বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
বিশ্বের সবচেয়ে ‘মানসিক চাপের’ শহর হলো বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা। ‘যিপজেট’ নামের য্ক্তুরাষ্ট্রভিক্তিক একটি আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থার গবেষণায় এ চিত্র উঠে এসেছে। এ নিয়ে ‘কেন ঢাকা বিশ্বের সবচেয়ে মানসিক চাপের শহর’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ইনকিলাব পাঠকদের জন্য রিপোর্টটি তুলে ধরা হলো।
২০১৭ সালে যুক্তরাজ্য ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান যিপজেটের এক গবেষণায় দেখা গেছে, এশিয়ার শহরগুলোর মধ্যে ঢাকাতে বাস করা সবচাইতে স্ট্রেসফুল বা মানসিক চাপের ব্যাপার। গবেষণায় বায়ু দূষণ, ট্রাফিক জ্যাম, লিঙ্গ বৈষম্য, বেকারত্ব, মানসিক স্বাস্থ্যের মত বিষয়ের মানদন্ডে বিশ্বের ১৫০টি শহরের তালিকা করা হয়েছে। কিন্তু ঢাকাবাসী মানুষের মানসিক চাপ কমানোর জন্য কর্তৃপক্ষের যেমন কোন উদ্যোগ দৃশ্যমান নয়, তেমনি বেসরকারিভাবেও তেমন কোন উদ্যোগ নেই। মানসিক চাপ কিভাবে প্রভাবে ফেলে ঢাকাবাসীর জীবনে আর কীভাবে তা মোকাবেলা করা সম্ভব?
ঢাকায় দীর্ঘদিন ধরে বাস করছেন, এমন কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলছিলাম আমি, যাদের সব কজনের বয়স ত্রিশের ওপরে এবং সবাই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন। তাদের কাছে জানতে চেয়েছিলাম, এই শহরে বসবাসের ক্ষেত্রে কোন বিষয়গুলো তাদের নিয়মিত মানসিক চাপে ফেলে দেয়। তারা বলেন, গণ-পরিবহনের অপ্রতুলতাও নাগরিক ভোগান্তির কারণ। ‘ঢাকার প্রতিটা মোড়ে, প্রতিটা সিগন্যালে অনেকক্ষণ বসে থাকতে হয়, বাসা থেকে রোজ সকালে এক ঘণ্টা আগে বের হতে হয়। ধোয়া, ধুলা, কোথাও সহজে যাওয়া যায় না, এমনকি শপিং সেন্টারেও দেখবেন ভিড়’। ‘যখানে যাবেন জ্যাম, রাস্তায় দেখবেন ডাস্টবিন উপচে পড়ছেছ ময়লা। আর খাবারের ক্ষেত্রে বিশুদ্ধতার কোন গ্যারান্টি নাই।’ ‘হাটার কোন জায়গা নাই। এজন্য দেখা যায় ওজন বেড়ে যায়, রক্তচাপ বাড়ে এবং ডায়াবেটিস হয়। এগুলোও মানসিক চাপ বাড়ায়’।
কথা বলেছিলাম, কয়েকজন অল্প বয়সী ঢাকাবাসীর সঙ্গেও; যাদের বয়স ত্রিশের নিচে। কেউ শিক্ষার্থী, কেউ চাকরিতে ঢুকেছেন। একই প্রশ্নে তাদের উদ্বেগ দেখা গেল একটু ভিন্ন বিষয়ে। ‘রাস্তায় জ্যাম, কোন ট্রাফিক রুলস নাই, গাড়ি যে যেভাবে ইচ্ছা ঐভাবেই যাচ্ছে।’ ‘আমি যেখানে থাকি সেখানে পানির অনেক সমস্যা, রান্না বা গোসলের জন্য ঠিকমত পানি পাওয়া যায় না’। ‘আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে আসছি, বাস পাই নাই, দুই-তিনবার গাড়ী বদলে আসতে হয়েছে’।
