Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

যে দেশে অতি সহজে ধনী হওয়া যায়

মুনশী আবদুল মাননান | প্রকাশের সময় : ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১২:০৩ এএম

বিশ্বে অতিধনী মানুষের দ্রুতগতিতে সংখ্যাবৃদ্ধির রেকর্ড এখন বাংলাদেশের। আগে ছিল চীনের। এই বিস্ময়কর রেকর্ডের কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ওয়েলথ এক্স। প্রতিষ্ঠানটির ‘ওয়ার্ল্ড আল্ট্রা ওয়েলথ রিপোর্ট ২০১৮’, শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এটা আশ্চার্যজনক এই যে, অতিধনীর সংখ্যাবৃদ্ধির হারের দিক দিয়ে চীন বিশ্বের এক নম্বর দেশ নয়। এ অবস্থান বাংলাদেশের। প্রতিবেদন মোতাবেক, ২০১২ সাল থেকে গত পাঁচ বছরে বাংলাদেশে অতিধনীর সংখ্যা বেড়েছে গড়ে ১৭ দশমিক ৩ শতাংশ হারে। সাধারণত অতিধনী তাদেরই বিবেচনা করা হয়, যাদের সম্পদের অর্থমূল্য তিন কোটি ডলার বা তার বেশি। বাংলাদেশী মুদ্রায় এটা ২৫০ কোটি টাকারও বেশি।
প্রতিবেদনটিতে শীর্ষ ১০-এর যে তালিকা দেয়া হয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, চীনের অবস্থান দ্বিতীয়। চীনে অতিধনীর সংখ্যা বেড়েছে ১৩ দশমিক ৪ শতাংশ হারে। এরপর যথাক্রমে ভিয়েতনাম ১২ দশমিক ৭ শতাংশ, কেনিয়া১১ দশমিক ৭ শতাংশ, ভারত ১০ দশমিক ৭ শতাংশ, হংকং ৯ দশমিক ৩ শতাংশ, আয়ারল্যাণ্ড ৯ দশমিক ১ শতাংশ, ইসরাইল ৮ দশমিক ৬ শতাংশ, পাকিস্তান ৮ দশমিক ৪ শতাংশ এবং যুক্তরাষ্ট্র ৮ দশমিক, ১ শতাংশ। বিশ্বে অর্থনৈতিক দিক দিয়ে একনম্বর অবস্থান যুক্তরাষ্ট্রের, দুই নম্বরে চীন, এরপর অন্যান্য দেশ। অতিধনী বা সম্পদশালীর সংখ্যা অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রেই বেশি। এরপর জাপান, চীন ও ইউরোপীয় দেশগুলো। বাংলাদেশে এই সংখ্যা কত তা উল্লেখ করা হয়নি। অতিধনী বৃদ্ধির দৌঁড়ে বিশ্বের তাবৎ বড় অর্থনীতির দেশকে পেছনে ফেলে বাংলাদেশের শীর্ষ স্থান অধিকার বিস্ময়াবহই বটে। কীভাবে এটি সম্ভবপর হলো, সেটাই প্রশ্ন। একটি বিষয় অত্যন্ত পরিষ্কার যে, এখানে সম্পদ হাসিল করার একটা অনুকূল সুযোগ বিদ্যমান রয়েছে। সহজে এবং দ্রুত ধনী হওয়া যায় এখানে। অভিজ্ঞতা থেকেও আমরা বুঝতে পারি, কিছু লোক এখানে রাতারাতি আঙুল ফলে কলাগাছ হয়ে গেছে এবং এ প্রক্রিয়া অব্যাহত আছে। কোনো দেশে যখন ধনীর সংখ্যা বাড়ে, সম্পদ বাড়ে তখন তার একটি ইতিবাচক প্রভাব জাতীয় অর্থনীতি ও জনগণের জীবনমানে লক্ষ্য করা যায়। বিনিয়োগ বাড়ে, কর্মসংস্থান বাড়ে, মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ে, সেবা-পরিষেবা করা বাড়ে, অভাব-দারিদ্র কমে এবং স্বাচ্ছন্দ্য বৃদ্ধি পায়। দু:খজনক হলেও বলতে হচ্ছে, ধনীর সংখ্যা বাড়লেও এসব ক্ষেত্রে তেমন কোনো শুভ প্রভাব লক্ষ্যযোগ্য হয়ে ওঠেনি। কি দেশী, কি বিদেশী-কোনো বিনিয়োগই প্রত্যাশা অনুপাতে বাড়েনি। বিনিয়োগের ক্ষেত্রে একটা খরা-পরিস্থিতি দীর্ঘদিন ধরেই বিরাজ করছে। ব্যক্তি বা বেসরকারী খাতের বিনিয়োগের অবস্থা সবচেয়ে শোচনীয়। সরকার বেশ কিছু বড় প্রকল্পে বিনিয়োগের পদক্ষেপ নিয়েছে এবং সেসব প্রকল্পে বিদেশী বিনিয়োগের আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে। কিন্তু সে বিনিয়োগও আসছে ধীর গতিতে। বৈদেশিক সহায়তা ও অনুদান প্রতাশানুগ নয়। সম্প্রতি জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বৈদেশিক সহায়তা ও অনুদান এসেছে আশ্বাসের তুলনায় অর্ধেকেরও কম।
