পবিত্র লাইলাতুল বরাত
![img_img-1720202728](https://old.dailyinqilab.com/resources/images/cache/169x169x3_1678112525_editorial-inq.jpg)
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
ওজোন স্তর ক্ষয়ের বিরূপ প্রতিক্রিয়া এবং ওজোন স্তর ক্ষয়কারী বস্তুসমূহের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে এবং বিশ্বব্যাপী গণসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সারাবিশ্বে ১৬ সেপ্টেম্বর পালিত হয়ে থাকে আন্তর্জাতিক ওজোন দিবস। বাংলাদেশেও বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি অনুষ্ঠানসূচির মধ্য দিয়ে দিবসটি পালন করা হয়। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, আমাদের দেশের জনসাধারণের ওজোন স্তর সম্পর্কে সম্যক ধারণা আছে কি? ভূ-পৃষ্ঠের উপরিভাগ দশ কিলোমিটার থেকে পঞ্চাশ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত উচ্চতায় সামগ্রিক স্ট্রাটোস্ফিয়ারকে বলে ওজোন স্তর। এ স্তরে ছড়িয়ে থাকে ওজোন নামক তীব্র গন্ধযুক্ত বিষাক্ত হালকা নীল গ্যাস। অক্সিজেনের তিনটি পরমাণু সমন্বয়ে এর একটি অণু গঠিত। বিস্তৃত এবং বিশাল হলেও এ গ্যাসটির ঘনত্ব এতই কম যে, এ স্তরের সকল ওজোন অণুকে যদি একত্রিত করা সম্ভব হতো তাহলে দেখা যেত যে, সমগ্র পৃথিবী জুড়ে কমলালেবুর খোসার মত একটি পাতলা আবরণ সৃষ্টি হয়েছে। ওজোন স্তর ক্ষয়ের উদ্বিগ্নতার পাশাপাশি এর সুরক্ষায় সারাবিশ্বে আজ উঠে পড়ে লাগার কারণ হচ্ছে সূর্যের ক্ষতিকর আলট্রাভায়োলেট রশ্মি থেকে আমাদের রক্ষা করে ওজোন স্তর। ভূ-পৃষ্টে আল্ট্রাভায়োলেট-বি রশ্মির মাত্রাধিক উপস্থিতি মানবস্বাস্থ্য-প্রাণিজগত, উদ্ভিদজগত, অণুজীব ও বায়ুর গুণগত মানের উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। এর ফলে স্কিন (ত্বক), ক্যান্সার, চোখে ছানিপড়া রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পেতে পারে। হ্রাস পেতে পারে শস্যের ফলন, ব্যাহত হবে মাছ উৎপাদনসহ সকল জলজ প্রাণি এমনকি সামুদ্রিক প্রাণী সম্পদও।
ওজোন স্তরে আলট্রাভায়োলেট-বি রশ্মির শোষণের প্রতিক্রিয়ায় সেখানে চাপের একটি উৎসেরও সৃষ্টি হয়। সৃষ্ট এ চাপের উৎস বায়ুমন্ডলের উষ্ণতা ভারসাম্য রক্ষায় মুখ্য ভ‚মিকা রাখে। কিন্তু দিনে দিনে বিশ্বে যেভাবে জনসংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি বনস¤পদ উজাড়সহ প্রকৃতি ভারসাম্য হারাচ্ছে এতে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে পৃথিবী। মানুষের শরীরে রোগ-ব্যাধির প্রকোপ বাড়ছে। আগের তুলনায় গড় আয়ু বাড়লেও নানা রকম রোগ-ব্যধিতে জর্জরিত হয়ে মানুষ ধুকছে। বিশ্বের তাপমাত্রা বেড়েই চলেছে। তাপমাত্রার অব্যাহত বৃদ্ধির পরিণামে পৃথিবীতে কি ধরনের বিপর্যয় দেখা দেবে তা নিয়ে চলছে গবেষণা। উষ্ণতার কারণসমূহ নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টাও চলছে। কিন্তু ক্রমবর্ধমান চাহিদা ও মানুষের অপরিণামদর্শিতার জন্য উষ্ণতা বেড়েই চলছে। মানুষ তার বিবেচনাহীন কাজের জন্য পৃথিবীর পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করে ফেলছে। ফলে পরিবেশ আমাদের উপর বৈরী হয়ে উঠছে। একের পর এক প্রতিশোধ নিচ্ছে। ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার কারণে বিভিন্ন দেশে পরিবেশে নাটকীয় পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। গ্রীষ্ম, বর্ষা, শীত এসব মওসুম আর যেন আগের নিয়ম মানতে চাচ্ছে না। বিলম্বিত অথবা আগাম মওসুম দেখা যাচ্ছে। এর ফলে মানুষসহ প্রাণী ও উদ্ভিদজগতে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। ফরাসী গবেষকগণ বলেছেন, বায়ুমন্ডলের উষ্ণতা বৃদ্ধির মূল কারণ গ্রিন হাউস গ্যাসের নির্গমন মাত্রা ৪ লক্ষ ২০ হাজার এর মধ্যে বর্তমানে সর্বোচ্চ। মার্কিন বিজ্ঞানীরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রে ৫৭ জাতের প্রজাপতি তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে তাদের এক স্থান থেকে আরেক স্থানে যাওয়ার ধরন বদলে ফেলছে। অর্থাৎ পতঙ্গকুলের অভিবাসন ধরন পাল্টে যাচ্ছে।
