Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

স্বাধীন বাংলাদেশে দিল্লির শাসন প্রতিষ্ঠার চক্রান্ত সফল হবার নয়

মোহাম্মদ আবদুল গফুর | প্রকাশের সময় : ৪ অক্টোবর, ২০১৮, ১২:০২ এএম

‘বাংলাদেশে দিল্লীর শাসন প্রতিষ্ঠা করা হবে’। একথা বলেছেন ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির সিনিয়র নেতা ও রাজ্যসভার এমপি সুব্রামানিয়াম স্বামী। তিনি গত রবিবার ত্রিপুরার এক সংবাদ সম্মেলনে এ মন্তব্য করেন। একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে তিনি ত্রিপুরায় গিয়ে বাংলাদেশ সম্পর্কে অনেক কথা বলেন। তার মধ্যে বাংলাদেশের প্রতি ভারতের অব্যাহত সমর্থন দিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্পর্কে বলেন, তাঁর (শেখ হাসিনার) উচিৎ সতর্ক হওয়া। এরপর এমন সব কথা বলেন, যার মধ্যে সত্যের লেশ মাত্র নেই।
তাঁর এই সব উদ্ভট বক্তব্যের মধ্যে ছিল বাংলাদেশে নাকি হিন্দুদের মন্দির ধ্বংস করা হচ্ছে, মন্দির ধ্বংস করে মসজিদে পরিণত করা হচ্ছে এবং হিন্দুদের ধর্মান্তরিত করে মুসলিম বানানো হচ্ছে। তিনি এসব কথা বলেছেন, এমন একটি দেশ (বাংলাদেশ) সম্পর্কে যে দেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির জন্য সারা বিশ্বে খ্যাতি লাভ করেছে। তার এই উদ্ভট অভিযোগ সম্পর্কে বরং এটুকু বলাই সম্ভব যে, যেখানে তাঁর দেশ ভারতে এমন কোন দিন যায় না যেখানে সংখ্যালঘু মুসলমানদের ভারতের কোন না কোন অঞ্চলে নিগ্রহের শিকার হবে হচ্ছে না।
বিজেপির এই বিতর্কিত নেতার এ ধরনের বক্তব্য এই প্রথম নয়। এর আগেও তিনি আরেক বার বাংলাদেশ দখলের হুমকি দিয়েছিলেন। ভারতে ‘অবৈধভাবে অভিবাসী’ হওয়া বাংলাদেশীদের সংখ্যার অনুপাতে বাংলাদেশের ভূমি দখল করার প্রস্তাব দেন সুব্রামানিয়াম স্বামী। পরে এ জন্য হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাকে বহিষ্কারও করা হয়।
ভারতের বর্তমান বিজেপি সরকার সম্পর্কে তিনি বলেন এ সরকার অনেক ভাল কাজ করেছে, তাই এ সরকারকে পুনরায় ক্ষমতায় আনতে হবে। ভারতের আগামী নির্বাচন তিনি দুটি ইস্যুর উপর জোর দেয়ার পক্ষপাতী। এর অন্যতম হচ্ছে হিন্দুত্ববাদ প্রতিষ্ঠা। আরেকটি দুর্নীতি থেকে মুক্তি লাভ। সুব্রামানিয়াম স্বামী তাঁর বক্তব্যে বাংলাদেশের প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণ করে হিন্দুদের প্রতি বাংলাদেশের সংখ্যা গুরু মুসলমানের সম্প্রদায়ের কথিত বিভিন্ন ‘অন্যায় আচরণ’ বন্ধ করার ব্যাপারে অনুরোধ জানিয়েছেন। যে অভিযোগের মূলে সত্যের লেশ মাত্র নেই তার কী প্রতিকার করবেন প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা তা তিনিই ভাল জানেন, তবে তার উত্থাপিত বিভিন্ন অসত্য অভিযোগ সম্পর্কে বক্তব্য দেয়া বাংলাদেশের প্রধান মন্ত্রীর জাতীয় দায়িত্ব বলে আমরা মনে করি। নইলে এসব উদ্ভট অভিযোগই অনেকের কাছে সত্য বলে প্রতিভাত হয়ে উঠতে পারে। যা হবে একটা চরম অনাকাঙ্খিত ব্যাপার।
