Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ভারতে দলিত নারীদের প্রতি সহিংসতা বাড়ছে

ইনকিলাব ডেস্ক : | প্রকাশের সময় : ২৫ জুলাই, ২০১৮, ১২:০৪ এএম

ভারতে যে মুহূর্তে নারীদের বিরুদ্ধে সহিংসতা ব্যাপক আকারে বেড়ে চলেছে, এর মধ্যেও সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী হলো নিম্নবর্নের নারীরা। দলিত নারীদের বিরুদ্ধে নির্যাতনের যে সব মামলা রয়েছে, এগুলোর মধ্যে মাত্র ২৫% মামলার রায় হয়েছে। জবাবদিহিতার অভাবের কারণে দলিত নারীদের বিরুদ্ধে নির্যাতনের মাত্রাটি কেবল বেড়েই চলেছে। অল ইন্ডিয়া দলিত মহিলা অধিকার মঞ্চের (সংক্ষেপে অধিকার মঞ্চ) উত্তর প্রদেশের রাজ্য পর্যায়ের কর্মী শোভানা স্মৃতি বলেন, “বর্ন ও লিঙ্গ বৈষম্য উভয় কারণেই সহিংসতার শিকার আমরা। তাই দলিত নারীরা যে সহিংসতার শিকার, তা অদলিত নারীদের চেয়ে আলাদা”। মাত্র এক দশকে দলিতদের বিরুদ্ধে অপরাধের হার বেড়েছে ৭৪৬%। ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর সা¤প্রতিক তথ্যে দেখা গেছে, ২০০৬ সালে প্রতি এক লক্ষ দলিতদের মধ্যে অপরাধ হতো ২.৪টি। ২০১৬ সালে এসে হচ্ছে ২০.৩টি। শুধু ২০১৪ সালে, দলিতদের বিরুদ্ধে অপরাধ বেড়েছে ১৯%। ওই বছর ৪৭,০৬৪টি এ ধরনের অপরাধ রেকর্ড করা হয়েছে। নিম্নবর্ণের মানুষের বিরুদ্ধে এ সময় সবচেয়ে বেশি অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। নারীদের উপর হয়রানির অপরাধ হয়েছে ৩১৭২টি। আর দলিত নারীদের ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ২৫৪১টি। গত বছরের সেপ্টেম্বরে রাজস্থানের বার্মার জেলার ভুতারান গ্রামের ৩২ বছর বয়সী দলিত নারী রেনুকা (আসল নাম নয়) আত্মহত্যা করে। দুই সন্তান ও স্বামী রেখে গেছে সে। তার আত্মহত্যার পর থেকেই তার স্বামী অপ্রকৃতস্থ অবস্থার মধ্যে রয়েছে। ২০১৭ সালের আগস্টে ঘুম থেকে উঠে সে দেখে তার বাড়িতে দুজন পুরুষ। তারা জোর করে তাকে নির্জন জায়গায় নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে। এই দুই জন ছিল রেনুকার প্রতিবেশী। রেনুকাদের বাড়ি ছিল খামারের শেষ প্রান্তে। তার পরিবারের সদস্যরা হামলাকারীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের চেষ্টা করেছিল কিন্তু করতে পারেনি। এদিকে, রেনুকাকে অব্যাহতভাবে হুমকি দেয়া হচ্ছিল। মামলার যারা স্বাক্ষী ছিল, তাদের উপরও হামলা হয়েছে। “এ রকম পরিস্থিতিতে আত্মহত্যা করে রেনুকা”। অধিকার মঞ্চের রাজস্থান-ভিত্তিক সমাজ কর্মী সুমন দেদাথিয়া বললেন এ কথা। রেনুকার লাশ নিয়ে তার পরিবারের সদস্যরা যখন আদালতের বাইরে প্রতিবাদে বসেছিল, তখনই কেবল ধর্ষণের মামলাটি নেয় আদালত। দলিত কর্মী শোবানা স্মৃতি বলেন, “আমরা অদলিত পুরুষ, অদলিত নারী এবং দলিত পুরুষ সবার দিক থেকেই নির্যাতনের শিকার। ভূমি, মূলধন বা শিক্ষা কোন কিছুতেই অধিকার না থাকায় অন্যদের উপর নির্ভরশীল থাকতে হয় আমাদের, যারা আমাদের এই অসহায় অবস্থান সুযোগ নেয়”। যেসব দলিত নারী এ ধরনের অপরাধের শিকার, তাদের পরামর্শের জন্যও যাওয়ার কোন জায়গা নেই। শোবানা বললেন যে দলিত নারীদের বিরুদ্ধে যেসব নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে, সেগুলোর ব্যাপারে মামলা নিতেও অস্বীকৃতি জানায় পুলিশ। অধিকার মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক আশা কোতয়াল বলেন, “কে কোন বর্ণের তার উপর তাদের জীবিকা ও মর্যাদা নির্ভর করে। আর এই অসহায় অবস্থাগুলো বেশি জড়িত নারীদের সাথে। তাদের শরীরকে জাতভেদের দৃষ্টিতে দেখা হয়। তাদের বিরুদ্ধে যে সব সহিংসতা হয়, সেগুলো করা হয় তাদের অবমাননা করার জন্য – তাদের চুল ধরে টানা হয়, উলঙ্গ করে গ্রামের মধ্যে ঘোরানো হয়। এ ধরনের জঘন্য অপকর্মের পরও অপরাধীরা পার পেয়ে যায়। নারীদের আইনি সুবিধা নেয়ার কোন সুযোগই নেই, কারণ তাদের কাছে কোন অর্থ নেই”। কোতয়াল দলিত নারীদের সেই দলে ছিল যারা গত মাসে জেনেভায় ইউনাইটেড নেশান্স হিউম্যান রাইটস কাউন্সিলের (ইউএনএইচআরসি) ৩৮তম অধিবেশন জাতভেদের কারণে যে সহিংসতা চলছে, তার একটি চিত্র তুলে ধরে। বিভিন্ন দলিত শ্রেণীর বিরুদ্ধে যে সব অপরাধ সঙ্ঘটিত হয়েছে, এগুলোর মধ্যে মাত্র ২৫.৭ শতাংশের বিরুদ্ধে আদালত রায় দিয়েছে। নারীদের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলার রায় হয়েছে ২৯ শতাংশ। ২০১৭-১৮ সালে এ সংক্রান্ত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রিপোর্টে এ তথ্য উঠে এসেছে। জেনেভায় কোতয়াল যে রিপোর্ট পেশ করেছিলেন, তার শিরোনাম হলো ‘ভয়সেজ এগেইন্সট কাস্ট ইমপিউনিটি: ন্যারেটিভস অব দলিত উইমেন’। এই রিপোর্টে ন্যাশনাল ফ্যামিলি হেলথ সার্ভের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, দলিত নারীদের মধ্যে ৩৩.২ শতাংশই ১৫ বছরের বয়সের পর শারীরিক সহিংতার শিকার হয়েছেন। কোতয়ালের রিপোর্টে আরও উল্লেখ করা হয় যে, সরকারী রেকর্ডে অপরাধের যে সংখ্যা উল্লেখ করা হয়েছে, সেটা আসল অপরাধের সংখ্যার একটা ক্ষুদ্র অংশ মাত্র। বহু ক্ষেত্রে পুলিশ ও বিচার বিভাগের অসহযোগিতার কারণে, লজ্জা ও সামাজিক আচারের কারণে এবং প্রতিশোধের শিকার হওয়ার আতঙ্কে এই ধরনের ঘটনা প্রকাশই করা হয় না। কোতয়াল বলেন এই পরিস্থিতি সত্বেও বেশ কিছু দলিত নারী তাদের অধিকারের জন্য সংগ্রাম করে যাচ্ছেন, যারা নিজেরাও এ ধরনের অপরাধের শিকার হয়েছেন। এনডিটিভি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নারী

১৫ জানুয়ারি, ২০২৩
২৮ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