পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
বাংলাদেশের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক ভবিষ্যত, গণতন্ত্র , সামাজিক স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা যখন চরম অনিশ্চয়তার সম্মুখীন তখন নিকটতম প্রতিবেশী রাষ্ট্র ও আঞ্চলিক পরাশক্তি ভারতের ভ’মিকা এ দেশের জনগণের জন্য অনেক বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশ ঘিরে বিশেষত ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকারের প্রভাবশালী নেতাদের সাম্প্রতিক বক্তব্যগুলো কার্যত সেখানকার ভোটের রাজনীতিতে সাম্প্রদায়িক উস্কানীর জ্বালানী হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। ভারতের সেক্যুলার রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের কেউ কেউ এমন মন্তব্য করছেন। তবে বিজেপি’র জাতীয় নেতৃবৃন্দ থেকে শুরু করে বিভিন্ন রাজ্যের স্থানীয় নেতারা যেভাবে বাংলাদেশ বিরোধি বক্তব্যের তুবড়ি ছোটাচ্ছেন , তাতে মনে হচ্ছে বিজেপি মুসলমানসহ ভারতের সব সংখ্যালঘু সম্প্রদায়, উদার ও সহাবস্থানবাদী সামাজিক-রাজনৈতিক শক্তির পাশাপাশি প্রতিবেশী স্বাধীন রাষ্ট্র বাংলাদেশের বিরুদ্ধেও একটি মনস্তাত্তি¡ক লড়াই শুরু করেছে। ভারতে মুসলমান জনসংখ্যা বাংলাদেশ বা পাকিস্তানের মোট জনসংখ্যার চেয়ে বেশী। এমনকি বাংলাভাষি মুসলমান জনসংখ্যাও বাংলাদেশের জনসংখ্যার কাছাকাছি। ঐতিহাসিক-রাজনৈতিক বিচারে পূর্ব ও পশ্চিম বাংলা, আসাম, ত্রিপুরা , বিহারসহ বৃহৎ বাংলা একটি একক শক্তিশালী রাষ্ট্র হিসেবে উপমহাদেশের রাজনৈতিক মানচিত্রে অভ’্যদয় ছিল অবধারিত। কেন কিভাবে বাংলা ভাগ হল, এখন কারা এ নিয়ে বেøইম গেম খেলছে এসব ক্রমে দুই বাংলার ইতিহাস সচেতন মানুষদের কাছে পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে। ইংরেজের শাসনে কলকাতাকেন্দ্রিক জমিদার ও বাবু বুদ্ধিজীবীদের একচ্ছত্র আধিপত্যের কারণে অনেক পিছিয়ে পড়া পূর্ববঙ্গের প্রশাসনিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের কথা ভেবে ১৯০৫ সালে ঢাকাকে রাজধানী করে পূর্ববাংলা ও আসামকে নিয়ে যে নতুন প্রদেশ গঠন করা হয়েছিল কলকাতার সুবিধাভোগী রাজনীতিক ও পেশাজবীরা তা মেনে নিতে পারেনি। তারা বঙ্গমায়ের অঙ্গচ্ছেদের বেদনায় অশ্রæপাত করে বৃটিশ বিরোধী নানা রাজনৈতিক কর্মসূচির মাধ্যমে ইংরেজকে বঙ্গভঙ্গ রদ করতে বাধ্য করেছিল। বৃহত্তর হিন্দু জনগোষ্ঠিকে হাতে রাখতে তাদের দাবীর কাছে নতি স্বীকার করে অবশেষে ১৯১১ সালে বৃটিশরাজ বঙ্গভঙ্গ রদের ঘোষণা দেয়। বৃহৎ বাংলাকে একটি একক রাজনৈতিক মানচিত্রে আবদ্ধ রাখতে যারা ১৯০৫ সালে অশ্রæসম্পাত করে মাঠে নেমেছিল ১৯৪৭ সালে তাদেরই উত্তরপুরুষেরা বাংলাভাগ করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছিল কেন দুই বাংলার নতুন প্রজন্ম এখন নিজেদের অভিজ্ঞতার দ্বারা বুঝতে পারার কথা। সে সব বহু তর্কিত, বহুল আলোচিত বিষয়ে কথা বলা আজেকের নিবন্ধের লক্ষ্য নয়। তবে আজকে