পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব সারাবিশ্বে এখন স্পষ্ট। জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলে বৃদ্ধি পাচ্ছে দাবদাহ, মৌসুমি ঝড়, জলোচ্ছ্বাস, দীর্ঘ খরা, বাড়ছে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা এবং বিস্তার ঘটছে নানা রোগজীবানুর। বৈশ্বিক উষ্ণতা বেড়ে যাওয়ায় বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক ক্ষতির মাত্রাও অনেক বেড়েছে। গত ২৮ অক্টোবর জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন সংস্থা আংকটাড প্রকাশিত বাণিজ্য ও উন্নয়ন প্রতিবেদন বলা হয়, বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল দেশগুলো জলবায়ু পরিবর্তনজনিত দুর্যোগের যে ক্ষতি ভোগ করছে, তা উচ্চ আয়ের দেশগুলোর চেয়ে তিন গুণ বেশি। দক্ষিণ এশিয়ায় প্রাকৃতিক দুর্যোগে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে বাংলাদেশ ও ভারত। এর পরিণতি ভোগ করছে ৩০.৬ মিলিয়ন মানুষ। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে বাংলাদেশের দুই-তৃতীয়াংশ ভূমি ডুবে যাবে আগামী ৩০ বছরে। এভাবে সমুদ্রের উচ্চতা বাড়তে থাকলে দক্ষিণ এশিয়ায় ১০০ মিলিয়ন মানুষ বাস্তুচ্যুত হবে। এ প্রতিবেদনে চলতি বছরের জুলাইকে পৃথিবীর সবচেয়ে উষ্ণ মাস, আর সবচেয়ে উষ্ণ বছর হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে ২০২০ সালকে। অর্থাৎ বিশ্বের উষ্ণতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এ অবস্থায় জলবায়ু সংকট মোকাবেলায় আজ (৩১ অক্টোবর) স্কটল্যান্ডের গ্লাসগো শহরে শুরু হচ্ছে বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন। বৈশ্বিক উষ্ণতা কমানোর চ্যালেঞ্জ এ সম্মেলনের মূল বিষয় বলে পরিবেশ বিজ্ঞানীরা মনে করছেন। পরিবেশ বিজ্ঞানীরা বলছেন, এবারের গ্লাসগোর জলবায়ু সম্মেলন বিশ্ববাসীর কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। করোনামহামারীর আঘাতে বিশ্ব অর্থনীতি এখন জর্জরিত। এ অবস্থায় তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্য দায়ী গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ হ্রাসের বড় ধরনের লক্ষণ নেই, সেই সাথে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে দাবানল, ঘূর্ণিঝড়, বন্যা ও খরা আরো ভয়ংকর রূপ নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আঘাত করছে। এ পরিস্থিতিতে বিশ্ববাসী কপ সম্মেলনের দিকে তাকিয়ে থাকবে। সবার প্রত্যাশা কপে বিশ্বনেতারা সুনির্দিষ্টভাবে তুলে ধরবেন কিভাবে উষ্ণতা কমিয়ে তারা জলবায়ু সংকট মোকাবেলা করবেন। শুধু মুখে প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি ফোটালে হবে না, প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়নেরও সঠিক কর্মপন্থা থাকবে এটাই তাদের দাবি।
এবারের সম্মেলনে ১২০টি দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান বা তাদের প্রতিনিধিরা অংশ নেবেন। সম্মেলন শেষ হবে ১২ নভেম্বর। পরিবেশ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ মন্ত্রণালয়ের ৪৫ জন প্রতিনিধি, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং ব্যবসায়ীরা এই সম্মেলনে অংশ নেবেন। এবারের সম্মেলনে প্যারিস চুক্তি অনুযায়ী বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১ দশমিক ৫ ডিগ্রিতে রাখা, জলবায়ু অভিযোজন কার্যক্রম বৃদ্ধি, লোকসান ও ক্ষতির জন্য একটি পৃথক সেক্রেটারিয়েট স্থাপনসহ একাধিক দাবি থাকবে বাংলাদেশের।
প্রতিবছর একবার এই সম্মেলন হলেও ২০১৫ সালের প্যারিস চুক্তির পর এবারই বড় আকারে হচ্ছে জলবায়ু সম্মেলন। এতে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় অভিযোজন ও প্রশমনে সমান অর্থ বরাদ্দ চাইবে বাংলাদেশ। এ ছাড়া বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১ দশমিক ৫ ডিগ্রিতে সীমাবদ্ধ রাখা, অভিযোজন কার্যক্রম বৃদ্ধি, লোকসান ও ক্ষতির জন্য একটি সেক্রেটারিয়েট স্থাপনসহ আরও কিছু দাবি তুলবে বাংলাদেশ। সম্মেলনে উন্নত দেশগুলোর প্রতিশ্রুত ৫০০ মিলিয়ন ডলার দেওয়ার বিষয়েও আলোচনা হবে। এটাই হবে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এবারের সবচেয়ে বড় দাবি। এ নিয়ে ইতোমধ্যে নানা মাধ্যমে বিশেষজ্ঞরা আলোচনা শুরু করেছেন।
বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি ১ ডিগ্রি থেকে বেড়ে ১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে দাঁড়িয়েছে। পরিবেশ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, প্যারিস চুক্তির শর্ত হিসেবে এই শতাব্দীতে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি দেড় ডিগ্রিতে সীমিত রাখতে হবে। কার্বন নিঃসরণকারী দেশগুলোর প্রতিশ্রুত বার্ষিক ১০০ বিলিয়ন ডলার সহায়তাও নিশ্চিত করতে হবে। তবে বাংলাদেশ এই বিনিয়োগ আরও বাড়ানোর সুপারিশ করবে।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ুপরিবর্তন মন্ত্রী মো: শাহাব উদ্দিন ইনকিলাবকে বলেন, জলবায়ুর ঝুঁকি মোকাবিলায় সরকার ইতোমধ্যে নিজস্ব জলবায়ু ফান্ড গঠন করেছে। এ ছাড়া সরকার ডেল্টা প্ল্যান করেছে। বিভিন্ন ইভেন্টের মধ্য দিয়ে আমরা আমাদের অর্জনগুলো তুলে ধরবো। বিশ্বের উন্নত ও শীর্ষ কার্বন নিঃসরণকারী দেশগুলোর সমন্বয়ে গঠিত জি-৭ ইতোমধ্যে ঘোষণা দিয়েছে ২০৫০ সালের মধ্যে তারা কার্বন নিঃসরণ ‘নেট জিরো’ তে নামিয়ে আনবে। এবারের সম্মেলনে ওই ঘোষণার প্রতিফলন দেখা যাবে বলে আশা করছি। সবগুলো দেশের কাছে ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণ কমানোর পরিকল্পনা জানতে চাওয়া হবে। বাংলাদেশ এ ব্যাপারে তাদের কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরবে এবং তা বাস্তবায়নেরও জোরালো দাবি তুলে ধরবে।
ঐতিহাসিক প্যারিস জলবায়ু চুক্তি অনুসারে বিশ্ববাসীর সামনে করণীয় পরিষ্কার, এই শতাব্দীর শেষ নাগাদ বিশ্বের গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখতে হবে। তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্য দায়ী গ্রিনহাউস গ্যাসের নিঃসরণ ব্যাপকভাবে কমিয়ে আনা গেলেই শুধু তা সম্ভব। এ জন্য ২০৩০ সালের মধ্যে নিঃসরণ অর্ধেক করতে হবে। উল্টো বিশ্বজুড়ে নির্গমন বাড়ছে। এভাবে চলতে থাকলে গড় তাপমাত্রা ৩ ডিগ্রিরও বেশি বেড়ে যেতে পারে। বাংলাদেশের মতো যে উন্নয়নশীল দেশগুলো জলবায়ু সংকটে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তাদের বছরে ১০০ বিলিয়ন ডলার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি ধনী দেশগুলো কিভাবে রক্ষা করবে, সে দাবিও জোরালোভাবে তুলে ধরবে বাংলাদেশ। সেই সঙ্গে ২০২৫ সালের পর এ বাবদ বরাদ্দের অর্থের পরিমাণ কিভাবে আরো বাড়ানো যায় এবং দরিদ্র দেশগুলো জলবায়ু সংকটের কারণে প্রতিবছর যে ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়, তার ক্ষতিপূরণ কিভাবে দেওয়া যায়, তারও সুস্পষ্ট কর্মপরিকল্পনা দাবি জানাবে বাংলাদেশ।
প্রখ্যাত পানি সম্পদ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিশেষজ্ঞ ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত ইনকিলাবকে বলেছেন, গ্লাসগোর জলবায়ু সম্মেলন বিশ্বের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ সম্মেলনে বিশ্ব নেতৃবৃন্দ এক সাথে বসে ঠিক করবেন সামনের দিনগুলোতে পৃথিবী কিভাবে চলবে। প্যারিস জলবায়ু চুক্তি অনুসারে বিশ্ববাসীর সামনে করণীয় পরিষ্কার, এই শতাব্দীর শেষ নাগাদ বিশ্বের গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখতে হবে। বাংলাদেশের মতো যে উন্নয়নশীল দেশগুলো জলবায়ু সংকটে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তাদের বছরে ১০০ বিলিয়ন ডলার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি ধনী দেশগুলো কিভাবে রক্ষা করবে, তার একটি পরিকল্পনা কপে উঠে আসতে হবে। এবারের সম্মেলনের অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় থাকবে তেল, গ্যাস, কয়লার মতো জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার ও বন উজাড় বন্ধের চুক্তি, ২০৩০ সালের মধ্যে পেট্রল ও ডিজেলচালিত গাড়ি বিক্রি বন্ধ করা এবং মিথেন নিঃসরণ বন্ধ করার চুক্তি। তাই সব মিলিয়ে এ সম্মেলন বিশ্ববাসীর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। উন্নয়নশীল দেশ হিসাবে বাংলাদেশের চাওয়া থাকবে তাপমাত্রা বৃদ্ধি কমাতে উন্নত দেশগুলো দ্রুত অর্থসহায়তা এবং প্রযুক্তি প্রদান করবে। তিনি বলেন, জলবায়ু সংকট মোকাবেলায় অর্থায়ন খুব গুরুত্বপূর্ণ। আর এই অর্থ জোগানে নেতৃত্ব দেওয়ার কথা যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, ফ্রান্স, ইতালি, যুক্তরাজ্য, জাপান, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ার মতো উন্নত দেশগুলোর। ২০২০ সাল পর্যন্ত উন্নত দেশগুলো বছরে ১০০ বিলিয়ন ডলার জলবায়ু অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। তবে ওই সিডি থেকে পাওয়া তথ্য থেকে এটা স্পষ্ট যে তারা প্রতিশ্রুতি পূরণে ব্যর্থ হয়েছে। এখানে ২০ বিলিয়ন ডলারের ব্যবধান রয়েছে, যা দেশগুলোকে পূরণ করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।