পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
জুলাই মাসের ২৯ তারিখে ঢাকার কুর্মিটোলায় দুই বাসের প্রতিযোগিতায় ফুটপাতে উঠে যাওয়া বাসের তলায় পিষ্ট হয়ে মারা যায় শহীদ রমিজউদ্দিন কলেজের দুই শিক্ষার্থী। এরই প্রতিবাদে রাজধানীসহ সারাদেশের স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা নিরাপদ সড়কের দাবীতে রাজপথে নেমে আসে। হাজার হাজার শিশু-কিশোর শিক্ষার্থীর দখলে চলে যায় ঢাকার রাজপথ। তারা শুধু গতানুগতিক কায়দায় দাবী জানিয়েই থেমে থাকেনি। ৩০ জুলাই থেকে ৬দিন তারা ঢাকায় ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্ব পালন করে সড়কপথে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি সড়ক পরিবহনে বিদ্যমান ত্রæটিবিচ্যুতি ও চালকদের অনেকের লাইসেন্স না থাকার ভেতরের টিত্রটিও জাতির সামনে তুলে ধরতে সক্ষম হয়। শিশু-কিশোরদের ব্যাপক অংশগ্রহণ এবং তাদের আন্দোলনের প্রতি দলমত নির্বিশেষে সব মানুষের সমর্থনের কারণে প্রধানমন্ত্রী শিক্ষার্থীদের সব দাওয়া মেনে নেন। আন্দোলনের শেষ ধাপের দু:খজনক ঘটনাগুলো বাদ দিলে, শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়কের আন্দোলন সফল হয়েছে বলেই ধরে নেয়া যায়। শিক্ষার্থীরা রাজপথ ছাড়ার আগেই ডিএমপি ট্রাফিক সপ্তাহ পালনের ঘোষণা দেয়। নগরবাসি আশা করেছিল শিক্ষার্থীদের দেখানো পথ ধরে এবার বুঝি নগরীর সড়কপথ ও গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়কের আন্দোলন শুরু হওয়ার একমাস পেরিয়ে যাওয়ার পরও দেখা যাচ্ছে, সড়কের বিশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তাহীনতার কিছুই বদলায়নি। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে গণমাধ্যমে এই বাস্তবতার চিত্রই উঠে আসছে।
সড়কপথে বিশৃঙ্খলা, অরাজকতা ও নিরাপত্তাহীনতার বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পর অবস্থার তেমন কোন পরিবর্তন দেখা যাচ্ছেনা। ঈদের পর গত এক সপ্তাহে সড়কপথে শতাধিক তাজা প্রাণ ঝরে গেছে। সেই আগের মতই যত্রতত্র গাড়ী থামিয়ে যাত্রী নামানো-উঠানো হচ্ছে। রাস্তা পারাপারে পথচারীরা নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা করছে না, একই রুটের প্রতিদ্বন্দি গাড়ীর মধ্যে প্রতিযোগিতা ও অদক্ষ-অবৈধ গাড়ী চালকের বেপরোয়া গাড়ী চালনা অব্যাহত রয়েছে। একটি দৈনিক পত্রিকার রিপোর্ট অনুসারে গত মঙ্গলবার একদিনেই সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে ১৬জন এবং আহত অর্ধশতাধিক। আগের তিনদিনে সড়ক দুর্ঘটনা ও অপঘাতে মৃত্যুর সংখ্যা অর্ধশতাধিক। এর মধ্যে নাটোরে বাসের ধাক্কায় ১৫জন লেগুনা যাত্রী নিহত হওয়ার পর জানা গেল চ্যালেঞ্জার পরিবহনের সেই বাসটি ২৬ বছর ধরে রুট পারমিট ছাড়াই মহাসড়কে চলছিল। এ ছাড়া এ ক’দিনে সড়কপথে সংঘটিত ঘটনাবলীর মধ্যে আছে, মানিকগঞ্জে উল্টোপথে আসা বাসের ধাক্কায় এক শিশু