ভারতের একশ্রেণীর রাজনৈতিক নেতা যেভাবে যখন তখন বাংলাদেশকে আক্রমন করে, হেয় করে বক্তব্য রাখছেন তাতে ভারতের উগ্র জাতীয়তাবাদীদের বাঙ্গালী মুসলমান বিদ্বেষী মনোভাব তাদের সম্পর্কে এ প্রজন্মের বাঙ্গালী মুসলমানকে নতুনভাবে ভাবতে বাধ্য করছে। বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারী আখ্যায়িত করে পশ্চিমবঙ্গ ও আসাম থেকে লাখ লাখ বাঙ্গালী মুসলমানকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর হুমকি এখন বাংলাদেশ বিরোধী মনস্তাত্তি¡ক প্রচার যুদ্ধে রূপ নিয়েছে। এই যুদ্ধে বিজেপি সরকারের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী-এমপি, জাতীয় নেতা অমিত শাহ থেকে শুরু করে স্থানীয় নেতা-পাতিনেতারাও লিপ্ত হচ্ছেন। বাংলাভাগ ও ভারতের জাতীয় ইতিহাসে আর কখনো ভারতীয় রাজনীতিকদের এমন বাংলাদেশ বিরোধি অবস্থানে দেখা যায়নি। সম্প্রতি একজন বিজেপি নেতা রোহিঙ্গা এবং অনুপ্রবেশের দায়ে অভিযুক্ত বাঙ্গালী মুসলমানদের গুলি করে মারার হুমকি দিয়েছেন। রোহিঙ্গারা বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে নির্যাতিত জাতি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। মিয়ানমারের সামরিক জান্তার জাতিগত নির্মূলের শিকার রোহিঙ্গাদের শতকরা ৮০ ভাগ গত চারদশকে বিভিন্ন দেশে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। নির্মম গণহত্যার মুখে প্রায় ৮ লাখ রোহিঙ্গা গত বছর বাংলাদেশে প্রবেশের বহু আগেই আরো কয়েক লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছিল। সেই সাথে মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, চীন থেকে শুরু করে সুদুর তুরস্কসহ মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের দেশগুলোতেও হাজার হাজার রোহিঙ্গা নাগরিক বছরের পর বছর ধরে বাস করছে। প্রতিবেশী মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সাম্প্রদায়িক রাজনীতির শিকার রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে প্রবেশের সুযোগ পেলেও ভারতে তাদের সংখ্যা খুবই কম। তবে জাতিগত নির্মূলের শিকার হওয়া রোহিঙ্গাদের বিশ্বের আর কোথাও এমন গুলি করে মারার হুমকির সম্মুখীন হতে হয়নি। শুধু ভারতীয় উগ্র সাম্প্রদায়িক রাজনীতিকরাই রোহিঙ্গা এবং শান্তিপ্রিয় বাঙ্গালী মুসলমানদের গুলি করে মারার হুমকি দিল।
আগস্টের প্রথমদিকে ভারতের তেলেঙ্গানা রাজ্যের বিজেপি দলীয় সংসদ সদস্য রাজা সিং ভারতীয় গণমাধ্যমকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ভারতে তথাকথিত অনুপ্রবেশ করা বাংলাদেশী ও রোহিঙ্গাদের গুলি করে মারা উচিৎ। এটি শুধু রাজা সিংয়ের বক্তব্য নয়, বিজেপির আরো অনেক নেতাই এই সুরে কথা বলছেন। তারা রোহিঙ্গা ও বাঙ্গালী মুসলমানদেরকে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি বলে মনে করেন। বাংলাদেশ থেকে ভারতে অনুপ্রবেশকারী বলে যাদের দিকে আঙ্গুল তোলা হচ্ছে তারা কখনো বাংলাদেশ থেকে সেখানে যায়নি। পশ্চিমবঙ্গ এবং আসামের কংগ্রেস নেতারা বেশ জোরের সাথেই বলেছেন, তথাকথিত অনুপ্রবেশকারীদের কেউই বাংলাদেশ থেকে ভারতে যায়নি। ইতিহাসের সন্ধিক্ষণে এবং কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের প্রয়োজনে তারা ভারতের এক রাজ্য থেকে আরেক রাজ্যে বসতি স্থাপন করেছেন। পশ্চিমবঙ্গের মূখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং আসামের সাবেক মূখ্যমন্ত্রী তরুন গগৈ নিজ নিজ রাজ্যের তথাকথিত অনুপ্রবেশকারী প্রসঙ্গে এমন মন্তব্য করেছেন। এ ক্ষেত্রে উগ্র সাম্প্রদায়িকতার বিপক্ষে মমতা বেনার্জী একজন প্রাজ্ঞ দায়িত্বশীল রাজনীতিকের ভ’মিকা পালন করছেন। আসামের লাখ লাখ বাঙ্গালীকে নাগরিকত্বহীন করে দেয়ার কারণে পশ্চিমবঙ্গ ও উত্তর-পূর্ব ভারতে একটি রক্তাক্ত সংঘাতের আশঙ্কাও ব্যক্ত করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মূখ্যমন্ত্রী। তার এমন আশঙ্কার বয়ানে অসন্তুষ্ট বিজেপি সরকারের পুলিশ মমতার বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলা দায়ের করেছে। ভারতের বাঙ্গালী মুসলমানরা যখন ধর্ম ও ভাষার ভিত্তিতে বিজেপি সরকারের বৈষম্য ও গুলির সম্মুখীন হওয়ার মত আশঙ্কায় পতিত হতে চলেছে, তখন এর প্রতিবাদে সোচ্চার মমতা ব্যানার্জির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র, উস্কাানী ও ধর্মের ভিত্তিতে বিভাজনের অভিযোগসহ বিভিন্ন ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। বলাবাহুল্য, আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে মমতার বিরুদ্ধে এগুলো বিজেপি সরকারের রাজনৈতিক মামলা। তবে মমতা এসব মামলায় মোটেও বিচলিত নন। তিনি প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে বলেছেন, ওরা আমার বিরুদ্ধে লাখ লাখ অভিযোগ দায়ের করতে পারে, তাতে আমার কিছু যায় আসেনা। এসব মামলা ও বিজেপির রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক কর্মকান্ডকে তিনি দেশে গণতন্ত্রহীনতা বলে অভিহিত করেছেন। এমনকি ভারতের বর্তমান পরিস্থিতিকে তিনি জরুরী অবস্থার থেকেও খারাপ বলে মন্তব্য করেন। পশ্চিমবঙ্গের মূখ্যমন্ত্রীসহ আসাম সফরে যাওয়া তৃণমূল দলের প্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে আসামে রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা পুলিশি নির্যাতনের প্রতিবাদে তৃণমূলের একাধিক নেতা আসামের বিজেপি দলীয় মূখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সেনওয়ালের বিরুদ্ধেও কলকাতায় মামলা দায়ের করেছেন বলে জানা যায়। দু’টি প্রতিবেশী রাজ্যের সরকার ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের মধ্যে যে প্রকাশ্য বিভেদ-বৈরীতা ও প্রতিহিংসার রাজনীতি শুরু হয়েছে তাতে এনআরসি নিয়ে মমতা ব্যানার্জির করা আশঙ্কারই বাস্তবায়ন দেখা যাচ্ছে। নাগরিকত্ব প্রশ্নে বিজেপির একটি অমানবিক ও ভ্রান্ত রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে যখন ভারতের প্রায় সব বিরোধি রাজনৈতিক