পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার : টাঙ্গাইলের সখিপুরে মোবাইল কোর্টে দুই বছরের দ- পাওয়া স্কুল শিক্ষার্থী সাব্বির শিকদার ঘটনার সবিস্তার বর্ণনা দিয়েছেন আদালতে। বর্ণনায় স্থানীয় প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিদের নির্যাতনের ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে। বর্ণনা শুনে ভারি হয়ে ওঠে আদালতের পরিবেশ। এসময় বিচারক, আইনজীবী ও উপস্থিত বিচারপ্রার্থীরাও স্তম্ভিত হয়ে যান। গতকাল মঙ্গলবার বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি আশিষ রঞ্জন দাসের অবকাশকালীন হাইকোর্ট বেঞ্চে এ বর্ণনা দেয় ওই শিক্ষার্থী। গত ২০ সেপ্টেম্বর ওই শিক্ষার্থীকে কিসের ভিত্তিতে সাজা দেয়া হয়েছে, সে-সংক্রান্ত নথিপত্র নিয়ে সখিপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম এবং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মাকসুদুল আলমকে স্বশরীরে উপস্থিত হয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলেছিলেন হাইকোর্ট। ওই ছাত্রকেও তার বিদ্যালয়ের সনদ ও বয়সসংক্রান্ত তথ্যাদি নিয়ে আসতে বলেছিলেন আদালত। সে অনুযায়ী তিনজনই গতকাল এ বিষয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। শুনানি শেষে আদালত আদেশের জন্য আগামী ১৮ অক্টোবর দিন ঠিক করেন। আদালতে ইউএনও পক্ষে ছিলেন শ. ম. রেজাউল করিম ও ওসির পক্ষে নুরুল ইসলাম সুজন এমপি শুনানি করেন।
শুরুতে ইউএনও ও ওসি আদালতে আইনজীবীর মাধ্যমে ঘটনার ব্যাখ্যা দেন। তাদের আইনজীবী নুরুল ইসলাম সুজন ও শম রেজাউল করিম আদালতকে বলেন, ‘এই সাজা দেয়ার সঙ্গে এমপির করা জিডির কোনো সম্পর্ক নেই। গাঁজা উদ্ধারের ঘটনায় ওই স্কুল শিক্ষার্থীকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে দুই বছর সাজা দেয়া হয়েছে। এছাড়া সাব্বির প্রাপ্তবয়স্ক উল্লেখ করে তার জন্মতারিখ ১০ মে ১৯৯৫ সাল সংবলিত পাসপোর্ট দেখান তারা। পরে আদালত সাব্বিরের কাছে ঘটনার বিষয়ে জানতে চায়। গাঁজা পাওয়ার পর তা উদ্ধারের কথা অস্বীকার করে শিক্ষার্থী সাব্বির জানায়, স্থানীয় এমপি অনুপম শাহজাহান জয়ের বিরুদ্ধে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়ায় মোবাইলে কোর্ট তাকে দুই বছরের সাজা দেয় বলে আদালতে দাবি করে সাব্বির।
ঘটনার বর্ণনায় সে আদালতে বলে, গত ১৬ সেপ্টেম্বর শুক্রবার রাত ৯টার সময় আমি বাড়িতে ছিলাম। এমন সময় বাহির থেকে কেউ আমাকে ডাক দেয়, ‘সাব্বির বাড়িতে আছো। তারপর আমি বাইরে এসে দেখি সিভিল ড্রেসে একজন ও একজন পুলিশ আমাকে বলেন, তোমাকে থানায় যেতে হবে। এরপর আমাকে থানার ওসির রুমে নিয়ে যায়। ওসি আমাকে মোবাইল ফোন দেখিয়ে বলে, ‘এগুলো কি লিখছোস। আমি বলেছি, এগুলো আমি লিখি নাই। এরপর বারবার আমাকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে আমি আবারও বলি লিখি নাই। এরপর আমাকে এমপির বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়। আমি এমপির বাসায় গিয়ে দেখি তিনি সোফায় বসে আছেন। আমাকে তার সামনে নিয়ে যাওয়া হলে তিনি আমাকে বলেন, তুই আমার বিরুদ্ধে কি লিখছস?। এরপর এমপি আমাকে দুটি বারি মারেন। কিন্তু এতে আমি কিছু মনে করি নাই। এ সময় এমপি ওসিকে বলে, ওকে থানায় নিয়ে যাও। তারপর আমাকে থানায় নিয়ে এসে চোখ বেঁধে বেদম নির্যাতন করে এবং আমাকে বলে, তোকে ক্রসফায়ারে দিব। ক্রসফায়ারের ভয় এবং নির্যাতনে স্বীকার করেছি, আমি লিখেছি। তারপর আমাকে বলে, এ ধরনের লেখা আর লিখবি না। এ ঘটনার তিনদিন পর আমাকে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের রুমে নিয়ে যাওয়া হয়। টিএনও আমাকে বুকে লাথি মেরে ফেলে দেয়। এসময় আমার হুশ ছিল না। কে যেন আমাকে ওইখান থেকে উঠিয়ে নেয়। আমাকে থানায় নিলে ওসি বলে তোমাকে দুই বছরের দ- দেয়া হয়েছে। এ সময় সাব্বির আদালতে কান্নায় ভেঙে পড়ে বলে, আমি এই ঘঁনার জন্য সরকারের কাছে বিচার চাই। আমি সঠিক বিচার চাই। এ পর্যায়ে আদালত বলেন, কেউ কি তোমাকে এই বক্তব্য শিখিয়ে দিয়েছে। এসময় সাব্বির বলে, কেউ শিখিয়ে দেয়নি। আমি গাঁজা খাই না। এর সঠিক বিচার চাই। পরে আদালত এ বিষয়ে আদেশের জন্য ১৮ অক্টোবর ধার্য করেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।