পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
এবারের কোরবানির বর্জ্য অপসারণে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন সাফল্য দেখিয়েছে। ঈদের আগেই ঢাকা দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকন ও উত্তরের প্যানেল মেয়র মো. জামাল মোস্তফা এবং চট্টগ্রামের মেয়র মীর নাসির ঘোষণা দিয়েছিলেন ২৪ ঘন্টার মধ্যে কোরবানির বর্জ্য অপসারণ করা হবে। এজন্য যথাযথ প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। কোরবানির পর দেখা গেল, তিন সিটি করপোরেশনই বর্জ্য অপসারণে সাফল্য দেখিয়েছে। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে এবার কোরবানির বর্জ্য উৎপাদিত হয়েছিল প্রায় ২৩ হাজার মেট্রিক টন। ঢাকা দক্ষিণে প্রায় ১৫ হাজার এবং উত্তরে ৮ হাজার মেট্রিক টন বর্জ্য উৎপাদিত হয়। ঈদের দিনই ঢাকা দক্ষিণের প্রায় ৯০ শতাংশ বর্জ্য অপসারণ করা হয় বলে মেয়র সাঈদ খোকন জানান। নগর ভবনে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে গত বৃহ¯পতিবার তিনি বলেন, এরই মধ্যে শতকরা ৯০ ভাগ বর্জ্য অপসারিত হয়েছে। ১৫ হাজার মেট্রিক টন বর্জ্য অপসারিত হয়েছে। বাকিটাও অপসারণের কাজ চলছে। তিনি বলেন, অনেকে বৃহ¯পতিবারও পশু কোরবানি দিচ্ছেন। আরও কিছু বর্জ্য উৎপন্ন হবে। তা অপসারণ করে কম বেশি ২০ হাজার মেট্রিক টন বর্জ্য অপসারণ করব। এই শহরকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে আমাদের প্রিয় নগরবাসীর কাছে তুলে দেব। ঢাকা স¤পূর্ণ বর্জ্যমুক্ত না হওয়া পর্যন্ত সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা ও পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা মাঠে থাকবে বলে আশ্বাস দেন তিনি। উত্তরের প্যানেল মেয়র মো. জামাল মোস্তফা ঢাকা উত্তরের নগর ভবনে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আমরা সাড়ে ৮ হাজার মেট্রিক টন বর্জ্য অপসারণ করেছি। ৮৮,গ্রামেও যথারীতি বর্জ্য আনা সফল করা হয়েছে। বলা যায়, ঢাকা ও চট্টগ্রামের মেয়ররা তাদের কথা রাখতে পেরেছেন। এজন্য তাদেরকে আমার ধন্যবাদ ও মোবারকবাদ জানাই। এবারের কোরবানির দিন থেকেই ঢাকা দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকনকে সরেজমিনে পরিদর্শন করে বর্জ্য অপসারণ তদারকি করতে দেখা গেছে। ঢাকা উত্তরের প্যানেল মেয়র মো. মোস্তফা জামালও যথেষ্ট তৎপর ছিলেন। এছাড়া কোথাও বর্জ্য জমে থাকলে ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি করপোরেশন এবার হটলাইন চালু করেছিল, যাতে নাগরিকরা ফোন করে বর্জ্য জমে থাকার কথা জানাতে পারেন। বলার অপেক্ষা রাখে না, মেয়ররা যদি আন্তরিকতার সাথে দায়িত্ব পালন করেন, তবে শহরকে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা খুবই সম্ভব, যা এবার মেয়রা দেখিয়ে দিয়েছেন। সিটি করপোরেশনের হাজার হাজার পরিচ্ছন্ন কর্মীরা অক্লান্ত পরিশ্রম করে বর্জ্য অপসারন করে ২৪ ঘন্টার মধ্যেই তা সম্ভব করেছে। এজন্য আমরা পরিচ্ছন্ন কর্মীদেরও আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। শহরকে পরিচ্ছন্ন ও দূষণমুক্ত রাখতে মেয়রদের উদ্যোগের পাশাপাশি এবার নগরবাসীও বেশ সচেতন ছিলেন। দুই সিটি করপোরেশন কোরবানির জন্য নির্দিষ্ট স্থান ঠিক করে দিলেও বেশিরভাগই মানুষই তাদের বাড়ির আঙ্গিনায় বা অলি-গলিতে কোরবানি দিয়েছেন। তারা নিজ দায়িত্বে কোরবানির রক্ত সাথে