Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

চরম দুর্দশায় লাখো মানুষ

পদ্মা মেঘনা ব্রহ্মপুত্রে ভাংছে ঘর ভাংছে স্বপ্ন

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১২:৩৬ এএম

বিয়ের পর আসিয়া বেগম স্বামীর ঘরে আসেন কয়েক দশক আগে। বছরের পর বছর ধরে সুখের সংসার গড়েছেন। ইট নিয়ে ঘর তুলেছেন। মেয়েদের স্বামীর বাড়িই আসল বাড়ি। সুখেই চলছিল স্বামী-সন্তানদের নিয়ে ঘর-সংসার। সেই ঘর সর্বনাশা পদ্মায় চোখের পলকে নদীতে বিলীন হয়ে গেল। দালানের একেকটি ইট যেন একেকটি শেল হয়ে বিঁধেছে এই বৃদ্ধা আসিয়ার বুকে। কিংকর্তব্যবিমূঢ় সবাই; কিছুই করার নেই। ফ্যালফ্যাল চোখে চেয়ে চেয়ে দেখেছেন, কীভাবে একটি সোনার সংসার ভেঙে তছনছ হয়ে গেল।
উত্তর কেদারপুর গ্রামের গৃহবধূ পার্বতী রানী চোখ মুছতে মুছতে জানালেন, পদ্মার ভাঙনে মাটি ধসে স্বামীকে হারিয়েছেন। এক মাসেও তার কোনো সন্ধান পাননি। শেষ আশ্রয় বসতবাড়িটিও পদ্মায় বিলীন হয়ে গেছে। দূর থেকে তাকিয়ে দেখেন মাঝ নদীর দিকে; ওই খানে আমাদের ঘর ছিল। এখন আর জীবনে কিছুই অবশিষ্ট নেই এ মানুষটির। কান্নাই এখন আমার জীবনের বড় সত্য। শুধু নড়িয়া উপজেলার আসিয়া বেগম বা পার্বতী রানী নয় নদীপাড়ের লাখ লাখ মানুষের বাড়িঘর আর স্বপ্ন নিয়েছে সর্বনাশা পদ্মা। এক অবর্ণনীয় দুঃখ আর ভয়াল ট্র্যাজেডির নাম যেন পদ্মা নদী। প্রতিবছরই এমন দুঃখের অতল সাগরে হাবুডুবু খায় লাখ লাখ মানুষ। কিন্তু দেখার যেন কেউ নেই।
ভাঙন চলছেই। নদীর বড় বড় ঢেউ বিশাল বিশাল স্থাপনা মুহূর্তেই গিলে খাচ্ছে। ভাঙন এতই ভয়াবহ আকারধারণ করছে যে, চোখের পানি মিশিয়ে নদীর দিকে তাকিয়ে থাকা ছাড়া মানুষের অন্যকোনো উপায় কোন উপায় থাকে না। গ্রামের পর গ্রাম নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে; তলিয়ে যাচ্ছে হাজার হাজার মানুষের আগামীর স্বপ্ন। সর্বশান্ত হয়ে ঠিকানাহীন হয়ে পড়ছে হাজার হাজার পরিবার। আজ যিনি ভূ-সম্পদের মালিক, সমাজে সম্মানীয় বা সমাজসেবক; একরাতেই তিনি হয়ে যান সহায়সম্বল ও গৃহহীন এক নিঃস্ব মানুষ। সকাল বেলায় যে আমীর/ সন্ধায় সে ফকির। অনেকে সবকিছু হারিয়ে বসবাস করছেন খোলা আকাশের নিচে। আবার কেউ রাস্তার পাশে বা অন্যের জমিতে খুপরি ঘর তুলে কোনো রকমে মাথা গুঁজে আছেন। রাক্ষসী পদ্মার ভাঙনে নিঃস্ব হয়ে তাদের দিন কাটছে সীমাহীন কষ্টে আর চোখের পানিতে। নদীভাঙা মানুষের আহাজারিতে এখন ভারী হয়ে উঠেছে শরীয়তপুরের পদ্মার পাড়। খাদ্য নেই, আশ্রয় নেই, নেই কোন সাহায্য সহযোগিতা। ত্রাণ বিতরণ শোনা যাচ্ছে শুধু ক্যামেরা ট্রায়ালের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। লন্ডভন্ড হয়ে গেছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। ভাঙন এলাকায় ভেঙে পড়েছে শিক্ষা ব্যবস্থা। বাড়ছে কর্মহীন মানুষের সংখ্যা।
