Inqilab Logo

মঙ্গলবার ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ২০ কার্তিক ১৪৩১, ০২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

উচ্চ আদালতে সক্রিয় জালিয়াত চক্র

মালেক মল্লিক | প্রকাশের সময় : ২৬ আগস্ট, ২০১৮, ১২:০১ এএম

উচ্চ আদালতে সক্রিয় জালিয়াত চক্র। তারা সিন্ডিকেট তৈরি করে জামিন জালিয়াতি থেকে শুরু করে আদালত প্রাঙ্গণে নানা অবৈধ কর্মকান্ডের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছেন। এর সঙ্গে প্রশাসনের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কেউ কেউ জড়িত। তারা মামলার প্রকৃত তথ্য গোপন রেখে, ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে জামিন নিয়ে আদালতকে বিভ্রান্ত করছে প্রতারক চক্রটি। ফলে খুন, ডাকাতি, মাদক কারবারির সঙ্গে জড়িত অনেক ভয়ঙ্কর আসামি ভূয়া জামিননামার মাধ্যমে জামিন নিয়ে চম্পট দিচ্ছে। এ ধরনের ঘটনায় অনেক সময় বিচারপ্রার্থী ফেঁসে গেলেও পার পেয়ে যাচ্ছে প্রকৃত অপরাধীরা। সম্প্রতি তদন্তে হাইকোর্টের ফৌজদারি বিবিধ শাখার ৯ কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে চিহ্নিত করেন জালিয়াতি প্রতিরোধে গঠিত উচ্চ পর্যায়ের অনুসন্ধান কমিটি। একইসঙ্গে সংশ্লিষ্ট শাখার তত্ত্বাবধায়কদের মধ্যে নথিতে স্বাক্ষর করা, নথি রিসিভ করা, টাইপ হওয়া, নথি যথাযথভাবে রাখা এবং সব বিষয় তদারকির জন্য সহকারী রেজিস্ট্রার কর্তৃক আলাদা কর্মবণ্টন প্রস্তত করার কথা বলা হয়েছে। ভূয়া জামিন ঠেকাতে ১৩ দফা সুপারিশ করেছেন এই কমিটি।
২০১৬ সালে জালিয়াতি ও অনিয়মের সঙ্গে জড়িত থাকার দায়ে কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে সুপ্রিমকোর্ট প্রশাসন। আরও তিনজন স্থায়ীভাবে চাকরিচ্যুত করা হয়। ২০১৭ সালে প্রথম অন্তত আটজনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ পর্যন্ত নিম্ন আদালতের ১৬৮ কর্মচারীর বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের কাছে অভিযোগ এসেছে বলে জানা যায়। সর্বশেষ অনিয়মের সঙ্গে জড়িত থাকার দায়ে ফৌজদারি বিবিধ শাখার মঞ্জু রাণী কৈরী নামক একজন কর্মচারীকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদীন ইনকিলাবকে বলেন, জামিন জালিয়াতির ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক বিষয়। আদালতে প্রাঙ্গণে এধরনের কর্মকান্ড কোনভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা এ বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করব। কোন আইনজীবী যদি জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত থাকে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিব। সুপ্রিম কোর্টি প্রশাসনকে অনুরোধ করব যদি তাদের কোন কর্মকর্তা-কর্মচারী জড়িত থাকে তাহলে যাতে বিভাগীয় মামলা করেন। আমরা এসব বিষয়ে জিরো টলারেন্স দেখাবো বলেও মন্তব্য করেন্ ওই আইনজীবী নেতা।
খাতা) পর্যালোচনায় এমন তথ্য বেরিয়ে আসে। এমনকি যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারী মামলার তদবির করছেন তাদের নাম সংশ্লিষ্ট মামলার পাশে নোট দিয়ে রাখা হয়েছে। এমন অনিয়ম ও দুর্নীতি প্রশ্রয় দেয়ার কারণে জালিয়াত জামিনাদেশ তৈরির মতো ঘটনা ঘটেছে।
