Inqilab Logo

রোববার, ১৬ জুন ২০২৪, ০২ আষাঢ় ১৪৩১, ০৯ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

সর্বগ্রাসী পদ্মা

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১২:৩৯ এএম

শরীয়তপুরে বাড়ি ঘর ও ফসলি জমি হারিয়ে নিঃস্ব অনেকেই
নড়াইলে দিশেহারা হাজার হাজার মানুষ
ঝুঁকিতে চাঁদপুর শহর রক্ষাবাঁধ ভাঙছে নদী, ভাঙছে ঘরবাড়ি ভাঙছে মানুষের মন


কীর্তিনাশা পদ্মার ভাঙনে বিলীন হতে চলেছে শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলা। ভাঙনে পদ্মার গর্ভে চলে যাচ্ছে গ্রামের পর গ্রাম। গত সোমবার শরীয়তপুরের নড়িয়ায় মানুষের চোখের সামনেই পদ্মায় বিলীন হয়েছে বিশালাকার একটি তিনতলা বাড়ি। স্থানীয়রা জানায়, পদ্মা সেতু নির্মাণের স্থান থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত নড়িয়া উপজেলার বেশ কিছু ইউনিয়ন পদ্মার ভাঙনের কবলে পড়েছে। এতে হঠাৎ করেই নিঃস্ব হয়ে পড়ছে মানুষ। একদিন আগেও যারা সম্পদশালী ছিল রাতারাতি তারা নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে। তাদের পাশে দাঁড়ানোর মতো যেন কেউ নেই।
এদিকে, পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, উজান থেকে নেমে আসা ঢলে রাজশাহীতে ক্রমেই উত্তাল হয়ে উঠছে পদ্মা। গত ৫/৬ দিনে প্রতিদিনি গড়ে চার থেকে পাঁচ সেন্টিমিটার করে পানি বাড়ছে। ইতোমধ্যে, বাংলাদেশ ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়তে যাচ্ছে-এমন আশঙ্কার কথা জানিয়ে ঢাকাকে জরুরী সতর্ক বার্তা দিয়েছে নয়াদিল্লি। উজানের ঢলে নড়াইলে মধুমতি ও চাঁদপুরে মেঘনাও ক্রমে উত্তাল হয়ে সর্বগ্রাসী রুপ নিচ্ছে।
নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার মধুমতী নদীর ভাঙনে ৬ গ্রামের মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েছে। মধুমতী নদীর ভাঙন ইতিমধ্যে ভয়াবহ রুপ নিয়েছে। মাত্র কয়েক দিনের ব্যবধানে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে প্রায় শতাধিক বাড়ি ঘর।
এছাড়া মেঘনার কয়েক দফা ভাঙ্গনে মারাত্মক ঝুঁকিতে চাঁদপুর শহর রক্ষাবাঁধের পুরাণবাজার হরিসভা এলাকা। চলতি বর্ষা মৌসুমে কয়েকবার ভাঙ্গার পর আবারো ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে সেখানে। গত বৃহস্পতিবার বাঁধের প্রায় ৬০ মিটার ব্লক নদীতে দেবে গেছে।
শরীয়তপুর জেলা সংবাদদাতা মোঃ হাবিবুর রহমান হাবীব জানান, নড়িয়ায় অব্যাহত পদ্মার ভাঙ্গনে গত এক সপ্তাহে ২শ বছরের পুরনো মূলফৎগঞ্জ বাজারের ৩ শতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পদ্মাগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙ্গন ঝুঁকিতে রয়েছে পুরনো এ বাজারের আরো ৭ শতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। যে কোন মুহুর্তে বিলীন হয়ে যেতে পারে নড়িয়া উপজলার এক মাত্র ৫০ শয্যা বিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও বাজার সংলগ্ন লস্কর বাড়ী জামে মসসিদ।
