Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ০২ জুলাই ২০২৪, ১৮ আষাঢ় ১৪৩১, ২৫ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

পদ্মায় ড্রেজিং

একনেকে ১১ প্রকল্প অনুমোদন, দুই লাখ স্মার্ট প্রি-পেমেন্ট মিটার বসবে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৮ আগস্ট, ২০১৮, ১২:০১ এএম

ঢাকার দোহার উপজেলার মাঝিরচর থেকে নারিশাবাজার হয়ে মোকসেদপুর পর্যন্ত পদ্মা নদী ড্রেজিং ও বাম তীর সংরক্ষণসহ ১১ প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে এ অনুমোদন দেয়া হয়। দোহার এলাকায় প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ১ হাজার ৪৮৩ কোটি ২৬ লাখ টাকা। বৈঠকে ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড (ডেসকো) এলাকার জন্য দুই লাখ অনলাইন স্মার্ট প্রি-পেমেন্ট মিটার ক্রয়ের অনুমোদন দেয়া হয়েছে।। ফলে গ্রাহকরা ঘরে বসেই মোবাইলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করতে পারবেন। প্রকল্পের মোট ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ১৮৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এছাড়া অন্যান্য প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হবে ৬ হাজার ২৬১ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ৬ হাজার ৪৪০ কোটি ১৬ লাখ টাকা এবং বাস্তবায়নকারী সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে ৭ কোটি ৯৮ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপার্সন শেখ হাসিনা। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন, পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ সময় পরিকল্পনা সচিব মোঃ জিয়াউল ইসলাম, সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব সৌরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীসহ পরিকল্পনা কমিশনের সদস্যরা।
ব্রিফিং-এ পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, একনেক বৈঠকে দেশের যেসব স্থানে তাঁত শিল্প রয়েছে সেগুলোর জন্য প্রকল্প নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এক্ষেত্রে জামালপুর, দেওয়ানগঞ্জ, ইসলামপুর, সিলেটের মনিপুর এবং চট্টগ্রাম অঞ্চলে তাঁত শিল্প বিকাশে প্রকল্প নেয়ার তাগিদ দিয়েছেন পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়কে।
মুস্তফা কামাল বলেন, দোহার এলাকাটি পদ্মা সেতুর কাছাকাছি অবস্থিত হওয়ায় এ এলাকার উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে। পদ্মা নদীতে ক্যাপিটাল ড্রেজিং করা হলে প্রায় ২০ কিলোমিটার নতুন ভ‚খন্ড পাওয়া যাবে। এক্ষেত্রে ড্রেজিং যে অর্থ ব্যয় হবে তা উঠে আসবে। উদ্ধার হওয়া এই জমি অর্থনৈতিক উন্নয়নে কাজে লাগানো হবে।
ব্রিফিং এ জানানো হয়, ‘ঢাকা জেলার দোহার উপজেলাধীন মাঝিরচর থেকে নারিশাবাজার হয়ে মোকসেদপুর পর্যন্ত পদ্মা নদী ড্রেজিং ও বাম তীর সংরক্ষণ’ নামের প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ১ হাজার ৪৮৩ কোটি ২৬ লাখ টাকা। সম্পূর্ন সরকারি অর্থায়নে চলতি বছর থেকে ২০২২ সালের জুনের মধ্যে এটি বাস্তবায়ন করবে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের আওতায় বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড। প্রকল্পের আওতায় ৬ হাজার মিটার নদী তীর সংরক্ষণ, ৪২২ দশমিক ৫৫ মিটার এন্ডটার্মিনেশন এবং ২৪ কিলোমিটার নদী ড্রেজিং করা হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ওই এলাকায় অবস্থিত বসতবাড়ি, হাইওয়ে, রাস্তা-ঘাট, মাদ্রাসা-মসজিদ ও ফসলী জমিসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন স্থাপনা বা সম্পদ পদ্মা নদীর ভাঙ্গন থেকে রক্ষা এবং ভ‚মি পুনঃরুদ্ধার করা সম্ভব হবে।
সূত্র জানায়, অনুমোদিত প্রকল্পটি ঢাকার দক্ষিণে দোহার উপজেলায় পদ্মা নদীর বামতীরে অবস্থিত। পদ্মার বামতীর বরাবর প্রচন্ড ভাঙ্গন দেখা দেয়ায় ইতোমধ্যেই গুরুত্বপূর্ন স্থাপনাসহ অনেক এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে বা হচ্ছে। এছাড়া ঢাকা-দোহার মহাসড়ক হিসেবে ব্যবহৃত ঢাকা দক্ষিণ-পশ্চিম বাঁধ কাম রাস্তাসহ প্রকল্প এলাকায় অবস্থিত স্কুল, কলেজ, মসজিদ, মাদ্রাসা, মার্কেট এবং কৃষি জমিসহ সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা নদী ভাঙ্গনের সম্মুখীন। এ সমস্যা সাধানে ২০১১ সালে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা পরিচালনা করা হয় এবং ২০১৭ সালে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড একটি কারিগরি কমিটি গঠন করে সমীক্ষা প্রতিবেদন হালনাগাদ করে। সে প্রেক্ষিতে প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হলে তা অনুমোদন লাভ করেছে।
