Inqilab Logo

বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১, ২১ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ধনী দেশগুলো আগ্রাসীভাবে জ্বালানি কিনছে

ব্লুমবার্গের প্রতিবেদন অসন্তোষ দানা বাঁধছে দরিদ্র দেশে

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৩ আগস্ট, ২০২২, ১২:০০ এএম

ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে কঠিন এক শীতকালের দিকে এগিয়ে চলেছে ইউরোপ। কিন্তু ইইউ দেশগুলির আছে আর্থিক শক্তি। জ্বালানি বাড়তি দামেও কিনতে পারছে তারা। সে তুলনায় এই সামর্থ্যে দুর্বল, উন্নয়নশীল দেশের সরকারকে জনগণের অতি-দরকারি জ্বালানি সরবরাহেই হিমশিম খেতে হচ্ছে। ডলারের মান শক্তিশালী হওয়ার পাশাপাশি জ্বালানির বাড়তি দাম রসদ দিচ্ছে মূল্যস্ফীতির আগুনকে, যা নিয়ন্ত্রণে অসহায়ত্ব বাড়ছে কর্তৃপক্ষের।
ব্লুমবার্গের প্রতিবেদনে বলা হয়, বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য দরকারি জ্বালানি কিনতে না পারায় পাকিস্তানে প্রচণ্ড গরমের সময়ে লোডশেডিং আর বিদ্যুৎ বিল বাড়াচ্ছে সরকার। জ্বালানি সাশ্রয়ে রাত ৮টার মধ্যে দোকানপাট বন্ধের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বাংলাদেশে। জনগণের ওপর চড়া বিদ্যুৎ বিলের চাপ কমাতে আবাসিক গ্রাহকদের মধ্যে ভর্তুকির আওতা প্রসারিত করেছে দুনিয়ার আরেকপ্রান্তের দেশ মেক্সিকো।
বিশ্ব পরিস্থিতির খুব নাজুক সময়ে এসেছে এই আঘাত। মহামারির আগে থেকেই উন্নত দেশগুলি ঝুঁকেছিল নবায়নযোগ্য উৎসের শক্তি উৎপাদনে। এসময় তারা উপেক্ষা করে জীবাশ্ম জ্বালানি উৎপাদন বৃদ্ধিতে বিনিয়োগ। কার্বন নিঃসরণ কমাতে, তারা স্বল্প আয়ের দেশগুলিকে কম দূষণকারী প্রাকৃতিক গ্যাস-ভিত্তিক জ্বালানি নির্ভরশীলতা তৈরির চাপ দেয়।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর, বিশ্ববাজারে গ্যাসের দাম বেড়েছে ১৫০ শতাংশ। ধনী দেশগুলি অনায়সে এই দামে কিনতে পারছে। স্বাভাবিকভাবেই এত দামে কেনার প্রতিযোগিতায় হারছে উন্নয়নশীল দেশ। বহুজাতিক পরামর্শক কোম্পানি-এক্সেনশিওর এর বৈশ্বিক জ্বালানি শিল্প শাখার প্রধান মুকসিত আশরাফ বলেন, উন্নত দেশের চেয়ে বেশি দর হেঁকে (জ্বালানির চালান) কেনার সুযোগ নেই অন্যদের। তৈরি হচ্ছে এর মারাত্মক অর্থনৈতিক পরিণতি; এতে দরিদ্র দেশগুলির জাতীয় ও অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ খাতে অর্থায়নের সামর্থ্য কমেছে। তিনি উল্লেখ করেন, উন্নয়নশীল প্রায় সকল দেশই কমবেশি পড়েছে এই দুর্ভোগে।
জ্বালানি ব্যবসায়ীরা বলছেন, মধ্যপ্রাচ্য থেকে গ্যাসের যে চালানগুলি পাকিস্তান বা ভারতের মতো দেশে আসতো-সেগুলি এখন যাচ্ছে ইউরোপে। কারণ সেখানে বিক্রির মুনাফাও বেশি। ইউরোপের গ্রাহকেরাও গ্যাসের চড়া দাম দিতে পারে।
আশরাফ জানান, উন্নয়নশীল দেশের জ্বালানি আমদানির বিল এখন তাদের মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপি’র ২ থেকে ৪ শতাংশে পৌঁছেছে। উদীয়মান অর্থনীতির কিছু দেশের ক্ষেত্রে তা পৌঁছেছে ২৫ শতাংশে।