বিনিয়োগ না বাড়লে শিল্প-কারখানা ও ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়েনা। বাড়েনা কর্মসংস্থান। বিরাজমান বাস্তবতা তো এই যে, শিল্প-কারখানা বাড়া তো দূরের কথা, বহু শিল্প কারখানা ইতোমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে। রুগ্ন অবস্থায় পতিত হয়েছে আরো বহু শিল্প-কারখানা। ফলে হাজার হাজার শ্রমিক-কর্মী বেকার হয়ে পড়েছে, আরো হাজার হাজার বেকার হওয়ার অপেক্ষায় আছে। দেশের শ্রমবাজারে প্রতি বছর ২০-২৫ লাখ মানুষ প্রবেশ করছে। অথচ তাদের মধ্যে ৭-৮ লাখেরও কর্মসংস্থান হচ্ছে না। এতে বেকারের সংখ্যা বছর কে বছর বাড়ছে। এখন সাড়ে ৪ কোটি শিক্ষিত-অশিক্ষিত বেকার কর্মসংস্থানের অভাবে ধুঁকে ধুঁকে মরছে।
সরকারের পক্ষ থেকে বড় গলা করে বলা হয়, দেশের মানুষের আয় বেড়েছে, ক্রয় ক্ষমতা বেড়েছে দারিদ্র কমেছে। বাস্তবে এসব দাবির পক্ষে যথোপযুক্ত প্রমাণ খুঁজে পাওয়া যায়না। বরং উল্টো তথ্য পাওয়া যায়। সম্প্রতি ঢাকায় অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে মালয়েশীয় অর্থনীতিবিদ জুমো বলেছেন, বাংলাদেশে দারিদ্র কমেছে বলে বিভিন্ন রিপোর্টে উঠে আসছে। কিন্তু পুষ্টিহীনতা যে কমছে না সেটা উঠে আসছেনা। দারিদ্র কমলেও ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। বলা বাহুল্য, দারিদ্র কমলে ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা কমার কথা। কিন্তু এখানে এর ব্যতিক্রমই লক্ষ্যণীয়। জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার বাড়ায় সরকারের কর্তাব্যক্তিদের আহলাদের সীমা নেই। অথচ জনজীবনে তার প্রতিফলন দৃষ্ট হয়না। অর্থমন্ত্রী স্বয়ং স্বীকার করেছেন, সাধারণভাবে প্রবৃদ্ধি বাড়লে দারিদ্র হ্রাস পায়। তবে অর্থনীতির কাঠামোগত সীমাবদ্ধতার কারণে প্রবৃদ্ধির সুফল সমানভাবে সকলের কাছে পৌঁছায় না। তিনি বলেছেন, দারিদ্র ও অসমতা-হ্রাসের ক্ষেত্রে আমরা করকাঠামো সংস্কার, আভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান, ক্ষুদ্রঋণ ও দক্ষতামূলক প্রশিক্ষণ, আশ্রায়ন প্রকল্প, সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচীর মাধ্যমে আয় হস্তান্তর ইত্যাদি কৌশল প্রয়োগ করে আসছি। এই কৌশল যে খুব একটা কাজে আসছে না, বাস্তবতাই তার প্রমাণ বহণ করে। একজন মন্ত্রী সম্প্রতি জাতীয় সংসদে বলেছেন, দেশে প্রায় দু’ কোটি মানুষ অভুক্ত থাকে। আর আয় বৈষম্য ক্রমাগত বাড়ছে। সিপিডির তরফে বলা হয়েছে, দেশে আয়হীন কর্মসংস্থান বাড়ছে। সানেমের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কারসাজি