Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মোদি হত্যার ষড়যন্ত্রে বামপন্থী বুদ্ধিজীবী লেখকদের ধরপাকড়

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৩০ আগস্ট, ২০১৮, ১২:০১ এএম

ভারতের পুলিশ মঙ্গলবার বিভিন্ন রাজ্যের বিশিষ্ট বামপন্থী লেখক, বুদ্ধিজীবী ও মানবাধিকার কর্মীদের বাড়ি বাড়ি হানা দিয়ে বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করেছে। পুলিশ বলেছে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে হত্যার এক বামপন্থী ষড়যন্ত্রের সঙ্গে এদের যোগসাজশ পাওয়া গেছে। দিল্লি, মুম্বাই, হায়দ্রাবাদ, রাঁচী থেকে শুরু করে আরও অনেক জায়গায় এই পুলিশি অভিযান চলে। খবর বিবিসি ও আনন্দবাজার পত্রিকা।
পুলিশ সূত্রগুলি নিশ্চিত করেছে যে মাওবাদীদের সমব্যথী বলে পরিচিত কবি ভারাভারা রাওকে হায়দ্রাবাদ থেকে এবং শীর্ষ মানবাধিকার সংগঠন পিপলস ইউনিয়ন অফ সিভিল লিবার্টিজ বা পিইউসিএলের প্রধান সুধা ভরদ্বাজকে ফরিদাবাদ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এছাড়াও প্রাবন্ধিক ও মানবাধিকার কর্মী গৌতম নওলাখাকে দিল্লি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অরুণ ফেরেরা ও ভারনন গঞ্জালভেজকে মহারাষ্ট্রের থানে ও মুম্বাই থেকে আটক করা হয়েছে। রাঁচীতে সমাজকর্মী ফাদার স্ট্যান স্বামীর বাড়িতে হানা দিয়ে প্রচুর কাগজপত্র, ল্যাপটপ, হার্ডড্রাইভ ও সিডি বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ। ভারতে বুদ্ধিজীবীদের ধরপাকড় ঘটনায় নিন্দার ঝড় বইছে সব মহলে। নজিরবিহীন এই ঘটনার নিন্দায় মুখর হয়েছেন অরুন্ধতী রায়, রামচন্দ্র গুহ-সহ ভারতের অসংখ্য বিশিষ্ট জন। দেশ জুড়ে এই তল্লাশী অভিযান আর পাইকারি গ্রেফতারের তীব্র সমালোচনা করেছেন ভারতের নামকরা মানবাধিকার কর্মী এবং লেখক-বুদ্ধিজীবীরা।
গত বছর ৩১ ডিসেম্বর মহারাষ্ট্রের ভীমা কোরেগাঁওতে প্রায় তিন লক্ষ দলিত মানুষ জড়ো হয়েছিলেন মারাঠা পেশোয়াদের বিরুদ্ধে তাদের বিজয়ের ২০০ বছর উদযাপন করতে। দলিতরা ভীমা কোরেগাঁওয়ের সেই যুদ্ধে ব্রিটিশদের পক্ষে লড়াই করেছিল।
দক্ষিণপন্থী কিছু সংগঠন ওই উদযাপনের বিরোধিতা করায় অশান্তি শুরু হয় যা পরে হিংসাত্মক হয়ে ওঠে। পরবর্তী তিনদিন ধরে নানা শহরে অশান্তি ছড়িয়ে পড়ে এবং অন্তত একজন নিহত হন। পুনে শহরের পুলিশ ওই ঘটনার তদন্ত করছিল, এবং সেই সূত্রেই দেশ জুড়ে তল্লাশী অভিযান চালানো হয় বলে সেখানকার পুলিশ বলছে। তারা বলছে ওই ঘটনার তদন্তের সূত্রে এর আগে কয়েকজন সামাজিক কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তাদের কাছ থেকেই যেসব ব্যক্তির নাম পাওয়া গিয়েছিল, তাদের বাড়িতেই তল্লাশী অভিযান চালানো হয়।
সকাল থেকে তল্লাশি শুরু হওয়ার পরে থেকেই মানবাধিকার কর্মীরা ওইসব ব্যক্তিদের বাড়ির সামনে জড়ো হয়ে গিয়েছিলেন। ভারতে মাওবাদীদের যেভাবে নিরাপত্তা বাহিনী দমন করছে, তার বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন বামপন্থী লেখক-বুদ্ধিজীবীরা।