কোন কাজেই আসেনি সরকারের অতিরিক্ত বরাদ্দ দিয়ে তীরে ফালানো জিও ব্যাগ। প্রতিদিনই বিলাশ বহুল বাড়ীঘরসহ শত শত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বিলীন হয়ে যাওয়ায় পদ্মার পাড়ে চলছে কান্না রোল ও আহাজারী। রাক্ষুসী পদ্মার হিংস্র থাবায় লন্ডভন্ড হয়ে গেছে হাজার হাজার পরিবারের জীবন সংসার। এক সময়ের জমিদার ও সমাজের প্রভাশালীরা এসে দাঁড়িয়েছে ভুমিহীনদের কাতারে।
অনেকেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে বলেন, আমাদের আর কিছুই রইলো না। উত্তসূরীদের জন্য কিছুই রেখে যেতে পারলাম না। জেলা প্রশাসনের হিসাব অনুযায়ী, এ বছর নড়িয়া উপজেলার প্রায় ৪ হাজার ৫শত পরিবার বাড়ী ঘর ও ফসলী জমি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছে। ভাঙ্গন কবলিতরা একটু মাথা গোজার ঠাঁই খুঁজতে ছুটে বেড়াচ্ছে।
পদ্মার তীরবর্তী এলাকায় বসবাসকারী লোকজনের চোখে কোন ঘুম নেই। সহায়-সম্বল ঘর-বাড়ী, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রক্ষার্থে প্রাণপন চেষ্টা করেও রক্ষা করতে পারছে না। চোখের পলকেই সবকিছু পদ্মায় বিলিন হচ্ছে।
এখনও যাদের বাড়ি-ঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙ্গেনি কিন্ত নিকটে এসে পদ্মা নদী উকি দিচ্ছে সেকল লোকদের দাবী ভাঙ্গন রোধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহন করা হলে এখনো নড়িয়া উপজেলার পদ্মা নদীর নিকটবর্তী এলাকা, বাজার, ঐতিহ্যবাহী মূলফৎগঞ্জ মাদ্রাসা কমপ্লেক্স রক্ষা করা সম্ভব হতে পারে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও ভাঙ্গন কবলিত এলাকাবসী জানান, এ বছর বর্ষা মৌসুমের শুরু থেকে রাক্ষুসি পদ্মা ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে দক্ষিনে দুই কিলোমিটার চলে এসেছে। ইতোমধ্যে মুলফৎগঞ্জ বাজারের ৩ শতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। একেকটি ভবন ২০ থেকে ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে দুমড়ে মুচড়ে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এ সময় শত শত লোকজন শুধু আল্লাহ আল্লাহ বলে চিৎকার দিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে।
ভাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্তরা জানায়, সর্বহারা মানুষগুলো দিন রাত করে একটু মাথা গুজার ঠাঁই খুঁজছে। সরকারের পক্ষ থেকে তেমন কোন সুযোগ সুবিধা পাচ্ছে না ক্ষতিগ্রস্থরা। এলাকাবাসী বর্ষার আগেই চেয়েছিল সরকারী কোন সাহায্য নয় পদ্মার দক্ষিন তীরে নড়িয়া উপজেলা শহর এবং পুরনো এ মূলফৎগঞ্জ বাজারটি রক্ষায় স্থায়ী বেরিবাঁধ। এ ভয়াবহ ভাঙ্গন রোধে সরকার পদ্মা নদীর দক্ষিন (ডান) তীর রক্ষা বাঁধ প্রকল্প গ্রহন করে। এরপর গত ২ জানুয়ারী তীর রক্ষা বাঁধ নির্মানের জন্য ১ হাজার ৯৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়ে তা একনেকের বৈঠকে পাস করে। বর্ষার আগে এ সব এলাকার হাজার হাজার মানুষ স্থায়ী বেরিবাঁধের দাবীতে সড়ক অবরোধ ও মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে দাবী জানিয়ে আসছিল। কিন্তু অজানা কারনে বাঁধ নির্মান কাজ শুরু করা হয়নি।