করে চালের মূল্যবৃদ্ধি করার ফলে মাত্র কয়েক মাসে দারিদ্রসীমার ওপর থাকা ৫ লাখের বেশি মানুষ দারিদ্র সীমার নীচে চলে গেছে। জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে গত দশ বছরে অপুষ্টিজনিত সমস্যায় ভোগা মানুষের সংখ্যা বেড়েছে ৭ লাখ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর খানা আয়-ব্যয় জরিপ ২০১৬ অনুযায়ী, ২০১০ সালের তুলনায় ২০১৬ সালে দেশে সবচেয়ে ধনী ৫ শতাংশ পরিবারের আয় প্রায় ৫৭ শতাংশ বেড়েছে। তাদের মাসিক আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৮ হাজার ৯৪১ টাকায়। বিপরীতে একই সময় সবচেয়ে দরিদ্র ৫ শতাংশ পরিবারের আয় কমেছে ৫৯ শতাংশ। তাদের মাসিক আয় দাঁড়িয়েছে ৭৩৩ টাকায়, যা ২০১০ সালে ছিল ১ হাজার ৭৯১ টাকা। ওই জরিপেই উল্লেখ করা হয়েছে, দেশের মোট আয়ের ২৮ শতাংশ যাচ্ছে ৫ শতাংশ ধনীর কাছে। অর্থাৎ ১০০ টাকা আয়ে তারা পাচ্ছে ২৮ টাকা। পক্ষান্তরে দরিদ্র ৫ শতাংশ পাচ্ছে মাত্র ২৩ পয়সা। এ ভয়ংকর আয় বৈষম্যের কারণে ধনীরা আরো ধনী হচ্ছে, দরিদ্ররা আরো দরিদ্র হচ্ছে।
সঙ্গতকারণেই প্রশ্ন উঠতে পারে, কী সেই আলাদীনের চেরাগ, যার মাধ্যমে কিছু মানুষ দ্রুততম সময়ে অতিধনী হয়ে যাচ্ছে? বলা বাহুল্য, আয় বন্টনের সুষম ব্যবস্থা যে দেশে নেই সে দেশে যখন ধনীর সংখ্যা বাড়ে, ধনী যখন আরো ধনী হয়ে যায় তখন দরিদ্রের সংখ্যা বাড়ে, দরিদ্র আরো দরিদ্র বা হতদরিদ্রে পরিণত হয়। আমাদের দেশে এটাই প্রত্যক্ষ করা যাচ্ছে। এও বলার অপেক্ষা রাখেনা, অসততা, অনিয়ম, দুর্নীতি ও লুণ্ঠন ছাড়া কেউ রাতারাতি, ধনী ও সম্পদশালী হয়ে উঠতে পারেনা। সৎভাবে, নিয়ম ও সুনীতি মেনে ধনী ও সম্পদশালী হওয়া খুবই কঠিন। আমাদের দেশ ও সমাজে অনিয়ম, দুনীতি, ঘুষ এবং কৌশল, প্রতারণা বাজার করে অন্যের সম্পদ হাতিয়ে নেয়া কোনো নতুন ঘটনা নয়। তবে গত এক দশকে এ ধরনের অপকর্ম মারাত্মকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। মুষ্টিমেয় কিছু লোকের কাছে সম্পদ পুঞ্জিভূত হওয়ার এসবই উল্লেখযোগ্য কারণ।
কেনা জানে, আমাদের দেশে অনিয়ম-দুর্নীতি সীমা ছাড়িয়ে গেছে। এমন কোনো ক্ষেত্র নেই যেখানে অনিয়ম-দুর্নীতির ব্যাপক বিস্তৃতি ঘটেনি। রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ও আমলাদের মধ্যে এমন অনেকেই রয়েছেন তারা যোগসাজস করে দেশকে অনিয়ম-দুর্নীতির আখড়া-বাড়িতে পরিণত করেছেন। পেছনে রাষ্ট্রীয় আনুুকূল্য আছে বলেই তাদের পক্ষে এটা করা সম্ভবপর হয়েছে। শেয়ার বাজার লুট হয়েছে। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কোটি কোটি টাকা লুণ্ঠিত হয়েছে। এর কোনো প্রতিকার রাষ্ট্র করেনি। লুটেরারা অধরা রয়ে গেছে এখনো। অনিয়ম-দুর্নীতিতে ব্যাংক সেক্টর কার্যত বসে গেছে। ব্যাংক থেকে হলমার্ক, ডেসটিনি, ক্রিসেন্ট গ্রুপ, বিসমিল্লাহ গ্রুপ, নূরজাহান গ্রুপসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আর ফেরৎ দেয়নি। এ টাকা ফেরৎ পাওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। ব্যাংকখাতে