পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
বাংলাদেশের ভু-খন্ড ও আভ্যন্তরীণ বন্দর ব্যবহার করে ভারতকে ট্রানজিট, ট্রান্সশিপমেন্টের নামে করিডর দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি চট্টগ্রাম বন্দরকে ভারতের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়ার দাবী জানিয়েছে ভারত। ভারতীয় দাবীর প্রতি সাড়া দিয়ে এবার চট্টগ্রাম ও মংলা সমুদ্রবন্দর ভারতের জন্য উন্মুক্ত করা হল। ভারতকে চট্টগ্রাম ও মংলা সমুদ্রবন্দর ব্যবহারের সুযোগ সোমবার মন্ত্রীসভায় অনুমোদিত হয়েছে। মন্ত্রী পরিষদ সচিব এ প্রসঙ্গে বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে চলমান সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক সুদীর্ঘ করার উদ্দেশ্যে ‘এগ্রিমেন্ট অন দ্য ইউজ অব চট্টগ্রাম অ্যান্ড মোংলা পোর্ট ফর মুভমেন্ট অব গুডস টু অ্যান্ড ফ্রম ইন্ডিয়া বিটুইন বাংলাদেশ অ্যান্ড ইন্ডিয়া’ নামের খসড়ায় অনুমোদন দেয়া হয়েছে। দেশের বৈদেশিক বাণিজ্যে চট্টগ্রাম বন্দর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গেটওয়ে। বাণিজ্যবৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে আমদানী-রফতানীর ক্ষেত্রে চট্টগ্রাম বন্দরের সুযোগ সুবিধা, নিরাপত্তা ও সক্ষমতা বৃদ্ধির উপর জোর দিয়ে আসছেন দেশের ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারিরা। বন্দরের উপর ক্রমবর্ধমান নির্ভরতা, জাহাজ ও কন্টেইনার জট কমিয়ে আনতে নতুন নতুন টার্মিনাল নির্মান, বে-টার্মিনাল এবং ক্রেন সুবিধা বৃদ্ধির দাবী দীর্ঘদিনের। এ লক্ষ্যে বন্দর কর্তৃপক্ষ ও সরকারের পক্ষ থেকে মতবিনিময় ও কমিশন গঠন করা হলেও বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্যোগ এখনো বাস্তবায়িত হয়নি। তবে ভারতকে বন্দর ব্যবহারের সুযোগ দিতে বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য অপেক্ষাও করা হয়নি।
বাংলাদেশে একটি গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মানসহ বন্দর ব্যবহার নিয়ে দুই আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দি দেশ ভারত ও চীনের মধ্যে এক ধরনের মনস্তাত্তিক লড়াই আছে। অন্যদিকে আঞ্চলিক বাণিজ্যবৃদ্ধি এবং কানেক্টিভিটির কথা বলা হলেও ভারত ছাড়া নিকটতম অন্য প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে বাণিজ্যিক যোগাযোগ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জন্য প্রধান অন্তরায় হয়ে আছে ভারত। স্থলবেষ্টিত দেশ নেপালের সাথে সরাসরি স্থল যোগাযোগের ক্ষেত্রে ভারতের সামন্য কয়েক মাইল ভুমি ব্যবহারের অনুমোদন এবং মিয়ানমান হয়ে চীনের সাথে সরাসরি এশিয়ান হাইওয়ের সাথে যুক্ত হওয়ার প্রতিবন্ধকতা এর বড় প্রমাণ। অবশ্য ভারতকে চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহারের অনুমোদনের বর্তমান খসড়ায় নেপাল ও ভ‚টানের জন্যও সুযোগ রাখা হয়েছে বলে জানা যায়। ভারতের ট্রানজিট-ট্রানশিপমেন্ট অনুমোদনের আগে বলা হয়েছিল, এই চুক্তি হলে ভারতীয় পণ্যের শুল্ক দিয়ে বাংলাদেশ সিঙ্গাপুরের মত ধনী হয়ে যাবে। বাস্তবে দেখা যাচ্ছে দেশের মানুষের রাজস্বের হাজার হাজার কোটি টাকার অবকাঠামোগত সুযোগসুবিধা ব্যবহার করেও ভারত নামমাত্র মাশুলে