পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
উত্তাল পদ্মার ভাঙ্গনের ঢেউ গিয়ে লেগেছে মাদারীপুরের শিবচরেও। পদ্মার কড়াল গ্রাসে শিবচর উপজেলার ইউনিয়ন পরিষদ, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, হাট-বাজার, কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ অন্তত কয়েক শ’ ঘর বাড়ি ভাঙ্গনের কবলে পরেছে। পদ্মার পাশাপাশি শাখা নদী আড়িয়াল খাঁ’র পানি কিছুটা বৃদ্ধি পাওয়ায় মাদারীপুর শহর রক্ষা বাঁধ হুমকির সম্মুখীন হয়েছে। ফলে হুমকীর মুখে পড়েছে শিবচরে চরজানাজাত ইউনিয়নের প্রস্তাবিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের জন্য প্রাথমিকভাবে চূড়ান্ত করা স্থানগুলোতেও।
স্থানীয় সূত্র জানায়, পদ্মার আগ্রাসী রুপ বিমানবন্দরের জন্য প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত স্থানগুলোকেও হুমকীর মুখে ফেলেছে।
স্থানীয়রা বলছেন, মাদারীপুরে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হলে শিবচর উপজেলা হবে দক্ষিণাঞ্চলের রোল মডেল। আবার তারাই আশংকা প্রকাশ করছে নদী ভাঙ্গনে হুমকির মুখে পরতে পারে প্রস্তাবিত বিমানবন্দর। সরেজমিনে শিবচর উপজেলার চরজানাজাত এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, চরের এক পাশে ড্রেজার দিয়ে বালু ফেলে ভরাট করা হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানালেন, বালু ভরাট করা হচ্ছে ওই স্থানেই হবে বিমানবন্দর। পাশেই পদ্মার শাখা আড়িয়াল খাঁ নদী। নদী ভাঙ্গনে বিভিন্ন পরিবার এখন আশ্রয় নিয়েছে এক পাশে। তবে ওইখানে দায়িত্বরত কাউকেই পাওয়া যায়নাই। দীর্ঘদিন ধরে বালু ভরাটের কাজও বন্ধ। কেন বন্ধ রয়েছে তা স্থানীয় কেউ বলতে পারেনি। তাই বালু ভরাটের ওই চরটি এখন শিশুদের ফুটবল খেলার মাঠ হয়েছে। তারা আনন্দের সাথে ফুটবল খেলছে।
চলতি বছর পদ্মা নদীর পানি বাড়ার সাথে মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার ৪ ইউনিয়ন নিয়ে মূল ভূখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন চরাঞ্চল প্লাবিত হয়ে ভয়াবহ ভাঙ্গন আক্রান্ত হয় চরজানাজাত, বন্দরখোলা ও কাঠালবাড়ি ইউনিয়ন। গত কয়েক মাসে অশংখ্য ঘরবাড়ি বিলীন হয় পদ্মার গর্ভে। চরজানাজাত ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আব্দুল মালেক তালুকদার বলেন, দেশের অন্যান্য চরের চাইতে আমাদের চরগুলো অনেক আধুনিক ছিল। বড় বড় ভবনের স্কুল, পাকা রাস্তা, ইউনিয়ন পরিষদ, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সবই ছিল। কিন্তু প্রতি বছরের ভাঙ্গনে আমরা এখন নিঃস্ব। এ বছরই স্কুল, হাট-বাজারসহ অশংখ্য ঘর বাড়ি নদীতে বিলীন হয়েছে। আমরা ভাঙ্গন প্রতিরোধ চাই। চরাঞ্চল রক্ষায় স্থায়ী বাধ দরকার।
তিনি বলেন, প্রস্তাবিত চরজানাজাত এলাকার বিমানবন্দর ভাঙ্গনের কবলে পরতে পারে। তবে এ বিমানবন্দর কাজ হটাৎ করে বন্ধ রয়েছে। কেন বন্ধ রয়েছে তা তিনি বলতে পারেননি। তবে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কারনে বিমানবন্দর তৈরীর কাজ বন্ধ থাকতে পারে বলে ধারনা করছেন তিনি।