জানা গেছে, গত দেড় বছরে পদ্মার ভাঙনে শরীয়তুপরেই নিঃস্ব হয়েছে সাড়ে ৫ হাজার পরিবার। ঝুঁকিতে রয়েছে আরও ৮ হাজার পরিবার। তবে এই ভাঙনে নড়িয়া উপজেলার কেদারপুর, মোক্তারের চর ইউনিয়ন ও নড়িয়া পৌরসভার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সবচেয়ে বেশি।
এদিকে চলতি বছরের জুন মাস থেকে নড়িয়া এলাকায় পদ্মায় ভাঙন শুরু হয়। এখন ভাঙনের তীব্রতা ও ভয়াবহতা চরম পর্যায়ে। ভাঙন নিয়ে বিভিন্ন সরকারি সংস্থা পূর্বাভাস দিলে গ্রহণ করা হয়নি কার্যকর কোনো পদক্ষেপ। প্রচলিত জিও ব্যাগ দিয়ে ভাঙন রোধে কোটি কোটি টাকা খরচ করা হলেও তা কোন কাজে আসে নাই। পকেট ভারি হয়েছে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, টাউট শ্রেণী এবং প্রশাসনের হোমরাচোমরাদের।
২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে শুরু করে ২০১৮ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পদ্মার ভাঙনের শিকার হয়েছে ৫ হাজার ৮১টি পরিবার। ঝুঁকিতে রয়েছে আরও ৮ হাজার পরিবার। তবে স্থানীয়রা বলছেন ৬ হাজারেরও বেশি পরিবার ভাঙনের শিকার হয়েছে।
বগুড়ায় গতকাল রোববার সন্ধ্যায় বগুড়ার সারিয়াকান্দি পয়েন্টে ২৪ ঘণ্টায় ৫ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এদিকে পানি বেড়ে যাওয়ায় নিম্নাঞ্চলের ফসলি জমিতে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে।
সারিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার চালুয়াবাড়ী, কাজলা, বোহাইল, হাটশেরপুর, কুতুবপুর ও সদর ইউনিয়নে বন্যায় ২ হাজার ৯৪০ জন কৃষকের রোপা আমন, রোপা আমনের বীজতলা, আউশ, মাসকালাই, মরিচসহ ৫৬৫ হেক্টর জমির ফসল বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। এদিকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে চালুয়াবাড়ী ইউনিয়নের হাটবাড়ি, ভাঙরগাছা চরে বন্যার্তদের মাঝে ১০ কেজি করে চাল বিতরণ করা হয়েছে।
একইভাবে ধুনট উপজেলার চরাঞ্চলের ৭টি গ্রামের ১৩৫ হেক্টর জমির বিভিন্ন জাতের ফসল তলিয়ে গেছে। রোববার যমুনা নদীর পানি বিপদসীমার ১২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অব্যাহত পানি বৃদ্ধির ফলে নদীর কূল উপচে পানি চরাঞ্চল ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের দিকে ধেয়ে আসছে।নদীর পূর্ব তীর ডুবে পুকুরিয়া, কৈয়াগাড়ি, শহড়াবড়ি, বানিয়াজান, ভান্ডারবাড়ি, বৈশাখী ও রাধানগর চরের কৃষকের জমির ধান, মাসকলাই, মরিচ, আখ ও বিভিন্ন জাতের সবজি ক্ষেত বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে সার্বক্ষণিক নজরদারি করছে পাউবোর কর্মকর্তারা। বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী হাসান মাহমুদ জানান, যমুনায় পানি বৃদ্ধি অব্যাহত আছে। পানি আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