যিপজেটের গবেষণায় দেখা গেছে, মানসিক চাপ সৃষ্টির পেছনে শব্দ ও বায়ু দূষণ যেমন ভূমিকা রেখেছে, তেমনি রয়েছে অতিরিক্ত জনসংখ্যার চাপ, প্রাকৃতিক পরিবেশের হার কমে যাওয়া গণ-পরিবহন ও ট্রাফিক অব্যবস্থাপনা, নিরাপত্তার অভাব ইত্যাদি বিষয়সমূহ।
মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব বিষয় একজন মানুষের ব্যক্তিগত এবং সামাজিক সম্পর্কগুলোর ওপর প্রভাব ফেলছে।
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটের মনোবিজ্ঞানী ডাঃ মেখালা সরকার বলেন, প্রতিদিনের কাজ সম্পন্ন করা যখন কঠিন হয়ে যায় সিম্পল একটা জ্যামের কারণে তখন সেটা একজন মানুষের ব্যক্তিগত ও সামাজিক সম্পর্কের ওপর প্রভাব ফেলে। শহরে দেখবেন সম্পর্কের ক্ষেত্রে অনেক অবিশ্বস্ততা, সেটাও অস্থিরতা থেকে আসতে পারে। আমরা সাময়িক একটা আনন্দের জন্য আমাদের মনটাকে নানাভাবে ‹চ্যানেলাইজ› করছি।’
কিন্তু ঢাকা শহরে যে ভীষণ মানসিক চাপের মধ্যে মানুষজন বসবাস করে, তা মোকাবেলার জন্য কর্তৃপক্ষের তেমন কোন উদ্যোগ এখনো দৃশ্যমান নয়। আর সেটি স্বীকারও করলেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন। তবে তিনি বলছেন, ২০১৭ সালের শুরুতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন ৩১টি খেলার মাঠ ও পার্ক পুনরুদ্ধারের কাজ শুরু করেছে, যাতে মানুষজন সেখানে সময় কাটাতে পারে। পাশাপাশি ‘গোস্বা ঘর’ নামে একটি অভিনব উদ্যোগও নেওয়া হয়েছিল, কিন্তু সেসব এখনো বাস্তবায়ন হয়নি।
‘আমরা ৩১টি খেলার মাঠ ও পার্ক পুনরুদ্ধারের কাজ হাতে নিয়েছি। সেই সঙ্গে আমাদের গ্রামবাংলায় ‘গোস্বা ঘর’ বলে একটা ব্যপার ছিল, নদীর পাড়ে ছোট একটি কুড়ে ঘর, বাড়িতে ঝগড়াঝাঁটি মনোমালিন্য হলে মানুষ গিয়ে কিছুক্ষণ সময় কাটিয়ে কাজে বা ঘরে ফিরত।’ ‘আমরা সেই ভাবনা থেকে শহরে একটি ‘অ্যাংগার রিডাকশন ম্যানেজমেন্ট পার্ক’ শুরু করি। আগামী বছরের শুরুতে সেটি সবার জন্য খুলে দেবার আশা আছে।’
এদিকে, মনোবিজ্ঞানী ডাঃ মেখালা সরকার বলছেন, মানসিক চাপ সামালানোর জন্য প্রাপ্তবয়স্ক যেকোনো নাগরিককে সচেতনভাবে কিছু চেষ্টার মধ্যে থাকতে হবে। নিজের শরীরে প্রতি যত্মবান হতে হবে, নিজেকে সময় দেয়া নিয়ম করে মানুষের সাথে যোগাযোগ তৈরি করা, মানে পার্টি-কালচারের মত নয়, সত্যিকারের যোগাযোগ তৈরি করতে হবে।
কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারী হিসাবে এই মূহুর্তে যে শহরের জনসংখ্যা প্রায় দুই কোটি, অর্থাৎ প্রতি বর্গ কিলোমিটারে প্রায় দুই লক্ষ মানুষ বাস করে, সে শহরকে মানুষের জন্য একটু স্বস্তিকর করতে হলে কর্তৃপক্ষের আশু উদ্যোগের কোন বিকল্প নেই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।