২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত মোটা হবেন ৪০০ কোটি মানুষ
২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত ওজন বা মোটা হবেন বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ। সংখ্যার বিচারে যা
আমাদের দেশে আমলকী অত্যন্ত সুপরিচিত এবং দেশীয় ফল। এক সময় বাংলার গ্রাম গঞ্জে, শহরে সর্বত্রই এ ফলের প্রচুর গাছ ছিল। বর্তমানে এ ফলের গাছটি কমে গেছে। সারা বছরেই এ ফলটি বাজারে পাওয়া যায়। তবে বর্ষা ও শীত মৌসুমে এ ফলটি বেশি পাওয়া যায়। ছোট ছোট হালকা সবুজ রঙের গোলাকৃতি হয় এই ফলটি। ফলটি খেতে টক এবং তেতো লাগে। আমলকী খেয়ে পানি খেলে মিষ্টি লাগে।
এটি একটি উল্লেখযোগ্য ঔষধি ফল। প্রসাধনী সামগ্রী, খাদ্য ও ঔষধ হিসেবে আমলকী আমাদের জীবনের সাথে গুরুত্বসহকারে মিশে আছে। ‘আম’ অর্থ সমস্ত আর ‘লকী’ (নকি) অর্থ পরিষ্কার করা। যার অর্থ দাঁড়ায় দেহ থেকে দূষিত পদার্থ বের করে দেওয়া। আমিষ জাতীয় খাদ্য পরিপাকের পর তা থেকে সৃষ্ট বর্জ্য উপাদান যথা ইউরিয়া ও ইউরিক এসিড ইত্যাদি অম্ল বা এসিড পদার্থ দেহের জন্য ক্ষতিকর বিষাক্ত পদার্থে পরিণত হয়। আমলকীর ক্ষারকীয় গুণ এ সকল পদার্থকে নিরপেক্ষ করে তোলে। ফলে বর্জ্য পদার্থ দেহের কোন ক্ষতি করতে পারেনা। প্রস্রাবের সাথে বেরিয়ে যায়। আমলকী একটি শক্তিশালী এন্টি অক্সিডেন্ট যা রক্তের গন্ধহীন গ্লুকোজ কমিয়ে রাখতে সাহায্য করে। অতিরিক্ত গ্লুকোজ গ্লিসারলে রুপান্তরিত হতে পারেনা। এতে দেহে অতিরিক্ত চর্বি জমার সুযোগ পায় না। ফলে হার্টের ব্লক বা হৃদরোগ হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।
আমলকীকে এন্টি এইজিংও বলা হয়। যা নিয়মিত সেবনের ফলে বার্ধক্যের চাপ বা মানুষের বার্ধক্য বিলম্বিত করে দীর্ঘায়ু লাভ হয়। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য আমলকী খুবই উপকারী। রক্তের শর্কারাকে নিয়ন্ত্রণ করে।
পুষ্টি বিজ্ঞানীদের মতে প্রতি ১০০ গ্রাম খাবার উপযোগী আমলকীতে পুষ্টি উপাদান হলো: জলীয় অংশ ৯১.৪ গ্রাম, প্রোটিন ০.৯ গ্রাম, শর্করা ০.২ গ্রাম, খনিজ পদার্থ ০.৭ গ্রাম, আঁশ ৩.৪ গ্রাম, খাদ্যশক্তি ৭০ কিলোক্যালরি, ক্যালসিয়াম ৩৪ মিলিগ্রাম, লৌহ ৩.১ মিলিগ্রাম, ভিটামিন সি ৪৬৩ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি১ ১০.০২ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি২ ২০.০৮ মিলিগ্রাম, চর্বি ০.২ মিলিগ্রাম তাছাড়া আরও গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য উপাদান বিদ্যমান যা শরীরের জন্য খুবই উপকারী।
রাসায়নিক উপাদান: এ ফলের বীজ পর্যন্ত সি এর প্রাকৃতিক উৎস। একে ভিটামিন সি-এর ভান্ডার বলা হয়। এ ফলে আরও আছে: ট্যানিন, ফলয়েডীয় পদার্থ, ফাইল এমবিøক এসিড, লিপিড, গ্রালিক এসিড, এলাজিক এসিড, লিউপিয়ল বিটা সিটোস্টেরল।
বাংলাদেশের ফলের মধ্যে অন্য কোন ফলে এত পরিমাণ ভিটামিন সি আর নেই। তাই ভিটামিন সিএর ঘাটতি পূরণে এ ফলটি খুবই প্রয়োজনীয়। আমলকী বিশেষ করে হৃদপিন্ড, পাকস্থলী, মাথার রোগের বিশেষ উপকারি। ভিটামিন সিএর অভাবে আমাদের শরীরে নানা সমস্যা সৃষ্টি হয়। এর মারাত্মক অভাবে স্কার্ভি রোগ হয়, শরীরে সাদা দাগ দাগ হয়, দাঁত ও মাড়ির ক্ষতি হয়। মাড়ি হতে রক্ত পড়ে চামড়ার সৌন্দর্য কমে, চামড়ার নানারোগ দেখা দেয়, মেয়েদের লিকোরিয়া রোগ, অর্শ প্রভূতি রোগ সৃষ্টি হতে পারে। এসব অভাব পূরণে আমলকী খুবই উপকারী। প্রতিদিন কমপক্ষে দুটি আমলকী খেলে প্রতিদিনের নানা ভিটামিনের অভাব পূরণ হয়ে যায়। আমলকী প্রচুর আঁশ থাকে এবং এর টক ও তেতো স্বাদ মুখের লালা বাড়িয়ে হজমে সহায়ক এনজাইমকে সক্রিয় করে। আমলকী বলকারক, রোগ প্রতিরোধ, যকৃত, পেশী, স্নায়ু মন্ডলের শক্তি বর্ধক রক্ত পরিষ্কারক এবং যৌন শক্তি বৃদ্ধি করে।