বকেয়া ঋণ আছে ৮ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকার ওপরে। এ ঋণ কবে আদায় হবে, আদৌ হবে কিনা কেউ বলতে পারে না। বেসরকারী ব্যাংকগুলোর মালিকরা পরস্পর যোগসাজসে অধিকাংশ টাকা ঋণ হিসাবে নিয়ে নিয়েছে। ঋণ খেলাপীদের পকেটে আছে এক লাখ ৩১ হাজার কোটি টাকা। খেলাপী ঋণের বেশির ভাগই সরকারি ব্যাংকের। বকেয়া ও খেলাপী ঋণ আদায়ে ব্যাংকগুলোর তেমন কোনো উদ্যোগ নেই। অনেক ক্ষেত্রেই নিয়ম মেনে ঋণ দেয়া হয়নি। ফলে অনিয়মে দেয়া ঋণ আদায় হওয়ার সম্ভবনা কম। ঘুষের ব্যপারটি এমন যে, কোনো কাজই ঘুষ ছাড়া হয়না। সেবাখাতে পর্যন্ত ঘুষ না দিলে কাজ হয় না। ১৬টি সেবাখাতে ২০১৭ সালে অন্তত ১০ হাজার কোটি টাকার ঘুষের লেনদেন হয়েছে। অতি সাম্প্রতিক এক খবরে জানা গেছে, দেড় বছরে মালয়েশিয়াগামী প্রায় দু’লাখ বাংলাদেশী শ্রমিকের কাছ থেকে নির্ধারিত আয়ের বাইরে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে ১০ বিক্রুটিং এজেন্সির একটি সিন্ডিকেট।
অনিয়ম-দুর্নীতি ও ঘুষের মাধ্যমে অর্জিত অর্থের একটি বড় অংশ দেশ থেকে পাচার হয়ে যায়। অর্থ পাচারের ক্ষেত্রে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে শীর্ষে। গেøাবাল ফিনান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটির ২০১৭ সালে প্রকাশিত প্রতিবেদন মতে, ২০১৪ সালে বাংলাদেশ থেকে ৯১১ কোটি ডলার বিদেশে পাচার হয়েছে, বাংলাদেশী মুদ্রায় যার পরিমাণ ৭২ হাজার ৮৭২ কোটি টাকা। ১০ বছরে এর পরিমাণ সাড়ে ৬ লাখ কোটি টাকা। ২০১৭ সাল শেষে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশীদের জমাকৃত অর্থের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশী মুদ্রায় ৪ হাজার ৬৮ কোটি টাকা। এও জানা যায়, মালয়েশিয়ার সেকেণ্ড হোম কর্মসূচীতে প্রায় সাড়ে তিন হাজার বাংলাদেশী অন্তত ৪২ হাজার ৫৫৫ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে।
শেয়ারবাজার লুণ্ঠন, ব্যাংকখাত থেকে ঋণের নামে অর্থ হাতিয়ে নেয়া এবং ঘুষ-কমিশন ইত্যাদির মাধ্যমে সঞ্চিত সম্পদ বিদেশে পাচার না হয়ে দেশেই যদি থাকতো ও বিনিয়োগ হতো তাহলে এক ধরনের সুফল পাওয়া সম্ভব হতো। শিল্প-কারখানা হতো, ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটতো, কর্মসংস্থান বাড়তো। সে সম্ভাবনাও রহিত হয়ে গেছে। যে দেশে অনিয়মকারী, দুর্নীতিবাজ, ঘুষখোর ও লুটেরারা পার পেয়ে যায়, দায়মুক্তি ভোগ করে এবং শাসক শ্রেণী কোনো না কোনোভাবে তাদের ছত্রচ্ছায়া দেয়, সে দেশের ভবিষ্যত নিয়ে শংকিত না হয়ে পারা যায় না ।
