Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

স্বজনের খোঁজে পাবনায় ডেনিস নাগরিক

পাবনা থেকে স্টাফ রিপোর্টার : | প্রকাশের সময় : ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১২:০৬ এএম

শেকড়ের টানে অতীতের ফেলে যাওয়া স্মৃতি খুঁজতে চল্লিশ বছর পর বাংলাদেশে এসেছেন ডেনমার্কে বসবাসকারী বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত এক ডেনিস পরিবার। অন্যদেশের মাটিতে বড় হয়েছি কিন্ত দেশের মাটির টান সব সময় অনুভব করেছি। মন টানতো শেকড়ে যেতে। অতীত স্মৃতিবিধুরতা তাড়িত করেছে সবসময়। চল্লিশ বছর অনেক লম্বা সময়, তারপরও মনের টানে শেকড়ে ছুটে আসা। পিতামাতা আত্মীয় পরিজনদের খোঁজে ।
গত বুধবার দুপুরে পাবনা প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এই কথা বলেন বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত ডেনিস নাগরিক মিন্টো কারস্টেন সোনিক। পরিবারের সন্ধানে আসা এই ডেনিস নাগরিক দু সপ্তাহ আগে বাংলাদেশে আসেন। তার কাছে থাকা বাংলাদেশ থেকে যাওয়া কাগজের আর পাসপোর্ট এর সূত্র ধরে পাবনায় এসেছেন। সেই ছোট বেলার কিছু স্মৃতি মনে আছে তার। নদীর ঘাট নৌকা পানি আর বাঁশে তৈরি ঘর। সংবাদ সম্মেলনে এই দম্পতি বলেন, পাবনার পথে পথে ঘুরছেন। ছয়-সাত বছর বয়সে হারিয়ে যাওয়া মিন্টো জানেন না তার বাবা, মা এমনকি গ্রামের নাম। ছোটবেলার একটি ছবিকে সম্বল করে নিজের পরিবারকে ফিরে পেতে, মিন্টোর এই এই দেশে আসা। এতদিনে তাঁর পিতা বেঁচে আছেন কিনা তা নিশ্চত নন। তবে আত্মীয়-পরিজনরা তো থাকবেন এটা তাদের প্রত্যাশা।
পাবনার বেড়া উপজেলার নগরবাড়ি এলাকাতে ঘুরে বেড়িয়েছেন বর্তমানে ডেনিস নাগরিক মিন্টো ও এনিটি দম্পতি। জনে জনে লিফলেট দিয়ে কিছু একটা জিজ্ঞেস করছেন। বহুদিনের পুরোনো এক বালকের ছবি দেখিয়ে জানতে চাইছেন চেনেন কিনা?
প্রসঙ্গত ১৯৭৭ সালে ছয় বছর বয়সে পাবনার নগড়বাড়ী ঘাটে হারিয়ে যান মিন্টো। সেখান থেকে চৌধুরী কামরুল হোসেন নামের কোন এক ব্যক্তি মিন্টোকে পৌঁছে দেন ঢাকার ঠাটারিবাজারের এক অনাথ আশ্রমে। ১৯৭৮ সালে ওলে ও বেনফি নামের ডেনিশ দম্পতি দত্তক নিয়ে ডেনমার্ক নিয়ে যান মিন্টোকে।
সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম দিকে সস্ত্রীক পাবনায় এসেছেন মিন্টো কারস্টেন সনিক। কিছুদিন আগে ফেসবুকের মাধ্যমে যোগাযোগ হয় পাবনা হিন্দু বৌদ্ধ খৃষ্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি পাবনায় চ্যার্লস স্বপন বিশ্বাস নামের এক ব্যক্তির সাথে। এই সূত্র ধরে অতীতের খোঁজে চলে আসেন পাবনায়। পাবনায় এসে উঠেছেন শহরের একটি হোটেলে।
ছেলেবেলার কোন স্মৃতি স্পষ্ট মনে নেই। ভুলে গেছেন বাংলা ভাষা। ডেনমার্কে পেশায় একজন চিত্রশিল্পী। মিন্টোর গায়ের বর্ণ এবং তার আবছা মনে পড়া স্মৃতি কথা থেকে ধরে নেওয়া যায় তিনি বাংলাদেশের সন্তান।
মিন্টো কার্টসটেন সনিক জানান, পুরনো কাগজ পত্র থেকে জেনেছেন মাত্র ৬ বছর বয়সে পাবনার বেড়া উপজেলার নগরবাড়ী ঘাট এলাকা থেকে হারিয়ে যান তিনি। সেখান থেকে ঢাকার ঠাঁটারি বাজার টেরি ডেস হোমস নামের শিশু সদনে ছিলেন। পরে শিশু সদন থেকে ১৯৭৮ ডেনমার্কের এক নি:সন্তান দম্পতি মিন্টুকে দত্তক নিয়ে যায়। সেখানেই তার শৈশব-কৈশর এবং যৌবনকাল কাটে। বিত্ত বৈভবের মাঝে লেখাপড়া শিখে বড় হন। তিনি পেশায় একজন চিত্র শিল্পী। ডেনমার্ক নাগরিক এনিটি হোলমিহেভ নামের এক চিকিৎসককে বিয়ে করে সংসার জীবন শুরু করেন। তাদের দাম্পত্য জীবনে এক পুত্র ও কন্যা সন্তান রয়েছে। তার কথায় ধারণা করা যায় , তাদের বাড়ি বেড়া উপজেলার নগরবাড়ি এলাকায় হবে। আত্মীয়-পরিজন তাদের চিনতে পারলে সঠিক পরিচয়ে যোগাযোগ করতে বলেছেন পাবনায় চ্যালর্স স্বপন বিশ্বাসের সাথে। পুলিশ বলছে, আত্মীয় পরিজন পরিচয়ে কেউ এলে পুলিশ খোঁজ খবর নেবে তারপর নিশ্চিত হতে ডিএনএ পরীক্ষা করানো হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নাগরিক

১৫ জুন, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