পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
বাংলাদেশের স্বাধীনতার আগে এ দেশে ব্যবহৃত ওষুধের সিংহভাগই আমদানি করা হতো বিদেশ থেকে। সামান্য যে ওষুধ তৈরি হতো দেশে তার গুণগত মান নিয়েও ছিল প্রশ্ন। কিন্তু স্বাধীনতার ৪৭ বছর পর বাংলাদেশ চাহিদার সিংহভাগ ওষুধই নিজেরা উৎপাদন করছে। বাংলাদেশ থেকে ওষুধ রপ্তানি হচ্ছে পৃথিবীর ১৬০টি দেশে। এর মধ্যে ইউরোপ আমেরিকার বাজারেও প্রবেশ করছে বাংলাদেশের ওষুধ। যেসব দেশ ওষুধের মানের ব্যাপারে আপসহীন তারাও বাংলাদেশের ওষুধের ব্যাপারে সন্তুষ্টি প্রকাশ করছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি ওষুধ রপ্তানি হয়েছে। এ সময়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯ কোটি ডলার। তার বিপরীতে ওষুধ রপ্তানির পরিমাণ ৯ কোটি ৬০ লাখ ডলার। ওষুধ রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি ১৫ দশমিক ৮৯ শতাংশ।
ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের তথ্যমতে, বাংলাদেশ থেকে ৫৪টি ওষুধ রপ্তানিকারী প্রতিষ্ঠান ১২৭টি দেশে রপ্তানি করে থাকে। ২০১১ সালে রপ্তানিকারী দেশের সংখ্যা ছিল ৪৭টি। এর পর কয়েক বছর কোনো প্রতিষ্ঠান চালু হয়নি। কিন্তু ২০১৫ সালে কোম্পানির সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ১১৩টিতে। বর্তমানে ১২৭টিতে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে আমেরিকার উত্তর ও দক্ষিণের ২৫টি দেশে। ইউরোপের ২৬টি, অস্ট্রেলিয়ার ৫টি, আফরিকার ৩৪টি ও এশিয়ার ৩৭টি দেশে বাংলাদেশের ওষুধ রপ্তানি হয়।
দেশের শীর্ষস্থানীয় ওষুধ রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড ২০১৫ সালের জুন মাসে দেশের প্রথম ওষুধ প্রস্তুতকারী কোম্পানি হিসেবে ইউএস এফডিএ কর্তৃক নিরীক্ষিত ও অনুমোদিত হয়। বর্তমানে কোম্পানিটি ৫০টিরও বেশি দেশে ওষুধ রপ্তানি করছে। বেক্সিমকো ফার্মা ইউএস এফডিএ, এজিইএস (ইইউ), টিজিএ অস্ট্রেলিয়া, হেলথ কানাডা, জিসিসি এবং টিএফডিএসহ বিশ্বের বিভিন্ন নিয়ন্ত্রক সংস্থা কর্তৃক স্বীকৃত।
অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গেল কয়েক বছরের দেশ থেকে ওষুধ রপ্তানি উল্লেখ্যযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১১ সবমিলিয়ে ওষুধ রপ্তানি হয় ৪২৬ কোটি টাকা। ১২ সালে রপ্তানি হয়েছে ৫৫১ কোটি টাকা। ১৩ সালে ৬১৯ কোটি টাকা। ১৪ সালে ৭৩৩ কোটি টাকা। ২০১৫ সালে রপ্তানি হয়েছে ৮৩২ কোটি টাকা। সর্বশেষ গত বছর ২০১৬ সাল পর্যন্ত দেশে থেকে ওষুধ রপ্তানি হয়েছে ২ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা।
অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলেন, দেশে বিশ্বমানের ওষুধ পরীক্ষাগারের কাজ চলছে। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরকে আরও শক্তিশালী করার চেষ্টা চলছে। এসব কাজ শেষ হলে এ শিল্পের অবস্থান আরও দৃঢ় হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওষুধপ্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক আ ব ম ফারুক বলেন, বাংলাদেশের ওষুধশিল্পের বিকাশ খুবই আশাব্যঞ্জক। বছর কয়েক আগেও জীবনরক্ষাকারী ৫০ শতাংশেরও বেশি ওষুধ আমদানি করতে হতো। এখন সেটি অনেক কমে এসেছে।
ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এখনো দেশের বেশিরভাগ ওষুধের কাঁচামাল বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। দেশে ওষুধের কাঁচামালের বাজার প্রায় ১২০০ কোটি টাকা।
বাংলাদেশের ওষুধ শিল্পের অগ্রযাত্রার মূল কারণ আমাদের ওষুধ নীতির যথার্থ বাস্তবায়ন। ১৯৮২ সালে এদেশে যে ওষুধ নীতি করা হয় তার সুফল এখন পাওয়া যাচ্ছে। দেশে ওষুধ প্রস্তুতের কাঁচামাল উৎপাদন বাড়াতে পারলে উৎপাদন ব্যয়ও কমবে, ওষুধের দামও মানুষের নাগালের মধ্যে রাখা সম্ভব হবে।
বিজিএমইএ’র তথ্যে দেখা গেছে, বিদায়ী অর্থবছরে ২,৮১৫ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। তার আগের ২০১৫-১৬ অর্থবছর ২,৮০৯ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছিল। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে পোশাক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি ছিল ১০.১৪ শতাংশ।
উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্য তৈরি পোশাক খাতনির্ভর। রপ্তানি বহুমুখীকরণের ক্ষেত্রে ওষুধ শিল্প খুলে দিতে পারে সম্ভাবনার দ্বার। বাংলাদেশের ওষুধ রপ্তানি প্রতি বছরই বাড়ছে এবং আশা করা হচ্ছে আগামীতে এটি রপ্তানির অন্যতম প্রধান খাত হয়ে উঠবে। এ উদ্দেশ্যে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে ওষুধশিল্পকে বিশেষ সুবিধা দেওয়া হয়েছে। ওষুধের কাঁচামাল উৎপাদনকারী কোম্পানিকে ২০৩২ সাল পর্যন্ত দেওয়া হয়েছে শুল্ক মওকুফের সুবিধা। এ ছাড়া ওষুধের কাঁচামাল আমদানিতে ২০ শতাংশ শুল্ক ছাড় পাবেন আমদানিকারকরা। দেশে ওষুধের কাঁচামাল উৎপাদনের জন্য মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় গড়ে তোলা হচ্ছে প্রথম ওষুধশিল্প পার্ক। আগামী এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে এটি পুরোদমে কার্যক্রম শুরু করবে। এরই মধ্যে ২৮টি প্রতিষ্ঠানকে ৪২টি প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। দেশের ওষুধ শিল্প এখন কাঁচামালের জন্য ভারত, চীন ও দক্ষিণ কোরিয়ার ওপর নির্ভরশীল। দেশে কাঁচামাল তৈরি হলে তা বিপুল পরিমাণ অর্থ সাশ্রয় করবে। ওষুধের উৎপাদন খরচও হ্রাস পাবে। এর ফলে বিদেশে ওষুধ রপ্তানির ক্ষেত্রে প্রতিদ্ব›িদ্বতায় এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ। ওষুধের মতো মানসম্মত পণ্য রপ্তানি বিদেশে দেশের ভাবমূর্তি বাড়াতে সহায়তা করবে। বাংলাদেশের অন্যান্য পণ্য রপ্তানিতেও এ ভাবমূর্তি অবদান রাখবে। ওষুধ শিল্পের পরিসর বৃদ্ধি পেলে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রেও রাখবে ইতিবাচক প্রভাব।
লেখক : সম্পাদক ও প্রকাশক, দৈনিক নবরাজ
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।