Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ঈদের আগেই সড়ক-মহাসড়ক চলাচল উপযোগী করতে হবে

| প্রকাশের সময় : ১২ আগস্ট, ২০১৮, ১২:০২ এএম

সড়ক-মহাসড়কের বেহাল দশার খবর নতুন কিছু নয়। সারাবছরই এ নিয়ে পত্র-পত্রিকায় সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হলেও সড়ক বিভাগের তেমন কোনো তৎপরতা লক্ষ্য করা যায় না। কেবল ঈদের সময় এলেই একটু তৎপর হতে দেখা যায়। ভাঙাচোরা, খানাখন্দে ভরা অংশ কোনো রকমে ইট, বালু, সুরকি ফেলে মেরামত করে দায় সারা হয়। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রীও বিভিন্ন সড়ক-মহাসড়ক পরিদর্শন করেন। মেরামতের নির্দেশও দেন। তবে তা ঐ নির্দেশ যথাযথভাবে পালিত হয় না। বলা যায়, সড়ক-মহাসড়কের মেরামত নিয়ে এক ধরনের শুভংকরের ফাঁকি চলছে। অথচ এ খাতে আর্থিক বরাদ্দও অন্য খাতের তুলনায় বেশি থাকে। কিছুদিন আগে দুর্নীতি দমন কমিশন এ খাতে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতির অভিযোগ এনেছে। তাতে কারো কিছু যায় আসেনি। সড়ক যে দুরবস্থার মধ্যে ছিল, তা বহালই আছে। ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে সড়ক-মহাসড়ক মেরামতে ১৫ হাজার কোটি টাকা প্রয়োজন হলেও তা পুরোপুরি পাওয়া যায়নি। ফলে বোঝা যাচ্ছে, এবারও সড়ক-মহাসড়ক কোনো রকমে জোড়াতালি দিয়েই চলবে। যদিও বরাবরের মতো সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, এবার ঈদ যাত্রায় ভোগান্তি হবে না। অথচ সড়ক-মহাসড়ক বেহাল অবস্থায় রয়েছে। ঢাকা-টাঙ্গাইল, ঢাকা-রাজশাহী, ঢাকা-রংপুর, ঢাকা-বরিশাল, ঢাকা-সিলেটসহ অন্যান্য সড়ক-মহাসড়ক অত্যন্ত শোচনীয় অবস্থায় রয়েছে। ফলে ঈদে ঘরমুখো মানুষের সড়ক-মহাসড়কে যাতায়াত সুখকর হবে, এমন আশা করা যাচ্ছে না। 

