Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

হামলাকারীরা নিরাপদ, শিক্ষার্থীরা রিমান্ডে

| প্রকাশের সময় : ৯ আগস্ট, ২০১৮, ১২:০৩ এএম

নিরাপদ সড়কের দাবীতে আন্দোলনরত শিশু-কিশোর শিক্ষার্থীরা ঘরে ও শ্রেনীকক্ষে ফিরে গেলেও আন্দোলনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া এখনো সমাজদেহে আছড়ে পড়ছে। সাতদিনের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের শেষধাপে এসে ৬ ও ৭ আগস্ট কিশোর শিক্ষার্থীরা অমানবিক হামলা ও লাঞ্ছনার শিকার হয়েছে। একটি শিশু কোন একক আইডেন্টিটি নয়, তাদের একেক জনের সাথে আছে একেকটি গোটা পরিবার। সন্তানের ন্যায্য দাবীর প্রতি পিতা-মাতা ও পরিবারের অন্য সদস্যদের সমর্থন থাকাই স্বাভাবিক। প্রকৃতির নিয়মেই শিশু-কিশোররা আবেগপ্রবণ ও জেদি হয়ে থাকে। বেপরোয়া বাসের চাকায় পিষ্ট সহপাঠি বন্ধু ও ভাইবোনদের মৃত্যুতে সংক্ষুব্ধ হাজার হাজার শিশু-কিশোরের আবেগের সাথে সড়ক নিরাপত্তার মত একটি সার্বজনীন সামাজিক সমস্যা নিরসনের ক্ষেত্রে সরকারের সংশ্লিষ্টরা যথাযথ ভ’মিকা ও আচরণ প্রদর্শণে ব্যর্থ হয়েছেন। নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাহজাহান খানের ক্রুরহাসির মধ্য দিয়ে বেড়ে ওঠা আন্দোলন যখন পুলিশ দিয়ে ভয় প্রদর্শন করেও দমানো যায়নি তখন তাদের দাবী মেনে নেয়ার ঘোষনাটি ছিল যথার্থ। কিন্তু সরকারের সর্বোচ্চ মহলের ঘোষনায়ও শিক্ষার্থীরা আশ্বস্ত হতে পারেনি। এর কারণ হিসেবে যে বিষয়টি সামনে চলে এসেছিল তা’ হচ্ছে, সাম্প্রতিক সময়ের কোটা সংস্কার আন্দোলন। কোটা সংস্কার আন্দোলন তুঙ্গে উঠার পর প্রধানমন্ত্রী দাবী মেনে নিয়ে সংসদে দাঁড়িয়ে কোটা বাতিলের ঘোষণা দিয়েছিলেন। এরপর গত কয়েক মাসেও কোটা বাতিল বা সংস্কারের কোন গেজেট হয়নি। এখন সরকারের অবস্থান ১৮০ডিগ্রী ঘুরে গেছে। উপরন্তু কোটা আন্দোলনে জড়িত শিক্ষার্থীরা সরকারীদলের ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হামলা-মামলা ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।
কোটা সংস্কার আন্দোলনের পরিনতি দেখেই নিরাপদ সড়কের ৯ দফা দাবীতে মাঠে নেমে স্কুল-কলেজ শিক্ষার্থীরা সরকারের দাবী মেনে নেয়ার ঘোষনায় আশ্বস্ত হতে পারেনি। কিন্তু এ কথাও অস্বীকার করা যাবেনা যে, এ ধরনের দফাওয়ারি দাবী বাস্তবায়ন যথেষ্ট সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। দাবী মেনে নিলেও রাতারাতি এসব দাবীর বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থায় বিদ্যমান বিশৃঙ্খলার পেছনে রয়েছে সরকারের প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় থাকা মালিক-শ্রমিক সমিতিসহ একটি সংঘবদ্ধ চক্র। শাজাহান খান এদের প্রধান নেতা ও পৃষ্ঠপোষক হিসেবে পরিচিত। ইতিপূর্বেও সড়ক দুর্ঘটনা নিরসনের বিতর্কে প্রাসঙ্গিকভাবেই উঠে এসেছে তার নাম। দেশের লাখ লাখ শিক্ষার্থী ও কোটি মানুষকে বিক্ষুব্ধ করে তোলার পর একজন মন্ত্রীর পদত্যাগ আলোচ্য বিষয়ে পরিনত হওয়ার পর তাকে বরখাস্ত করা হলে সেটাই হত আন্দোলনকারীদের দাবী মেনে নেয়ার ক্ষেত্রে সরকারের সদিচ্ছার বড় প্রতিফলন। উপরন্ত নিরাপত্তার অজুহাত দেখিয়ে মালিক সমিতির আহ্বানে অনির্ধারিত পরিবহন ধর্মঘট পালনের মধ্য দিয়ে শুধু জনদুর্ভোগই বাড়িয়ে তোলা হয়নি, এর মধ্য দিয়ে গণপরিবহন সেক্টরে কথিত মাফিয়া চক্রের নিয়ন্ত্রণের চিত্র আবারো সুস্পষ্ট হয়েছে। সেই সাথে শিক্ষার্থী ও গণমাধ্যম কর্মীদের উপর দলীয় ক্যাডারদের হামলার ঘটনায় নিরাপদ সড়ক দাবীর আন্দোলন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী, অভিভাবক তথা সাধারণ নাগরিক সমাজকে সম্পৃক্ত হতে বাধ্য করেছে। সরকারের পক্ষ থেকে এর জন্য কথিত গুজব ও মিথ্যা প্রচারনাকে দায়ী করা হলেও হামলা-নির্যাতনের ঘটনা অস্বীকার করার উপায় নেই।
