পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
পৃথিবীর নানা জায়গায় উইপোকার বাস আছে। আছে বাংলাদেশ-ভারতেও। এ উইপোকা গ্রামের ঘরবাড়িতে বা অন্যত্র কখনো কখনো বাসা বা ঢিবি বানিয়ে রীতিমত সমস্যার সৃষ্টি করে। আর গ্রামে তো বটেই, শহরের বাড়িতে ও লাইব্রেরিতে রাখা বই কেটে মহাসর্বনাশ সাধন করে। উইপোকা মানুষের জন্য ভয়ানক ক্ষতিকর, অবাঞ্ছিত একটি পতঙ্গ। উইপোকা মানুষের কোনো কল্যাণ করে এমন ইতিবাচক কথা শোনা যায় না। তবে একটি হিন্দু পৌরাণিক বিবরণ মতে, দস্যু রত্নকর যখন পরিবর্তিত চিত্তে নির্জন অরণ্যে সাধনা শুরু করেন তখন তিনি তাতে এতই নিমগ্ন নিশ্চল হয়ে পড়েন যে ‘বল্মী’ বা উইয়ের দল তার শরীর ঘিরে ঢিবি তৈরি করে। সে কারণে তার নাম হয়ে যায় বাল্মীকি। এ কাহিনীতে দেখা যায়, উইয়ের দল তাকে খেয়ে ফেলেনি। তিনি সাধনা মগ্ন ছিলেন বলেই হয়তো। যাহোক, উই বিষয়ে বোধহয় এটাকেই একমাত্র ইতিবাচক ঘটনা বলে গণ্য করা যেতে পারে।
উইপোকা এতই ঘৃণ্য ও বর্জিত যে মানুষের কোনো কাজে-কর্মে তার উল্লেখ দেখা যায় না বললেই চলে। কালেভদ্রে কারো কথায় বা সাহিত্যে হয়ত কখনো এর উল্লেখ পাওয়া যায়। তবে অতি সম্প্রতি ভারতের এক রাজনৈতিক নেতা উইপোকাকে আলোচনায় এনেছেন। পত্র-পত্রিকার খবরে দেখা যায়, ক্ষমতাসীন দল বিজেপির প্রবল পরাক্রম সভাপতি অমিত শাহ ২২ সেপ্টেম্বর রাজস্থানে এক জনসভায় বক্তৃতাকালে ভারতে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের উইপোকা বলে আখ্যয়িত করেছেন। এখানেই থেমে থাকেননি তিনি। বুকের মধ্যে জমে থাকা উষ্মা ঢেলে তিনি বলেছেন, প্রতিটি উইপোকাকে খুঁজে ভোটার তালিকা থেকে বের করে দেয়া হবে।
অমিত শাহ যাদের বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী বলে ঘৃণার বাণ ছুঁড়ে দিয়েছেন তারা হচ্ছে বর্তমানে ভারতে ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকারের চক্ষশূল। বিজেপি সরকার তাদেরকেই বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী বলে চিহ্নিত করে যারা আসাম বা অন্যান্য রাজ্যে বহুকাল ধরে বসবাসকারী। বাস্তব হচ্ছে, বিজেপি নেতৃত্ব যাদের উদ্বাস্তু বলছে তারা দশকের পর দশক ধরে ভারতে বাস করে আসছে।
বিজেপি সভাপতির বক্তব্য কোনো সরল বা কল্যাণকর উদ্দেশ্যে দেয়া নয়, তার এ বক্তব্যের পিছনে রয়েছে ক‚ট রাজনৈতিক স্বার্থ, তা বুঝতে অসুবিধে হওয়ার কথা নয়। তার এ কথাকথিত বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী বাঙালিদের প্রচন্ডভাবে ক্ষুব্ধ ও হতাশ করেছে তো বটেই, সীমিত পরিসরে হলেও তা নানা পর্যায়ে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ারও সৃষ্টি করেছে। খোদ ভারতেই অমিত শাহর বক্তব্য নিয়ে কথা উঠেছে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে শীর্ষস্থানীয় পত্রিকা টাইমস অব ইন্ডিয়ার সম্পাদকীয় মন্তব্য। ২৫ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত এ সম্পাদকীয়তে অমিত শাহ সম্পর্কে খোলামেলা কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, ‘কথিত অবৈধ বাংলাদেশীদের এক নম্বর শত্রু বানানোর পরিকল্পনা নিয়েছে ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপি। এরই মধ্যে বিজেপি প্রধান অমিত শাহ ভারতে বসবাসকারী কথিত বাংলাদেশিদেরকে উইপোকা বলে আখ্যায়িত করেছেন। এ নিয়ে রাজনীতিতে এক আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।’ সম্পাদকীয়তে বিজেপি নেতৃত্বের উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলা হয়, ‘অমিত শাহ বলেছেন, কয়েক কোটি অনুপ্রবেশকারী প্রবেশ করেছে ভারতে। আর ২০১৯ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে বিজেপি তাদের প্রত্যেককে সনাক্ত করবে। এ বিষয়ে অমিত শাহের বার বার বক্তব্য, বিবৃতি এটাই বুঝিয়ে দেয় যে, কথিত অবৈধ বাংলাদেশিদেরকে বিজেপি এক নম্বর শত্রু বানানোর পরিকল্পনা করছে। আর এই ইস্যুতে সব কিছু অর্জনের চেষ্টা করছে। অমিত শাহের এই নেতিবাচক কৌশলকে তুলনা করা যায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের চরিত্রের সঙ্গে। ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রে মেক্সিকানদেরকে ধর্ষক হিসেবে বর্ণনা করেছেন। যদি এই ধারণা (বাংলাদেশি বিরোধিতা) বিজেপির নির্বাচনী সমর্থনের ভিত্তি হয় তাহলে তার ভবিষ্যত অন্য কিছু হবে না, যেমনটি হয়েছে ট্রাম্পের বেলায় যে তার বর্তমান জনপ্রিয়তা কমে গেছে। আসলে এমন কৌশল শুধু নিম্নদিকেই ধাবিত করে। বিজেপি এটা করছে এ কারণে যে ২০১৯ সালে শুধু প্রকৃত ভোটই (কোর ভোট) বিজেপির জেতার জন্য যথেষ্ট হবে না।’
সম্পাদকীয়তে বিষয়টিকে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের আলোকে পত্রিকার নীতিগত দৃষ্টিভঙ্গি থেকে মূল্যায়ন করে বলা হয়, ‘অবৈধ অনুপ্রবেশকারী ইস্যুতে অমিত শাহ যে তিরস্কারমূলক কথাবার্তা বলছেন তা হয়ে উঠবে এক প্রতারণাপ‚র্ণ কৌশল এবং তা বাংলাদেশের সঙ্গে বিদ্যমান সম্পর্কের ক্ষতি করবে। যদিও কোনো প্রমাণ নেই যে কয়েক কোটি কথিত অবৈধ বাংলাদেশি ভারতে বসবাস করছেন, তারপরও যদি অমিত শাহের বিবৃতিকে সত্য ধরে নেয়া হয় তাহলে একটি প্রশ্ন থেকেই যায়। তাহলো, এসব মানুষকে নিয়ে কি করা হবে। ... ১৯৭২ সালের পর ভারতে ব্যাপক হারে অভিবাসনের বিষয়টি যেমন স্বীকার করে না বাংলাদেশ, তেমনি ভারত যাদেরকে ফেরত পাঠাতে চায় তাদের কাউকে গ্রহণ করবে দেশটি তেমনটি বিশ্বাস করা কঠিন। এ হলো চরম এক বাস্তবতা যা থেকে দ‚রে সরে থাকা যায় না।’
বাংলাদেশে গ্রাম্য প্রবাদ আছে- ‘সব শিয়ালের এক রা।’ ভারতে বিজেপি নেতৃত্ব শিয়ালের মতো সামান্য প্রাণি নন, তারা বিশাল ভারতের বিপুল মানুষের সমর্থন প্রাপ্ত সফল রাজনৈতিক নেতা ও উচ্চস্তরের মানুষ। কিন্তু কথিত অনুপ্রবেশকারী বাংলাদেশিদের ব্যাপারে তাদের রা এক অর্থাৎ তাদের অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি হচ্ছে যে, ভারত থেকে তাদের তাড়াতে হবে। আসামের বিজেপি নেতৃবৃন্দ সে রাজ্যে থাকা বাংলাভাষীদের প্রতি তাদের ঘৃণার বিষ উগরে দেয়ার পর তা ছড়িয়ে গেছে ভারতের অন্যত্রও। যেমন ঝাড়খন্ড থেকে কথিত অবৈধ বাঙালি বিতাড়নের আওয়াজ উঠেছে। আরো কয়েকটি রাজ্যেও একই সুর ধ্বনিত হতে শোনা গেছে। অমিত শাহ তো এ বিষয়টিকে মিশন হিসেবে নিয়েছেন বলে মনে করা যেতে পারে। তিনি ছাড়াও বিজেপির আরো নেতারাও মন চাইলেই এ রকম বক্তব্য দিয়ে ভারতীয় জনসমাজে আলোড়ন তুলছেন। বলা যায়, মহাভারতের যেখানেই তারা যাচ্ছেন সেখানেই এ বিষমাখা মন্তব্য ছড়িয়ে দিচ্ছেন। যেমন ২২ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের উইপোকা আখ্যায়িত করার আগে ১১ সেপ্টেম্বর রাজস্থানের জয়পুরে দলীয় কর্মীদের সভায় অমিত শাহ বলেন, ‘বিজেপির সংকল্প হলো, এ দেশে একজনও বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীকে থাকতে দেবে না। তাদেরকে বেছে বেছে এখান থেকে বিতাড়ন করা হবে।’ তার আগের দিন ১০ সেপ্টেম্বর দিল্লিতে এনআরসি বিষয়ক এক আলোচনা সভায় বিজেপির প্রভাবশালী সাধারণ সম্পাদক রাম মাধব বলেন, ‘ভারতের আসামে চ‚ড়ান্ত নাগরিক তালিকা বা এনআরসি থেকে যাদের নাম বাদ পড়বে তাদের বাংলাদেশেই ডিপোর্ট’ করা হবে।’
অমিত শাহ অবৈধ বা অনুপ্রবেশকারী বংলাদেশিদের সম্পর্কে বিষোদ্গার করার পরিপ্রেক্ষিতে তাৎক্ষণিকভাবে বাংলাদেশের কোনো মহল থেকে এ ব্যাপারে কোনো কথা শোনা যায়নি। তবে দু’দিন পর বাংলাদেশের তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু এ ব্যাপারে কথা বলেন। ২৪ সেপ্টেম্বর ভারতের দ্য হিন্দু ও এনডিটিভিকে দেয়া সাক্ষাতকারে অমিত শাহ’র বক্তব্যকে তিনি অবাঞ্ছিত বলে আখ্যায়িত করেন এবং বাংলাদেশ-ভারতের সম্পর্ক নিয়ে তিনি (অমিত শাহ) কথা বলার জন্য যোগ্য নন বলে মন্তব্য করেন। তিনি আরো বলেন, ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং বাংলাদেশকে আশ্বস্ত করেছেন যে, আসামে জাতীয় নিবন্ধন ছাড়া জনগণকে বাংলাদেশে পাঠানো হবে না।
উল্লেখ করা যেতে পারে যে সম্প্রতি ভারত সরকারের উদ্যোগে আসাম রাজ্যে যে এনআরসি বা নাগরিক তালিকাপঞ্জি করা হয়েছে তাতে আসামের ৪০ লাখ মানুষকে বাদ দেয়া হয়েছে। তাদেরকে একচেটিয়াভাবে বাংলাদেশি উদ্বাস্তু বা অবৈধ অনুপ্রবেশকারী বলে তকমা লাগানোর চেষ্টা করা হচ্ছে ও হুমকি দেয়া হচ্ছে যে তাদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হবে। বহু ধর্ম-জাতি-গোষ্ঠি ও ভাষাভাষীর দেশ ভারতে ধর্ম নিয়ে নোংরা খেলা শুরু হয়েছে বিশ শতকের গোড়া থেকেই। তারপরে কালের গর্ভে হারিয়ে গেছে বহু বছর ও দশক, কিন্তু ধর্মীয় সংকীর্ণতা তথা সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প থেকে মুক্ত হতে পারেনি তথাকথিত বিশে^র বৃহত্তম এ গণতান্ত্রিক দেশটি। মানবতার ধ্বংসস্ত‚প রচনার প্রক্রিয়া দেশটিতে শুরু হয়েছে হিন্দুত্ববাদের পৃষ্ঠপোষকতায়। ৬শ’ বছরেরও বেশি সময় ধরে উদারপন্থী মুসলিম শাসকেরা ভারতে যে ধর্মীয় ও সামাজিক সম্প্রীতি এবং শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের প্রশংসনীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন, স্বাধীন ভারতের আত্মপ্রকাশের পরবর্তী সময়কালে তা ক্ষীণ হতে শুরু করে। কংগ্রেসের সুদীর্ঘ শাসনামলে দুর্বল হয়ে আসা সেই ক্ষীণধারা বিজেপির বর্তমান সরকারের শাসনামলে বিলুপ্তপ্রায়। এখন আর ধর্মীয় সম্প্রীতি নয়, হিন্দুত্ববাদ অক্টোপাশের থাবা বিস্তার করে গ্রাস করতে চলেছে গোটা ভারতকে। অরুন্ধতী রায়ের মতো মানবতাবাদীরা সে প্রতাপে-প্রভাবে কোণঠাসা হয়ে আত্মরক্ষার পথ সন্ধান করে ফিরছেন।
