বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেছেন, ‘জামায়াত ইসলামী নিয়ে সরকার নানা ধরনের কৌশল ও ষড়যন্ত্র করছে। যাতে করে আমাদের মধ্যে একটা ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়।
সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন নিয়ে জামায়াতের সঙ্গে
বিএনপির সমঝোতার চেষ্টা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টির চেষ্টা সফল হবে না।
শুক্রবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘প্রতিহিংসার রাজনীতি : গ্রহণযোগ্য নির্বাচন এবং জনগণের প্রত্যাশা’শীর্ষক এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। ‘বাংলাদেশে ইয়ুথ ফোরাম’এ সভার আয়োজন করে।
মওদুদ বলেন, ‘সিলেটের একটা স্থানীয় নির্বাচন। এটা এমন কোনো নির্বাচন না, তারা তাদের দলীয় একজন প্রার্থী দিয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি তাদের সঙ্গে সমঝোতায় আসতে। কিন্তু আমাদের যে জোট, সেই জোট ছিল, আছে এবং থাকবে। জাতীয় পর্যায়ের রাজনীতি এক জিনিস, আর স্থানীয় পর্যায়ের রাজনীতি আরেক জিনিস। কিন্তু এখানে বিভিন্নভাবে, বিভিন্ন সংবাদপত্রে, বিভিন্ন খবর দিয়ে আমাদের মধ্যে একটা ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টির চেষ্টা করা হচ্ছে, সেটা নিষ্ফল হবে। সব রাজনৈতিক দলকে ঐক্যবদ্ধ করে আমরা জাতীয় ঐক্যমত সৃষ্টি করবো। যাতে করে এই সরকারকে আমরা অপসারণ করতে পারি।’
তিনি বলেন, ‘সেজন্য নির্বাচনের ব্যাপারে আমাদের বক্তব্য অত্যন্ত স্পষ্ট। আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি আমাদের নিশ্চিত করতে হবে এবং এই মুক্তির আন্দোলন আমরা আইনি প্রক্রিয়ায় চালিয়ে যাব। কিন্তু আইনি প্রক্রিয়ায় যদি তার মুক্তি না হয়, রাজপথই হবে একমাত্র সমাধান। সেই জন্য আমাদেরকে প্রস্তুতি নিতে হবে। আগামী দিনে, আমাদের সামনে বিরাট চ্যালেঞ্জ। আমাদের সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য এখন থেকে প্রস্তুতি নিতে হবে। ’
সাবেক এই উপ-রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘আমরা যদি গত ১০ বছরের একটা যুগকে মূল্যায়ন করি ইতিহাস কীভাবে দেখবে এই যুগকে? আমার নিজের অনেক মূল্যায়ন আছে এবং অনেক রকমের মূল্যায়ন হতে পারে। কিন্তু একটা বিষয় আমার মনে হয় সবাই একমত হবে যে ‘এই যুগটা মিথ্যাচারের যুগ বলে পরিচিত হয়ে থাকবে। অবলীলাক্রমে মিথ্যা কথা বলা। একেবারে সরকারের রাষ্ট্রের মানে সর্বোচ্চ আসনের থেকে শুরু করে একেবারে নিম্নতম পর্যায় পর্যন্ত। মিথ্যা কথা বলাটা তাদের অভ্যাস হয়ে গেছে। সত্যকে তারা মানতে চান না।
তিনি বলেন, আর হচ্ছে নীতি নৈতিকতাবিহীন একটি যুগ আমরা দেখতে পাচ্ছি। বর্তমানে নীতি-নৈতিকতা বলে কিছু নাই। সবকিছু হলো গ্রাস করার রাজনীতি। নিজেদের দখলে রাখার রাজনীতি, লুণ্ঠনের রাজনীতি, ভোগের রাজনীতি এবং এভাবেই এই যুগকে চিহ্নিত করা হবে।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘এই যে যেমন ধরেন কোটা আন্দোলন, ১১এপ্রিল দেশের প্রধানমন্ত্রী। নির্বাচিত হোন আর না হোন, প্রধানমন্ত্রীর পদে তো আছেন। দেশের সাধারণ মানুষ, এই যে আমাদের স্কুল কলেজে যারা লেখা পড়া করে, নবীনরা তারা তাকিয়ে থাকে। যে আমরা রাজনীতিবীদরা কীভাবে কথা বলি, কী ধরনের কথা বলি এবং আমরা কথা দিয়ে কথা রাখি কিনা। ১১ এপ্রিল আপনি সংসদে দাঁড়িয়ে বলে দিলেন, যে এই কোটা তুলে দিলাম, আমরা কাছে সবার কাছে এটার রেকর্ড আছে। ২৭ জুনে এসে আপনি বললেন কোটা থাকবে। এটা কি মানানসই হলো?’
তিনি বলেন, ‘মিথ্যাচার, নীতি নৈতিকহীনতার এই যে রাজনীতি চলছে এখন এমন একটা ভাব যে ১১ এপ্রিল বাংলাদেশে কোনো প্রধানমন্ত্রী ছিলেন না এবং কোনো প্রধানমন্ত্রী বক্তব্য রাখেন নাই এমনভাবে বক্তব্য রাখেন।
সাবেক এই আইনমন্ত্রী বলেন, ‘এখন আসি ভল্টের সোনা চুরি। তদন্ত সংস্থাগুলো বলছে, যে চুরি হয়েছে। আর ন্যাচারালি স্বাভাবিক বাংলাদেশ ব্যাংক তো বলবেই, কোনো চুরি হয় নাই। এখানে কোনো চোর নাই। এর আগে প্রায় ৮শ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা পাচার হয়ে গেলো বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে। আগে হয়েছে টাকা চুরি, এখন হয়েছে সোনা চুরি। এই বাড়িতে যদি কারো সামান্য চুরি হয়, পুলিশ গিয়ে প্রথমে কাকে ধরে? যারা সন্দেহভাজন, বাড়িতে যারা কাজ করে, পাহারাদার, যারা গার্ড, যদি অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিং থাকে, তাদেরকে গিয়ে প্রথমইে গ্রেফতার করা হয়। কিন্তু এতবড় একটা ঘটনা ঘটে গেলো বাংলাদেশে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে প্রায় ৮শ কোটি টাকার ওপরে পাচার হয়ে গেলো, একজন মানুষকেও গ্রেফতার করা হয় নাই। কেন? নিশ্চয়ই তাহলে সরকারের মদদপুষ্ট লোকেরা এর সঙ্গে জড়িত। তা না হলে তো কোনো কারণ থাকতে পারে না।’
তিনি বলেন, এই সোনা চুরির সঙ্গে যদি কোনো রকমের অনিয়ম হয়ে থাকে, যেটা তাদের সংস্থাগুলোই বলছে, শুনেছি অর্থমন্ত্রীও এ ব্যাপারে বক্তব্য রেখেছেন। যদি তাই হয়ে থাকে তাহলে একজন মানুষকেও আপনারা সন্দেহভাজন সেকসন ৫৪-এ গ্রেফতারে অসুবিধা কোথায়? কারণ একটাই, এর পেছনে সরকারের মদদপুষ্ট লোকেরা আছে।’
আয়োজক সংগঠনের উপদেষ্টা কৃষিবিদ মেহেদী হাসান পলাশের সভাপতিত্বে এবং সভাপতি মুহাম্মদ সাইুর রহমানের সঞ্চালয়ন সভায় অন্যদের মধ্যে
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জোম হোসেন আলাল, নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ প্রমুখ বক্তৃতা করেন।