জালিয়াতিতে যারা জড়িত: জামিন আদেশ প্রস্ততের ঘটনায় ফৌজদারি বিবিধ শাখার এমএলএসএস মঞ্জু রাণী কৈরীকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। বলা হয়েছে, মঞ্জু রাণী অপরিচিত ব্যক্তির কাছ থেকে জাল-জালিয়াতিপূর্ণ কাগজ গ্রহণ করে জাল জামিন আদেশ প্রস্তুত করতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। এমনকি নিজ দায়িত্বের বাইরে গিয়ে তিনি ফৌজদারি বিবিধ শাখার প্রশাসনিক কর্মকর্তা বাসেদের টেবিলে রাখা রেজিস্ট্রার খাতায় এন্ট্রি দিয়েছেন। মামলার মূল নথি শাখায় না থাকায় দায়িত্বে অবহেলা করেছেন। এছাড়া দায়িত্বে না থাকার পরও মঞ্জু রাণীর অনুরোধে এবং তার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট মোশনের নাম্বারিং এন্ট্রির জন্য সংশ্লিষ্ট শাখার অফিস সহকারী মোঃ মনিরুজ্জামান মনি, ড্রাফট এবং কম্পেয়ারের জন্য প্রশাসনিক কর্মকর্তা মৌসুমি দেব, জামিন আদেশ টাইপের জন্য অফিস সহকারী মোঃ মুজিবুর রহমান ও প্রশাসনিক কর্মকর্তার ওই জালিয়াতির ঘটনায় পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করেছেন। এতে তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব চরমভাবে অবহেলা করে শৃঙ্খলাপরিপন্থী কাজ করেছেন। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট শাখার কর্মচারীদের মধ্যে যথাযথ দায়িত্ব বণ্টন ও তদারকির মাধ্যমে শাখার শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সহকারী রেজিন্ট্রার বেগম সুলতানা ও সুপারিনটেনডেন্ট মো. মুজিবুর রহমান, রশরঞ্জন মন্ডল ও মো. জামালউদ্দিন চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছেন।
১৩ দফা সুপারিশঃ জামিন আবেদনের ওপর টেন্ডার নম্বর দেয়ার সময় সংশ্লিষ্ট আইনজীবীর সদস্য নম্বর উল্লেখ রাখা, মামলা এফিডেভিটের সময় তদবিরকারকের ভোটার আইডি কার্ড অথবা জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি সংরক্ষণ করা, ফাইলিং ও এফিডেভিট শাখায় আইনজীবী ও আইনজীবীর সহকারী শনাক্তকরণের লক্ষ্যে ডাটাবেজ তৈরি, আদেশের কপি প্রস্তুত ও স্বাক্ষর করা এবং বিচারপতিদের স্বাক্ষর মিলিয়ে দেখার সময় সতর্ক থাকাতে হবে। এছাড়াও আদালত থেকে শাখায় মোশন মামলার নথিসহ অন্যান্য নথি গ্রহণকারীর একটি প্রাপ্তি রেজিস্ট্রার সংরক্ষণ করা। শাখায় এক টেবিল থেকে অন্য টেবিলে নথি মুভমেন্টের ক্ষেত্রেই গ্রহণকারীর স্বাক্ষর রাখা বাধ্যতামূলক করতে হবে।
উচ্চ আদালতের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনিয়ম রোধে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন থেকে একাধিক উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে যেকোনো ধরনের অভিযোগ জানানোর জন্য রেজিস্ট্রার জেনারেল দপ্তরের সামেন বসানো হয়েছে অভিযোগ বক্স। এছাড়া অনলাইনে ওয়েবসাইটে ঢুকেও অভিযোগ দাখিলের সুযোগ রয়েছে। ২০১৬ সাল পর্যন্ত অধস্তন আদালতের প্রায় দেড় শতাধিক কর্মচারীর বিরুদ্ধে অভিযোগ জমা পড়ে অভিযোগবক্সে। তবে অভিযোগকারীর নাম-ঠিকানা, মোবাইল নম্বর এগুলো সুনির্দিষ্ট না থাকায় অধিকাংশই অভিযোগই আমলে নিতে পারছে না সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: উচ্চ আদালত

৩ এপ্রিল, ২০২২
২২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