পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
রাজধানীর খাল, জলাশয় থেকে শুরু করে পুকুর পর্যন্ত প্রভাবশালী দখলদারদের কারণে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এতে একটু বৃষ্টি হলেই রাজধানীতে ভয়াবহ পানিবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। অধিকাংশ রাস্তা-ঘাট তলিয়ে একাকার হয়ে যাচ্ছে। সড়কগুলো পরিণত হচ্ছে ছোট খালে। পানিতে সয়লাব হয়ে পড়লে বোঝা মুশকিল হয়ে পড়ে এখানে রাস্তা আছে নাকি নাই। অথচ ২০১০ সালে ড্যাপ ১৫৯০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা তথা রাজধানীর ১২ শতাংশ পানি সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছিল। এর মধ্যে পুকুর, খাল এবং লেকসহ অন্যান্য জলাশয় অন্তর্ভুক্ত ছিল। ২০১৭ সালে রাজউক জরিপ চালিয়ে দেখেছে, রাজধানীতে মাত্র ১৭৪৪ একর পানি সংরক্ষণ এলাকা রয়েছে। এর ফলে রাজধানী হয়ে পড়ছে অনেকটা পানিশূণ্য। পানি সংরক্ষণে এত স্বল্প জলাধার বিশ্বের আর কোনো রাজধানীতে রয়েছে কিনা, জানা নেই। অথচ এর সজীব এবং স্বাস্থ্যকর পরিবেশ বজায় রাখার জন্য পর্যাপ্ত জলাধার খুবই জরুরী। রোগবালাই থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য, বুক ভরে অক্সিজেন নেয়ার জন্য এসব জলাধার খুবই প্রয়োজন। দুঃখের বিষয়, রাজধানীতে এক সময় যে পরিমাণ খাল, পুকুর ও জলাধার ছিল, এখন তা নেই। প্রভাবশালী ব্যক্তি থেকে শুরু করে সরকারের বিভিন্ন সংস্থাও এসব জলাধার দখল করে নিয়েছে এবং নিচ্ছে। শুধু রাজধানীতে নয়, রাজধানীর আশপাশের নদ-নদী এবং জলাশয়ও প্রভাবশালী ও হাউজিং প্রতিষ্ঠানগুলো দখল করে নিয়েছে। এটা যদি চলতে থাকে, তবে অদূর ভবিষ্যতে রাজধানীর কী পরিস্থিতি হবে, তা অনুমান করতে কষ্ট হয় না।
একটা সময় ঢাকার মতো রাজধানী বিশ্বে বিরল ছিল। এটিকে অনেকটা স্বর্গীয় শহর হিসেবে আখ্যায়িত করা হতো। এর ভেতোর যেমন অসংখ্য স্রোতস্বিনী খাল, পুকুর, ঝিল, লেক ছিল, তেমনি এর চারপাশ ঘিরে নদ-নদী ছিল। নদ-নদীগুলো এখনও থাকলেও সেগুলো দখল-দূষণে মৃত প্রায়। রাজধানীর ভেতরের খাল এবং চারপাশের নদ-নদী দখলমুক্ত করার জন্য আদালতের নির্দেশসহ নগরবিদরা বহু তাকিদ দিয়েছেন। এ নিয়ে পত্র-পত্রিকায় লেখালেখিও হয়েছে। এমনকি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজধানীর খালগুলো উদ্ধারের নির্দেশও দিয়েছেন। এসব আদেশ-নির্দেশের কোনোটিই বাস্তবায়ন হতে দেখা যায়নি। বরং বিদ্যমান যে কয়টি খাল, এবং কিছু সংখ্যক বিল, পুকুর, লেক রয়েছে সেগুলোও প্রভাবশালী দখলদাররা ধীরে ধীরে দখল করে নিচ্ছে। হাউজিং কোম্পানিগুলো বিভিন্ন প্রজেক্ট গড়ে তুলছে। এদের নিবৃত করার কেউ নেই। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, রাজধানীতে এক সময় ৪৬টি খাল ছিল। এখন গুণতে গেলে দেখা যাবে হাতে গোনা কয়েকটি রয়েছে। সেগুলো আবার যথাযথ সংস্কার না করায় দূষিত নালায় পরিণত হয়েছে এবং দখলদাররা তা গ্রাস করে নিচ্ছে। অনেক খালের উপর সড়ক ও রাস্তা নির্মাণ করায় বোঝা যায় না, এক সময় এখানে খাল বা ঝিল ছিল। গত বছর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি অনুষ্ঠানে স্মৃতিচারণ করে বলেছিলেন, ধানমন্ডি ৩২ নম্বর পর্যন্ত বিশাল ঝিল ছিল। সেখানে নৌকা চলত, শাপলা ফুল ফুটত। এখন কী তা কল্পনা করা যায়! নগরবিদরা বলছেন, রাজধানীকে জলাবদ্ধতামুক্ত করতে হলে পর্যাপ্ত জলাধার থাকা জরুরী। কারণ রাজধানী সমতল ভূমির উপর গড়ে উঠেছে। যদি এমন হতো, এটি উঁচু-নিচু বা পাহাড়ি এলাকায় গড়ে উঠেছে তাহলে পানিবদ্ধতা সৃষ্টি হতো না। পানি সহজে গড়িয়ে নদীতে গিয়ে পড়ত। যেহেতু রাজধানী সমতল, তাই এর ভেতরে পর্যাপ্ত জলাশয়, পুকুর, লেক, ঝিল ও খাল থাকা জরুরি। এসব সংকটের কারণেই রাজধানীর পরিবেশ বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠেছে। বিভিন্ন রোগবালাই বেড়েছে এবং বাতাসে দূষিত পদার্থ মিশে তা নি:শ্বাসের অযগ্য। মানুষ বহুবিধ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এই যে প্রায় প্রতি বছর রাজধানীতে ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ দেখা দেয়, তা পর্যাপ্ত জলাধার না থাকার কারণেই দেখা দিচ্ছে। রাজধানীর জলাধারগুলো যদি থাকত এবং যেগুলো বিদ্যমান রয়েছে সেগুলো দখলমুক্ত করে যথাযথ সংস্কার করা হতো, তবে এসব রোগ-ব্যাধি দেখা দিত না। দুঃখের বিষয়, রাজধানীর এ দুরবস্থার কথা জানা সত্তে¡ও রাজধানী সংলিষ্ট কর্তৃপক্ষ গুলো ও থেকে শুরু করে সরকারের মধ্যে সিরিয়াস কোনো উদ্যোগ পরিলক্ষিত হচ্ছে না। বিষয়টি এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে, যেন যেমন খুশি তেমন চলুক।
রাজধানীকে বসবাসের উপযোগী করে তোলার জন্য ক্রাশ প্রোগ্রাম হাতে নেয়ার বিকল্প নেই। আমরা মনে করি, সরকার তার উন্নয়ন দেখানোর জন্য যেসব গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প হাতে নিয়ে তা দ্রæত বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে, রাজধানীকে বসবাসের উপযোগী করার জন্য এ ধরনের উদ্যোগ নেয়া জরুরী। এক্ষেত্রে যত বিলম্ব হবে, ততই রাজধানী অচল হয়ে পড়বে। সরকার রাজধানীর খাল, পুকুর, লেক, আশপাশের নদ-নদী দখলমুক্ত করার মধ্য দিয়ে প্রাথমিকভাবে এ উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারে। এতে এসব সমস্যার সাথে অনেক সমস্যাই সমাধানের পথ খুলে যাবে। বিশেষ করে রাজধানীর ভেতরে দখলকৃত খাল, পুকুর, লেক, ঝিলগুলো যদি দখলমুক্ত করে স্বচ্ছ ও সজীব করে তোলা যায়, তবে এর চেহারাই বদলে যাবে। সরকারকে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে ভাবতে হবে। সবার আগে যারা এসব দখল করে আছে, তারা যতই শক্তিশালী হোক, সরকারের চেয়ে শক্তিশালী নয়, এ কথা আমরা বিশ্বাস করতে চাই। সরকার যদি সদিচ্ছা পোষণ করে তবে দখলদারদের উচ্ছেদ করে দখলকৃত খাল, জলাশয়, পুকুর, আশপাশের নদ-নদী উদ্ধার করা অবশ্যই সম্ভব। আমরা আশা করব, সরকার রাজধানীর এ নাজুক অবস্থা নিরসনে এবং একে বাসযোগ্য করে তোলার জন্য দ্রæত কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।