বেশ কয়েকদিন ধরে সহনশীল আচরণের পর শিশু-কিশোরদের দাবী মেনে নেয়ার পরও সরকারের ভুল নীতির কারণে শেষ পর্যন্ত নিরাপদ সড়কের আন্দোলন কার্যত ছাইচাপা আগুনের মত রয়েই যাচ্ছে। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা রাজপথ ছেড়ে যাওয়ার পর শিশুদের উপর হামলার প্রতিবাদে বেশ কয়েকটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে এলে তারাও ন্যক্কারজনক হামলার শিকার হয়। শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়কের আন্দোলন শুরুর পর থেকে প্রথম ৯ দিনে ৩৬টি মামলা হয়েছে বলে জানা যায়। হাজার হাজার অজ্ঞাতনামা আসামী উল্লেখ করে দায়ের করা মামলায় ইতিমধ্যে অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার করা হলেও শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকদের উপর হামলার সাথে জড়িত কাউকে গ্রেফতার করা হচ্ছেনা। বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের ২২জন শিক্ষার্থীকে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। অথচ হেলমেট পরা, লুঙ্গিপরা হামলাকারিদের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পরও তাদের ধরা হচ্ছে না। হামলাকারীদের গ্রেফতারের দাবীতে ইতিমধ্যে সাংবাদিক সমাজের পক্ষ থেকে আলটিমেটাম দেয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীদের ন্যায্য ও যৌক্তিক দাবী মেনে নেয়ার পরও অজ্ঞাতনামা আসামীর মামলায় গ্রেফতার ও রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করার এই প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকলে আবারো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। শিক্ষার্থীরা বয়েসে কিশোর থেকে ২০-২২ বছরের তরুন। তারা পরিবার ও জাতির ভবিষ্যত। কোটা সংস্কার বা নিরাপদ সড়কের আন্দোলন কোন রাজনৈতিক কারণ বা দলীয় প্ররোচনায় সৃষ্টি হয়নি। শিক্ষার্থীদের দাবীর মধ্যে কোন রাজনৈতিক বিষয় নেই। তাদের সাথে বিরোধিদলের কর্মীর মত নিপীড়নমূলক আচরণ করা হলে সরকারের জন্য তা বুমেরাং হতে পারে। তারুণ্যের উন্মাদনায় কিছু অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে যাওয়া অস্বাভাবিক নয়। সুনির্দিষ্ট অভিযোগের বাইরে তাদের বিরুদ্ধে মামলা ও রিমান্ডের ঘটনা দু:খজনক। অবিলম্বে পুলিশের এসব তৎপরতা বন্ধ করতে হবে।



 

Show all comments
  • Sumona Shaikh Suma ৯ আগস্ট, ২০১৮, ১২:২২ পিএম says : 0
    এখানেই কবি নিরব
    Total Reply(0) Reply
  • Md Mohsin Kamal ৯ আগস্ট, ২০১৮, ১২:২২ পিএম says : 1
    এরই নাম কি আইনের শাসন?
    Total Reply(0) Reply
  • রাসেল ৯ আগস্ট, ২০১৮, ১২:২৩ পিএম says : 0
    এই সম্পাদকীয়টার জন্য ইনকিলাবকে ধন্যবাদ
    Total Reply(0) Reply
  • Nannu chowhan ৯ আগস্ট, ২০১৮, ৪:০১ পিএম says : 0
    Khomotashin doler bipokkhe kono kisu gele taha hoy jonggi totporota kintu khomotashinder pashe theke ostro oboidho ostro lathi ramda nia jodio birodhider akromon tokhon shata hoye jai boidho,eai jodi obsta hoy shomaje ayner shashon kokhono protishta hobena desh odhopotone jabe.......
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সড়ক


আরও
আরও পড়ুন