সন্তানসহ এক পুলিশ কনস্টেবলের নিহত হওয়ার ঘটনা। এ ঘটনায় শিশুটির মা আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। এসব হৃদয়বিদারক ঘটনার মধ্যে চট্টগ্রামে বাসযাত্রী রেজাউল করিম রনিকে বাসের চালক ও হেল্পাররা পিটিয়ে ধাক্কা মেরে চলন্ত বাস থেকে রাস্তায় ফেলে দিলে বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে তার মৃত্যু হয়। নিরাপদ সড়কের আন্দোলনের পর এই হচ্ছে সড়ক-মহাসড়কে নিরাপত্তার অবস্থা।
ঈদের পর মাত্র কয়েকদিনে সংঘটিত কয়েকটি দুর্ঘটনা ও অপমৃত্যুর মধ্য দিয়ে সড়ক পথের নিরাপত্তাহীনতা, বিশৃঙ্খলা ও চালক-হেল্পারদের বেপরোয়া স্বেচ্ছাচারিতা কোন পর্যায়ে পৌঁছেছে তা অনুমান করা যায়।
একদিকে গণপরিবহনের অপ্রতুলতা ও রুটপারমিটের সামঞ্জস্যহীনতার কারণে নগরবাসিকে জনদুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। অন্যদিকে সড়ক-মহাসড়কে বহাল তবিয়তে দাবিয়ে বেড়াচ্ছে অবৈধ নসিমন-করিমন, ইজিবাইক এবং তিনচাকার গাড়ী। গাড়ী ও চালকদের লাইসেন্স ও ফিটনেস সার্টিফিকেট নিয়েও চলছে আজগুবি কান্ড। গতকাল প্রকাশিত সংবাদে জানা যায়, আগস্টের ১ থেকে ২০ তারিখের মধ্যে ঢাকার মিরপুর বিআরটিএ দফতর থেকে ১৬ হাজারের বেশী গাড়ীর ফিটনেস সার্টিফিকেট সরবরাহ করা হয়েছে। কর্মঘন্টার হিসেবে প্রতি ঘন্টায় ৮৬টি বা প্রতি ৪২ সকেন্ডে ১টি গাড়ীর ফিটনেস সার্টিফিকেট দেয়া হয়েছে। বিআরটিএ’র বিদ্যমান জনবল ও অবকাঠামো দিয়ে প্রতিদিন শত শত গাড়ীর ফিটনেস সার্টিফিকেট দেয়া সম্ভব নয়। এ ক্ষেত্রে নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, গাড়ীর ফিটনেস যাচাই না করেই সার্টিফিকেট দেয়া হয়েছে। একইভাবে প্রতিদিন শত শত গাড়ীচালক ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য ভীড় করছে। এদেরকেও যদি একই গতিতে যাচাই-বাছাই ছাড়াই লাইসেন্স ইস্যু করা হয়, তাহলে আগামী দিনগুলোতে বৈধ লাইসেন্সধারী গাড়ী ও চালকদের বেপরোয়া দুর্ঘটনায় প্রাণহানীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে। অন্যদিকে এতকিছুর পরও যাত্রী ও পথচারীদের মধ্যে সচেতনতা বলতে কিছুই বাড়েনি। তারা যেমন স্টপেজ ছাড়াই যেখানে সেখানে বাসে উঠা-নামা করছে, তেমনি বেপরোয়াভাবে যত্রতত্র রাস্তা পার হচ্ছে। হেলমেট ছাড়া অনেকেই বাইক চালাচ্ছে। পথচারী ও বাইকাররা ট্রাফিক বিধির কোন তোয়াক্কা করছেনা। ট্রাফিক সপ্তাহ, মোটিভেশন, পত্রপত্রিকায় লেখালেখি ইত্যাদি কোনকিছুই তাদের বোধদয় ঘটাতে পারেনি। এ অবস্থা চলতে থাকলে কীভাবে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি কমবে? বস্তুত, সড়কে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় যাত্রী ও পথচারিসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি প্রয়োজনীয় মনিটরিংসহ ট্রাফিক আইনের যথাযথ প্রয়োগের কোন বিকল্প নেই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।