বিপদের ওপর বিপদ, মার্কিন ডলারের বিপরীতে তাদের মুদ্রার মান পতনের প্রবণতা। এতে জ্বালানি আমদানির খরচও বেড়েছে তাদের। আর মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, অধরাই রয়ে যাচ্ছে। স্থানীয় গ্রাহকদের জন্য পর্যাপ্ত এলএনজি চালান কিনতে ব্যর্থ হয়েছে ভারতের প্রাকৃতিক গ্যাস বিতরণকারী কোম্পানি গেইল। সঙ্কট এড়াতে পেট্রোকেমিক্যাল প্ল্যান্ট ও সার উৎপাদন কারখানার মতো প্রধান গ্যাস ব্যবহারকারীদের জন্য কমিয়েছে সরবরাহ। এলএনজির বাড়তি দামের কারণে থাইল্যান্ডে চলতি সপ্তাহেই বিদ্যুৎ বিল বাড়ানো হয়েছে ১৭ শতাংশ।
গত দুই বছরে ১ দশমিক ৩০০ শতাংশ বেড়েছে এলএনজির দাম। এতে মাসের পর মাস ধরে নিয়মিত চালান কিনতে পারছে না বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মতো দেশ।
বাজার অংশীদারিত্বে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ইস্পাত উৎপাদক বিএসআরএম। বিদ্যুৎ সঙ্কটের কারণে কোম্পানিটি তাদের উৎপাদন অন্তত ২০ শতাংশ কমিয়েছে বলে জানান কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমির আলী হোসেন। তিনি বলেন, এই সঙ্কট থেকে কেউই মুক্ত নয়। পাকিস্তানে আন্দোলনকারীরা সড়ক অবরোধ করছেন। এমনই এক ঘটনায় পুলিশের দিকে পাথর ছুঁড়েছেন তারা। পরে নিরাপত্তা বাহিনী জলকামান ব্যবহার করে জনতাকে ছত্রভঙ্গ করে। পানামায় বিক্ষোভের মুখে অচল হয়ে পড়েছে মহাসড়ক ও সমুদ্র বন্দর।
ইউনিভার্সিটি অব হিউস্টন ল’ সেন্টারের সহকারী অধ্যাপক সুসান সাকমার বলেন, জ্বালানি সঙ্কট যত দীর্ঘ সময় ধরে চলবে, ততোবেশি নাগরিক বিক্ষোভ দেখা দেবে পৃথিবীজুড়ে। তিনি ব্যাখ্যা করেন, জ্বালানি সঙ্কটে উন্নত বিশ্বও ভুগছে। মস্কো সরবরাহ বন্ধ করলে, এই শীতের জন্য জার্মানির কাছে পর্যাপ্ত গ্যাসের মজুদ থাকবে না। ছয় বছর পর প্রথমবারের মতো অস্ট্রেলিয়া থেকে এলএনজির চালান কিনছে যুক্তরাজ্য। যুক্তরাষ্ট্রে জ্বালানি তেলের বাড়তি দাম আসছে নভেম্বরের মধ্য-মেয়াদি নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ডেমোক্রেট দলের দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক ক্ষতি করতে পারে। এতকিছুর পরও এসব দেশের হাতে সমাধানের উপায় আছে, যা নেই দরিদ্র দেশগুলির।
উন্নয়নশীল দেশগুলি দীর্ঘদিন ধরেই অভিযোগ করে এসেছে যে, উচ্চাকাক্সক্ষী জলবায়ু লক্ষ্যমাত্রা পূরণে জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে সরে আসার জন্য যে বিনিয়োগ তাদের দরকার-সে তুলনায় নগণ্য অর্থায়ন করছে উন্নত দেশগুলি। এই ব্যবধান এখন আরও বেড়েছে, আর তারা জ্বালানি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।
মুকসিত আশরাফ বলেন, আমাদের দৈনন্দিন জীবনের প্রাণকেন্দ্রেই রয়েছে জ্বালানি। এর সঙ্কট এমন উত্তাল ঢেউ সৃষ্টি করে, যার প্রভাব কমবেশি সর্বত্র ছড়ায়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ধনী দেশগুলো আগ্রাসীভাবে জ্বালানি কিনছে
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