পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ন্যায়বিচারের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত
মালেক মল্লিক : বিনা বিচারে ১৬ বছর ধরে কারাগারে বন্দী শিপন। বিষয়টি উচ্চ আদালতের নজরে এলে জামিন মেলে তার। আদালত স্বপ্রণোদিত হয়ে রুল জারি করেন। রুল শুনানি শেষে শিপনকে জামিন দেন হাইকোর্ট। ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতেই শিপনের কারাবন্দীর ঘটনাটি সামনে আসে। কয়েক বছর ধরে সামান্য পদ্ধতিগত ক্রটির কারণে, এমনকি ভুলভাবে সনাক্ত করা ব্যক্তি বছরের পর বছর ধরে কারাবন্দী রয়েছেন। তবে উচ্চ আদালতের দ্রুত ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার প্রক্রিয়ায় ওইসব ধরা পড়ে। এমনই একজন ঢাকার সূত্রাপুরের বাসিন্দা মো: শিপন। যিনি বিনা বিচারে প্রায় দেড় যুগ কারাবন্দী থাকার পর গতকাল মঙ্গলবার উচ্চ আদালত থেকে জামিন পান। আদালতের এ রায় দেশের মানুষের সামনে বিচারকের ন্যায়বিচারের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।
২২ বছর আগে ১৯৯৪ সালে শিপনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হয়। গত ২৬ অক্টোবর মামলাটি নিয়ে গণমাধ্যমে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে সুপ্রিমকোর্টের একজন আইনজীবী বিষয়টি আদালতের নজরে আনেন। এরপর মামলার নথিপত্র তলব করেন হাইকোটের একটি বেঞ্চ। একই সাথে স্বপ্রণোদিত হয়ে শিপনকে কেন জামিন দেয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন। গতকাল রুল শুনানি শেষে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি জে বি এম হাসানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ শিপনকে জামিন দেন। এ ছাড়াও ঢাকার বিচারিক আদালতকে ৬০ কার্যদিবসের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তির নির্দেশ দেন। এ সময় আদালত বলেছেন, দ্রুত ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। কিন্তু এ ঘটনা রাষ্ট্র ও বিচার বিভাগের জন্য শুধুই লজ্জাজনক নয়, সংবিধানেরও লঙ্ঘন। এর দায় রাষ্ট্র ও বিচার বিভাগের। এ সময় আদালত বলেন, তদন্ত কর্মকর্তা ও রাষ্ট্রপক্ষের কৌসুলী (পিপি) এর দায় এড়াতে পারেন না। তেমনি বিচারকও ব্যর্থতার দায় এড়াতে পারেন না। একটি সভ্য দেশে এভাবে চলতে পারে না।
এর আগে গত ১৯ জুলাই প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার অনুকম্পায় কারামুক্তি লাভ করে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত চাঁদপুরের শত বছরের বৃদ্ধা অহিদুনেছা। তিনিও কাশিমপুর কারাগারে ২০ বছর কারাবন্দী ছিলেন। প্রধান বিচারপতির নজরে আসার পর এই বৃদ্ধার বয়স বিবেচনায় তার সাজা কমানোর উদ্যোগ নেয়া হয়। এরই ধারাবাহিকতায় যাবজ্জীবন সাজার রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ পিটিশন করেলে শুনানি শেষে যাবজ্জীবন সাজার রায় বাতিল করে তাকে মুক্তির নির্দেশ দেন আপিল বিভাগ।
গতকাল বেলা ১১টায় এ মামলার শুনানি শুরু হয়। আদালতে শুনানি করেন এ্যাডভোকেট কুমার দেবুল দে। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম জহিরুল হক। আদালত আরো বলেন, তদন্ত কর্মকর্তা ও পিপিদের জবাবদিহীতার আওতায় আনার জন্য আইন করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে বলা হয়েছিল। কিন্তু আজ পর্যন্ত তা করেনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এটা ভালো লক্ষণ না। তাহলে গরিব মানুষেরা কি বিচার পাবে না? আদালতে কুমার দেবুল দে বলেন, শিপনকে আদালতে হাজির করা হয়েছে। সে জানিয়েছে, ঘটনার (হত্যা) পর বাদিপক্ষ তাকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে তার হাত কেটে দিয়েছে। এ সময় আদালত শিপনের কাছে বিষয়টি জানতে চান। শিপন আদালতকে জানান, ঘটনার পর বাদি তাকে বাড়ি থেকে ডেকে চোখ বেঁধে নিয়ে যায়। এরপর তার হাতের কব্জি (বাম হাত) কেটে দেয়। এ সময় তার বাম হাত উঁচিয়ে আদালতকে দেখান। এ পর্যায়ে আদালত তার কাছে জানতে চান, পিতা-মাতা বা ভাইবোন কেউ আছে কিনা? কারাগারে তার সাথে কেউ যোগাযোগ করতো কিনা? তার বাবা-মা কি করতেন? জবাবে শিপন জানায়, তার বাবা-মা এবং বোন আছেন। তবে তার সঙ্গে কেউ যোগাযোগ করত না। তিনি বলেন, মা-বাবা নিশ্চয়ই বেঁচে আছেন। মারা গেলে খবর পেতাম। এরপর আদালত কক্ষে উপস্থিত আইনজীবীদের কাছে আদালত জানতে চান, এ পর্যায়ে মামলাটি বাতিল (কোয়াশ) করা যায় কিনা? তারা সবাই বলেন, আইন অনুযায়ী আদালত এ আসামির (শিপন) ক্ষেত্রে মামলা বাতিল করতে পারেন।
আদেশে আরো বলা হয়, এই মামলার পিপি মামলা নিষ্পত্তি করতে উদ্যোগ নেবে। যদি নতুন করে কোনো সাক্ষ্যপ্রমাণ না পাওয়া যায়, তাহলে নথিতে যা আছে তার ভিত্তিতেই আদালত মামলা নিষ্পত্তি করবে। মামলার নথি থেকে জানা যায়, ১৯৯৪ সালে পুরান ঢাকার সূত্রাপুরে দুই মহল্লার মধ্যে মারামারিতে মাহতাব নামে এক ব্যক্তি খুন হন। এ খুনের ঘটনায় মো: জাবেদ বাদি হয়ে সূত্রাপুর থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলায় দুই নম্বর আসামি করা হয় শিপনকে। মামলার এজাহারে তার পিতার নাম ছিল অজ্ঞাত। পরে ১৯৯৫ সালে দেয়া অভিযোগপত্রে বাবার নাম উল্লেখ করা হয় মো: রফিক। ঠিকানা উল্লেখ করা হয় ৫৯, গোয়ালঘাট লেন, সূত্রাপুর। পরবর্তীতে ২০০০ সালের ৭ নভেম্বর শিপনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এরপর থেকে সে কাশিমপুর কারাগারে বন্দী ছিল। অভিযোগপত্র দাখিলের পাঁচ বছর পর ২০০১ সালে মামলাটি বিচারের জন্য প্রস্তুত হয়। অভিযোগ গঠনের পর এ পর্যন্ত সাক্ষী নেয়া হয়েছে দু’জনের। মোট সাক্ষী রয়েছেন ১২ জন। আগামী ১১ নভেম্বর এই মামলার পরবর্তী দিন ধার্য রয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।