পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় শতবছরের ব-দ্বীপ পরিকল্পনা অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (এনইসি)। পরিকল্পনাটি তৈরি করেছে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনৈতিক বিভাগ (জেইডি)। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় এটি অনুমোদন দেয়া হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন এনইসির সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি এ উদ্যোগকে ঐতিহাসিক বলে আখ্যায়িত করেন। বৈঠকে অর্থ প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান ও জেইডির সদস্য সিনিয়র সচিব ড. শামসুল আলম উপস্থিত ছিলেন। এ পরিকল্পনা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও গণভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ এর মাধ্যমে ১০০ বছরে বাংলাদেশ কোন পর্যায়ে যাবে সেই পরিকল্পনা চলছে। শেখ হাসিনা বলেন, ব-দ্বীপকে জলবায়ু পরিবর্তনসহ অন্যান্য অভিঘাত থেকে বাঁচাতে এ প্ল্যান। দেশের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতেই ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ বাস্তবায়ন হাতে নেয়া হচ্ছে। ব-দ্বীপ পরিকল্পনায় বন্যা, নদীভাঙন, নদীশাসন, নদী ব্যবস্থাপনা, নগর ও গ্রামে পানি সরবরাহ এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, নগরবন্যা নিয়ন্ত্রণ ও নিষ্কাশন ব্যবস্থাপনায় দীর্ঘমেয়াদি কৌশল নির্ধারণ করা হয়েছে।
পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, নতুন নতুন প্রকল্প বাস্তবায়ন এবং বিদ্যমান অবকাঠামো উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে ব-দ্বীপ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে প্রতিবছর জিডিপির (মোট দেশজ উৎপাদন) প্রায় আড়াই শতাংশ অর্থের প্রয়োজন হবে। ২০৩১ সাল নাগাদ প্রতি বছর ২৯ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রয়োজন হবে। নেদারল্যান্ডসের ডেল্টা ব্যবস্থাপনার অভিজ্ঞতার আলোকে বাংলাদেশ ব-দ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০ প্রণয়ন করা হয়েছে। পরিকল্পনার ধারণা অনুযায়ী, দেশজ আয়ের মোট চাহিদার আড়াই শতাংশের মধ্যে শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ অর্থায়ন বেসরকারি খাত থেকে এবং ২ শতাংশ সরকারি খাত থেকে জোগান দিতে হবে।
ব-দ্বীপ পরিকল্পনায় বেশিরভাগ সরকারি অর্থায়ন বন্যা থেকে রক্ষা, নদীভাঙন, নিয়ন্ত্রণ, নদীশাসন এবং নাব্য রক্ষাসহ সামগ্রিক নদী ব্যবস্থাপনা, নগর ও গ্রামে পানি সরবরাহ এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, নগর বন্যা নিয়ন্ত্রণসহ নদী ব্যবস্থাপনায় ব্যয় হবে। জিইডি সূত্রে জানা যায়, ব-দ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০ এর প্রাথমিক ধাপ বাস্তবায়ন হবে ২০৩০ সাল নাগাদ। এ পরিকল্পনা যাচাই-বাছাই শেষে প্রথম পর্যায়ে বাস্তবায়নের জন্য ৮০টি প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে ৬৫টি ভৌত অবকাঠামো সংক্রান্ত এবং ১৫টি প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা ও দক্ষতা উন্নয়ন ও গবেষণাবিষয়ক প্রকল্প রয়েছে। আর বাংলাদেশ ব-দ্বীপ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ছয়টি স্থানকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এগুলো হল: উপকূলীয় অঞ্চল, বরেন্দ্র ও খরাপ্রবণ অঞ্চল, হাওর এবং আকস্মিক বন্যাপ্রবণ এলাকা, পার্বত্যাঞ্চল ও নগর এলাকা। অঞ্চলভেদে আর্থ-সামাজিক বৈষম্য এবং এর সাধারণ ঝুঁকিগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে।