শরীয়তপুর জেলা সংবাদদাতা জানান, গত দেড় মাসের ব্যবধানে নড়িয়া উপজেলার কেদারপুর ইউনিয়নের কেদারপুর, দক্ষিণ কেদারপুর, চর নড়িয়া, চর জুজিরা, পাঁচগাঁও, চন্ডিপুর গ্রাম, মোক্তারের চর ইউনিয়নের ইশ্বরকাঠি, শেরআলী মাদবরের কান্দি গ্রাম ও নড়িয়া পৌরসভার বৈশাখী পাড়া, বাঁশতলা ও পূর্ব নড়িয়া গ্রামের প্রায় সাড়ে তিন হাজার ঘরবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মন্দির নদীর পেটে চলে গেছে। চোখের পলক ফেলতেই গায়েব হয়ে যায় ভবনগুলো। এর মধ্যে গাজী কালুর মেহমান খানা চারতলা বিলাসবহুল বাড়ি, তারা মিয়ার তিনতলা বাড়ি, হাফিজ কমিশনারের তিনতলা বাড়ি, নুর হোসেন দেওয়ানের তিনতলা বিলাসবহুল বাড়ি নদীগর্ভে চলে যায়।
মুলতাফগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, পদ্মার কাছে কিছুই টিকছে না। সব গুঁড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে। বাজার বিলীন হওয়ায় ১০ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ। আমরা নিঃস্ব হয়ে গেছি।
নড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সানজিদা ইয়াসমিন বলেন, পদ্মা নদীর গর্ভে চলে গেছে সাধুর বাজার, ওয়াপদা বাজার ও মূলফৎগঞ্জ বাজারের অর্ধেক এবং নড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে সাড়ে তিন হাজার পরিবার। ভাঙনকবলিত মানুষের মাঝে হাহাকার চলছে।
কুড়িগ্রাম জেলা সংবাদদাতা জানান, পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে রাক্ষসী ব্রহ্মপুত্র নদের প্রলয়কারী ভাঙন শুরু হয়েছে। কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার বন্দবেড় ও চরশৌলমারী ইউনিয়নের ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে অবস্থিত গ্রামগুলোতে নদের পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়েছে। গত শনিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় রাক্ষসী ব্রহ্মপুত্র নদের প্রলয়কারী ভাঙনের দৃশ্য। ব্রহ্মপুত্র নদের পূর্ব পাড় বামতীরে অবস্থিত ১২টি গ্রাম একযোগে ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। এসব এলাকার মানুষ ভাঙন আতঙ্কে দিনাতিপাত করছে।
ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙন কবলিত এলাকাগুলো হলো উপজেলার বন্দবেড় ইউনিয়নের বাগুয়ারচর, দক্ষিণ বাগুয়ারর, দক্ষিণ বলদমারা পূর্বপাড়া, বাইসপাড়া, কুটিরচর (ফলুয়ারচর), বাঘমারা, চরশৌলমারী ইউনিয়নের চরইটালুকান্দা, সাহেবের আলগা, চর গেন্দার আগলা, চরঘুঘুমারী, ঘুঘুমারী, উত্তর খেদাইমারী, পশ্চিম পাখিউড়া ও পাখিউড়া।