আসামের ৪০ লাখ মানুষের সবাই নয়, উল্লেখযোগ্য অংশ ভারতের নব জাগ্রত হিন্দুত্ববাদের বলি হতে চলেছে। স্মরণযোগ্য যে, সেই ব্রিটিশ আমলে অবিভক্ত ভারতে বাংলা-আসামের মধ্যে কোনো রাষ্ট্রসীমা যখন ছিল না তখন আসামের লাগোয়া বৃহত্তর রংপুর-বগুড়া-দিনাজপুর, এদিকে কুমিল্লা-নোয়াখালী, বিশেষ করে বৃহত্তর সিলেট এলাকা থেকে বহু মানুষ আসামে গিয়েছিলেন। স্বল্প জনবসতির আসামের দুর্গম এলাকায় গিয়ে জীবন বাজি রেখে জঙ্গল কেটে চাষের জমি পত্তন ও আবাদ করে, নানা ব্যবসা-বাণিজ্যের মাধ্যমে আসামকে সমৃদ্ধ করে তোলায় অবদান রাখেন তারা। সেই বিশ শতক থেকে প্রজন্ম পরম্পরায় তারা আসামেই রয়ে গেছেন। তারপর ’৭১-এর স্বাধীনতা যুদ্ধে বহু মানুষ আসামে অভিবাসী হন, আবার তারা সবাই দেশ স্বাধীন হলে নিজ ভিটেমাটিতে ফিরেও আসেন। এ অবস্থায় ৪০ লাখ বাংলাভাষীকে অনুপ্রবেশকারী বলে চিহ্নিত করা ও নাগরিকপঞ্জির বাইরে রাখার এ চেষ্টা যে নোংরা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
আসলে এর পিছনে যে খেলা চলছে তা হচ্ছে নির্বাচনে জয়ের খেলা। এ জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে শতাব্দী প্রাচীন বাঙালি-অসমিয়া বিরোধকে যা কখনো কখনো সহিংস রূপেও প্রকাশিত হয়েছে। এ বিরোধের মূল অনেক গভীরে প্রোথিত। ব্রিটিশ আমলে মূলত হাইলাকান্দি, কাছাড় ও করিমগঞ্জ এলাকাকে কেন্দ্র করে আসামে বাঙালি চাকুরিজীবী, ব্যবসায়ী, কৃষিজীবী হিন্দু-মুসলমান সমন্বয়ে বাঙালি প্রাধান্য বিস্তৃত হয়। অসমিয়ারা তখন থেকেই বিষয়টি ভালোভাবে নেয়নি। ভারত স্বাধীন হওয়ার পর স্থানীয়দের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হয়। বাংলাভাষীরা শিকার হয় নির্যাতন-নিপীড়নের। আসামে বিজেপি সরকার এ বাঙালি বিদ্বেষ, তার সাথে মুসলিম বিদ্বেষকে এক করে রাজনীতির পালে হাওয়া লাগায় ও সাফল্য নিশ্চিত করে। ২০১৪-র মতো ২০১৯-এও আসামকে বিজেপির মুঠোয় রাখতে হলে অসমিয়াদের সন্তুষ্ট করতে হবে এবং সে ক্ষেত্রে বাংলাভাষী মুসলমানদের বিতাড়নের চেয়ে বড় কোনো ওষুধ আর হতে পারে না। এ বিপুল সংখ্যক মানুষ বিতাড়িত হলে অনেকেরই সহায়-সম্পদের মালিক হতে পারবে অসমিয়ারা। তবে এ সহজ হিসেবের মাঝে আবার একটু ধর্মের গোল আছে। বাংলাভাষী মুসলিমদের বিতাড়ন করলে তেমন ঝামেলা হবে না, মিডিয়া তেমন সোচ্চারও হবে না। কিন্তু বাংলাভাষী হিন্দু বিতাড়ন করলে হিন্দুত্ববাদীদের অহমিকায় আঘাত লাগবে, ভারতীয় মিডিয়াতেও ঝড় উঠবে। এ বিপত্তির আশংকা আসামে ইতোমধ্যেই দৃশ্যমান।
ভারতে ২০১৯ সালের মে মাসে নির্বাচন। ব্যাপক ধারণা যে, বিজেপি আবারো ক্ষমতায় আসবে। আর তা হলে আসামে বাঙালি বিতাড়নের ষোলকলা হয়তো পূর্ণ হবে না (খুব সম্ভবত বেশিরভাগ বাংলাভাষী হিন্দুর থেকে যাবার সম্ভাবনা বেশি), তবে অনেকটাই (বাংলাভাষী মুসলিম বিতাড়ন করে) পূর্ণ হবে বলে ধারণা। হিন্দুত্ববাদী বিজেপি তাদের ঘোষিত উদ্দেশ্য থেকে সরে আসবে, সে আশা করাটা হয়তো বাস্তব সম্মত হবে না। তবে এই অবস্থাটা কতটা সমীচীন, সেটা নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন রয়েছে। যখন অভিযোগ সরাসরি বাংলাদেশের বিরুদ্ধেই তোলা হয়। বলা হয়, ‘বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের’ বাংলাদেশে ঠেলে দেয়া হবে, তখন বাংলাদেশ কীভাবে সম্পূর্ণ নিরব ও নিশ্চুপ থাকতে পারে সেটাও বিস্ময়করই বটে।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।