Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পদ্মায় বিলীন হাজার কোটি টাকার সম্পদ

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১২:০২ এএম

ভয়াবহ নদীভাঙনের কবলে শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলাসহ আশেপাশের বেশ কয়েকটি অঞ্চল। পদ্মার ভাঙনে এরই মধ্যে প্রায় সাত হাজার পরিবার গৃহহীন হয়েছে। নদীতে চলে গেছে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, ফসলি জমি, হাসপাতাল, স্কুল-কলেজ-মাদরাসা ও মসজিদ-মন্দির। এখনও ভাঙন-শঙ্কায় নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে হাজার হাজার মানুষ। পানি উন্নয়ন বোর্ডের হিসাব অনুযায়ী, নড়িয়ায় সাত বছরে ভেঙেছে ১৩ দশমিক ২৬ বর্গকিলোমিটার এলাকা। এর মধ্যে ২০১৭ সাল থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত ভেঙেছে চার বর্গকিলোমিটার। আর জুলাই থেকে শুরু হওয়া তীব্র ভাঙনে আড়াই মাসে নদীতে চলে গেছে প্রায় তিন বর্গকিলোমিটার এলাকা। অভিযোগ রয়েছে, এ অঞ্চলের ভাঙন রোধে ৯ কোটি ৮৭ লাখ ৬০ হাজার টাকার মূল প্রকল্প পাস কাটিয়ে অন্য খাতে ব্যয় করা হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, নড়িয়া উপজেলায় মোট ১৪টি ইউনিয়ন রয়েছে, যার মধ্যে তিনটি ইউনিয়নের প্রায় ৮০ ভাগ নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। শরীয়তপুর জেলার বাঁশতলা থেকে শুরু করে সুরেশ্বর পর্যন্ত কয়েক হাজার ঘরবাড়ি এখন নদীতে। কেদারপুর, মুক্তারের চর, চন্ডীপুর ও মুলফৎগঞ্জ বাজারসহ বেশ কয়েকটি অঞ্চলের অস্তিত্ব বিলীন হতে বসেছে। কেদারপুর ইউনিয়নের ৮০ ভাগই নদীতে। এছাড়া কুন্ডেরচর, চরজাজিরা অঞ্চলের অধিকাংশই পদ্মায় গিলেছে।
কেদারপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ইমাম হোসেন দেওয়ান জানান, গত দেড়-দুই মাসের ভাঙনে তারা সবচেয়ে বেশি সম্পদ হারিয়েছেন। তিনি বলেন, নড়িয়ার একমাত্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি আমরা হারাতে বসেছি। ৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালটি এ অঞ্চলের মানুষের জন্য আশীর্বাদ হয়ে এসেছিল। হাসপাতালের একটি অংশ ইতোমধ্যেই নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এছাড়া লাইফ কেয়ার ক্লিনিক ও দেওয়ান ক্লিনিকেরও আর অস্তিত্ব নেই। শেয়ার আলী মাদবরের প্রাইমারি স্কুল, চেরাগ আলী বেপারীকান্দি সরকারি প্রাইমারি স্কুল, চরনড়িয়া প্রাইমারি স্কুল, পূর্ব নড়িয়া প্রাইমারি স্কুল এখন শুধুই স্মৃতি। হাসান মার্কেট, বেগম রওশন আরা শপিং কমপ্লেক্সও এখন নদীতে। এসবের সম্পদমূল্য হাজার কোটি টাকার ওপরে।
স্থানীয়রা জানান, ১৯৯৭ সাল থেকে কম-বেশি ভাংছে শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া উপজেলাসহ আশপাশের এলাকা। মাঝে বেশ কয়েক বছর ভাঙন কিছুটা কমেছিল। তবে এবার হঠাৎ করে আগ্রাসী রূপ নিয়েছে পদ্মা। এক বছর ধরে বড় ধরনের ভাঙন শুরু হয়েছে। যা গত আড়াই মাসে ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। কয়েক বছর ধরে ফসলি জমি ভাংছিল। তখন এত বেশি সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। তবে এবারের ভাঙনে বেশি সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ঘরবাড়ি, স্কুল-কলেজ-মাদরাসা, হাসপাতাল, ক্লিনিক, বাজার, মসজিদ-মন্দির, রাস্তাঘাট ও বড় বড় স্থাপনা সবকিছুই এবার ভেঙেছে।
অভিযোগ রয়েছে, এ অঞ্চলের ভাঙন রোধে ৯ কোটি ৮৭ লাখ ৬০ হাজার টাকার মূল প্রকল্প পাস কাটিয়ে অন্য খাতে ব্যয় করা হয়েছে। নদীর বাঁধ নির্মাণ না করে একটি রেস্টহাউস ও একটি বিভাগীয় অফিস নির্মাণ হয়েছিল তখন। ওই প্রকল্পের আওতায় ছিল পদ্মা নদীর দক্ষিণ পাড়ে বাঁধ নির্মাণ, বাঁধের ফাঁকে ফাঁকে খাল খনন ও পদ্মার শাখানদীর নাব্য রক্ষা। সময়মতো তা না করায় পদ্মা এবার হাজার কোটি টাকার সম্পদ গিলে ফেলেছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পদ্মা

১১ জানুয়ারি, ২০২৩
৩১ অক্টোবর, ২০২২
৪ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