ভাঙন রোধে জরুরি কোন পদক্ষেপ না নিলে অদূর ভবিষৎতে রৌমারী উপজেলা পরিষদ ভবনসহ সরকারের কয়েক হাজার কোটি টাকার সম্পদ নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে স্থানীয়রা জানান। বিলীন হয়ে যেতে পারে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মাদরাসা, কাঁচা পাকা রাস্তা, ব্রীজ, কালবার্ট, ঘর-বাড়ী, ফসলী জমি ও গাছপালা।
স্টাফ রিপোর্টার মাগুরা থেকে জানান, মাগুরার মহম্মাদপুরে মধুমতি নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নদী ভাঙনের তীব্রতা মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। উজান থেকে নেমে আসা পানিতে এ ভাঙন বিপর্যয়ের সৃষ্টি হয়েছে। নদী ভাঙনের তীব্রতা বৃদ্ধি পাওয়ায় ইতিমধ্যে মাগুরার মহম্মাদপুর উপজেলার ৭টি গ্রামের প্রায় ১০ কিলোমিটার এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। বিলীন হয়েছে ২১টি পরিবারের অর্ধশতাধিক ঘরবাড়িসহ আবাদী জমে, মসজিদ, গাছপালা কবরস্থান, অসংখ্য দোকানপাট। কাশিপুর ও ভোলানাথপুরের পুজা মন্দিরসহ হাজার হাজার একর ফসলী জমি। ভাঙনের তীব্রতা এতই বৃদ্ধি পেয়েছে যে, অনেকে ঘরবাড়ি সরিয়ে নেয়ার সময়ই পায়নি। ফলে অনেকে ঘরবাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে বাস করছে খোলা আকাশের নিচে, আবার কেউ আশ্রয় নিয়েছে পরের জমিতে। নদী ভাঙনে নিঃস্ব হয়ে তাদের দিন কাটছে সীমাহীন কষ্টে। দীর্ঘদিন ধরে মধুমতির ভাঙন অব্যাহত থাকায় বদলে যাচ্ছে মহম্মাদপুর উপজেলার মানচিত্র থেকে রুইজানি, রায়পুর, কাশীপুর, হরেকৃষ্ণপুর, দেউলি,ঝামা ও ভোলানাথ পুর গ্রাম। চলতি সপ্তাহে এলাকায় দেখা যায় অসহায় নারী পুরুষের আহাজারী। ভাঙনের মধ্যেও অওনকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ঘরবাড়ি সরানোর কাজ করছে। এছাড়া জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাস করছে অনেকে। ভাঙন আতংকে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে নদী তীরবর্তী মানুষেরা। কাশীপুর গ্রামের তোজাম হোসেন, মফিজ উদ্দিন, হরেকৃষ্ণপুর গ্রামের ওহিদ বলেন, ভাঙনে তারা সর্বস্ব হারিয়ে পথে বসেছে। গ্রামের অসংখ্য ঘরবাড়ি, গাছপালা ফসলি জমি চোখের সামনে নদীতে গ্রাস করছে চেয়ে চেয়ে দেখছি কিছুই করার নেই। বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বারবার অবহিত করেও কোন ফল পাওয়া যাচ্ছেনা। এদিকে উপজেলার গোপালনগর খেতে পাল্লা পর্যন্ত প্রায় ৫ কিলোমিটার ও ঝামা এলাকায় নদীর মাঝে বিশাল চর জেগে ওঠায় স্রোতপ্রবাহ বাঁধাগ্রস্থ হয়ে ঠেউ নদী তীরে আছড়ে পড়ছে। এর ফলে গ্রামগুলো ভাঙনে নিশ্চিহৃ হচ্ছে।
