পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
জালিয়াতচক্র এবার সর্বচ্চো আদালতের বারান্দা পর্যন্ত গেছে। হাইকোটের মামলার জামিন নিয়ে চাল-চালিয়াতি করছে। জালিয়াতি চক্র মামলার তথ্য গোপন করে জামিন নিতে সাহায্য করছে। এটা করতে তারা শুধু তথ্য গোপনই নয় হাইকোর্টের দুই বিচারপতির স্বাক্ষর জাল করে ভুয়া আদেশ নামাও প্রস্তুত করে।
ভুয়া সেই আদেশনামা দাখিল করে কারাগার থেকে বেরিয়ে গেছে ইয়াবা মামলার দুই আসামি। সম্প্রতি দুই বিচারপতির স্বাক্ষর জাল করার ভয়াবহ তথ্য উদঘাটনের পর ওই সব মামলার আসামির জামিন বাতিল করে দিয়েছে উচ্চ আদালত। একইসঙ্গে জালিয়াত চক্র ধরতে গোয়েন্দা সংস্থাকেও তদন্তের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়া ভুয়া আদেশনামা প্রস্তুতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শাখার কর্মকর্তারা জড়িত কিনা তাও খতিয়ে দেখতে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলকে বলা হয়েছে। গত ৩১ মে দুই বিচারপতির স্বাক্ষর জাল করে ভুয়া রায় তৈরি করায় চট্টগ্রাম বন্দর ডক শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আবদুল আহাদকে তলব করেছেন হাইকোর্ট। আগামী ২৪ জুন সশরীরে হাইকোর্টে হাজির হয়ে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে নির্দেশ চাওয়া হয়েছে। এর আগে ৩০ মে হাইকোর্টে ইয়াবার মামলায় জামিন আদেশের কপি জালিয়াতির মাধ্যমে দুই আসামীর কারামুক্তির ঘটনা ধরা পড়ে।
এছাড়াও গত ২৩ ও ২৪ মে চারটি জামিন জালিয়াতির ঘটনা ধরা পড়ে। জালিয়াতির অভিযোগে একজন আইনজীবীকে আইনপেশার প্রতি ছয় মাসের নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত। উচ্চ আদালতে কঠোর নির্দেশনার জারি করার পরেও এমন ঘটনাকে দু:খজনক বলে আখ্যায়িত করেছেন আইনজ্ঞনা। সুপ্রিম কোর্ট সূত্রে জানা যায়, নথি ও জামিন জালিয়াতির ঘটনায় অন্তত ৪০টির মতো মামলা দায়ের করেছে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। এর মধ্যে ফৌজদারি বিবিধ শাখা থেকে ২৪টি, রিট শাখা থেকে ৯টি, ফৌজদারি আপিল শাখা থেকে ২টি মামলা করা হয়। বর্তমানে এসব মামলা তদন্ত ও বিচারাধীন রয়েছে বলে সূত্র জানায়। এ প্রসঙ্গে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ ইনকিলাবকে বলেন, জামিন জালিযাতির ঘটনা দুঃখজনক। জড়িতদের সনাক্ত করে আইনে আওতায় আনতে হবে। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা উচিত বলে মনে করেন সাবেক এই আইনমন্ত্রী। তিনি আরো বলেন, আইনজীবী হোক অথবা সেকশনের অফিসারা জড়িত থাকে সবাইকে শাস্তি দিতে হবে।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন ইনকিলাবকে বলেন, বিচার বিভাগের সচ্ছতার জন্য এইসব অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। এসব অনিয়ম বন্ধে প্রধান বিচারপতি ও সুপ্রিম কোর্ট রেজিস্ট্রার জেনারেলকে উদ্যোগ নিতে হবে। তিনি আরো বলেন, আমি বলব না আইনজীবীরা জড়িন নয় কিছু আইনজীবী তো অসৎ আছেই। তবে প্রশাসনের কর্মকর্তারা আছে কিনা এ বিষয়েও নজর দিতে হবে। সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র স্পেশাল অফিসার মোহাম্মদ সাইফুর রহমান ইনকিলাবকে বলেন, বিষয়টি নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের পক্ষ থেকে কঠোরভাবে মনিটনিং করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে কয়েকজনকে অনত্র্য বদলিও করা হয়েছে।
বিচারপতির স্বাক্ষর জাল:
