Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আটা-ময়দায় তৈরি হচ্ছে ব্র্যান্ডের নকল ওষুধ

গ্রেফতার ১০ : জব্ধ ২২ লাখ পিস নকল ওষুধ

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৭ জুন, ২০২২, ১২:০১ এএম

কুমিল্লার হিমালয় ল্যাবরেটরিজ। আয়ুর্বেদিক ওষুধ তৈরি করার কথা তাদের। কিন্তু এর আড়ালে প্রতিষ্ঠানটি তৈরি করছিল দেশি-বিদেশি নয়টি ব্র্যান্ডের প্রচলিত ও বহুল ব্যবহৃত নকল ওষুধ। আটা-ময়দায় তৈরি এসব নকল ও ভেজাল ওষুধের মধ্যে রয়েছে ন্যাপ্রক্সেন প্লাস, প্যানটোনিক্স, গরু মোটাতাজার নিষিদ্ধ ওষুধ পেরিএকটিন, খোলা মাইজিদ- ৫০০ ট্যাবলেট। ডিবির একটি দল ঢাকার মিটফোর্ড, কুমিল্লার কাপ্তান বাজারের হিমালয় ল্যাবরেটরিজ এবং সাভারে প্রতিষ্ঠানটির গোডাউনে অভিযান চালিয়ে প্রায় ২২ লাখ পিস নকল ওষুধ জব্দ করা হয়। এ সময় ভেজাল ওষুধ তৈরি, বিপণন, মজুতের সঙ্গে জড়িত ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গতকাল সোমবার ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ডিবির প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার এ সব তথ্য জানান। গ্রেফতারকৃতরা হলো-হিমালয় ল্যাবরেটরিজের মালিক মোর্শেদ আলম শাওন, সাভার গোডাউনের কবির হোসেন, কুমিল্লায় নকল ঔষধের ডিস্ট্রিবিউটর আল আমিন চঞ্চল, নকল ওষুধ প্যাকেজিংয়ে জড়িত মো. নাজিম উদ্দিন, গোডাউন রক্ষণাবেক্ষণকারী মো. তৌহিদ। এছাড়া গোডাউন ও ওষুধ তৈরি কারখানার অপারেটর ও শ্রমিক আইনুল ইসলাম, মো. সাগর, মো. আবির, মো. রুবেল, মো. পারভেজ।
অতিরিক্ত কমিশনার হাফিজ আক্তার বলেন, অভিযানে আমরা দেখতে পাই, প্রতিষ্ঠানটি দেশি-বিদেশি নয়টি ব্র্যান্ডের ওষুধ নকল করছে। জব্দ করা ঔষধের মধ্যে রয়েছে- ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালসের প্যানটোনিক্স-২০ এমজি নয় লাখ ১৮ হাজার ৪৫৬ পিস, স্কয়ারের সেকলো-২০ চার লাখ ১০ হাজার ৪০০ পিস, দি একমি ল্যাবরেটরিজের মোনাস- ১০ ৫৮ হাজার ৫০ পিস, হেল্থকেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের সার্জেল ক্যাপসুল ৯৬ হাজার পিস, অপসোনিন ফার্মার ফিনিক্স-২০ ৫৮ হাজার ৮০০ পিস, কুমুদিনি ফার্মার অ্যান্টিবায়োটিক দিজা ছয় হাজার ২৪০ পিস, আমবে ফার্মাসিউটিক্যালসের গুুরফ- ৫০০ ছয় হাজার ৪৮০ পিস, জেনিথের ন্যাপ্রক্সেন প্লাস ৪১ হাজার ৪০০ পিস, ব্রোনসন-ইউএসএ-এর জিবি- ৬০ তিন হাজার পিস।
তিনি বলেন, অভিযানে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটি ফয়েল পেপার দিয়ে সুন্দর করে এসব ওষুধ মোড়কজাত করছে। বোঝার কোনো উপায় নেই এটা আসল না নকল। এ ওষুধের গুণগতমান বলতে কিছুই নেই। আটা বা ময়দার সঙ্গে ক্যামিকেল মিশিয়ে তৈরি এসব নকল ওষুধ প্যাকেজিং করে ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে ঢাকাসহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে। আমরা এসব ওষুধ পরীক্ষা করে দেখব কী পরিমাণ ক্ষতিকারক উপকরণ ব্যবহার করা হয়েছে। আদৌ এর কোনো গুণগত মান আছে কি না!
তিনি আরও বলেন, জব্দ করা ওষুধগুলোর মধ্যে অনেকগুলো অ্যান্টিবায়োটিক রয়েছে। সামনের দিনগুলোতে অ্যান্টিবায়োটিক সেবনকারীদের জন্য ভয়াবহ বার্তা বহন করছে। বাংলাদেশে করোনার চেয়েও ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি করবে এসব ভেজাল অ্যান্টিবায়োটিক। দেশে সর্বাধিক ব্যবহৃত ওষুধ হচ্ছে ওমিপ্রাজল গ্রুপের গ্যাসের ওষুধ। যা এখন ব্যাপক হারে নকল হচ্ছে। এটা খুবই খারাপ বার্তা দিচ্ছে আমাদের। আমরা প্রায়শই ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করি। ভেজাল ও নকল ঔষধের লাগাম টানতে এবং নজরদারির ক্ষেত্রে জনসাধারণ, কোম্পানিসহ সবারই উচিত সচেতন হওয়া। নিজস্ব ঔষধের বাইরে আয়ুর্বেদিক প্রতিষ্ঠানগুলো অন্য ওষুধ বা ভেজাল ওষুধ তৈরি করতে না পারে সেজন্য ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের আরও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত।
এক প্রশ্নের জবাবে হাফিজ আক্তার বলেন, গত ছয় মাসে ভেজাল ওষুধ তৈরির সঙ্গে সম্পৃক্ত মোট ৪৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মামলা হয়েছে ১৪টি। বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলাগুলো হয়েছে। সামনের দিনগুলোতে মামলা ও অভিযান আরও বাড়বে। আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যে ওষুধগুলো জব্দ করা হয়েছে তার সবই দেশি-বিদেশি ব্র্যান্ডের। আমরা আহ্বান জানাব, নামিদামি কোম্পানিগুলো যেন আমাদের সহযোগিতা করে। তারা যদি কপিরাইট আইনে মামলা করে তাহলে আমাদের জন্য তদন্ত ও জালিয়াত চক্রকে ধরা খুবই সহজ হবে।
কোন এলাকায় এসব নকল ওষুধ সরবরাহ করা হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিশাল এ চক্র। তারা ঢাকাকে এড়িয়ে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে সরবরাহ করছে। আমরা গ্রেপ্তারদের ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করব। আদালত কর্তৃক রিমান্ড মঞ্জুর হলে জিজ্ঞাসাবাদে জানার চেষ্টা করা হবে, কত দিন ধরে কী পরিমাণ নকল ও ভেজাল ওষুধ তারা বিপণন ও তৈরি করেছে।
ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর এবং ভেজাল বা নকল হওয়া নামী-দামি কোম্পানিগুলোর ভূমিকা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সবাই একত্রে কাজ করলেই এ চক্রকে ধরা এবং ভেজাল বন্ধ করা সহজ হবে। ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের জনবল খুবই কম। তাদের গোয়েন্দা কার্যক্রমও নেই। পরিস্থিতি অনুযায়ী তারা হয়ত সামনের দিনগুলোতে গোয়েন্দা কার্যক্রম শুরু করতে পারে। আমরা কিছুদিন আগেও ভেজাল ও নকল ওষুধ তৈরি করে এমন ৭৯টি আয়ুর্বেদিক কারখানার একটি তালিকা দিয়েছিলাম। তারা ব্যবস্থা নিয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