দল একাট্টা, তখন বিজেপি নেতারা যেনতেন প্রকারে এসব ঘটনার সাথে বাংলাদেশ ও তথাকথিত অনুপ্রবেশকারীদের নাম ধরে অপবাদ ছড়াচ্ছেন। মমতার ধর্মনিরপেক্ষতা ও সহাবস্থানের রাজনীতির বিপরীতে পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি নেতারা সেখানে বাঙ্গালী মুসলমানদের বিরুদ্ধে অহেতুক যুদ্ধে নেমে পড়েছেন। পশ্চিমবঙ্গ বিজেপি মহিলা মোর্চার নেতা অভিনেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায় কলকাতার ধর্মতলায় বিজেপির এক র্যালিতে পশ্চিমবঙ্গে সংঘটিত সব অপরাধ-সহিংসতার জন্য বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারীদের দায়ী করে সেখানকার নাগরিকপঞ্জী সংশোধনের দাবী করে সেখানেও আসামের মত এনআরসি করার ঘোষণা দিয়েছেন। এই বছরের শেষে ভারতে অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে এটিকে বিজেপির প্রধান এজেন্ডা বলে ঘোষণা করছেন পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি নেতারা। এ ক্ষেত্রে দেশের গন্ডি ছাড়িয়ে তথাকথিত বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারী ও বাংলাদেশ বিরোধী বক্তব্য দেয়ার ক্ষেত্রে বিজেপি নেতাদের মধ্যে এক ধরনের হিড়িক লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন সরকার ও বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর নিরবতা দেশের সচেতন সাধারণ মানুষের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।
আমরা যাদেরকে সারাক্ষণ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং স্বাধীনতার পক্ষ ও বিপক্ষের শক্তি হিসেবে আখ্যা দিয়ে জাতিকে বিভাজিত ও সংঘাতময় করে তুলতে ব্যস্ত দেখছি, ভারতীয়দের বাংলাদেশ বিরোধী বক্তব্য ও অপবাদ তারা গায়ে মাখতে রাজি নন। অন্যদিকে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক ঘটনাপ্রবাহ ও সাম্প্রতিক বিষয়াবলী সর্ম্পকে পাকিস্তানী রাজনীতিকদের যে কোন ভিন্নমত নিয়ে এদেরকে অতিমাত্রায় প্রতিক্রিয়া দেখাতে দেখা যায়। এ দেশের মানুষ ভারতীয় বা পাকিস্তানীদের কাছ থেকে বাংলাদেশ বিরোধী কোন বক্তব্য মেনে নিতে রাজি নয়। তবে বিশেষ কিছু রাজনৈতিক দল ও গোষ্ঠির আচরণ দেখে মনে হয় ভারতীয় রাজনীতিকরা বাংলাদেশকে হুমকি দিলে, মিথ্যা অজুহাতে যখন তখন এন্টি ডাম্পিং ট্যারিফ আরোপ করলে, লাখ লাখ ভারতীয়কে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয়ার পায়তারা করলে, বাংলাদেশের জনগনকে জঙ্গি, অশিক্ষিত বলে গাল দিলেও তাদের কোন কসুর নেই। সব দোষ পাকিস্তানী আর একাত্তুরের স্বাধীনতা বিরোধিদের। দুই বছর আগে সন্ত্রাসী হামলায় ঢাকার গুণশানের হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে এবং দেশের আরো কয়েকটি এলাকায় বিদেশী নাগরিকসহ বেশকিছু মানুষ হতাহত হয়। এসব ঘটনা বাংলাদেশের বৈদেশিক বাণিজ্য এবং ক’টনৈতিক সম্পর্কে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব দেখা দেয়। দেশের গার্মেন্ট রফতানী, কার্গো নিষেধাজ্ঞা, কয়েকটি পশ্চিমা দেশের ভিসাকেন্দ্র ভারতে সরিয়ে নেয়াসহ যে সব প্রতিক্রিয়া সংঘটিত হয় তার অর্থনৈতিক ফলাফল নিশ্চিতভাবেই ভারতের পক্ষে যায়। এ সময়ে গার্মেন্টস রফতানীতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের কাছে অবস্থান হারায় বাংলাদেশ। কিন্তু এসব সন্ত্রাসী জঙ্গি হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগ করা হয় পাকিস্তানের আইএসআই ও ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের উপর। ইসরাইলের সাথে পাকিস্তানের কোন ক’টনৈতিক সর্ম্পক বা যোগাযোগ থাকার কোন প্রমান আমাদের হাতে নেই। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইসরাইল ও তার গোয়েন্দা সংস্থার সাথে ভারতের নিবিড় সম্পর্কের কথা সারাবিশ্বই জানে। ঢাকায় সন্ত্রাসী হামলায় ভারত সবচেয়ে বড় বেনিফিসিয়ারী প্রমানীত হওয়ার পরও সে সময় ছাত্রলীগ, শ্রমিকলীগসহ মুক্তিযোদ্ধা সমন্বয় পরিষদ, আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান’র ব্যানারে পাকিস্তান দূতাবাস ঘেরাও ও মানব বন্ধন কর্মসূচি পালন করেছিল। একাত্তুরের মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে ইতিমধ্যে বিরোধি রাজনৈতিক জোটের বেশ কিছু শীর্ষ নেতার ফাঁসির রায় কার্যকর হয়েছে। জাতি আশা করছে এই বিচারের মধ্য দিয়ে জাতির বিভক্তির পুরনো ক্ষত প্রশমিত হবে। কিন্তু সেই বিভক্তির রাজনীতিই যদি হয় দেশে একটি ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরী করে একশ্রেনীর রাজনৈতিক দলের ক্ষমতার মসনদ আগলে রাখার মূল কৌশল, তাহলে পরিস্থিতি পরিবর্তনে জনপ্রত্যাশা দূরাশায় পরিনত হতে বাধ্য। দেশে বর্তমানে আমরা সেই বাস্তবতাই লক্ষ্য করছি। পাকিস্তান প্রশ্নে ওদের মধ্যে অতিমাত্রায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও দেশপ্রেম জেগে উঠলেও ভারতীয়দের অনবরত বাংলাদেশ বিরোধি হুমকি ও অপমানজনক বক্তব্য ও তৎপরতায় তাদের চেতনা কোথায় যেন হারিয়ে যায়। আসামে এনআরসি প্রকল্প শুরুর আগে থেকেই বিজেপি নেতারা লাখ লাখ বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারীর কল্পিত অভিযোগ তুলে তাদেরকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর হুমকি দিয়ে আসছিল। সম্প্রতি প্রকাশিত এনআরসিতে নাগরিত্ব তালিকা থেকে বাদ পড়েছে ৪০ লাখ বাঙ্গালীর নাম, যাদের বেশীরভাগই মুসলমান। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মূখ্যমন্ত্রী, তুণমূল কংগ্রেসের নেতাকর্মী এবং নাগরিক সমাজ এ বিষয়ে সোচ্চার হলেও বাংলাদেশের সরকার, বিরোধিদল ও নাগরিক সমাজের নিরবতা তাদের দেশপ্রেম ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।
পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি সভাপতি, সাবেক আরএসএস নেতা দিলীপ ঘোষ সম্প্রতি বীরভ’ম জেলার শিউড়ীতে আয়োজিত এক জনসভায় বলেছেন, যে সব নেতা, অভিনেতা, লেখক, গায়ক, শিক্ষাবিদ উগ্রপন্থা এবং সন্ত্রাসবাদকে মদত দেবে তাদের ধরে এনে লাথি মেরে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয়া হবে। আরেক ধাপ এগিয়ে গিয়ে তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের জনগণ অশিক্ষিত ও মৌলবাদী জঙ্গি। এদেরকে ওই জঙ্গিদের কাছে পাঠিয়ে দেয়াই ভাল। অনলাইন নিউজপোর্টালে প্রকাশিত এই সংবাদ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অসংখ্য মানুষ প্রতিবাদী কমেন্ট, স্টাটাস দিলেও দেশের রাজনৈতিক মহল বা চেতনাবাজদের মুখে কিছু শোনা যায়নি। কয়েকমাস আগে আরেকজন বিজেপি নেতা বাংলাদেশের ভ’মি দখল করে তথাকথিত অনুপ্রবেশাকারীদের পুনর্বাসনের দাবী তুলেছিলেন। ভারতীয় নেতাদের বার বার এমন ঔদ্ধত্বপূর্ণ হুমকির প্রতিবাদে পাকিস্তান বিরোধি মানববন্ধন বা দূতাবাস ঘেরাওয়ের মত কোন কর্মসূচি হয়না বলেই তারা এসব হুমকি অব্যাহত রেখেছে। ভারতীয় মুক্তবুদ্ধির লেখক, গায়ক, শিল্পী ও শিক্ষাবিদরা বিজেপির উগ্রবাদী সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে কথা বলেন বলেই দিলীপ ঘোষরা তাদেরকে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয়ার হুমকি দেন। আর আমাদের দেশের লেখক, শিল্পী, কলামিস্ট বুদ্ধিজীবীরা সব চেতনা ও দেশপ্রেম নিয়ে ক্ষমতার রাজনীতির লেজুড়বৃত্তিতে মশগুল হয়ে আছেন। বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ যখন বাংলাদেশের জনগণকে অশিক্ষিত, মৌলবাদী ও জঙ্গি বলে গাল দিচ্ছে, তখন ভারতীয় বংশোদ্ভুত সাংবাদিক ও হার্বাডের পিএইচডি গবেষক প্রীথা চ্যটার্জির এক লেখায় তার যোগ্য জবাব পাওয়া যায়। গত ১৪ আগস্ট অনলাইনে প্রকাশিত প্রীথা চ্যাটার্জির এক নিবন্ধের শিরোনাম ছিল ‘বাংলাদেশ ক্যান টিচ নরেন্দ্র মোদিজ ইন্ডিয়া এ থিং অর টু এবাউট ইউজিং টয়লেট।’ ভারতীয় লেখিকার মতে কিভাবে টয়লেট ব্যবহার করতে হয় তা নরেন্দ্র মোদির ভারতকে একাধিক প্রকারে শিক্ষা দিতে পারে বাংলাদেশ। ভারতের দাঙ্গা হাঙ্গামা ও জাতিগত বিদ্বেষ, হানাহানি ও রক্তপাতের কথা নাইবা তুললাম। শুধুমাত্র টয়লেট ব্যবহারের তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরলেই বোঝা যায় ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে কারা অশিক্ষিত, পশ্চাদপদ ও বর্বর। প্রীথা চ্যাটার্জির নিবন্ধে ইউনিসেফ, বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থাসহ আন্তর্জাতিক জরিপ ও গবেষনার বেশকিছু তথ্য-উপাত্ত রয়েছে। দিলীপ ঘোষ ও তার অনুসারীরা এসব পড়েন বা জানেন কিনা জানিনা। বাংলাদেশের জনগনকে অশিক্ষিত, জঙ্গি ও মৌলবাদী বলার আগে আয়নায় নিজের চেহারাটা দেখুন মি: দিলীপ ঘোষ। বাংলাদেশ বিরোধি প্রপাগান্ডা ও সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ছড়ানো বাদ দিয়ে বিজেপি নেতাদের উচিত ভারতীয়দের আগে টয়লেট করাতে শিখানো। আপনাদের মোদিজি ভারত নির্মানের প্রথম উদ্যোগ হিসেবে শোচাগার নির্মানের ডাক দিয়েছেন, সেদিকে মনোনিবেশ করলেই আপনাদের মঙ্গল।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।