Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বাংলাসাহিত্যে ঋদ্ধ সংযোজন

বুক কর্ণার কবি মতিউর রহমান মল্লিক রচনাবলি

রফিক মুহাম্মদ | প্রকাশের সময় : ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১২:০৭ এএম

আশির দশকে বাংলাদেশের ইসলামী সাহিত্য ও সংস্কৃতি চর্চার যে ক্ষেত্রে তৈরী হয় মতিউর রহমান মল্লিক (১৯৫৪-২০১০) হলেন তার পথ প্রদর্শক। বিশ্বাসী চেতনার শৈল্পিক ধারায় সাহিত্য সংস্কৃতি চর্চার এক নতুন ভুবনের স্রষ্টা বলা যায় তাকে। বিশেষ করে বাংলা কবিতা ও গানের ক্ষেত্রে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম এবং কবি ফররুখ আহমদের ধারাকে নতুন করে বেগবান এবং উজ্জ্বল করেছেন তিনি। এক কথায় বলা যায় মতিউর রহমান মল্লিক বাংলাসাহিত্যে ঐতিহ্য এবং বিশ্বাসের ধারা চর্চার নতুন ক্ষেত্র তৈরীর প্রধান সিপাহসালার।

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের পর এক বিষ্ময়কর বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারী ছিলেন কবি মতিউর রহমান মল্লিক। তিনি একাধারে কবি, গীতিকার, সুরকার, গায়ক, প্রাবন্ধিক, অনুবাদক, সংগঠক এবং অসাধারণ বাগ্মী। তিনি যেমন তার সুললিত কন্ঠের মাধুর্যে শ্রোতাদের মুগ্ধ করতেন তেমনি তার বক্তব্যেও ছিল এক অপূর্ব মোহময়তা। আরবি, ফারসি, উর্দুসহ আরও কয়েকটি ভাষায় ছিল তার পারদর্শিতা। সব মিলিয়ে আশির দশকে বাংলা সাহিত্যে বিশ্বাসী চেতনার যে বৈপ্লবিক সূচনা তার মহানায়ক হলেন কবি মতিউর রহমান মল্লিক।
কবি মতিউর রহমান মল্লিকের সাহিত্যাঙ্গণে সত্তর দশকে যাত্রা শুরু হলেও তার বিকাশ বা পূর্ণপ্রকাশ ঘটে আশির দশকে। মতিউর রহমান মল্লিকের প্রথম গীতিকাব্য ‘ঝংকার’ প্রকাশিত হয় ১৯৭৮ সালে। তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘আবর্তিত তৃণলতা’ ১৯৮৭ সালে প্রকাশিত হয়। এর ১৪ বছর পর ২০০১ সালে তার লেখা দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘অনবরত বৃক্ষের গান’ এবং তারও ৪বছর পর ২০০৫ সালে প্রকাশিত হয় তার তৃতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘তোমার ভাষার তীক্ষè ছোরা’।
কবি মতিউর রহমান মল্লিকের কবিতার মূল প্রেরণা বা উৎস শক্তি হলো আধ্যাত্মবোধ। তবে এই আধ্যাত্মবোধকে তিনি অত্যন্ত রোমান্টিকতার মধ্য দিয়ে প্রকাশ করেছেন। তার কবিতায় স্রষ্টার সাথে সৃষ্টির নিগূঢ় প্রেম অত্যন্ত শৈল্পিকভাবে প্রস্ফুটিত হয়েছে।
একটি হৃদয় কলির মতো, ওলির মতো,/ মেঘনা নদীর পলির মতো.... একটি হৃদয় লতার মতো, লজ্জাবতীর পাতার মতো/অনেক কতকথার মতো...। (একটি হৃদয়-মতিউর রহমান মল্লিক রচনাবলী পৃষ্টা-৩৯- কাব্যগ্রন্থ-আবর্তিত তৃণতলা)
