Inqilab Logo

শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

নদীভাঙন ঠেকাতে দ্রুত উদ্যোগ নিতে হবে

| প্রকাশের সময় : ৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১২:০৩ এএম


ব্রহ্মপুত্র-যমুনা এবং গঙ্গা-পদ্মা নদ-নদীর উজানে চীন ও ভারত থেকে ভাটিতে বাংলাদেশের দিকে প্রবল বেগে নামছে ঢলের পানি। প্রবল এই ঢলের কারণে দেশের উত্তরাঞ্চল থেকে ভাটিতে মধ্যাঞ্চল পর্যন্ত অনেক স্থানে ভয়াবহ নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। বিস্তৃত হচ্ছে ভাঙন। অনেক জায়গায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধেও ভয়াবহ ধস, ভাঙন ও ফাটল দেখা দিয়েছে। নদী ভাঙন তীব্র হয়ে ওঠায় প্রাচীন মসজিদ, মদরাসা, হাট-বাজার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, রাস্তাঘাট, বাড়িঘর থেকে শুরু করে ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। সহায়-সম্পদ হারিয়ে নদীপাড়ের মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়ছে। তারা উদ্বাস্তুতে পরিণত হচ্ছে। বাপ-দাদার ভিটা ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে হচ্ছে। পরিবার-পরিজন নিয়ে ভাসমান হয়ে পড়ছে। জানা যায়, উত্তর জনপদের তিস্তা, ধরলা, ব্রহ্মপুত্র, নদ-নদীর পাড়ের কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা থেকে শুরু করে বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, জামালপুর, আরিচা, টাঙ্গাইল এবং পদ্মায় রাজবাড়ী, গোয়ালন্দ, মাওয়া, সুরেশ্বর মুন্সীগঞ্জসহ বিস্তীর্ণ এলাকায় ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, দেশে কম বৃষ্টিপাত হওয়ায় তেমন একটা বন্যা পরিস্থিতি এখন পর্যন্ত দেখা দেয়নি। তবে যে তীব্র ঢল ধেয়ে আসছে তাতে অচিরেই দেশে ভয়াবহ বন্যা দেখা দেয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এজন্য এখন থেকেই পূর্ব প্রস্তুতি নেয়া দরকার।
নদী ভাঙন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেশে নতুন কিছু নয়। বর্ষা মৌসুমে কম-বেশি ঝড়-ঝঞ্ঝা, বন্যা দেখা দেয়। প্রাকৃতিক এ দুর্যোগ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য বিভিন্ন সময়ে সরকার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মান, নদী ড্রেজিংসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। তবে তা প্রয়োজন ও পরিস্থিতি বিবেচনায় অপ্রতুল। পানি উন্নয়ন বোর্ড বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মান রক্ষা ও নদী ভাঙন রোধে দায়িত্ব পালন করে থাকে। তবে বাঁধ নির্মাণ সংস্কার নিয়ে এক শ্রেণীর কর্মকর্তা ও ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগও রয়েছে। বছরে শত শত কোটি টাকা বরাদ্দ করা হলেও এ অনুযায়ী বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কার করা হয় না। ফলে দেখা যায়, বন্যার পানির তোড়ে সেগুলোর অনেক জায়গা ভেঙ্গে যায়। এ নিয়ে পত্র-পত্রিকায় অনেক লেখালেখি হলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তাতে কর্ণপাত করে না। নদী ভাঙন আমাদের দেশে স্বাভাবিক একটা বিষয়, এ তথ্য জানা থাকা সত্তে¡ও ভাঙনপ্রবণ এলাকায় খুব একটা তদারকি পরিলক্ষিত হয় না। ফলে প্রতি বছর ঐসব এলাকার ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা, মানুষের আদিবাড়ি, ফসলি জমি, হাট-বাজার, মসজিদ, মাদরাসা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এমনকি দেশের ভৌগলিক চিত্রও বদলে যাচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের তা চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া