৭ বছরের মালালা ইউসুফজাই। তার পর নাদিয়াই সর্বকনিষ্ঠ। নাদিয়ার জীবনের লড়াইও মালালার থেকে কোনও অংশে কম নয়। উনিশ বছর বয়সে তার গ্রামের ৬০০ ইয়াজিদি প্রতিবেশিকে চোখের সামনে খুন হয়ে যেতে দেখেছিলেন নাদিয়া। তার ছয় ভাইকেও হত্যা করেছিল আইএস জঙ্গিরা। তাকে অপহরণ করে যৌনদাসী হিসেবে অত্যাচার চালাত আইএস জঙ্গিরা। ইরাকের মসুলে নিয়ে গিয়ে তাকে নিয়মিত ধর্ষণ, পুড়িয়ে দেওয়া সহ আরও নানা নারকীয় অত্যাচার চালোনা হতো। এক দিন দরজা খোলা দেখে কোনও রকমে পালিয়ে যান নাদিয়া। সেখান থেকে উত্তর ইরাক হয়ে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে জার্মানিতে যেয়ে আশ্রয় নেন তিনি। সেখানেই শুরু হয় তাঁর জীবনের দ্বিতীয় অধ্যায়। সারা পৃথিবীর যুদ্ধবিদ্ধস্ত এলাকায় মহিলা ও শিশুদের যৌন হেনস্থার হাত থেকে বাঁচাতে তৈরি করেন নাদিয়া’স ইনিশিয়েটিভ।
নরওয়ের রাজধানী অসলোতে নোবেল কমিটির প্রধান বেরিট রেইস-অ্যান্ডারসন শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, “যুদ্ধবিধ্বস্ত ও সংঘাতপূর্ণ এলাকায়, যৌন সহিংসতাকে যেখানে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়, যৌন সহিংসতা বন্ধে অবদান রাখায় তাদের নোবেল পুরস্কারে মনোনীত করা হয়েছে।” তিনি বলেন, “ডেনিস মুকওয়েগে তার ভিকটিমদের রক্ষায় আত্মনিয়োগ করেছেন। আর নাদিয়া মুরাদ হলেন যৌন সহিংসতার শিকার ও প্রত্যক্ষদর্শী। যিনি তাকে ও অন্যদের অপব্যবহারের ঘটনা প্রকাশ করেছেন। উভয়ই তাদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকায় যৌন সহিংসতা বন্ধে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন।”
শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের ৯০ লাখ সুইডিশ ক্রোনার ভাগ করে নেবেন তারা। একই সঙ্গে একটি করে সোনার মেডেল পাবেন এ দুই নোবেল জয়ী। ১৯০১ সাল থেকে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার দিয়ে আসছে নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটি। তখন থেকে এখন পর্যন্ত ৯৯ বার শান্তিতে নোবেল পুরস্কার দেয়া হলো। গত বছর ইন্টারন্যাশনাল ক্যাম্পেইন টু অ্যাবোলিশ নিউক্লিয়ার উয়েপনস বা আইসিএএন শান্তিতে নোবেল পুরস্কার জিতেছিল।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