আসলে কোনো দেশে সুশাসন, জবাবদিহিতা ও ন্যায়বিচার না থাকলে বা সংকুচিত হয়ে পড়লে জনগণের দুর্ভোগ-বিড়ম্বনা, শোষন-বঞ্চনা, জুলম-নির্যাতন, ও বৈষম্যের শিকার হওয়া অবধারিত হয়ে যায়। আমাদের দেশের বাস্তবতাও এমনই। ক্ষমতায় যে সরকার আছে তা অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিদ্বদ্বীতাপূর্ণ নির্বাচনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত নয়। সে কারণে তার জনগণের কাছে দায়বদ্ধতা ও জবাবদিহিতা কম। এটা মনে করার কোনো কারণ নেই যে, ধনী ও দরিদ্র বৃদ্ধি কোনো প্রাকৃতিক নিয়মের ফল। এটা অনুসৃত রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক নীতি-সিদ্ধান্ত ও ব্যবস্থারই অনিবার্য পরিণতি। শেয়ারবাজার, ব্যাংক ব্যবস্থা, গ্যাস-বিদ্যুৎ-জ্বালানিখাত, সরকারী ক্রয়খাত, নির্মাণ খাত, সেবাখাত ইত্যাদি যখন অবৈধভাবে অর্থ বানানোর উপায়ে পরিণত হয়,তখন অতিধনীর সংখ্যা বৃদ্ধি যেমন স্বাভাবিক তেমনি সমাজে বিষম অবস্থা বৃদ্ধি পাওয়াও অস্বাভাবিক নয়।
দেশের মানুষ লাগাতার উন্নয়নের জয়গান শুনছে। জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার বৃদ্ধি, মাথাপিচু আয় বৃদ্ধি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধি, উন্নয়নশীল দেশের সূচক অর্জন ইত্যাদির কথা বলা হচ্ছে। পদ্মাসেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী ট্যানেল, অর্থনৈতিক অঞ্চলে প্রভৃতির কথাও জানানো হচ্ছে। অথচ জনগণের দারিদ্র দূর হচ্ছে না; ক্ষুর্ধাত মানুষের সংখ্যা বরং বাড়ছে। নাগরিক নিরাপত্তা নেই বললেই চলে। গুম, তুলে নেয়া, খুন ইত্যাদি সাধারণ ঘটনায় পরিণত হয়েছে। জনগণের রাজনৈতিক অধিকার, মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা সংকুচিত হতে হতে প্রান্তিক পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে। নিবর্তনমূলক আইনের বাঁধনও জোরদার করা হচ্ছে। গণতন্ত্রের কথা বলা হচ্ছে বটে, তবে সেই গণতন্ত্র নিয়ন্ত্রণমূলক গণতন্ত্রের নামান্তর। গণতন্ত্রহীন বা নিয়ন্ত্রিত গণতন্ত্রের দেশে ক্ষমতাসীনদের গণতন্ত্রসম্মত আচরণের প্রতি আনুগত্য প্রত্যাশা করা যায় না। ক্ষমতার দাপট দেখানোর প্রবণতা বরং তাদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। আর তাদের সঙ্গেই জুটে যায় সুযোগসন্ধানীরা। তারা ক্ষমতাসীনদের তোয়াজ করে, বখরা দিয়ে অনৈতিক সুবিধা গ্রহণ করে। এভাবেই তারা দ্রুত ধন-সম্পদের মালিক বনে যায়। কাজেই আইনের শাসন, সুশাসন, জবাবদিহিমূলক শাসন এবং দেশের সুষম উন্নয়ন তরান্বিত করতে হলে গণতন্ত্র ও অংশগ্রহণমূলক রাজনীতির প্রতিষ্ঠা অপরিহার্য।



 

Show all comments
  • মাসুদ ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ৩:০৫ এএম says : 0
    যেখানে অনিয়মই নিয়ম, সেখানে এমনটাই হবে সেটাই স্বাভাবিক
    Total Reply(0) Reply
  • শুভ্র ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ৩:০৫ এএম says : 0
    সুন্দর লেখাটির জন্য ধন্যবাদ
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammed Bin Osman ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১:১৫ পিএম says : 0
    i hope bangladeshe houa jai..
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ধনী

২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২২
৩১ জুলাই, ২০২২
২৫ জুলাই, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন