পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মালেক মল্লিক : উচ্চ আদালতে বাংলা ভাষা এখনো উপেক্ষিত। সুপ্রিম কোর্ট উভয় বিভাগে (সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্ট) উভয় বিভাগের বর্তমানে ৮৪ জন বিচারপতি থাকলেও বাংলা রায় লিখেন মাত্র কয়েকজন বিচারপতি। অধিকাংশ বিচারপতিরাই ইংরেজিতেই রায় লিখেন। বাংলা মামলা শুনারি জন্য নিয়ে গেলে সংশ্লিষ্ট বেঞ্চের বিচারপতিরা তা শুনতেও চান না। উল্টো ওই আইনজীবীকে বিপাকে পড়েন। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, কোন ভাষায় রায় বা আদেশ দেয়া হবে তা বিচারপতির এখতিয়ার। উচ্চ আদালতের কাজে বাংলা ব্যবহারের তাগিদ দিয়েছেন সাবেক ও বর্তমান দুই প্রধান বিচারপতি। তারা বলেছেন, উচ্চ আদালতে বাংলা ভাষা চালুর জন্য মানসিকতার পরিবর্তনের প্রয়োজন। তবে বাংলা ভাষা চালু নিয়ে রিটকারী আইনজীবীর বলেছেন, উচ্চ আদালতে বাংলার প্রচলনের জন্য প্রধান বিচারপতিকে উদ্যোগ নিতে হবে। ফুলকোর্ট সভায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। একই সঙ্গে হাইকোর্ট আপিল বিভাগের রুলসও পরিবর্তন করার করতে হবে। অন্যথায় উচ্চ আদালতে সর্বত্র বাংলা চালু হওয়া কঠিন।
উচ্চ আদালতসহ সর্বক্ষেত্রে বাংলার ব্যবহার নিশ্চিতকরণে বাংলা ভাষা প্রচলন আইন, ১৯৮৭ রয়েছে; সেটাপুরোপুরি বাস্তবায়ন হয়নি। এছাড়াও সরকার ও প্রশাসনের সব দাপ্তরিক কাজের পাশাপাশি গাড়ির নম্বরপ্লেট, সাইনবোর্ড, নামফলক ও টেলিভিশনে প্রচারিত সব বিজ্ঞাপন বাংলায় লেখার বিষয়ে হাইকোর্ট থেকে আদেশ এসেছে একাধিকবার। কিন্তু এখনো উচ্চ আদালতে সম্ভব হয়নি বাংলা ভাষা চালু করতে। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন আদালতের সব কাজে বাংলার প্রচলনের উদ্যোগ নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানাতে এসে গতকাল বুধবার প্রধান বিচারপতি সাংবাদিকদের বলেছেন, আদালতের বিচারিক কাজে বাংলার ব্যবহার নিশ্চিত করা হচ্ছে। প্রধান বিচারপতি বলেন, উচ্চ আদালতে বাংলার আরও বেশি ব্যবহারের উদ্যোগ নেব। অনেক বিচারক এখন বাংলায় মামলার রায় দিচ্ছেন, শুনানিও হচ্ছে বাংলাতে। বাংলার ব্যবহার একেবারে হচ্ছে না এটা বলা যাবে না।
সাবেক প্রধান বিচারপতি ও বর্তমানের আইন কমিশনের চেয়ারম্যান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক বলেছেন, উচ্চ আদালতের সর্বক্ষেত্রে বাংলার ব্যবহার চালু করা উচিত। প্রধান বিচারপতি ও অন্য বিচারপতিদের মানসিকতা থাকলে এটা বাস্তবায়ন করা সম্ভব।
এর আগে ২০১৭ সালে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে গিয়ে সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাও বলেছিলেন, যদি কোনো ডিভাইস (প্রযুক্তি) পাওয়া যায়; যার মাধ্যমে ইংরেজিতে রায় ঘোষণা করলে তা বাংলা ভাষায় রূপান্তরিত হয়ে কম্পিউটারে প্রিন্ট দেয়া যাবে, তাহলে আমরা দ্রæত বাংলায় রায় দিতে পারব। বিশ্বে এ ধরনের কোনো প্রযুক্তি আছে কি-না তা খুঁজে দেখা হচ্ছে। সদ্য পদত্যাগকারী সাবেক প্রধান বিচারপতি বলেন, ইচ্ছা থাকা সত্তে¡ও উচ্চ আদালতে বাংলায় রায় লেখা সম্ভব হচ্ছে না, তবে কোন কোন বিচারপতি বাংলায় রায় দিচ্ছেন। সরকারি দপ্তরগুলোতে বাংলা চালু হলেও এখনও আদালতে তা না করতে পারায় দুঃখ প্রকাশ করেন প্রধান বিচারপতি। তবে তিনি বলেন, এ বিষয়ে ব্যর্থ হওয়ার সুযোগ নেই।
আদালতে বাংলা ভাষা চালু নিয়ে রিটকারী আইনজীবী ইউনুস আলী আকন্দ ইনকিলাবকে বলেন, উচ্চ আদালতে বাংলার প্রচলনের জন্য প্রধান বিচারপতিকে উদ্যোগ নিতে হবে। ফুলকোর্ট সভায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। একই সঙ্গে হাইকোর্ট আপিল বিভাগের রুলসও পরিবর্তন করার করতে হবে। অন্যথায় উচ্চ আদালতে সর্বত্র বাংলা চালু হওয়া কঠিন। তিনি আরো বলেন, আদালত রুল দিয়েছেন ২০১৪ সালে। এখনো তো কোন বাস্তবায়ন হয়নি। উচ্চ আদালতে বাংলা মামলা লিখে নিয়ে গেলে বিচারপতিরাও এ নিতে চান না। একই সঙ্গে অন্যান্য আইনজীবীরা এ নিয়ে হাসিহাসি করেন। মনে হয় সংশ্লিষ্ট আইনজীবী ইংরেজি জানেন না। কিভাবে বাংলা উচ্চ আদালতে চালু করা সম্ভব বলেন।
সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, সাবেক প্রধান বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান ও এ বি এম খায়রুল হক ছাড়াও হাইকোর্টের কয়েকজন বিচারক বিভিন্ন মামলার রায় দিয়েছেন বাংলা ভাষায়। হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি এম আমিরুল ইসলাম চৌধুরী তার সব আদেশ, নির্দেশ ও রায় বাংলায় দিতেন বলে বিচারপতি খায়রুল হকের এক প্রবন্ধেও উঠে এসেছে। এ বি এম খায়রুল হক বিচারপতি হিসেবে হাইকোর্টে থাকার সময় মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক স্মৃতিবিজড়িত স্থানসহ স্থাপনা সংরক্ষণ, স্বাধীনতার ঘোষক, ঢাকার চার নদী রক্ষাসহ প্রায় দেড়শ› উল্লেখযোগ্য মামলার রায় বাংলায় দেন। হাইকোর্টের বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেন ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল বাংলা ভাষায় রায় লিখেন। বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেন ও বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ জিয়াউল করিমের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে যৌথভাবে বিচারকাজে নিয়োজিত আছেন। ওই বেঞ্চের সিনয়র বিচারপতি ইংরেজিতে রায় ও আদেশ দিলেও বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেন তার লিখিত রায় ও আদেশ বাংলায় লেখেন। বাংলায় লেখা তার উল্লেখযোগ্য রায়ের মধ্যে রয়েছে বিজিএমইএ ভবন ভাঙা, এমভি নাছরিন-২ লঞ্চডুবি ঘটনায় ক্ষতিপূরণ ও সাজা, অর্থঋণ আদালত, হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশনের মামলা। এর আগে তিনি ২০১৩ সাল থেকে প্রায় এক বছর হাইকোর্টেরন একক দেওয়ানি মোশন বেঞ্চেরও দায়িত্বে ছিলেন। তখন তিনি প্রায় ৯০০ আদেশ ও রায় বাংলায় লিখেছিলেন বলে জানা গেছে। বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল কয়েকটি মামলায় বাংলায় রায় ও আদেশ দিয়েছেন। তবে গত ১৭ আগস্ট সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী মামলায় হাইকোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চের তৃতীয় বিচারক হিসেবে শুরু করে তিনি এখন নিয়মিতভাবে বাংলায় রায় ও আদেশ লিখে আসছেন। বিচারপতি মঈনুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বধীন যৌথ বেঞ্চে বিচারপতি আশরাফুল কামাল বর্তমানে বিচারকাজে নিয়োজিত আছেন।
১৯৯৮ সালে প্রকাশিত আইন সাময়িকীর তথ্যানুসারে, ওই বছরের ফেব্রæয়ারিতে বিচারপতি কাজী এবাদুল হক ও বিচারপতি হামিদুল হক সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ নজরুল ইসলাম বনাম রাষ্ট্র মামলায় বাংলায় রায় দিয়েছিলেন। একই সময়ে বিচারপতি হামিদুল হক অন্য একটি ফৌজদারি রিভিশন মামলায়ও বাংলায় রায় দেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।