গত ৩১ মে দুই বিচারপতির স্বাক্ষর জাল করে ভুয়া রায় তৈরি করায় চট্টগ্রাম বন্দর ডক শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আবদুল আহাদকে তলব করেছেন হাইকোর্ট। আগামী ২৪ জুন সশরীরে হাইকোর্টে হাজির হয়ে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে আবদুল আহাদকে যথাসময়ে আদালতে হাজির করতে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার ও বন্দর থানার ওসিকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। গত বৃহস্পতিবার বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুর ও বিচারপতি একেএম সাহিদুল হকের বেঞ্চ এ আদেশ দেন। জালিয়াতির বিষয়টি আদালতের নজরে আনেন আইনজীবী মো. ইব্রাহিম খলিল। আদেশের আগে বেঞ্চের একজন বিচারপতি বলেন, এটা দেখে বুঝতে অসুবিধা হয় না যে এটা জাল। সংশ্লিষ্ট আইনজীবী এবং হাইকোর্ট বিভাগের প্রশাসনিক কর্মকর্তাকে ডেকে পাঠান। আদালত বিষয়টি যাচাই করতে প্রশাসনিক কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন। ওদিকে সংশ্লিষ্ট আইনজীবী বিদেশ থাকায় তার জুনিয়র অ্যাডভোকেট নিগার সুলতানা আদালতে হাজির হয়ে বলেন, এই মামলায় আইনজীবী ছিলেন ড. একেএম আলী। হাইকোর্ট শুধুই রুল জারি করেছেন যা বিচারাধীন।
ভূয়া জামিন আদেশে ২ আসামি কারামুক্তি :
আহম্মেদ নুর ও মোহাম্মদ রাসেল। ২০১৭ সালের ১৮ আগস্ট ৯০ হাজার পিস ইয়াবাসহ তাদের গ্রেফতার করে চট্টগ্রামের সদরঘাট থানা পুলিশ। চার্জশিট দাখিলের পর চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালত-৩ এ বিচার শুরু হয় এ মামলার। তবে হাইকোর্টের এক ভুয়া জামিন আদেশের মাধ্যমে স¤প্রতি কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে লাপাত্তা এই দুই আসামি। কারামুক্তির ঘটনায় সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রারকে কমিটি গঠনের মাধ্যমে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে জালিয়তির ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতারের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
গত ৩০মে জামিনের আদেশ জালিয়াতির ঘটনাটি আদালতের নজরে আনার পর বিচারপতি শেখ আবদুল আউয়াল ও বিচারপতি মো. খসরুজ্জামানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন। তবে এ বিষয়ে খোঁজ-খবর নিতে গিয়ে বেরিয়ে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। এই ভুয়া জামিন আদেশটি তৈরি হয়েছে খোদ সংশ্লিষ্ট শাখায়ই। এমনকি সুপ্রিম কোর্টের জামিন নিশ্চিতকরণ ওয়েবসাইটেও ভুয়া এ জামিন আদেশটি আপলোড করা হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখার কর্মকর্তারা জড়িত না থাকলে এ ধরনের জালিয়াতি সম্ভব নয়। আইটি শাখার একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ক্রিমিনাল মিসকেস শাখা থেকে ওই আদেশের কপি তাদের কাছে পাঠানো হয়েছিল। এটাই নিয়ম। একজন সহকারী রেজিস্ট্রারের স্বাক্ষরযুক্ত ওই আদেশ যাচাইয়ের আর কোনো সুযোগ তাদের নেই। ভুয়া জামিন আদেশটিতে দেখা যায়, সংশ্লিষ্ট শাখার সহকারী রেজিস্ট্রার ও সুপারিনটেনডেন্টসহ চারজনের স্বাক্ষর রয়েছে। গত ১০ এপ্রিল তারা এসব স্বাক্ষর করেন। বিচারপতি আবদুল আউয়াল ও বিচারপতি মো. খসরুজ্জামানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ থেকে জামিনটি হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে ওই ভুয়া আদেশে। এ ছাড়া আসামিদের পক্ষে আইনজীবী রফিকুর রহমান ও রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এফ আর খান, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সন্ধ্যা ঘোষ ও মো. আলী জিন্নাহ শুনানিতে অংশ নিয়েছেন বলে উল্লেখ আছে।
সূত্রে জানা যায়, বিষয়টি আদালতের নজরে আনার পর আদালত সেকশনের সুপারিনটেনডেন্টসহ সংশ্লিষ্টদের জামিন আদেশের মূল কপি ও মামলার নথি হাজির করতে বলেন। কিন্তু সেকশনের কর্মকর্তারা ওই জামিনের বিষয়ে কোনো নথি আদালতে উপস্থাপন করতে পারেননি।