সভায় সভায় ডেসকো এলাকায় অনলাইন স্মার্ট প্রি-পেমেন্ট মিটার সরবরাহ ও স্থাপন শীর্ষক প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়। চলতি বছর থেকে ২০২০ সালের ডিসেম্বর মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে ডেসকো।
প্রকল্পের আওতায় ডেসকো এলাকায় দুই লাখ অনলাইন স্মার্ট প্রি-পেমেন্ট মিটার বাসানো হবে। এছাড়া ব্যবস্থাপনারও উন্নতি করা হবে। ফলে ঘরে বসেই মোবাইলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করা যাবে।
পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, অনলাইন স্মার্ট প্রি-পেমেন্ট মিটার কেনা হলে বিদ্যুৎ বিল দিতে আর ঝামেলা থাকবে না। বিদ্যুৎ বিলের টাকা ফুরিয়ে গেলে মোবাইলেই সংকেত বেজে উঠবে। বিদ্যুতের লোডও কন্ট্রোল করা যাবে মোবাইলের মাধ্যমে। বর্তমানে পোস্টপেইড মিটারিং সিস্টেমে প্রচুর পরিমাণে বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকে। ফলে গ্রাহক ও সংস্থা উভয়ই বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হয়। কিন্ত অনলাইন প্রি-পেমেন্ট মিটারিংয়ের মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান হবে সহজেই।
তিনি জানান, ডিজিটাল পদ্ধতিতে গ্রাহক সেবার মান, লোড ব্যবস্থাপনা, রাজস্ব আদায় অধিকতর উন্নয়ন করা সম্ভব হবে বলে মনে করে সরকার। দুই লাখ অনলাইন স্মার্ট প্রি-পেমেন্ট মিটার কানেক্টিভিটির জন্যই মূলত অনলাইন নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা করা হবে।
সূত্র জানায়, মিরপুর, পল্লবী, আগারগাঁও, কাফরুল, শাহআলী, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট, গুলশান, বনানী, বারিধারা, বাড্ডা, উত্তরা, উত্তরখান ও দক্ষিণখান এলাকায় বসবে এসব মিটার। এছাড়া গাজীপুরের টঙ্গী এলাকাও প্রকল্পের আওতায় রয়েছে।
একনেকে অনুমোদিত অন্যান্য প্রকল্পগুেেলা হচ্ছে- অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের নিমিত্ত ভ‚মি অধিগ্রহণ, এটি বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ৩ হাজার ১৯৫ কোটি ৮১ লাখ টাকা। বাংলাদেশে তাঁত বোর্ডের আওতায় ৫টি বেসিক সেন্টারে ৫টি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, একটি ফ্যাশন ডিজাইন ইনস্টিটিউট এবং ২টি মার্কেট প্রমোশন কেন্দ্র স্থাপন প্রকল্প, ব্যয় হবে ১১৭ কোটি টাকা। ড. এম. এ ওয়াজেদ মিয়া টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, পীরগঞ্জ, রংপুর স্থাপন, ব্যয় হবে ১৭৪ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। সরকারি শিশু পরিবার এবং ছোট মনি নিবাস নির্মাণ/ পুনঃনির্মাণ, ব্যয় হবে ২৯৬ কোটি ৭২ লাখ টাকা। হাই- টেক পার্ক, সিলেট এর প্রাথমিক অবকাঠামো নির্মাণ, ব্যয় হবে ২৯০ কোটি ২৬ লাখ টাকা। ফরিদপুর জেলার চরভদ্রাসন উপজেলাধীন পদ্মা নদীর ডান তীর সংরক্ষণ ও ড্রেজিং, ব্যয় হবে ২৯২ কোটি ২৩ লাখ টাকা। সোনাপুর হতে চেয়ারম্যানঘাট সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ১৬৮ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। বীরগঞ্জ-খানসামা-দাড়োয়ানী, খানসামা-রাণীবন্দর এবং চিরিরবন্দর-আমতলী বাজার জেলা মহাসড়কে যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ১৪৩ কোটি ৯২ লাখ টাকা। কুলাউড়া-পৃথিমপাশা-হাজীপুর-শরীফপুর সড়কের ১৪তম কিলোমিটারে পিসি গার্ডার সেতু (রাজাপুর সেতু ) নির্মাণ ও ৭ দশমিক ৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক নির্মাণ প্রকল্প,এটি বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ৯৯ কোটি ১৭ লাখ টাকা। ###



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পদ্মা

১১ জানুয়ারি, ২০২৩
৩১ অক্টোবর, ২০২২
৪ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