হিন্দু আধিপত্যের বিরুদ্ধে মুখ খুললে অপরাধী ঃ অরুন্ধতী রায়
লেখিকা অরুন্ধতী রায় মঙ্গলবার বিবিসিকে বলেন, কবি, সাহিত্যিক, দলিত আন্দোলনকারী, আইনজীবীদের বাড়িতে অভিযান চালানো হচ্ছে। জেলে দেওয়া হচ্ছে। ঠিক যেন জরুরি অবস্থা। ওদের উচিত গোরক্ষার নামে যারা গণপিটুনি দিয়ে সাধারণ মানুষকে হত্যা করছে এবং উস্কানি দিচ্ছে, তাদের গ্রেফতার করা। তিনি বলেন, জনসম্মূক্ষে যারা মানুষকে পিটিয়ে হত্যা করছে, তাদের না ধরে উকিল, কবি, লেখক আর মানবাধিকার কর্মীদের বাড়িতে তল্লাশি চালানো হচ্ছে, গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।
এর থেকেই বোঝা যাচ্ছে ভারত কোন দিকে চলছে। হত্যাকারীদের সম্মানিত করা হবে আর ন্যায়বিচার এবং হিন্দু আধিপত্যের বিরুদ্ধে যারা মুখ খুলবেন, তাদের অপরাধী সাজানো হবে। এটা কি আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু হল?
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, ভারতে এসব গ্রেফতারের ঘটনা উদ্বেগজনক এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত হয়ে সরকার এই কাজ করছে কীনা সে প্রশ্ন উঠেছে।
অ্যামনেস্টি বলেছে, ভারতে আইনজীবী, সাংবাদিক, অধিকার কর্মী এবং মানবাধিকারের রক্ষকদের বিরুদ্ধে এক বিরাট দমন অভিযান শুরু হয়েছে। একটি ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টির পরিবর্তে সরকারের উচিৎ মানুষের মুপ্রকাশের অধিকার এবং শান্তিপ‚র্ণভাবে সমাবেশের অধিকার রক্ষা করা।
মহাত্মা গান্ধী বেঁচে থাকলেগ্রেফতার করত মোদি সরকার
ভারত সরকারের এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ রামচন্দ্র গুহ। তার মতে, এই সময় যদি মহাত্মা গান্ধী বেঁচে থাকতেন, তবে তাকেও গ্রেফতার করত নরেন্দ্র মোদি সরকার।
সমাজকর্মী সুধা ভরদ্বাজকে গৃহবন্দী করে রাখার ঘটনার তীব্র নিন্দা করেন রামচন্দ্র গুহ। মঙ্গলবার এক টুইট বার্তায় নিজের মতামত প্রকাশ করেন তিনি। তার মতে, মহাত্মা গান্ধীকেও ছাড়ত না বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকার। তাকেও সমাজকর্মী ও মাওবাদী ঘনিষ্ঠ বলে আদালতে নিয়ে যাওয়া হত।
মহাত্মা গান্ধীর জীবনীকার রামচন্দ্র গুহ বলেন, সুধা ভরদ্বাজের এই পরিস্থিতি দেখলে ফের আইনজীবীর পোশাক পড়তেন মহাত্মা গান্ধী। আদালতে দাঁড়িয়ে মোদি সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলতেন। দেশে ভয়াবহ অচলাবস্থা চলছে বলে এই পরিস্থিতিকে ব্যাখ্যা করেছেন এই প্রবীণ ইতিহাসবিদ।
পুলিশের ধরপাকড়ের খবরে বিজেপি-র নিন্দা করে যৌথ বিবৃতি দিয়েছেন গুজরাতের দলিত নেতা জিগ্নেশ মেবাণি, সাংবাদিক পরঞ্জয় গুহঠাকুরতা ফিল্মমেকার নকুল সিংহ, সমাজকর্মী স্বামী অগ্নিবেশ ও আরও অনেকে যৌথ বিবৃতি দিয়েছেন। বিবৃতিতে কড়া ভাষায় বিজেপির নিন্দা করা হয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মোদি

২৮ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