আমলকী গুণের শেষ নেই। শরীরের পরিচর্যায় মায়ের মতই উপকার বলে একে বলা হয় ধাত্রীফল। তাছাড়া আমলকী আরো যে উপকার করে তা হলো:- * আমলকীতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আছে যা শরীরে ক্যান্সার সৃষ্টিকারী কোষবৃদ্ধি কমায়। তাছাড়া আমলকী শরীরের দূষিত পদার্থ বের করে দিয়ে রক্ত বিশুদ্ধ করে। * আমলকীতে অ্যামাইনো এসিড ও পেকটিন আছে। পেকটিন রক্ত থেকে কলোস্টোরোলের সিয়াম কমায় এবং রক্তের খারাপ কলোস্টোরেলের মাত্রা কমিয়ে দেয়। রক্তনালীতে চর্বি জমতে বাঁধা দেয়। * যাদের ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত তারা সবচেয়ে ভালো হয় প্রতিদিন রাত্রে ২/৩টি আমলকী টুকরো টুকরো করে পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। সকালে পানিটুকু পান করুন। এভাবে প্রতিদিন খান ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আসবে। উচ্চ রক্তচাপ থাকলে আরও উপকার পাবেন। * আমলকী ত্বকের উজ্জলতা বাড়ায় মসৃণ ও সুন্দর করে। চামড়ার রোগ প্রতিরোধ করে। * বয়সের কারণে চামড়ায় বলিরেখা পড়তে দেয় না। * যাদের ঘনঘন সর্দি কাশি ঠান্ডা লাগে, নাক দিয়ে পানি পড়ে তারা প্রতিদিন আমলকী খান উপকার পাবেন। * যাদের রাতে ঘুম কম হয় তারা কাঁচা বা শুকনো আমলকী কাঁচা দুধে বেটে একটু মাখন মিশিয়ে মাথার তালুতে লাগান। খুবই তাড়াতাড়ি ঘুম আসবে। * যাদের খাওয়ার অরুচি তারা নিয়মিত ২/৩টি আমলকী চিবিয়ে খান মুখের রুচি বাড়বে হজমও বেশি হবে। * যাদের কম বয়সে চোখের সমস্যা দেখা দেয় দৃষ্টি শক্তি কমে যায় তারা নিয়মিত ২/৩টি আমলকীর রস বা ২/৩ চামচ আমলকীর রসের সাথে মধু মিশিয়ে খান উপকার পাবেন। এটি চোখের ছানি পড়া রোগ প্রতিরোধ করে। * যাদের মুখে দুর্গন্ধ তারা আমলকী চিবিয়ে খান এবং সাথে লেবুর রস পানি মিশিয়ে খান সমস্যা কমে আসবে। অল্প বয়সে যাদের মাথার চুল পড়ে যায় তারা আমলকীর রসের সাথে ঘৃতকুমারীর রস মিশিয়ে খান উপকার পাবেন। আমলকীর রস প্রতিদিন চুলে লাগিয়ে ২/৩ ঘন্টা রেখে তারপর ধুয়ে ফেলতে হবে এভাবে ১ মাস ব্যবহার করলে চুলের গোড়া শক্ত হবে চুল পড়া বন্ধ হবে। * যারা রোগারোগা শরীর দুর্বল লাগে বুধ ধড়ফড় করে তারা নিয়মিত আমলকি খান সমস্যা কমবে। শরীরের শক্তিও বাড়বে। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়বে। * যাদের জ্বর জ্বর ভাব থাকে বা জ্বর লেগেই থাকে তারা আমলকির রস ঘি মিশিয়ে খান উপকার পাবেন। * যাদের এসিডিটির সমস্যা হয় বা মুখে মিষ্টি মিষ্টি ভাব বা ঢেকুর ওঠে তারা ১ গ্রাম পানিতে ১ চামচ আমলকীর গুড়ো ও সামান্য চিনি বা মধু মিশিয়ে দিনে ২ বার খান সমস্যা কমে আসবে। * আমলকী, হরিতকি, বহেড়াকে একত্রে ত্রিফলা বলা হয় এ তিনটি শুকনো ফল একত্রে রাতে ভিজিয়ে রেখে সকাল বেলায় ছেঁকে খালি পেটে শরবত হিসেবে খান পেটের সমস্যা কমবে। ডায়রিয়া আমাশয় হলে আমলকী চিবিয়ে রস খান উপকার পাবে। অত্যান্ত উপকারি এ ফল গাছটি বাড়ির আশেপাশে লাগান যতœ নিন। নিয়মিত ফলটি পরিবারের সবাইকে খেতে দিন।
লেখক : শিক্ষক, কলাম ও স্বাস্থ্য বিষয়ক
ফুলসাইন্দ দ্বি-পাক্ষিক উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ।
গোলাপগঞ্জ, সিলেট।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।