সুতরাং প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার উচিৎ হবে বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি সম্পর্কে ভুল ধারণা সৃষ্টির সুযোগ না দেয়া। বাংলাদেশ যে অতীতেও সম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দৃষ্টান্ত ছিল, এখনও আছে এবং ভবিষ্যতেও তা না থাকার আশঙ্কা নেই এই সত্যটা সুস্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পবিত্র কর্তব্য বলেই আমরা মনে করি। এর পাশাপাশি প্রধান মন্ত্রীর উচিৎ হবে সুব্রামানিয়াম স্বামীর দেশ ভারতে যে মুসলিম, খ্রীস্টান প্রভৃতি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের পাশাপাশি দলিত সম্প্রদায়ের লোকজনদের যে বৈষম্যর শিকার করা হচ্ছে সে কথাও বাস্তবতার আলোকে তা প্রকাশ করে দেয়া।
এরপর আসে বাংলাদেশে দিল্লীর শাসন প্রতিষ্ঠা সম্পর্কে সুব্রামানিয়াম স্বামী বক্তব্য। শ্রীযুক্ত স্বামী এ কথা এই প্রথম বলেননি। এর আগেও তিনি তার এ খাহেশ প্রকাশ করেছেন। তাছাড়া শুধু তিনিই বা কেন। বিজেপির আরও অনেক নেতাই অতীতে একাধিক বার বলেছেন, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য দিতে মিত্রশক্তি হিসাবে বাংলাদেশে মুক্তিযোদ্ধাদের পাশাপাশি মিত্রশক্তি হিসাবে লড়াই করেছেন। ভারতের সেনাবাহিনীর এ অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে ভারতীয় বাহিনীর অংশ বিশেষকে বাংলাদেশ স্থায়ীভাবে থাকতে দেয়া।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের মূল নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব পাকিস্তানী কারাগারে বন্দি ছিলেন। সেখানে থাকা কালেই ভারতের অনেকের এ মনোভাবের কথা তিনি জানতে পারেন এবং এ ব্যাপারে তাঁর ইতিকর্তব্য স্থির করে ফেলেন। মুক্তিযুদ্ধ শেষে পাকিস্তানী জেল থেকে মুক্তি পেয়ে তিনি প্রথম লন্ডন যান। লন্ডনে এ সম্পর্কে তাঁর আরও বিস্তারিত জানার সুযোগ হয়। তাই তিনি লন্ডন থেকে দিল্লী হয়ে স্বদেশের প্রত্যাবর্তন করে প্রথম যুগেই ইন্দিরা গান্ধীর কাছে জানতে চান, ম্যাডাম, আপনার ভারতীয় বাহিনী বাংলাদেশ থেকে কখন ফিরিয়ে আনবেন? ইন্দিরা গান্ধী জবাবে বলেন, আপনি যখন চাইবেন, তখনই। বঙ্গবন্ধুর তখন যে বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তা, অন্য কোন জবাব দেবার সুযোগ ছিলনা তাঁর।
বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর অবিচারের কথা বলেছেন বিজেপি নেতা শ্রীযুক্ত স্বামী। সেই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কিছু নেতার কথা বলি এখন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মনোরঞ্জন বর প্রমুখ কিছু হিন্দু নেতা ভারতের প্রধান মন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে একান্ত স্বাক্ষাৎকারে মিলিত হয়ে তাকে পরামর্শ দিয়েছিলেন মুক্তিযুদ্ধের পরও যেন ঢাকায় কিছু ভারতীয় সৈন্য রেখে দেয়া হয়। ইন্দিরা গান্ধী এতে অসম্মতি জানিয়ে বলে ছিলেন, ইয়ে না মুমকিন হ্যায়। এটা সম্ভব নয়।
