Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ঈশ্বরদীতে বর্জ্য-েশব্দে বিপর্যস্ত পরিবেশ

প্রতিকারে একাবাসীর মানববন্ধন

ঈশ্বরদী (পাবনা) থেকে এস এম রাজা | প্রকাশের সময় : ৪ আগস্ট, ২০১৮, ১২:০৩ এএম

এলাকাবাসীর বাধা-নিষেধ উপেক্ষা করে এবং পরিবেশ অধিদফতরের নিয়মনীতি না মেনে উন্মুক্ত স্থানে অটো রাইস মিলের দূষিত বর্জ্য ফেলায় চরমভাবে পরিবেশ বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। রহমত এন্টারপ্রাইজ এন্ড এগ্রো ফুডের ময়লা দুর্গন্ধযুক্ত পানি, ধানের তুষ, ছাই ও মেশিনের বিকট শব্দে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে পুরো গ্রামবাসী। এসব নিয়ে মিল কর্তৃপক্ষের সাথে গ্রামবাসীর কয়েক দফা বৈঠক করেও কোনো সুরাহা হয়নি। ফলে পরিবেশের চরম বিপর্যয়ের মধ্যেই পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস করছে ঈশ্বরদী উপজেলার সলিমপুর ইউনিয়নের বড়ইচারা গ্রামের প্রায় দুই শতাধিক পরিবার। সরেজমিন এলাকায় গিয়ে এসব তথ্য জানা গেছে। এ ব্যাপারে চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের ভ‚মিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে এর প্রতিকার চেয়ে এলাকার কয়েক শ’ নারী পুরুষ মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন।
এলাকাবাসী জানায়, প্রায় তিন বছর পূর্বে বড়ইচারা গ্রামে ‘রহমত এন্টারপ্রাইজ এন্ড এগ্রো ফুড’ নামের একটি শিল্পপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করা হয়। এরপর তার সাথেই একই মালিকের আরো একটি শিল্প প্রতিষ্ঠান সেখানেই যুক্ত করা হয়। সেই শিল্প প্রতিষ্ঠান দু’টির দূষিত বর্জ্য মিলের সামনের একটি ছোট উন্মুক্ত গর্তে ফেলা হয়। দিনের পর দিন সেই দূষিত বর্জ্য গর্ত ভরে উপচেপড়ে আশেপাশের বাড়িতে ছড়িয়ে পড়ে এলাকাবাসীকে অতিষ্ঠ করে তোলে। এ ছাড়া সেই গর্তে এলাকার ছোট ছোট বাচ্চারা পড়ে গিয়ে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। স¤প্রতি ফটিক (৪) নামের এক শিশু ওই দূষিত বর্জ্যরে গর্তে পড়ে গিয়েছিল। সূত্র জানায়, নিজস্ব জমিতে বর্জ্য শোধনাগার থাকার নিয়ম থাকলেও এই প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে তা মানা হয়নি। লোকালয়ের বাইরের কোনো নির্জন স্থানে বজ্য না ফেলে উন্মুক্ত স্থানে নিয়মিত দূষিত বর্জ্য ফেলা অব্যাহত রাখায় মারাত্মক পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। এতে করে হুমকির মুখে পড়েছে জীববৈচিত্র। গাছপালা মরে যাচ্ছে, গাছের ফল-ফলাদিও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ছাই পড়ে চোখ নষ্ট হয়েছে গ্রামের তিনজনের। এ ব্যাপারে বারবার মিল কর্তৃপক্ষকে বলেও কোনো কাজ হয়নি বলেও জানান তারা।
মহির উদ্দিন নামের এক এলাকাবাসী জানান, অন্যের জমি লিজ নিয়ে সেখানে উন্মুক্ত দূষিত বর্জ্য ফেলায় পরিবশের চরম বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। সেই দুষিত বর্জ্য পাইপ দিয়ে সেচে অন্যের জমিতে দেয়ার চেষ্টা করলেও গ্রামের লোকজন তাতে বাধা দেয়। বিকট শব্দের কারণে শ্রবণ শক্তিও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে অনেকের। আবুল কালাম নামের অপর এক গ্রামবাসী জানান, ওই মিলের ছাই ও ধানের তুষের কারণে তার ছেলের চোখ নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছিল। ওই গ্রামের এইচএসসি পরীক্ষার্থী তানভীর আহমেদ ও রুহুল আমীন জানান, প্রকট শব্দে বাড়িতে পড়াশোনা করাই কষ্টকর হয়ে পড়েছে। ক্লাসে গিয়েও শিক্ষকের কথা ঠিকমতো শোনা যায় না। তিন বছর ধরে এ অবস্থা চলায় পড়াশোনা করতে তাদের খুব সমস্যা হয়।
অভিযুক্ত রহমত এন্টারপ্রাইজ এন্ড এগ্রো ফুডের ব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর আলম সবুজ বলেন, আমরা সবসময় শ্যালো ইঞ্জিন দিয়ে পানি বের করে দিতে চাই। যা গ্রামের লোক বাধা দিচ্ছে বলেই ওই গর্তে পানি জমে উপচে পড়ছে। এতে আমার কোনো দোষ নেই। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যেটা রোধ করা সম্ভব আমরা সেটা করেছি।
সলিমপুর ইউপি চেয়ারম্যান মো. আব্দুল মজিদ বাবলু মালিথা জানান, গ্রামবাসীর কাছ থেকে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসেছি। মিলের দূষিত বর্জ্যরে কারণে এলাকায় বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আল মামুন জানান, লিখিত অভিযোগ পেলে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। পরিবেশ দূষণকারী কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে ছাড় দেয়া হবে না।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মানববন্ধন

২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