কোনো উপায় থাকে না। ভিটা-মাটি, ফসলী জমি ও সহায়-সম্পদ হারিয়ে তারা দিশেহারা হয়ে পড়ে। শিকড়হীন হয়ে পড়ে। উদ্বাস্তুতে পরিণত হয়। বাধ্য হয়ে অন্য এলাকা বা শহরমুখী হয়। নদী ভাঙনে এখন পর্যন্ত কত মানুষ উদ্বাস্তুতে পরিণত হয়েছে, তার যথাযথ হিসাব সরকারের কাছে আছে কিনা, তা আমাদের জানা নেই। এক হিসাবে বলা হয়েছে, প্রতি বছর নদীভাঙনে অন্তত এক লাখ মানুষ আশ্রয়হীন ও নি:স্ব হয়ে যায়। এ থেকেই বোঝা যায় সমস্যাটি কতটা ভয়াবহ। এসব উদ্বাস্তু মানুষের পুনর্বাসনের ব্যবস্থার কথাও তেমন একটা শোনা যায় না। জাতির ঘাড়ে বোঝা হয়ে থাকা এসব মানুষ বাধ্য হয়ে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় আশ্রয় নেয়ার ফলে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সমস্যাও দেখা দিচ্ছে। সংশ্লিষ্ট এলাকার স্থায়ী বাসিন্দারাও নানা সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে। এতে সমাজ এক ধরনের ভারসাম্যহীনতার শিকার হচ্ছে। অনেকে রাজধানী ও শহরমুখী হওয়ায় সমস্যা আরও তীব্র হয়ে উঠছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, রাজধানীর বস্তিগুলোতে প্রায় ৫০ লাখ মানুষ বসবাস করে। এদের অধিকাংশই নদী ভাঙন ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার। সর্বস্ব হারিয়ে রাজধানীতে আসা এসব মানুষ বস্তিতে বা সড়কের পাশে ফুটপাতে দিন গুজরান করছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রতিদিন রাজধানীতে প্রায় তিন হাজারের মতো মানুষ গ্রাম থেকে প্রবেশ করছে। এতে জনসংখ্যার চাপে শহর আরও ভারাক্রান্ত হচ্ছে। ভাসমান এসব মানুষ কী করবে, কীভাবে জীবনযাপন করবে, তা নিয়ে কেউ তেমন একটা ভাবে না। সরকারের পক্ষ থেকেও তাদের পুনর্বাসনের তেমন কোনো উদ্যোগ পরিলক্ষিত হয় না।
দেশের যেসব এলাকা নদী ভাঙনপ্রবণ সেসব এলাকা সম্পর্কে নিশ্চয়ই পানি উন্নয়ন বোর্ডের জানা আছে। বন্যা দৃশ্যমান হলেও নদী ভাঙন কার্যত প্লেয়জনিংয়ের মত কাজ করে। ধীরে ধীরে অনেকটা অন্তরালে এ ভাঙন প্রক্রিয়া শুরু হয়। তারপর হঠাৎ করেই দেখা যায় বাড়িঘর, বিভিন্ন স্থাপনা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। অনেক সময় স্থানীয় লোকজন তা টের পেয়ে বিভিন্নভাবে স্বউদ্যোগে ভাঙন রোধের ব্যবস্থা নেয়। তাদের এ উদ্যোগের সাথে যদি পানি উন্নয়ন বোর্ডও একজোট হয়ে পদক্ষেপ নেয়, তাহলে সংশ্লিষ্ট এলাকার ভাঙন রোধ করা সম্ভব। এক্ষেত্রে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে ভাঙনপ্রবণ এলাকায় বিশেষ নজর দেয়া প্রয়োজন। আবার যেসব এলাকায় নদী ভাঙন রোধে বাঁধ রয়েছে, সেসব বাঁধ যথাযথভাবে রয়েছে নাকি নাজুক অবস্থায় রয়েছে, তা নিয়মিত মনিটরিং করা দরকার। দেখা যায়, বাঁধ আছে ঠিকই তবে বছরের পর বছর সংস্কার ও তদারকি না করার কারণে তার সক্ষমতা হারিয়ে গেছে। ফলে বন্যা হলে পানির তোড়ে সেগুলো ভেঙে যায়। আবার বন্যার পানি কোনো রকমে ঠেকিয়ে রাখতে পারলেও পানি যখন নেমে যাওয়া শুরু করে, তখন বাঁধগুলো হুমমুড় করে ভেঙে পড়ে। এ অবস্থায় নদী ভাঙন এলাকায় আগে থেকেই স্থানীয় বাসিন্দাদের নিয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নিলে একদিকে যেমন বন্যা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব, তেমনি ভাঙন রোধও সম্ভব। আমরা আশা করব, দেশের যেসব এলাকায় এখন নদী ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সে সব এলাকায় ভাঙন রোধে দ্রুত কার্যব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নদীভাঙন

১৮ জানুয়ারি, ২০১৯
২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

আরও
আরও পড়ুন