ধর্ষণ মামলায় জামিন জালিয়াতি:
১০ বছরের এক শিশুকে ধর্ষণ করেন গাজীপুরের শ্রীপুরের রাজাবাড়ী ইউনিয়নের চিনাশুখানিয়া গ্রামের ৪৫ বছর বয়স্ক বিল্লাল ভূঁইয়া। এমন প্রমাণ মিলেছে মেডিকেল টেস্টের প্রতিবেদনে। প্রতিবেদন জাল করে জামিন নেন তিনি। কিন্তু হাইকোর্টের আদেশ সংশ্লিষ্ট বিচারিক আদালতে যাওয়ার পর জালিয়াতির বিষয়টি নজরে আসে। এরপর ২৩ মে আসামির জামিন বাতিল করেন হাইকোর্ট। এ ঘটনায় অভিযুক্ত বিল্লাল ভূঁইয়া। হাইকোর্টে জামিন আবেদনের সময় বলা হয় মেয়ের বয়স ২১ বছর। তাঁর সঙ্গে বিল্লালের প্রেমের সম্পর্ক আছে! গত ৯ মে হাইকোর্ট বিল্লাল ভূঁইয়ার জামিন মঞ্জুর করেন। কিন্তু মামলার কাগজপত্র পরীক্ষার পর বেরিয়ে আসে তথ্য গোপন ও জালিয়াতির বিষয়। বাতিল করা হয়েছে বিল্লালের জামিন করে একইসঙ্গে মামলার তদবিরকারককে তলব করেছেন হাইকোর্ট।
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, গত বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর শ্রীপুরে এক ১০ বছর বয়সি শিশু ধর্ষণের শিকার হয়। অভিযোগ উঠে বিদেশ ফেরত বিল্লাল ভূঁইয়া নামের এক ব্যক্তি এ ঘটনার দায়ী। তাঁর স্ত্রী ও ছেলে বিদেশে থাকে। ধর্ষণের পর বিষয়টি প্রকাশ না করতে হুমকি দিয়ে ওই শিশুকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেন তিনি। একপর্যায়ে অসুস্থ হয়ে পড়লে শিশুটি ঘটনাটি তার মাকে জানায়। পরে শিশুর মা বিল্লাল ভূঁইয়া, রুবেল ভূঁইয়া ও হেলাল উদ্দিন ভূঁইয়াকে আসামি করে মামলা করেন। পরে শিশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষাও করা হয়। এ অবস্থায় চলতি বছরের ১৪ জানুয়ারি আত্মসমর্পণ করেন বিল্লাল। আদালত তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। পরবর্তী সময়ে জামিন আবেদন করেন। ওই আবেদন খারিজ করে দেন নিন্ম আদালত। এরপর গত ৯ মে হাইকোর্ট তাঁর জামিন আবেদন মঞ্জুর করেন। জামিনের আদেশ নি¤œ আদালতে যাওয়ার পর জালিয়াতির বিষয়টি সংশ্লিষ্ট আদালতে নজরে আসে।
বিচারপতির নাম ব্যবহার করে ভুয়া আদেশনামা:
গত বছরের ৭ জানুয়ারি ২২ হাজার পিস ইয়াবাসহ মোঃ সেলিমউদ্দিন, মোঃ রফিক, শিরিন সুলতানা, আপন মজুমদার ও দীপক দাসকে আটক করে পুলিশ। পরদিন এ ঘটনায় চট্টগ্রামের বায়েজীদ বোস্তামী থানায় মামলা দায়ের করে পুলিশ। মামলার আসামি মো. রফিক চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে হাইকোর্টে জামিন চান। জামিন আবেদনের শুনানিতে আসামির আইনজীবী বলেন, হাইকোর্টের এই বেঞ্চ থেকে গত ১৩ ডিসেম্বর মামলার প্রধান আসামি মোঃ সেলিমউদ্দিন ছয় মাসের জামিন পেয়েছেন। এই জামিন পাওয়ার বিষয়টি সত্য নয় বলে আদালতকে জানায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা। পরে হাইকোর্ট নথি পর্যালোচনা করে দেখতে পায় যে, দুই বিচারপতির নাম ব্যবহার করে ভুয়া আদেশনামা প্রস্তুত করা হয়েছে। ওই ভুয়া আদেশনামা দাখিল করে কারাগার থেকে বেরিয়ে গেছে আসামি। আর ওই আদেশনামায় আসামি পক্ষে যে আইনজীবীর নাম ব্যবহার করা হয়েছে তার অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। এরপরই হাইকোর্ট ঘটনাটি তদন্তে সিআইডিকে নির্দেশ দেয়।
এদিকে তিন মামলায় জামিন জালিয়াতিতে জড়িত থাকার অভিযোগে মো. জালাল উদ্দিনের নামের আইনজীবী ওপর মামলা পরিচালনায় ছয় মাসের নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে জালিয়াতির ঘটনা তদন্ত করে দুই মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে বলা হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।