তারা আরও জানায়, বর্ষার শুরু থেকে অব্যাহত ভাঙ্গন শুরু হলে ৫ কোটি টাকা অতিরিক্ত বরাদ্দ দিয়ে কিছু জিও ব্যাগ ফেলে নদীর গতি পরিবর্তনের চেষ্টা করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। কিন্ত প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল এবং কাজ ধীর গতিতে হওয়ায় ভাঙ্গন রোধের কোন কাজেই আসেনি সরকারে এ অতিরিক্ত বরাদ্দ। রক্ষা করা যায়নি ঐতিহ্যবাহি এ বাজার, মসজিদ, মাদ্রাসা, বিলাশ বহুল বহুতল ভবনসহ হাজার হাজার পরিবারের ঘরবাড়ী। এ এলাকার অনেক বিত্তবান লোকজন সব হারিয়ে এখন নিঃস্ব হয়ে গেছে। তাদের মাথা গোজার ঠাই পর্যন্ত নেই।
বর্তমানে মারাত্মক ভাঙ্গন ঝুকিতে রয়েছে মুলফৎগঞ্জ বাজারের আরো ৭ শতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, নড়িয়া বাজার, নড়িয়া উপজেলা পরিষদ, নড়িয়া পৌরসভার ও মূলফৎগঞ্জ মাদ্রাসা কমপ্লেক্স, বাজারের পূর্ব পার্শে¦র লস্কর বাড়ী জামে মসজিদসহ আশপাশের আরো অনেক স্থাপনা।
ইতো মধ্যে হাসপাতালের মালামাল সরিয়ে অন্যত্র নেয়া হয়েছে এবং হাসপাতালের রোগীদের পাশের একটি ভবনে স্থানান্তর করা হয়েছে বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। শরীয়তপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি বিদ্যুতের খুঁটি সরিয়ে নেয়ায় বিচ্ছিন্ন রয়েছে বাজার, হাসপাতালসহ আশ পাশের এলাকার বিদ্যুৎ সংযোগ।
এলাকাবাসীর দাবী, ভাঙ্গন রোধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলে এখনো নড়িয়া বাজার, মূলফৎগঞ্জ মাদ্রাসা কমপ্লেক্সসহ অনেক সরকারী বে-সরকারী প্রতিষ্ঠান রক্ষা করা সম্ভব হতে পারে। অন্যথায় অচিরেই হারিয়ে যাবে আরো বহু স্থাপনা। এর আগে নড়িয়া-সুরেশ্বর সড়ক, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ মক্তবসহ নড়িয়ার ওয়াপদা বাজার, বাঁশতলা বাজার, চর জুজিরা, সাধুর বাজার, পৌর এলাকার শুভগ্রাম, পাচঁগাও মূলফৎগঞ্জ বাজার সংলগ্ন এলাকার প্রায় ৪ হাজার এর বেশী পরিবারের ঘর বাড়ী নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
কেদারপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ঈমাম হোসেন দেওয়ান বলেন, গত ২ মাসে পদ্মার ভাঙ্গনে প্রায় ৪ হাজার পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়েছে। কোন জনপ্রতিনিধি সহ সরকারী কর্মকর্তারা কোন রকম সাহায্য সহযোগীতা করেনি। এলাকায় মহা দূযোর্গ চলছে। আমরা নিঃস্ব হয়ে গেছি। আমাদের ছেলে মেয়েদের জন্য কিছুই রেখে যেতে পারলাম না। আমরা এখন ভুমিহীনদের কাতারে চলে এসেছি। এতে আমাদের দুঃখ নেই। এখনো যদি সরকার দ্রুতগতিতে পদ্মার দক্ষিন তীর রক্ষা বাঁধ বাস্তবায়নের কাজ শুরু করে তাহলে আরো হাজার হাজার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ঘরবাড়ী রক্ষা করা সম্ভব হতো।
শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম বলেন, এ পর্যন্ত লক্ষাধিক ব্যাগ নদীতে ফেলা হয়েছে। কিন্তু তীব্র স্রোতের কারণে কিছুতেই ভাঙ্গন রোধ করা যাচ্ছে না।