ষাটোর্দ্ধ দেলোয়ার গাজী জানান, এই চরে বিমানবন্দর হওয়ার জন্য সরকার চরজানাজাত এলাকায় আমার ৮০০শতাংশ জমি অধিগ্রহন করেছে। প্রতি শতাংশের জন্য ২৩হাজার টাকা দাম নির্ধারন করলেও যা পেয়েছি তা খুবই কম। এককথায় মরে গেছি। তিনি বলেন, কাঠালবাড়ি, মাদবরের চর এলাকার অনেকেরই জমি আমারমতো অধিগ্রহন করেছে। অনেকে যে টাকা পেয়েছে তা দিয়ে অন্য জায়গায় ঘর করে বসবাস করতে দুস্কর হয়ে পরবে। তবে তাদের শঙ্কা পদ্মায় এবার যে ভাবে সব গ্রাস করে নিচ্ছে তা প্রস্তাবিত বিমানবন্দর ঝুকির মধ্যে পরতে পারে।
স্থানীয় আবু মাদবর জানায়, তার বন্ধু বাহাদুর হাওলাদারের ২০বিঘা, শুকুর বেপারীর ৫০বিঘা জমি অধিগ্রহন করেছে সরকার। তবে দীর্ঘদিন ঘুরে তারা টাকা তুলতে পারলেও বিভিন্ন অজুহাতে টাকা কেটে রাখায় এখন পথে বসেছে তারা।
বিমানবন্দরের জন্য সরকার সাড়ে ৪কাঠা জমি অধিগ্রহন করেছে ৫৭বছর বয়সী শামসুদ্দিন সরকারের। তিনি ক্ষোভের সাথে বলেন, আমাদের এলাকায় বিমানবন্দর হবে এতো খুশির খবর কিন্তু আমার খুশি মারা গেছে, টাকা উঠাইতে যা খরচ হইছে আর যা পাইছি তা দিয়ে মাথাগুজার ঠাঁইটুকু হবে কিনা সন্দেহ আছে।
আবুল হোসেন জানায়, তার বাবা আব্দুল আজিজ খানের ১১বিঘা জমি অধিগ্রহন করেছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত আমরা টাকা পাইনি।
স্থানীয় রাশেদুল ইসলাম বলেন, বিমানবন্দর হবে খুশির কথা, আমাদের এলাকার উন্নয়ন হবে। বিদ্যুৎ আসবে, গ্যাস আসবে। কিন্তু যে ভাবে পদ্মার ভাঙ্গন শুরু হয়েছে আবার আড়িয়াল খাঁ নদীর পানিবৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে এই চরের বসবাসরত বাসিন্দারাই আতংকের মধ্যে রয়েছে। ফলে হুমকির মুখে পরতে পারে প্রস্তাবিত বিমানবন্দরটি।
সরেজমিনে দেখা গেছে শিবচরের চরজানাজাত ইউনিয়নের পদ্মার ভাঙ্গনে বিলিন হয়ে যাওয়া বেশ কয়েকটি পরিবার বিমানবন্দরের জন্য যেখানে বালু ফেলা হয়েছে সেখানে আশ্রয় নিয়েছে। আশ্রয়হীন এই পরিবারগুলোর দাবী যেভাবে পদ্মায় সব গ্রাস করে নিয়ে যাচ্ছে সেই হিসেবে বিমানবন্দরের জন্য অধিগ্রহন করা অনেক জায়গাই নদীতে চলে যেতে পারে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণের লক্ষ্যে সম্ভাব্যতা যাচাই করতে ২০১৬ সালে জাপানি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিপ্পন কোই কোম্পানি লিমিটেডকে কার্যাদেশ দেয় সরকার। সে বছর ১অক্টোবর থেকে প্রতিষ্ঠানটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর নির্মাণের জন্য সমীক্ষার কাজ শুরু করে। এই সমীক্ষার জন্য ১৩৬ কোটি ৭৫ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছিল। আর বিমানবন্দরটি নির্মানে প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছে ১৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। প্রায় আট হাজার একর জমির নিয়ে অত্যাধুনিক এ বিমানবন্দরটি নির্মাণ হবে বলে জানাগেছে।
প্রসঙ্গত; এরআগে মুন্সীগঞ্জের আড়িয়াল বিলে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মানের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সরকার। ২৫হাজার একর জমি নিয়ে বিমানবন্দরটি নির্মানের পরিকল্পনা ছিল। এরমধ্যে ১০হাজার একর জমিতে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর আর ১৫ হাজার একর জমিতে বঙ্গবন্ধু সিটি গড়ে তোলার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। কিন্তু স্থানীয় এলাকাবাসীর ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে ওই সিদ্ধান্ত থেকে সরকার সরে আসতে বাধ্য হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।