Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কাজ শুরু হচ্ছে না ডিসেম্বরের আগে

নড়িয়ায় পদ্মার ভয়াবহ ভাঙন

নাছিম উল আলম | প্রকাশের সময় : ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১২:০১ এএম

স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক কম বৃষ্টিপাত নিয়ে এবারের বর্ষা মৌসুম শেষ হওয়ার পরও দেশের বিভিন্ন নদ-নদীর ভয়াবহ ভাঙনে উদ্বিগ্ন নদীবহুল দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ। ভাঙনের ফলে কোটি মানুষ অসহায়।
একাধিক নদী বিশেষজ্ঞের মতে, শরতের মধ্যভাগ থেকে সীমান্তের ওপারের মুর্শিদাবাদ, মালদা, উত্তর ও পশ্চিম দিনাজপুর, জলপাইগুড়ি ছাড়াও মেঘালয় এবং আসাম এলাকায় অসময়ের ব্যাপক বর্ষণ মারাত্মক বিপত্তি সৃষ্টি করেছে। বর্ষার বিদায় নিলেও আকষ্মিক ঢলে পদ্মা, যমুনা ও ব্র²পুত্রসহ শাখা নদ-নদীগুলো স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক স্রোত নিয়ে প্রবাহিত হয়। আর এ কারনেই মৌসুমের শেষভাগে এসে দেশের মধ্যাঞ্চল থেকে দক্ষিণাঞ্চল পর্যন্ত নদী ভাঙন পরিস্থিতিও ভয়াবহ আকার ধারণ করে।
শরিয়তপুরের নড়িয়ায় পদ্মার ভয়াবহ ভাঙন ভাঙনে হাজার হাজার মানুষ ভিটেমাটিসহ সর্বস্ব হারিয়ে এখন পথের ফকির। অথচ গত ২ জানুয়ারি এক হাজার ৯৭ কোটি টাকা ব্যয় সাপেক্ষ ‘নড়িয়া-সুরেশ্বর এলাকার ভাঙন রোধ প্রকল্প’ জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) অনুমোদন লাভ করে। প্রকল্পের আওতায় শরিয়তপুরের ঠাকুর বাজার, বাঁশতলা, কুন্ডের চর সংলগ্ন প্রায় ৯ কিলোমিটার এলাকায় সিসি ব্লক দিয়ে পদ্মার স্রোত থেকে ভাঙন রোধসহ নদী তীর রক্ষা এবং একই উদ্দেশ্যে আরো পৌনে ১০ কিলোমিটার এলাকায় ড্রেজিং করে নদীর গতিপথ পরিবর্তনের বিষয়গুলো অন্তর্ভূক্ত ছিল।
কিন্তু প্রকল্প অনুমোদনের পর বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রিতার ফলে ইতিহাসের ভয়াবহ বিপর্যয় ঘটে গেছে নড়িয়া ও সুরশ্বের এলাকায়। গত কয়েক দশকে পদ্মার এমন ভয়াবহ ভাঙন প্রত্যক্ষ করেনি কেউ। অথচ জানুয়ারি মাসের প্রথমভাগে প্রকল্পটি অনুমোদনের পরে বর্ষার আগে এপ্রিলের শুরুতেই ভাঙন রোধে কাজ শুরু করা যেত বলে মনে করছেন ওয়াকিবহাল মহল।
প্রকল্পটি অনুমোদনের পর সাড়ে নয় মাস সময় নষ্ট করে গত ১৯ সেপ্টেম্বর এ সংক্রান্ত প্রস্তাবনা মন্ত্রিসভার ক্রয় কমিটির অনুমোদন লাভ করে। ফলে আগামী ডিসেম্বরের আগে আর নড়িয়ার ভাঙন রোধে বাস্তব কাজ শুরু হচ্ছে না। অথচ পানি উন্নয়ন বোর্ডের সুপারিশে গত ২ জানুয়ারি ভাঙন রোধে সহস্রাধিক কোটি টাকার পুরো প্রকল্প-প্রস্তাবনা ডিপিপি অনুমোদন করে। শুধুমাত্র প্রকল্প বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতেই সাড়ে ৯ মাস বিলম্বে পথে বসেছে এলাকার হাজার হাজার মানুষ। তাদের পায়ের তলার মাটি আর মাথার ওপরের ছাদ চলে গেছে নদী গর্ভে।
সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বাংলাদেশ নৌ বাহিনী নড়িয়ার ভাঙন রোধ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। নৌ বাহিনীর পক্ষে তাদেরই নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠান খুলনা শিপইয়ার্ডের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে কোন তৃতীয় পক্ষের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পুরো প্রকল্পটি বাস্তবায়নের অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রি পরিষদের ক্রয় সংক্রান্ত কমিটি।
এদিকে বরিশালের কীর্তনখোলার ভাঙন থেকে চরবাড়িয়াসহ মহানগরীর বেশ কিছু এলাকার ভাঙন রোধে গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে ৩৩১ কোটি টাকার একটি ডিপিপি একনেকের অনুমোদন লাভ করে। কিন্তু দীর্ঘ সূত্রিতায় এক বছর অতিক্রান্ত হলেও বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া শুরু হয়নি। অথচ বরিশাল মহানগরীর পানি সরবারহে সদ্য নির্মিত ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টসহ একাধিক বেসরকারি জাহাজ নির্মাণ কারখানাগুলো কীর্তনখোলার ভয়াবহ ভাঙনের কবলে। পাশাপাশি চরবাড়িয়ার বিশাল জনপদও ভাঙনের মুখে।
সুগন্ধার ভয়াবহ ভাঙনের কবলে বরিশাল-ফরিদপুর-ঢাকা জাতীয় মহাসড়কের ‘বীরশ্রেষ্ঠ মহিউদ্দিন-জাহাঙ্গীর সেতু’ ও তার সংযোগ সড়ক। গত দশ বছরে নদী প্রায় এক কিলোমিটার এলাকা গ্রাস করে এখন সেতুর এ্যাবাটমেন্ট ও এপ্রোচ রোডে ছোবল মারতে উদ্যত। কিন্তু এ লক্ষ্যে প্রণীত প্রকল্প এখনো অনুমোদন লাভ করেনি।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পদ্মা

১১ জানুয়ারি, ২০২৩
৩১ অক্টোবর, ২০২২
৪ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