ঈদ সামনে রেখে চিরাচরিত নিয়ম অনুযায়ী, এবারও জোড়াতালি দিয়ে সড়ক-মহাসড়ক চলাচল উপযোগী করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। এ মেরামত যে সাময়িক তা বলার অপেক্ষা রাখে না। গত ঈদের আগেও এ ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছি। দেখা গেছে, তা স্থায়ী হয়নি। মেরামত করা অংশ তো বটেই নতুন করে অন্যান্য স্থানে গর্ত, খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। তা যে কোনো রকমে মেরামত করা হবে, সেটা ধরে নেয়া যায়। বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে, সড়ক-মহাসড়ক মেরামতে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় হলেও তা স্থায়ী বা টেকসই হচ্ছে না। একে অর্থের অপচয় ছাড়া কী বলা যেতে পারে? বিশ্বের আর কোনো দেশে সড়ক-মহাসড়ক মেরামতে এত অর্থ অপচয় হয় কিনা আমাদের জানা নেই। বরাবরই সড়ক-মহাসড়ক মেরামতের বিষয়টি একশ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তা ও ঠিকাদারদের জন্য আয়ের উৎস হয়ে দাঁড়িয়েছে। মেরামতের নামে তারা হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট করে নিচ্ছে। অথচ শুধু ঈদের সময়ই নয়, সারাবছরই যাতে সড়ক ও মহাসড়কে যাতায়াত মসৃন থাকে, এ ব্যাপারে সরকার ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে নিরবিচ্ছিন্ন তদারকি করা প্রয়োজন। কারণ এটা শুধু যাত্রী পরিবহনের সাথেই যুক্ত নয়, অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন। অর্থনীতিকে সচল রাখতে সড়ক-মহাসড়ককে মসৃণ ও নির্বিঘ্ন করার বিকল্প নেই। আমরা দেখছি, সারা বছর সড়ক-মহাসড়ক বেহাল অবস্থার মধ্যে আছে। সড়ক ব্যবস্থাপনা বলতে যা বোঝায়, তার বালাই নেই। সড়ক-মহাসড়ক দখল করে বাজারসহ নানা স্থাপনা গড়ে উঠেছে। এক ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে নাকি ২০০ বাজারসহ অন্যান্য দখলকৃত স্থাপনা রয়েছে। অর্থনীতির লাইফ লাইন হিসেবে পরিচিত এ মহাসড়কেরই যদি এ পরিস্থিতি হয়, তবে অন্যগুলোর কী অবস্থা তা সহজেই অনুমেয়। সড়ক-মহাসড়কে শুধু বাজার ও অবৈধ স্থাপনা নয়, এগুলোর উপর দিয়ে অবৈধভাবে চলছে, থ্রি হুইলার, নসিমন, করিমন, ভটভটি, রিকসাসহ অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ ও ধীর গতির যানবাহন। ফলে একদিকে সড়ক-মহাসড়কের দুরবস্থা, অন্যদিকে অবৈধ ছোট ছোট যানবাহনের চলাচল এক নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। এতে যানজট ও দুর্ঘটনা নিত্যদিনের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশ্বের উন্নত দেশসহ অন্যান্য দেশে সাধারণত মহাসড়কের সাথে যত্রতত্রভাবে কোনো ধরনের ছোট ছোট সংযোগ সড়ক থাকে না। মহাসড়ক হতে হয় সরল ও মসৃণ। আমাদের দেশেই রয়েছে এর ব্যতিক্রম। কী সড়ক, কী মহাসড়ক-এগুলোর সাথে শত শত সংযোগ সড়ক যুক্ত হয়ে আছে। ফলে দ্রুতগামী পরিবহণ তার স্বাভাবিক গতিতে চলতে পারে না। লেগে যায়, দীর্ঘ যানজট এবং কখনো কখনো চালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটায়। অনেক সময় মহাসড়কের উপর বাস, ট্রাক বা অন্য পরিবহন বিকল হয়ে পড়ে। এতে সড়কে মাইলের পর মাইল যানজটের সৃষ্টি হয়। বিকল হওয়া পরিবহন যে রেকারের মাধ্যমে দ্রুত সরিয়ে নেবে তার তাৎক্ষণিক ব্যবস্থাও নেই। ফলে যাত্রীসাধারণকে ঘন্টার পর ঘন্টা আটকে থেকে অসহনীয় ভোগান্তিতে পড়তে হয়। বলা যায়, সড়ক-মহাসড়কে এক ধরনের অরাজকতা চলছে। জোড়াতালি দিয়ে সংস্কার, যেখানে সেখানে অবৈধ বাজার ও স্থাপনা গড়ে উঠা থেকে শুরু করে হেন কোনো অনিয়ম নেই যা নেই।
সড়ক-মহাসড়ককে স্থায়ীভাবে মেরামত এবং যান চলাচলে মসৃণ করার উদ্যোগ কবে নেয়া হবে, তা জানা নেই। কেবল ঈদ এলেই কোনো রকমে মেরামতের তোড়জোড় চলে। ঈদ চলে গেলে পূর্বাবস্থায় ফিরে যায়। অথচ সড়ক-মহাসড়কের স্থায়ী মেরামত ও মসৃণ করা একটি নিয়মিত বিষয়। এ বিষয়টি সরকার ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় যেন উপলব্ধিই করছে না। সড়ক-মহাসড়ক বেহাল দশায় রেখে অর্থনীতিকে গতিশীল করা যে সম্ভব নয়, তা বিশদ ব্যাখ্যার অপেক্ষা রাখে না। এ ধরনের উদাসীনতা ও গাফিলতি কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। সড়ক-মহাসড়কে যে ঈদ যাত্রায় ভোগান্তিতে পড়তে হবে, তা যাত্রীসাধারণও এখন বোঝে। ফলে তারা নিরাপদ বাহন হিসেবে রেলের দিকে বেশি ঝুঁকেছে। অথচ সচেতন ও কার্যকর উদ্যোগ নিলেই সড়ক-মহাসড়ককে মসৃণ করা সম্ভব। কয়েক দিন অঘোষিতভাবে সড়ক-মহাসড়কে পরিবহণ চলাচল বন্ধ ছিল এ সময়টিতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সংস্কার কাজ করে অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারত। এ সুযোগটি তারা কাজে লাগায়নি। এখন ঈদ যাত্রার সময় সংস্কার শুরু করার ফলে যান চলাচল যে বিঘি্নত হবে, তাতে সন্দেহ নেই। আমাদের কথা হচ্ছে, ঈদের সময় সড়ক-মহাসড়কে যান চলাচল মসৃণ করতে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। ঈদ যাত্রা এবং ঈদ পরবর্তী ফিরতি যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এ সময়টিতে সড়ক-মহাসড়কে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা বৃদ্ধি করতে হবে। ঈদ যাত্রায় যাতে যাত্রীদের কোনো ধরনের ঝক্কি-ঝামেলায় পড়তে না হয়, এ ব্যাপারে যথোপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সড়ক


আরও
আরও পড়ুন