এ পৃথিবীকে মানুষের বাসযোগ্য রাখার জন্য জরুরি ভিত্তিতে ক্রমবর্ধমান উষ্ণতা রোধ করতে হবে। যেভাবে চেষ্টা চলছে তা যথেষ্ট নয়। সবাইকে বিশেষ করে শিল্পোন্নত দেশগুলোকে এ ব্যাপারে অগ্রণী ভ‚মিকা রাখতে হবে। কারণ, তাদের কৃতকর্মের জন্যই গ্রিন হাউস গ্যাস দ্রুত বায়ুমন্ডলে নির্গত হচ্ছে। আজ সবাইকে বুঝতে হবে যে, পৃথিবীকে শীতল রাখতে হবে এবং এখনই এর উপযুক্ত সময়। সাম্প্রতিক বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে যে, পৃথিবী নামক গ্রহের উষ্ণতা দ্রুত বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। কিন্তু যারা এর জন্য মূলতঃ দায়ী তাদের মধ্যে উদ্বেগ তুলনামূলকভাবে কম।
আমেরিকান জিওগ্রাফিক্যাল ইউনিয়নের এক সমীক্ষায় বলা হয়, আমেরিকানদের মধ্যে পৃথিবীর উষ্ণতার বিরুদ্ধে করণীয় সম্পর্কে আগ্রহ কম। এ ব্যাপারে তাদের তেমন একটা উদ্বেগ নেই। সমীক্ষার পরিচালক জন ইসারওয়ার বলেন, আমরা এ ব্যাপারে বেশি কথাবার্তা বলছি, অথচ কাজ করছি কম। তিনি বলেন, বিজ্ঞানী ও গবেষকদের মধ্যে উদ্বেগ যতটা বেশি জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা ঠিক ততই কম। অথচ এ বিশ্ব সমস্যা মোকাবেলায় দরকার বিশ্বব্যাপী জনসচেতনতা; কারণ জনসচেতনতার কারণেই রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ অনেক সময় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণে বাধ্য হন। পরিবেশ বিজ্ঞানীরা বলছেন, গ্রিন হাউজ গ্যাসের বর্ধিত নির্গমনের ফলে বায়ুমন্ডলের স্তর বিন্যাস নষ্ট হচ্ছে। এর ফলে পৃথিবীতে বর্ধিত মাত্রায় ও সরাসরি সূর্যের তাপ আসছে। এ প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকলে পৃথিবী আরো উত্তপ্ত হয়ে উঠে এবং পরিণামে পৃথিবীর মেরু অঞ্চল ও পার্বত্য অঞ্চলের জমাট বরফ গলতে শুরু করবে। পরিণামে পৃথিবীর সমুদ্রপৃষ্ঠ উঁচু হয়ে উঠবে এবং পৃথিবীর নিম্ন অঞ্চলগুলো সাগরে তলিয়ে যাবে। সূচনা হবে এক মহাবিপর্যয়ের।
বিজ্ঞানীদের মতে, সহজেই এ বিপর্যয় রোধ করা সম্ভব এবং অর্থনৈতিকভাবে যথেষ্ট ক্ষতি স্বীকার না করেও এটা সম্ভব। তারা যানবাহনের কালো ধোঁয়া কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ, বাতাসকে নির্মল করে তোলা ও সৌরভিত্তিক প্রযুক্তি ব্যবহারের পরামর্শ দেন। পরিবেশ বিজ্ঞানী গ্রেসওয়েস্টার্ন বলেন, সবার আগে জনগণকে সচেতন করে তুলতে হবে। তাদের বোঝাতে হবে ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য এ পৃথিবীকে বাসযোগ্য রাখার উদ্দেশ্যে তাদেরও যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। তাদেরকে বলিষ্ঠ উদ্যোগ নিতে হবে, তবে এতে তারা আর্থিকভাবে তেমন ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। আর যতটুকু ক্ষতি হবে তা নেহায়েতেই সামান্য। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কল্যাণের জন্য আজ তাদেরকে তা রক্ষার্থে কিছুটা ত্যাগ স্বীকার করতেই হবে। জনগণের কাছে পরিবেশের বিপদের ভয়াবহতা ঠিকমত তুলে ধরা গেলে তারা অবশ্যই সচেতন হবে এবং এগিয়ে আসবে। এর ফলে ক্রমবর্ধমান জনমতে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ পরিবেশের অনুক‚লে জরুরি পদক্ষেপে এগিয়ে আসবেন।
লেখক: সংবাদিক ও কলামিস্ট
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।