লক্ষীপুর থেকে মো.কাউছার জানান, লক্ষীপুরের রামগতি ও কমলনগর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রতিদিন মেঘনা নদীর ভাঙন চলছে। ঘর বাড়ি হারিয়ে শত শত পরিবার একেবারে নি:স্ব হয়ে যাচ্ছে। সরজমিনে খোঁজ নিয়ে জানাযায়, ভাঙন কবলিত এলাকার প্রায় এক হাজার পরিবাব মেঘনা নদীর বার রার ভাঙনের শিকার হয়ে বর্তমানে দুর্গত মানুষ বেড়ীবাঁধ, অন্যের পরিত্যক্ত জায়গা ও লক্ষীপুর রামগতি সড়কের দু’পাশে ক্ষুপড়ি ঘর বানিয়ে বসবাস করছে। এসব জায়গায় যারা স্থান পায়নি তারা ভাগ্যের উপর ভরসা করে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলার বস্তি এলাকায় আশ্রয় নিয়েছে। এ বারো সবচেয়ে বেশি ভাঙনের কবলে পড়েছে কমলনগর উপজেলার চরফলকন, চরকালকিনি চরসাহেবের হাট, চরপাটওয়ারীর হাট ও রামগতি উপজেলার বিবি হাট, চরবড়খেরী এলাকা। কমলনগর উপজেলার চর সাহেবের হাট ইউনিয়নের চরজগবন্ধু, আজু ব্যাপারীর হাট,মাতাব্বর নগর সাহেব মুহুরির হাটসহ উক্ত ইউনিয়নের ৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৭টি ওয়ার্ড নদী গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। বাকি ২টি ওয়ার্ড ভাঙনের মুখে, একই ভাবে চরকালকিনি ইউনিয়নের ৯টি ওয়ার্ডেও মধ্যে ৬টি ভেঙে গেছে বাকি ৩টি ওয়ার্ড প্রতিদিন ভাঙতেছে। চরফলকন ইউনিয়নের ১টি ওয়ার্ড ভেঙ্গেগেছে বাকি গুলোসহ পাটওয়ারীর হাট ইউনিয়ন সম্পূর্ণ ভাঙনের মুখে রয়েছে। এ ছাড়া রামগতি উপজেলার বিবির হাট ও বড়খেরি ইউনিয়নসহ বিভিন্ন এলাকা প্রতিদিন ভাঙনের শিকার হচ্ছে। লুধুয়া বাজার মাতাব্বর হাট, কাদির পন্ডিতের হাটসহ ছোট-বড় ৮টি বাজার নদীতে বিলীন হয়েছে আরো ৬টি বাজার হুমকির মুখে আছে। প্রাথমিক.মাধ্যমিক ও মাদরাসাসহ ১২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হয়েছে। মসজিদ মন্দিরসহ বহু সরকারি বেসরকারি স্থাপনা মেঘনায় তলিয়ে গেছে। এ দু’টি উপজেলায় মেঘনার ভাঙনের কারণে প্রত্যেকটি পরিবারের সামাজিক বন্ধন ছিন্ন হয়ে গেছে, এক পরিবার ভাগ হয়ে নানান জায়গায় বসবাস করছে।
গাইবান্ধা থেকে স্টাফ রির্পোটার জানান, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে গাইবান্ধার ফুলছড়িতে ব্রহ্মপুত্র নদ, জেলা শহরের ঘাঘট নদী, গোবিন্দগঞ্জের করতোয়া ও সুন্দরগঞ্জের তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি পানি বৃদ্ধি পেয়েছে ব্রহ্মপুত্র নদে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সুত্রে জানা গেছে, গত ২৪ ঘন্টায় নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে গতকাল রোববার দুপুর ১২টা পর্যন্ত ব্রহ্মপুত্র নদের পানি পুরাতন ফুলছড়িঘাট পয়েন্টে বিপদসীমার ৩ সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এছাড়া ঘাঘট নদীর পানি গাইবান্ধা শহর রক্ষা বাঁধ পয়েন্টে ২৩ সে.মি., করতোয়া নদীর পানি গোবিন্দগঞ্জের কাটাখালী পয়েন্টে ১৭৪ সে.মি. ও তিস্তা নদীর পানি সুন্দরগঞ্জ উপজেলা পরিষদের পেছনে গোয়ালের ঘাট পয়েন্টে ১২৯ সে.মি. নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পদ্মা

১১ জানুয়ারি, ২০২৩
৩১ অক্টোবর, ২০২২
৪ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