নড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সানজিদা ইয়াসমিন বলেন, নড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পদ্মার কাছাকাছি চলে আসায় হাসপাতালের মালামাল জেলা প্রশাসক ও সিভিল সার্জনের নির্দেশক্রমে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। রোগীদের জন্য হাসপাতাল ভবনের দক্ষিন পার্শ্বের আবাসিক দু’টি ভবনে ভর্তি কার্যক্রম এবং জরুরী চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ইতোপূর্বে প্রায় আড়াই হাজার ক্ষতিগ্রস্থদের মাঝে শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। খুব শিঘ্রই ৩শ ৫০জন ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারকে ২ বান্ডেল করে টিন ও নগদ ৬ হাজার করে টাকা বিতরণ করা হবে।
মধুমতীর ভাঙনে ৬ গ্রামের মানুষ দিশেহারা
নড়াইল জেলা সংবাদদাতা জানান, লোহাগড়া উপজেলার মধুমতী নদীর ভাঙনে ৬ গ্রামের মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েছে। মধুমতী নদীর ভাঙন ইতিমধ্যে ভয়াবহ রুপ নিয়েছে। মাত্র কয়েক দিনের ব্যবধানে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে প্রায় শতাধিক বাড়ি ঘর। ভাঙন অব্যাহত থাকায় প্রায় ১০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ঝুঁকিতে রয়েছে আরও শতাধিক ঘর-বাড়ি। এছাড়া ভাঙন রোধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার তাগিদ ও প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনায় মানববন্ধন করেছে এলাকার ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের সদস্যরা।
স্থানীয়রা জানান, মহিষাহপাড়া, মঙ্গলহাটা, করফা, আতোষপাড়া, শিয়রবর ও ঘাঁঘাঁ গ্রামে গত দুই সপ্তাহের মধ্যে মধুমতী নদীতে বিলীন হওয়া শিয়েরবর গ্রামে হাসান মুন্সী, আতিয়ার মোল্যা, দেলোয়ার, ভাষাণ মোল্যা, রাজ্জাক, আক্তার, আক্কাস, মিন্টু মোল্যা, ইকবাল এর বাড়ি রয়েছে। এতে করে প্রায় কয়েক কোটি টাকার ক্ষতিসাধিত হয়েছে।
মল্লিকপুর ইউনিয়নের ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা মো. জিন্নাত শেখ জানান, প্রায় ২০ বছর ধরে এই নদী ভাঙা গড়া চলছে। আমি নিজেই নয়বার বাড়ি সরিয়েছি। আমি এখন সিএন্ডবিতে (রাস্তার পাশে) কোন রকম ঘর তুলে আছি।
শিয়রবর গ্রামের রওশন শিকদার জানান, আমাদের বাড়ি চার বার মধুমতী নদীতে বিলীন হয়েছে। এ বছর নদী যে ভাবে ভাঙছে তাতে মনে হয় এবারও বাড়ি সরাতে হতে পারে।
কোটাকোল ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা বিএম মনিরুজ্জামান বলেন, ভাঙন রোধে এ ইউনিয়নে মধুমতীর তীরে বস্তা ফেলতে এসছিল সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে তা বন্ধ হয়ে যায়। আমাদের দাবি দ্রæত ভাঙন রোধে সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে অহসায় গৃহহীন মানুষের পাশে দাড়াবেন।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) এমএম আরাফাত হোসেন বলেন, নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্থ অনেক পরিবার আমাদের কাছে সাহায্যের জন্য আবেদন করছেন। সঙ্গে সঙ্গে আমি জেলা প্রশাসক বরাবর পাঠিয়ে দিচ্ছি। এছাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডকে লিখিত ভাবে জানানো হয়েছে। তাঁরা যাতে দ্রুত ব্যবস্থা নেয় সে বিষয়েও তাগিদ দেয়া হচ্ছে।