সাথে পানি ঢেলে পরিস্কার করেছেন এবং উৎপাদিত বর্জ্য সিটি করপোরেশনের নির্ধারিত ডাস্টবিনে ফেলেছেন। এতে সিটি করপোরেশনের কাজও অনেকটা সহজ হয়েছে। অধিকাংশ নগরবাসী কোরবানির নির্দিষ্ট স্থানে না গিয়ে বাড়ির আঙ্গিনা, পাড়া-মহল্লায় পশু কোরবানি দেয়ায় হতাশা প্রকাশ করলেও তারা নিজ উদ্যোগে ময়লা সিটি করপোরেশনের কন্টেইনার, ডাস্টবিনে ফেলায় তাদের ধন্যবাদ জানান সাঈদ খোকন। অন্যদিকে বর্জ্য অপসারণে শতভাগ কৃতিত্ব ঢাকা উত্তরের নাগরিকদের দিয়ে প্যানেল মেয়র জামাল মোস্তফা বলেছেন, এবার জনগণ দারুণভাবে এগিয়ে এসেছেন। ফলে নির্ধারিত সময়ের আগে আমরা বর্জ্য অপসারণ করতে পেরেছি। অনেক নগরবাসী বলেছেন, কোরবানির পর পশুর বর্জ্য আমরা নিজেরাই ডাস্টবিনে ফেলে এসেছি। রক্ত, বর্জ্য যা আছে, সব ডেটল দিয়ে ধুয়ে দিয়েছি। কোথাও কোনো বর্জ্য জমিয়ে রাখিনি। বর্জ্য দেখলেই আমরা সিটি করপোরেশনের হটলাইনে কল দিচ্ছি। তারা দ্রæত এসে বর্জ্য নিয়ে যাচ্ছে। অন্যবারের তুলনায় এবার সিটি করপোরেশন ভালো কাজ করছে। এদিকে এবার সিটি করপোরশনের নিজস্ব পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের পাশাপাশি বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় কাজ করছে,বেসরকারি প্রাইমারি ওয়েস্ট কালেকশন সার্ভিস প্রোভাইডারের (পিডব্লিউসিএসপি) কর্মীরা। সংগঠনটি সভাপতি নাহিদ আকতার লাকি বলেছেন, আমাদের সাড়ে চার হাজার কর্মী বাসা-বাড়ি থেকে ময়লা নিয়ে সিটি করপোরেশনের ছোট ছোট ভ্যানে তুলে দিচ্ছে। এখন আর কোনো বাড়িতে কোনো ধরনের কোরবানির বর্জ্য নেই। নতুন করে যেগুলো জমবে সেগুলো সঙ্গে সঙ্গে আমাদের কর্মীরা সরিয়ে নেবে। দেখা যাচ্ছে, এবারের কোরবানির বর্জ্য অপসারণে সিটি করপোরেশনের মেয়রদের আন্তরিক উদ্যোগে চট্টগ্রাম ও রাজধানীবাসী সহযোগিতা করেছে। ফলে কোরবানির পরপরই দ্রæততম সময়ে বর্জ্য অপসারণ সম্ভব হয়েছে।
আমরা মনে করি, আন্তরিকতা থাকলে এবং নগরবাসীকে উদ্বুদ্ধ ও সচেতন করতে পারলে নগরকে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা অসম্ভব নয়। প্রয়োজন শুধু নগর কর্তৃপক্ষের যথাযথ পদক্ষেপ। এবারের কোরবানির ঈদ তার যথার্থ উদাহরণ হয়ে থাকবে। শুধু কোরবানির সময়ই নয়, এই নগরকে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন ও দূষণমুক্ত রেখে স্বাস্থ্যকর পরিবেশ সৃষ্টিতে সারা বছরই এই উদ্যোগ ও আন্তরিকতা চলমান থাকা দরকার। কারণ এক ঢাকা শহরেই প্রতি মাসে ৬ থেকে ৭ লাখ মেট্রিক টন বিভিন্ন ধরনের গৃহস্থালি ও বিষাক্ত কেমিক্যালের বর্জ্য উৎপাদিত হয়। এসব বর্জ্য অপসারণে দুই সিটি করপোরেশনকেই কোরবানির মতো যেমন তৎপর ও আন্তরিকতা প্রদর্শন করতে দেখা গেছে, তা বলবৎ রাখতে হবে। পাশাপাশি নাগরিক সচেতনতা বৃদ্ধিতে নিয়মিত প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যেতে হবে। শহরকে পরিচ্ছন্ন রাখতে নাগরিকদের সম্পৃক্ত করতে পারলে যে কাজটি সহজ হয়ে যায়, তা এবারের কোরবানিতে দেখা গেছে। আমরা আশা করব, চট্টগ্রামসহ ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের মেয়ররা তাদের আন্তরিক উদ্যোগ সবসময়ই বজায় রাখবেন। এবারের কোরবানির ঈদের বর্জ্য অপসারণে তারা যে ভূমিকা রেখেছেন, তাতে তাদের আবারও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি। পাশাপাশি নগরবাসীর সচেতন হওয়াকেও সাধুবাদ জানাই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।