ইন্দিরা গান্ধী সেদিন যা অবাস্তব, অসম্ভব মনে করেছিলেন, বর্তমান ভারতের শাসক দল বিজেপির কিছু নেতা অনেকটা সেরকম মনোভাবই যে পোষণ করেন তা স্পষ্ট। কিন্তু এই সব নেতাদের মনে রাখা উচিৎ ছিল বৃটিশ শাসিত অবিভক্ত ভারতের হিন্দু নেতাদের কেউই প্রথম দিকে অবিভক্ত ভারতের পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চলে দুটি বা একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পক্ষপাত ছিলেন না।
শুধু তাই নয়, ১৯০৬ সালে বৃটিশ বিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য যে নিখিল ভারত মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ঢাকায় যে সম্মেলন হয় তাতে পরবর্তীকালে পাকিস্তান আন্দোলনের নেতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ আমন্ত্রিত হয়ে সে সম্মেলনে অসম্মতি জ্ঞাপন করেন কগ্রেসের স্বাধীনতা সংগ্রামে সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে যে আশঙ্কায়। তাই ভারতবর্ষের প্রথম দীর্ঘ স্থায়ী মুসলিম রাজনৈতিক সংগঠন মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠার কৃতিত্ব যেমন নবাব সলিমুল্লাহর তেমনি উপমহাদেশের পূর্ব ও পশ্চিম অঞ্চলে একাধিক স্বতন্ত্র স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব উত্থাপনের কৃতিত্ব শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকের। শেরে বাংলার উত্থাপিত ১৯৪০ সালের ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাবের মধ্যেই আজকের স্বাধীন বাংলাদেশের রূপরেখা প্রথমবারের মত ধরা পড়ে।
আজকের বাংলাদেশের স্বতন্ত্র স্বাধীন রাষ্ট্রসত্ত্বার প্রতি আজকের দিল্লীর শাসকরাও কোনদিন গুরুত্ব অনুভব করেনি। শুধু পাকিস্তানের দুই অংশের মধ্যকার ভৌগলিক বাস্তবতা বিবেচনায় সংঘাত সৃষ্টি হয় তখন মুসলিম জনগণের মধ্যে সেই যখন সংঘাতের সুযোগ গ্রহণের উদ্দেশ্যেই ১৯৭১ সালের মুক্তি যুদ্ধে সাহায্য দিতে ভারত এগিয়ে আসে। ইতিহাসের এই বাস্তবতা হিসেবে কথা স্মরণ রেখেই বঙ্গবন্ধু স্বল্পতম সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে ভারতীয় বাহিনী অপসারণের উপর জোর দেন। তাঁর সেই দূরদর্শী সিদ্ধান্তের কোন ক্ষতি হয় এবং বাংলাদেশের রাষ্ট্র সত্ত্বা কোন দিক দিয়ে দুর্বল হয়ে পড়ে এমন কোন সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের কোন দেশপ্রেমিক কোনো নেতার পক্ষে সমর্থন দেওয়া সম্ভব নয়।