অথবা
তবুও আমার মনজিলে যাওয়া চাই,/.... খোদার রহম-ঋদ্ধ সেই সে মনজিল পাওয়া চাই/...যত দূরে থাক তবু যে আমার মনজিলে যাওয়া চাই। (মনজিল কত দূরে-মতিউর রহমান মল্লিক রচনাবলী পৃষ্টা-৯১ কাব্যগ্রন্থ-অনবরত বৃক্ষের গান)
কবি মতিউর রহমান মল্লিক গীতিকার হিসেবে ব্যাপক নন্দিত এবং আলোচিত। তবে প্রবন্ধ, অনুবাদ এবং সম্পাদক হিসেবেও তিনি সফল। সংগঠক এবং সাংস্কৃতিক আন্দোলনের অগ্রসেনানী হিসেবে তার সাফল্য আকাশ ছোঁয়া। ১৯৭৮ সালে সাংস্কৃতিক সংগঠন সাইমুম শিল্পীগোষ্ঠী গঠন করে তিনি এদেশের ইসলামী সংগীতের ক্ষেত্রে নতুন বিপ্লবের সূচনা করেন। তোমার সৃষ্টি যদি হয় এতো সুন্দর/ না জানি তাহলে তুমি কত সুন্দর -কত সুন্দর...। অথবা-বাংলাদেশের প্রান্ত হতে/সালাম জানাই হে রাসূল...। এরকম অসংখ্য জনপ্রিয় হামদ, নাত ও ইসলামী সংগীত রচনা করে কবি মতিউর রহমান মল্লিক নব দিগন্ত উন্মোচন করেছেন। অনন্য প্রতিভাবান সৃজনশীল এই কবি সবাইকে ছেড়ে ২০১০ সালে পরলোক গমন করেন। তবে তিনি তার কবিতা এবং গানের কথা এবং সুর তথা তার অনন্য অসাধারণ সৃষ্টির মধ্য দিয়ে সবার হৃদয়ে চির অমর হয়ে আছেন।
কবি মতিউর রহমান মল্লিকের ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অসংখ্য সৃষ্টি থেকে কিছু একত্রিত করে দেশীয় সাংস্কৃতিক সংসদ ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে মতিউর রহমান মল্লিক রচনাবলী ১ম খন্ড প্রকাশ করেছে। এ রচনাবলীর প্রধান সম্পাদক কবি আল মাহমুদ, সম্পাদক আবুল আসাদ, নির্বাহী সম্পাদক কবি আসাদ বিন হাফিজ এবং সহকারী সম্পাদক কবি আফসার নিজাম ছাড়াও রয়েছে একটি শক্তিশালী সম্পাদনা পরিষদ। তাদের সুচিন্তিত সম্পাদনায় অত্যন্ত চমৎকার গ্রন্থ ‘মতিউর রহমান মল্লিক রচনাবলী’ ১ম খণ্ড প্রকাশিত হয়েছে। এ রচনাবলীতে আছে কবির তিনটি কাব্যগ্রন্থ, তিনটি গীতিকাব্য তথা গানের বই, ২টি ছড়াগ্রন্থ, একটি প্রবন্ধের বই, টিভি অনুষ্ঠান, চিঠি এবং কিছু ছবির অ্যালবাম। শিল্পী হামিদুল ইলামের শৈল্পিক প্রচ্ছদ এ গ্রন্থকে খুবই দৃষ্টি নন্দন করেছে। মোট ৪৭২ পৃষ্টার এই মূল্যবান গ্রন্থটির মূল্য মাত্র ৬০০/০০(ছয় শত) টাকা। গ্রন্থটি অবশ্যই সবার সংগ্রহে রাখার মতো। এর পাঠে মেধা মনন যেমন ঋদ্ধ হবে তেমনি মানবিক চেতনারও উন্মেষ ঘটবে। এ গ্রন্থের বহুল পাঠ একান্ত প্রত্যাশা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বাংলাসাহিত্যে

২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৮
আরও পড়ুন