ব-দ্বীপ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে সরকারের ৩ হাজার ৭০০ কোটি মার্কিন ডলার প্রযোজন হবে। বর্তমান বাজারদরে স্থানীয় মুদ্রায় ৩ লাখ ৪ হাজার কোটি টাকা। যদিও এটি আগামী ১০০ বছরের পরিকল্পনা, আপাতত ২০৩০ সালের মধ্যে বাস্তবায়নের জন্য এতে ৮০টি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এ প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে এই বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ করা হবে।
বাংলাদেশকে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে তাপমাত্রা বৃদ্ধি, অতি বৃষ্টিপাত, বন্যা, খরা, নদীভাঙন, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতেই পরিকল্পনাটি করা হয়েছে। এই পরিকল্পনায় বন্যা ও নদীভাঙন রোধ, নদীশাসন, নদী ব্যবস্থাপনা, নগর ও গ্রামে পানি সরবারাহ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং নগর বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও পানিনিষ্কাশন ব্যবস্থাপনায় দীর্ঘমেয়াদি কৌশল নির্ধারণ করা হয়েছে। এসব কৌশলের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের ঝুঁকি নিরসনের পাশাপাশি পানিসম্পদ ব্যবহার করে অর্থনৈতিক কর্মকান্ড বাড়ানোর বিষয়ে জোর দেওয়া হয়েছে।
নতুন এই পরিকল্পনার প্রথম পর্যায়ে বৃহৎ পরিসরে তিনটি লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। সেগুলো হলো আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে চরম দারিদ্র্য দূর করা দেশকে ২০৩০ সালের মধ্যে উচ্চমধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করা এবং ২০৪১ সালের মধ্যে সমৃদ্ধ দেশের মর্যাদা অর্জন। ডিইডি সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা খাতে জিডিপি মাত্র দশমিক ৮ শতাংশ অর্থ খরচ হয়। এই অর্থ পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ব্যয় করা হয়। নতুন মহাপরিকল্পনায় ২০৩০ সাল নাগাাদ এই খরচ জিডিপির আড়াই শতাংশে উন্নীত করার কথা বলা হয়েছে বদ্বীপ পরিকল্পনায়।
যে কোন ভালো সরকারের নানা রকমের ভালো ভালো পরিকল্পনা গ্রহণের ক্ষমতা থাকে । আর এই সকল পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ক্ষমতা থাকাও জরুরি। সরকার দেশকে নিয়ে অনেক চিন্তা করছে। সে চিন্তার ফসল একশত বছরের পরিকল্পনা ব-দ্বীপ পরিকল্পনা অনেকে হয়তো ভাবলেন এ আবার কি রকম পরিকল্পনা। একশত বছরের পরিকল্পনা। হ্যাঁ, তাই। এটাই জাতি আশা করে।
দেশে সরকার পরিবর্তন হবে। নতুন নতুন সরকার আসতে পারে। তবে পরিকল্পনা থাকবে। পরিকল্পনায় নতুন নতুন বিষয় যোগ হবে। পরিকল্পনা সমৃদ্ধ হবে। তবে বাস্তবায়ন বন্ধ হবে না। দেশের স্বার্থে তো পরিকল্পনা আরও উন্নত হয়ে, সমৃদ্ধ হয়ে নতুন আলোকে জাতির সামনে বাস্তবায়নের জন্য উপস্থাপিত হওয়া উচিত। দেশের মানুষ উন্নতি চায়। দেশ এগিয়ে যাক, এই বাসনা সরকারের মনে রয়েছে। দেশ উন্নতি হলে সকলের ভাগ্য পরিবর্তন হবে। জীবন মানেও উন্নতি ঘটবে। সকলের জীবনে উজ্জ্বল উন্নতির আলোতে আলোকিত হবে। আগামী ২১০০ সাল পর্যন্ত আমরা বেঁচে থাকবো না। কিন্তু একশত বছর পর দেশের চেহারা কেমন হবে তা কল্পনা করে আরাম বোধ করছি। আগত প্রজম্মের সুখ-সমৃদ্ধি আমাদেরকে পুলকিত করে। আমরা উন্নত জীবন যাপন করতে চাই। উন্নত জীবনের জন্য চাই দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন। সরকারের ব-দ্বীপ পরিকল্পনা উন্নত বাংলাদেশ গড়ার ২১০০ সাল পর্যন্ত চমৎকার একটি উদ্যোগ। এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। ভবিষ্যৎ সরকার এই ব-দ্বীপ পরিকল্পনাকে আরো বেশি কার্যকর করে এগিয়ে নিয়ে যাবে। উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার জন্য প্রয়োজন তরুণ সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। তরুণরাই উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশের আসল শক্তি।
লেখক: সাবেক সহসভাপতি এফবিসিসিআই, বিটিএমইএ, বিজিএমইএ, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতি, প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।