বিশেষ করে ১৯৪০ সালের লাহোর প্রস্তাব পাশের পর থেকে ১৯৪৭ হয়ে ১৯৭১ সালের নিয়মতান্ত্রিক ও সশস্ত্র সংগ্রাম শেষে যে স্বতন্ত্র স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে আমরা বাংলাদেশ লাভ করি তার সামান্যতম কোন ক্ষতি হয় তা আমরা কেউ হতে দিতে পারিনা। তাছাড়া ভারতের বিতর্কিত বিজেপি নেতা শ্রীযুক্ত স্বামী এদেশের সংখ্যা গুরু সম্প্রদায় সম্পর্কে যেসব অভিযোগ এনেছেন তা যেমন ডাহা মিথ্যা হিসাবে অগ্রহণযোগ্য, তেমনি যেসব অভিযোগের প্রতিকার হিসাবে যে আকাঙ্খা প্রকাশ করেছেন তা আমাদের জন্য সর্বনাশা হিসাবে আমরা প্রত্যাখ্যানই করছিনা, এই অন্যায় আকাঙ্খা বাস্তবায়নের সামান্যতম ষড়যন্ত্র যারা করবে, তাদের বিরুদ্ধে দেহের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে লড়ে যাব, একটাই আমাদের শেষ কথা।
একথা আমাদের ভুলে গেলে চলবে না। সাত সমুদ্র তের নদীর ওপার থেকে আসা ইংরেজদের কাছে ১৭৫৭ সালে পলাশীতে আমরা যে স্বাধীনতা হারিয়ে ছিলাম তাতেও ইংরেজদের সাথে গোপনে যারা ষড়যন্ত্রে শামিল হয়েছিল, তাদের মধ্যে প্রধান ভূমিকা ছিল জগৎশেঠ, উমিচাঁদ, রাজবল্লভ, রায়দুর্লভদের, যদিও নবাবীর লোভ দেখিয়ে শেষ মুহূর্তে যুক্ত করা হয়, মীরজাফরকে যে কারণে মীর জাফরই হয়ে ওঠে দেশদ্রোহ ও বিশ্বাসঘাতকতার প্রতীক। একইভাবে লেডী মাউনব্যাটেনের সঙ্গে নেহেরুর সুম্পর্কের সুযোগে ১৯৪৭ সালের অবিভক্ত বৃটিশ ভারতের বহু মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চল থেকে বঞ্চিত হয় বাংলাদেশ ও পাকিস্তান। তাই ইতিহাস থেকে প্রমাণিত হয় বিজেপি নেতা সুব্রামানিয়াম স্বামীরা কখনই মুসলিম অধ্যুষিত কোন দেশের স্বাধীন রাষ্ট্রসত্ত্বার প্রকৃত বন্ধু হতে পারেন না। তাই তারা সংখ্যালঘুদের উপর অবিচারের মিথ্যা অভিযোগ এনে যতই বাংলাদেশের স্বাধীন রাষ্ট্রসত্ত্বা ধ্বংস করে দেয়ার ষড়যন্ত্র করেন, তা কখনও বাস্তবে সম্ভব হবার নয়। এদেশের দেশপ্রেমিক নাগরিকরা ঈমানের বলে দেহের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে লড়াই করে তাদের সেসব ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে দেবে ইনশাল্লাহ।
মনে রাখতে হবে বাংলাদেশে বখতিয়ার খিলজীর মাধ্যমে মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠার আগেই এদেশে বিভিন্ন অঞ্চলে বহু মুসলিম জনপদ গড়ে উঠেছিল। এমনটা সম্ভব হয়েছিল বাংলাদেশের সঙ্গে আরব বনিকদের সমুদ্র পথে যোগাযোগের কারণে। প্রাচীনকাল থেকেই এদেশের সঙ্গে আরব বনিকদের সমুদ্র পথে বাণিজ্য উপলক্ষে যোগাযোগ গড়ে উঠেছিল। এর মধ্যে আরব দেশে বিশ্বনবীর মাধ্যমে ইসলামের প্রতিষ্ঠা ঘটলে অল্প দিনের মধ্যে সমুদ্র পথে আসা বনিকদের সাথে ফকির দরবেশ হিসাবে বহু ইসলাম প্রচারকও এসে এদেশে এসে ইসলামের বাণী প্রচার করেন। এই সব ফকির দরবেশদের সাম্যভ্রাতৃত্বের আদশে সহজ সরল জীবনধারা প্রভাবে এদেশের বৈষম্য সৃষ্টিকারী বর্ণবাদী সমাজের মধ্যে বৈপ্লবিক পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে এদেশের প্রথম যুগের ইসলামের প্রতিষ্ঠা সূচিত হয়। সমুদ্র পথে আসা ইসলাম প্রচারকদের অধ্যায় এদেশের মুসলিম জনপথ গড়ে উঠতে থাকে বলে সমুদ্র সন্নিহিত এলাকা বরিশাল, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম এবং মিয়ানমারের আরাকান প্রভৃতি এলাকায় ইসলামের বিশেষ প্রভাবে পরিলক্ষিত হয়। এ প্রভাবে কারণে অল্পকালের মধ্যেই বাংলাদেশে পরিণত হয়। ইসলামের সাথে গভীর সম্পর্কে কারণে এদেশের অদূর ভবিষ্যতে দিল্লীর শাসন প্রতিষ্ঠা হবে না একথা জোর দিয়েই বলা যায়।
