পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
কোরবানির পশুর চামড়ার দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। যে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে তা গত বছরের তুলনায় দশ শতাংশ কম। এবার প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়া ঢাকায় ৪৫ থেকে ৫০ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। গত বছর ছিল ৫৫ থেকে ৬০ টাকা। অন্যদিকে সারাদেশে ছাগলের লবণযুক্ত প্রতি বর্গফুট চামড়া ১৮ থেকে ২০ টাকা এবং প্রতি বর্গফুট বকরির চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১৩ থেকে ১৫ টাকা। কোরবানির পশুর চামড়ার দাম নির্ধারণ প্রসঙ্গে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, চামড়ার আন্তর্জাতিক বাজার এবং চলমান বাণিজ্য পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে এ বছর বাস্তবভিত্তিক চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। চামড়া পাচার রোধ ও উপযুক্ত মূল্য নিশ্চিত করার জন্য সরকার সবধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। অবশ্য ট্যারিফ কমিশন চামড়ার দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছিল। চামড়া ব্যবসায়ীদের অনেকে মনে করছেন, দাম কমানোর ফলে প্রতিবেশি ভারতে চামড়া পাচার হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তবে চামড়ার দাম কমানোর ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে মাদরাসা ও এতিমখানাগুলো।
দেশের অর্থনীতিতে চামড়া শিল্পের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রফতানি করে প্রতি বছর বিপুল অংকের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয়। গত কয়েক বছর ধরে এ শিল্পে চামড়া কেনা-বেচা নিয়ে এক ধরনের বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে। সরকার দাম নির্ধারণ করে দিলেও সে দাম ঠিক থাকে না। সিন্ডিকেট চক্র চামড়ার দাম নিজেদের ইচ্ছামতো নির্ধারণ করে। যারা কোরবানি দেন, তাদেরকে এ নিয়ে খুব একটা সচেতন হতে দেখা যায় না। সাধারণত কোরবানির চামড়া বা তার বিক্রিত অর্থ মাদরাসা ও এতিমখানায় দেয়া হয়ে থাকে। এসব চামড়ার বিক্রিত অর্থ দিয়ে যা আয় হয় তার মাধ্যমেই মাদরাসা ও এতিমখানার লাখ লাখ শিক্ষার্থীর বছরের বেশিরভাগ সময়ের ভরণপোষণ ও পড়ালেখার খরচ চালানো হয়। এর কারণ অধিকাংশ মাদরাসা ও এতিমখানা সরকারি খরচে চলে না। সমাজের দানশীল ব্যক্তিদের দান-অনুদানের মাধ্যমে এসব মাদরাসা ও এতিমখানার খরচ চালানো হয়। এ প্রেক্ষিতে, চামড়ার দাম কমিয়ে দিলে প্রতিষ্ঠানগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হবে। লাখ লাখ শিক্ষার্থীর খরচ যোগানো কষ্টসাধ্য ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে। দীনিশিক্ষা ব্যাহত হতে পারে। অন্যদিকে চামড়ার দাম কমানোর ফলে তা পার্শ্ববর্তী দেশে পাচারের আশঙ্কা রয়েছে। ইতোমধ্যে সীমান্তবর্তী এলাকায় ভারতীয় চামড়া ব্যবসায়ীরা তৎপর হয়ে উঠেছে এবং অগ্রীম অর্থ বিনিয়োগ করেছে বলে জানা গেছে। সীমান্তবর্তী এলাকার ব্যবসায়ীরা কাঁচা চামড়া ক্রয়ের জন্য ভারত থেকে গরু কিংবা নগদ টাকা নিয়ে থাকে। ফলে তারা চামড়া পাচার করতে বাধ্য। পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, সরকার যদি ট্যানারি মালিকদের ঋণ না দিয়ে সরাসরি কাচা চামড়া ক্রয়ের জন্য ঋণ দেয়, তবে অনেকাংশে পাচার রোধ করা সম্ভব। এদিকে অনেক ট্যানারি মালিক বলছেন, এখনও অর্ধেকের বেশি ট্যানারি চালু করা যায়নি। চামড়া কিনে আমরা কী করব? এতো চামড়া রাখার মতো গোডাউনও নেই। দেখা যাচ্ছে, এবার চামড়ার দাম কমালেও অনেক ট্যানারি ব্যবসায়ী তাদের চাহিদামতো চামড়া কিনতে পারবেন না। এতে চামড়া পাচার হওয়ার প্রবল আশঙ্কা রয়েছে।
কোরবানির চামড়ার দাম কমানোর মধ্য দিয়ে দেশের চামড়া শিল্পের দৈন্যদশা ফুটে উঠেছে। বাণিজ্যমন্ত্রী নিজেই বলেছেন, এবার চামড়া রফতানির প্রবৃদ্ধি ১২ শতাংশ কমেছে। এ থেকে প্রতীয়মাণ হয়, চামড়া শিল্পটি দিন দিন দুর্বল হয়ে পড়ছে। এর কারণ হিসেবে বলা যায়, সাভারে স্থানান্তরিত চামড়া শিল্প এলাকা পুরোপুরি চালু না হওয়া। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের গাফিলতির বিষয়টিও বিভিন্ন সময়ে পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। চামড়া প্রক্রিয়াজাত কারখানাই যদি পুরোপুরি চালু না হয়, তবে ব্যবসায়ীরা চামড়া কিনে কী করবেন? স্বাভাবিকভাবেই তারা যেসব চামড়া কিনতে পারবেন না, তা পাচার হয়ে যাবে। এতে এ শিল্পটি আরও রুগ্ন আকার ধারণ করবে। সরকারের উচিত সাভারের ট্যানারি শিল্প এলাকাকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পুরোপুরি চালু করার উদ্যোগ নেয়া। ব্যবসায়ীরা যাতে দেশের সব চামড়া ক্রয় করতে পারে এ ব্যাপারে তাদের সহায়তা করা। পাচার রোধে চামড়ার দাম না কমিয়ে বৃদ্ধি করাই শ্রেয়। এতে যেসব মাদরাসা ও এতিমখানা রয়েছে, তাদের আয়ও বৃদ্ধি পাবে। লাখ লাখ শিক্ষার্থীর ভরণপোষণ ও পড়ালেখার বিষয়টি ক্ষতির মুখে পড়বে না। আমরা মনে করি, কোরবানির পশুর চামড়ার যে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে, তা পুনর্বিবেচনা করা উচিত।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।