নড়াইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শাহনেওয়াজ তালুকদার বলেন, আমরা শিয়েরবর বাজার এলাকায় ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নিয়েছি। কিন্তু মহিষাহপাড়া, মঙ্গলহাটা, করফা, আতোষপাড়া এলাকায় গুরুত্বপূর্ণ হাট-বাজার না থাকায় কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
চাঁদপুর থেকে স্টাফ রিপোর্টার জানান, মেঘনার কয়েক দফা ভাঙ্গনে এখন মারাত্মক ঝুঁকিতে চাঁদপুর শহর রক্ষাবাঁধের পুরাণবাজার হরিসভা এলাকা। চলতি বর্ষা মৌসুমে কয়েকবার ভাঙ্গার পর আবারো ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে সেখানে। গত বৃহস্পতিবার বাঁধের প্রায় ৬০ মিটার ব্লক নদীতে দেবে গেছে। ভাঙ্গন রোধে বালুভর্তি জিওব্যাগ ফেলা হলেও এখনো সিসি ব্লক ফেলা শুরু করা হয়নি।
ত্রিনদীর প্রবল পানি প্রবাহের সাথে ঘূর্ণি স্রোতে নদীর উত্তাল রুদ্ররূপ এখন ভয়ঙ্কর অবস্থা। চট্টগ্রাম-দক্ষিণাঞ্চল, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জসহ অন্যান্য রুটের সকল নৌযান চাঁদপুর নদী এলাকা অতিক্রমকালে শহর রক্ষাবাঁধের খুব কাছ দিয়ে চলাচল করছে। এতে প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছে অনুমৃত হয়, চাঁদপুর শহর রক্ষাবাঁধের বড় স্টেশন মোলহেড, পুরাণবাজার ঠোঁটা, হরিসভা ও রনাগোয়াল পর্যন্ত পয়েন্টে নদীর ব্যাপক গভীরতা রয়েছে। এলাকাবাসীর ধারণা, পানির প্রবল চাপ ও ঘূর্ণিস্রোতে শহর রক্ষাবাঁধের বিভিন্ন স্থান দিয়ে তলদেশে বড় আকারে ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে। বর্ষার পানি নামার সময় ভয়াবহ ভাঙ্গনের আশঙ্কা করা হচ্ছে।
হরিসভা পয়েন্টে শহর রক্ষাবাঁধের ভাঙ্গন অশনি সংকেত হিসেবে দেখছে শহর রক্ষাবাঁধ বেষ্টিত জনপদের ব্যবসায়ীসহ সকল শ্রেণি পেশার মানুষ। তাদের দাবি, আবারো ব্যাপক ভাঙ্গন থেকে চাঁদপুরকে রক্ষায় এখনই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া দরকার।
সরজমিনে দেখা যায়, মারাত্মক ভাঙ্গন ঝুঁকিতে পুরো হরিসভা এলাকা। ব্লক বাঁধ ফাঁক হয়ে ভাঙ্গন পরিধি আরো বাড়ছে। রাস্তাটি নদীগর্ভে চলে গেলে ওই এলাকার বিরাট জনপদ নদীতে বিলীন হয়ে যাবে। মসজিদ-মাদ্রাসা, মন্দির, গণকবর, বাসা-বাড়িসহ অনেক কিছুই হারাতে হবে।
শুক্রবার পুরাণবাজার হরিসভা এলাকায নদী ভাঙ্গনস্থল পরিদর্শন করেছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের পূর্বাঞ্চল কুমিল্লার প্রধান প্রকৌশলী বাবুল চন্দ্র শীল। এ সময় পাউবোর অন্যান্য কর্মকর্তাসহ স্থানীয় লোকজন উপস্থিত ছিলেন। তিনি ভাঙ্গন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন। চাঁদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু রায়হান জানান, সরকার