কার্যত বিনা মাশুলে ট্রানশিপমেন্ট সুবিধা ভোগ করছে। অন্যদিকে বাংলাদেশের ভ‚-খন্ড ব্যবহার করে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সাতটি রাজ্যে পণ্য সরবরাহের সুবিধা দেয়ার কারণে এ অঞ্চলে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের ব্যবসার সুযোগ অনেকটা সঙ্কুচিত হয়ে গেছে। অর্থাৎ নামমাত্র মাশুলে ভারতকে পণ্য সরবরাহের সুযোগ দিয়ে বাংলাদেশ দু’দিক থেকেই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এবারের বন্দর সুবিধার ক্ষেত্রে গ্যাট নীতির আওতায় ট্যারিফ আদায় করা হবে এবং বন্দর থেকে পণ্য খালাসের পর তা ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে পৌছে দিতে বাংলাদেশের পরিবহন ব্যবহৃত হবে এবং পরিবহন ও অবকাঠামো ব্যবহারের খরচাদি দিতে হবে বলে বলা হলেও এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কোন প্রস্তাব আছে কিনা তা জানা যায়নি।
নির্বাচনের আগে ভারতকে বন্দর ব্যবহারের নতুন সুবিধা দেয়ার পেছনে কোন রাজনৈতিক কারণ থাক বা না থাক, সাম্প্রতিক সময়ে আঞ্চলিক রাজনীতিতে যে নতুন মেরুকরণ ঘটে চলেছে তাতে এটি নি:সন্দেহে বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের অবস্থানই নির্দেশ করে। গত একদশকের নানা রাজনৈতিক বিবর্তনের পর বিশ্বের একমাত্র হিন্দুরাষ্ট্র নেপাল তার অবস্থান পাল্টে চীনের দিকে ঝুঁকে পড়েছে। সারভৌমত্ব ও আত্মমর্যাদার খাতিরে ভারতের উপর নির্ভরতা এড়াতে নেপাল চীনের ৪টি বন্দর ব্যবহারে যুক্তিবদ্ধ হয়েছে। এর আগেই শ্রীলঙ্কা চীনের সাথে গাঁটছড়া বেঁধেছে। সাম্প্রতিক সময়ে এমনকি ভ‚টান, মালদ্বীপকেও ভারত বিরোধি অবস্থানে সরে যেতে দেখা যাচ্ছে। এ সপ্তাহে অনুষ্ঠিত ভ‚টানের জাতীয় নির্বাচনের ক্ষমতাসীন ভারতপন্থী দল শুধু ক্ষমতাই হারায়নি তারা তৃতীয় অবস্থান লাভ করেছে। গতবছর দোকলামের উপর ভ‚টানের দাবীকে কেন্দ্র করে চীনের সাথে ভারতের যুদ্ধাবস্থায় উপনীত হওয়ার পর ভ‚টানের রাজনীতিতে এই পরিবর্তনই বলে দেয়, সেখানকার জনগন ভারতের আধিপত্যবাদি নীতি মানতে পারছেনা। রোহিঙ্গা সংকটে পশ্চিমা বিশ্ব বাংলাদেশের প্রতি সমর্থন প্রকাশ করলেও ভারত সরকার বাংলাদেশের পাশে দাঁড়ায়নি। নরেন্দ্র মোদি মিয়ানমার গিয়ে তাদের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করে এসেছিলেন। অথচ বাংলাদেশ উজাড় করে ভারতকে তার প্রার্থিত সম্ভাব্য সবকিছুই দিয়েছে। বন্দর ব্যবহারের অনুমোদন দেয়ার আগেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, তিনি ভারতকে যা দিয়েছেন তা তাদের আজীবন মনে রাখতে হবে। সাম্প্রতিক সময়ে আসাম ও পশ্চিমবঙ্গ থেকে কথিত অবৈধ বাঙ্গালীদের বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয়ার হুমকি দেয়া হচ্ছে। এ থেকে বুঝা যাচ্ছে ভারতীয় রাজনীতিকরা বাংলাদেশকে ভুলে যায়নি। এভাবেই তারা বাংলাদেশের অবদান ও বন্ধুত্বের প্রতিদান দিতে চাইছে। আসামের পর মেঘালয়, মিজোরাম, ওড়িষ্যায় এখন বাংলাদেশী খেদানোর ডাক-ঢোল পিটাচ্ছে বিজেপি। এহেন বাস্তবতায় বন্দরসহ ভারতকে বাংলাদেশের জন্য স্পর্শকাতর ও ঝুঁকিপূর্ণ সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করা শর্তহীন হতে পারেনা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।