কিন্তু তারপরও যদি ভারত যদি চায় বাংলাদেশের উপর দিল্লীর শাসন চাপিয়ে দিতে একটি বৃহৎ প্রতিবেশী দেশ হিসাবে সে চেষ্টা তারা করতে পারে। কিন্তু তার ফল যে তাদের জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে না, তা অনেকটা জোর দিয়েই বলা যায়। ১৯৭১ সালের পাকিস্তান বাহিনীর আগ্রাসী যুদ্ধের কথা এখানে স্বরণ করা যায়। পাকিস্তান বাহিনী একটি শক্তিশালী বাহিনী হিসাবে সমগ্র পৃথিবীতে স্বীকৃত ছিল। কিন্তু তা সত্ত্বেও তাদের কিভাবে নাস্তানাবুদ হতে হয়েছিল অধ্যুপ্রশিক্ষিত মুক্তি বাহিনীর কাছে তা এখানে স্মরণ করা যায়। তাদের এই পরাজয়ের বড় কারণ ছিল এদেশে জনগণের অসহযোগিতা ও বিরোধিতা। অথচ মাত্র কিছুদিন আগেও ঐ পাকিস্তান বাহিনীর এদেশের নাগরিক ছিল বলে মনে করতো। তার পর ও পাকিস্তান বাহিনীর অসাধারণ পরাজয় বরণ করতে হয় এদেশের জনগণের বিরুদ্ধে যাওয়ার কারণে। ভারতীয় বাহিনী বাংলাদেশে দিল্লীর শাসনকায়েম করতে চাইলে এদেশের জনগণের কাছে তাদের প্রাপ্য হবে শুধু বিরোধিতা আর বিরোধিতা।
ভারতীয় বাহিনী এদেশে জনগণের মধ্যে কোন বন্ধু বা সমর্থক পাবে না সুতরাং একদিকে থাকবে আগ্রাসী, বিদেশী বাহিনী আর তার বিরুদ্ধে থাকবে এদেশের গোটা জনগণ এবং তাদের মধ্যে বাংলাদেশ বাহিনী পুলিশ ও আনসার বাহিনী এবং একাত্তরের মুক্তি বাহিনীসহ সমগ্র জাতি। সুতরাং সেরকম অবস্থায় বাংলাদেশে দিল্লীর শাসন প্রতিষ্ঠার যারা চক্রান্ত করবেন তাদের পরিণতি যে অতি করুণ পরাজয় হতে বাধ্য তা বাস্তবতা বিচারে সকলেই স্বীকার করবেন। এতসব সত্ত্বেও যদি বাংলাদেশে দিল্লীর শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য বিজেপি বা এ জাতীয় কোন ভারতীয় রাজনৈতিক দল চেষ্টা করে, তাদের মর্মান্তিক পরিণতির জন্য অপেক্ষায় থাকতে হবে, একথা বলাই বাহুল্য।



 

Show all comments
  • তামান্না ৪ অক্টোবর, ২০১৮, ২:৫৪ এএম says : 0
    এই কথা চিন্তায় আনাও ঠিক হবে না।
    Total Reply(0) Reply
  • জাহিদ ৪ অক্টোবর, ২০১৮, ২:৫৬ এএম says : 0
    দিবা স্বপ্ন দেখা খুব খারাপ
    Total Reply(0) Reply
  • মারিয়া ৪ অক্টোবর, ২০১৮, ২:৫৭ এএম says : 0
    তাদের উচিত নিজ দেশ নিয়ে চিন্তা করা।
    Total Reply(0) Reply
  • মোঃ ইয়াছিন ৪ অক্টোবর, ২০১৮, ৭:৪৮ এএম says : 1
    সঠিক বলেছেন,তবে দখলের বাকি বা কি আছে?শুধু ঘেোষনার বাকি।
    Total Reply(0) Reply
  • MONIR ৪ অক্টোবর, ২০১৮, ৮:৩৩ এএম says : 0
    সরকারের কোন প্রতিবাদ নাই! কারন কি?
    Total Reply(0) Reply
  • মোং একলাছ ৪ অক্টোবর, ২০১৮, ৮:৪২ পিএম says : 0
    ভারতের অনেক এমপি পচা ডিম হয়ে গেছে
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বাংলাদেশ


আরও
আরও পড়ুন