শহর রক্ষাবাঁধ সংস্কারের জন্যে যে অর্থ বরাদ্দ দেয় তা কাজের প্রয়োজনীয়তা থেকে খুবই নগণ্য। ২০০৫-০৬ সালের পর থেকে শহর রক্ষাবাঁধ সংরক্ষণ কাজের জন্যে তেমন বরাদ্দ নেই। চলতি অর্থ বছরে সরকারের কাছে ১৬৫ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছি। সরকার যে পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ দিবে সে অনুপাতেই বাঁধ সংরক্ষণে কাজ করবো। তিনি আরো জানান, চাঁদপুর শহর রক্ষাবাঁধের পরিধি ৩৩শ’ ৬০ মিটার। এর মধ্যে পুরাণবাজার অংশে ১৪শ’ ৩০ মিটারের মধ্যে ২শ’ মিটার এলাকা ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। পদ্মা-মেঘনা ও ডাকাতিয়া এ ত্রি-নদীর মিলনে শহর রক্ষাবাঁধ ঘেঁষে পানির প্রবল চাপে বাঁধে স্কাউরিংয়ের পরিমাণ বেশি। এ কারণে এখানে নদী ভাঙছে।
এদিকে, পদ্মায় পানি বৃদ্ধির হার গুরুত্ব সহকার পর্যবেক্ষণ করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড-পাউবো। গতকাল শনিবার দুপুর ১২টায় পদ্মা নদীর পানির উচ্চতা ছিলো ১৭ দশমিক ৪ সেন্টিমিটার। বিপদসীমার মাত্র ১ দশমিক ৪ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে প্রমত্তা পদ্মা। রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের গেজ রিডার এনামুল হক জানান, বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে চার থেকে পাঁচ সেন্টিমিটার করে পানি বাড়ছে। এরমধ্যে গত বুধবার সন্ধ্যা ৬টায় রাজশাহীতে পদ্মা নদীর পানির উচ্চতা ছিলো ১৬ দশমিক ৯০ সেন্টিমিটার। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টায় ছিলো ১৬ দশমিক ৯৪ সেন্টিমিটার, গতকাল ছিলো ১৭ সেন্টিমিটার।
এনামুল হক আরও জানান, গত ১৫ বছরে রাজশাহীতে পদ্মার পানি বিপদসীমা (১৮.৫০) অতিক্রম করেছে মাত্র দু’বার। এরমধ্যে ২০০৪ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত টানা নয় বছর রাজশাহীতে পদ্মার পানি বিপদসীমা অতিক্রম করেনি। ২০০৩ সালের ১৯শে সেপ্টেম্বর রাজশাহীতে পদ্মার সর্বোচ্চ উচ্চতা ছিলো ১৮ দশমিক ৮ সেন্টিমিটার। এরপর ২০১৩ সালের ৭ই সেপ্টেম্বর রাজশাহীতে পদ্মা বিপদসীমা অতিক্রম করেছিলো। ওই বছর পদ্মা নদীর সর্বোচ্চ উচ্চতা দাঁড়ায় ১৮ দশমিক ৭০ সেন্টিমিটারে।



 

Show all comments
  • নাঈম ৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ৬:১০ এএম says : 0
    নদীর ভাঙ্গণ মানুষকে নি:স্ব করে দেয়
    Total Reply(0) Reply
  • কামরুজ্জামান ৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ৬:১১ এএম says : 0
    আল্লাহ তুমি তাদের প্রতি রহমত নাযিল করো।
    Total Reply(0) Reply
  • পাবন রহমান ৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ৬:১২ এএম says : 0
    আবারো ব্যাপক ভাঙ্গন থেকে চাঁদপুরকে রক্ষায় এখনই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া দরকার।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পদ্মা

১১ জানুয়ারি, ২০২৩
৩১ অক্টোবর, ২০২২
৪ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