Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য

| প্রকাশের সময় : ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১২:০২ এএম

আগামী জাতীয় নির্বাচন নিরপেক্ষ ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে করার জন্য বহুদিন ধরেই নাগরিক সমাজ এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ তাকিদ দিয়ে আসছেন। বিএনপির নেতৃত্বাধীন বিশ দলীয় জোট এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দলের অবস্থানও অভিন্ন। তবে সরকার এ দাবী বরবারই প্রত্যাখ্যান করে আসছে। সরাসরিই বলছে, সংবিধান অনুযায়ী বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে। এর বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে পরস্পরবিরোধী এই অবস্থান রাজনীতিতে ক্রমেই গভীর সংকটে রূপান্তরিত হচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, বিরোধী দল চাইলে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা হবে। বলার অপেক্ষা রাখে না, বিরোধী দলগুলোর অভিন্ন দাবি নির্বাচনকালীন নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকার। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে এ দাবি মানার কোনো ইঙ্গিত আছে কিনা, তা স্পষ্ট না হলেও অনেকেই একে ইতিবাচক ভাবে দেখছেন। তিনি অবশ্য বরাবরই বলে আসছেন, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে। এই সঙ্গে এও বলেছেন বর্তমান সরকারই নির্বাচন কালীন সরকার হিসবে কাজ করবে। এই সরকারের পরিসর ছোট হবে বলে অনেকের ধারনা। দেশের মানুষ এখনও বুঝতে পারছে না, নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা কেমন হবে।
অস্বীকার করার উপায় নেই, জাতীয় নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন নিয়ে সরকার ও বিরোধী দলগুলোর মধ্যে পরস্পরবিরোধী অবস্থান ততই স্পষ্ট হয়ে উঠছে। এতে নাগরিক সমাজ থেকে শুরু করে বিশিষ্ট ব্যক্তির্গের মধ্যেও উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে। কারণ কোন পদ্ধতিতে নির্বাচন হবে-এ বিষয়টি এখনও সুরাহা হয়নি। সরকার তার অধীনেই নির্বাচন অনুষ্ঠানে বদ্ধপরিকর। অন্যদিকে সকল বিরোধী রাজনৈতিক দল বর্তমান সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করার দাবীতে অনড় অবস্থান রয়েছে। তারা এ ব্যাপারে সরকারকে সংলাপ বা আলাপ-আলোচনায় বসার আহ্বান জানাচ্ছে। নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকেও নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে বিরোধী দল ও সরকারের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করার আহ্বান জানানো হচ্ছে। তবে সরকার এসব আহ্বান উড়িয়ে দিয়ে বলছে, অধীনেই জাতীয় নির্বাচন হবে। বর্তমান সংসদ ভেঙে দেয়ার প্রশ্নই ওঠে না। ফলে রাজনীতির আগামী দিনগুলো যে অত্যন্ত বিরোধপূর্ণ এমনকি সংঘাতে রূপ লাভ করতে পারে তা আগেভাগেই অনুমান করা যায়। এ নিয়ে বিশিষ্টজনরাও দারুন উদ্বেগ প্রকাশ করছেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এবং আইনজীবী ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি অত্যন্ত ভয়াবহ ও বিপজ্জনক। নির্বাচন নিয়ে সরকার কারো সাথেই কোনো আলোচনা করবে না, এটা যুদ্ধ ঘোষণার মতো। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, দ্রুত সমঝোতা এবং সরকার নমনীয় না হলে আমরা এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে চলে যাবো এবং সে পরিস্থিতিতে আমাদের হাত থেকে নেতৃত্ব চলে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এলডিপির সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি বলেছেন, আগামী মাস থেকে বিরোধীদল এবং সরকারের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হবে। এই সংঘর্ষে কত প্রাণ যাবে তার কোনো সীমারেখা নেই। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, শেখ হাসিনার কিছু হলে সারাদেশে ঘরে ঘরে আগুন জ্বলবে। সেই আগুনে ষড়যন্ত্রকারীরা পুড়ে ছারখার হয়ে যাবে। এসব বক্তব্যের মধ্য দিয়ে বোঝা যাচ্ছে, রাজনীতি ও দেশের জন্য সামনের দিনগুলো ভালো হবে না। বলা বাহুল্য, শুধুমাত্র একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, এবং সবদলের অংশগ্রহণে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনকে কেন্দ্র করেই এসব আশঙ্কা প্রকাশ করা হচ্ছে। যে আশঙ্কা আগে থেকেই করা হচ্ছে এবং রাজনৈতিক সংঘাত-সহিংসতা সৃষ্টি হতে পারে বলে সকলেই প্রায় একমত, সেক্ষেত্রে তা সমাধান করার উদ্যোগ এখনই গ্রহণ করা উচিত। এজন্য সবার আগে সরকারকেই এগিয়ে আসতে হবে। দায়-দায়িত্ব তার বেশি। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশে ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি যাতে না হয়, সেজন্য বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলাপ-আলোচনা করার উদ্যোগ সরকারের নেয়া উচিত। কোনো ধরনের আলাপ-আলোচনা হবে না বলে গোঁ ধরে বসে থাকা কাম্য হতে পারে না। বিরোধী দলগুলোর দাবী উপেক্ষা করা কোনোভাবেই সরকারের উচিত হবে না।
দেশে রাজনৈতিক সংকট দীর্ঘদিন ধরেই বিরাজ করছে। তবে নির্বাচন যতই এগিয়ে আসছে তা আরও ঘনীভূত এবং কঠিন পরিস্থিতির দিকে ধাবিত হচ্ছে। আগ্রহ দেখালেও তা উড়িয়ে দিচ্ছে। সরকারের অনমনীয় মনোভাবই দেশকে গভীর সংকটে ফেলে দিতে পারে বলে বিশিষ্টজনরা মন্তব্য করছেন। অন্যদিকে জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিশ্বের প্রভাবশালী সংস্থা ও দেশগুলো আগামী নির্বাচনকে অবাধ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক করার জন্য বরাবরই তাকিদ দিয়ে আসছে। তাদের এ তাকিদ কতটা ফলপ্রসু হবে সামনের দিন গুলোতে তা বুঝা যাবে। বলা বাহুল্য রাজনীতিতে মতবিরোধ থাকবেই, তার অর্থ এই নয়, প্রতিপক্ষকে শত্রুজ্ঞান করতে হবে। মতপার্থক্য সৃষ্টি হলে তা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করাই গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার অন্যতম বৈশিষ্ট্য। দুঃখের বিষয়, দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি এমন এক পর্যায়ে গিয়েছে, যেখানে সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে অনেকটা সাপে-নেউলে সম্পর্ক। শুধুমাত্র একটি নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিরোধ যে পর্যায়ে গিয়েছে, তা পুরো দেশকে গভীর সংকটে ফেলে দিচ্ছে। এ পরিস্থিতি কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। আমরা মনে করি, আসন্ন রাজনৈতিক সংকট থেকে উত্তরণ ঘটাতে পারেন একমাত্র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর পক্ষেই সংকট সমাধান করা সম্ভব। তিনি উদ্যোগ নিলে খুব সহজেই রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে পারে। দেশ রাজনৈতিক সংঘাত-সহিংসতা থেকে রেহাই পেতে পারে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জাতীয় নির্বাচন


আরও
আরও পড়ুন