Inqilab Logo

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

ইইউ-জাপান বিশ্বের বৃহত্তম মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি

ইনকিলাব ডেস্ক : | প্রকাশের সময় : ১৯ জুলাই, ২০১৮, ১২:০২ এএম

বিশ্বের বৃহত্তম মুক্ত বাণিজ্য চুক্তিতে উপনীত হয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এবং জাপান। জাপানের রাজধানী টোকিওতে এ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ইইউ এবং জাপান থেকে পণ্য আমদানিতে ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন শুল্ক আরোপের প্রেক্ষিতে এ চুক্তি স্বাক্ষরিত হলো। এর মধ্য দিয়ে যে মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল গড়ে উঠবে তার আওতায় আসবে ৬০ কোটি মানুষ। বৈশ্বিক জিডিপি’র প্রায় এক তৃতীয়াংশের যোগান দেবে এ মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল। মঙ্গলবার চুক্তি স্বাক্ষরের পর এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন ইউরোপিয়ান কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড টাস্ক, জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে এবং ইউরোপীয় কমিশনের প্রধান জ্যঁ ক্লদে জাঙ্কার। ইইউ কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড টাস্ক এ চুক্তিকে ট্রাম্পের সংরক্ষণবাদী বাণিজ্য নীতির বিরুদ্ধে একটি পরিষ্কার বার্তা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। জাপানের সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের এ বাণিজ্য চুক্তি বিশ্ব বাণিজ্যে এক সুদুরপ্রসারী ও গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হিসেবে প্রতীয়মান হচ্ছে। কিন্তু এই চুক্তি কিভাবে বদলে দিতে পারে বিশ্ব বাণিজ্যের ধারা? এ থেকে কার কী লাভ হবে? এই বাণিজ্য চুক্তির কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, বিশ্বের বৃহত্তম মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চলে ইউরোপীয় ইউনিয়ন হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় একক বাজার। জিডিপির হিসেবেও এটি বিশ্বের বৃহত্তম। এর সদস্য ২৮টি দেশ। প্রায় ৫০ কোটি মানুষ এই অভিন্ন বাজারের অন্তর্ভুক্ত। অন্যদিকে জাপান বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি। কাজেই জাপান এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে এই বাণিজ্য চুক্তির মাধ্যমে যে অর্থনৈতিক অঞ্চল গঠিত হচ্ছে, সেটি বিশ্বের বৃহত্তম। এর সমতুল্য অর্থনৈতিক জোট আর নেই। বিশ্ব জিডিপির এক তৃতীয়াংশ আসবে এই অঞ্চল থেকে। ৬০ কোটি মানুষ এই বাজারের অন্তর্ভুক্ত। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর থেকে যে সংরক্ষণবাদী বাণিজ্য নীতি অনুসরণ করছেন, তা বিশ্ব বাণিজ্যে উদ্বেগ ও অস্থিতিশীলতা তৈরি করেছে। তিনি বহু দশকের ঘনিষ্ঠ মিত্র ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং জাপানের বিরুদ্ধে পর্যন্ত শুল্ক বসিয়েছেন ইস্পাত এবং অ্যালুমিনিয়ামের মতো শিল্পে। তার এই সংরক্ষণবাদী নীতির বিরুদ্ধে ইইউ-জাপানের এই বাণিজ্য চুক্তি একটা শক্ত বার্তা দেবে বলে মনে করা হচ্ছে। ইউরোপীয় কমিশনের প্রধান জ্যঁ ক্লদ ইয়ুঙ্কার বলেছেন, বিশ্ব বাণিজ্যের ক্ষেত্রে এটি একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত । এই বাণিজ্য চুক্তি থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কি সুবিধা হবে, আর জাপানই বা কিভাবে লাভবান হবে? জাপান বিশ্বের অন্যতম ধনী দেশ। ইউরোপীয় ইউনিয়ন আশা করছে, সেই বাজারে তারা অনেক ব্যবসা করতে পারবে। অন্যদিকে জাপানের অর্থনীতি বহু বছর ধরেই অতটা ভালো করতে পারছে না। তারা আশা করছে ইউরোপীয় বাজারে ঢুকতে পারলে তাদের অর্থনীতি চাঙ্গা হয়ে উঠবে। জাপান থেকে ইউরোপে যায় মূলত গাড়ি। অন্যদিকে ইউরোপ থেকে জাপানে যায় কৃষিজাত পণ্য, বেশিরভাগই দুগ্ধজাত পণ্য। চুক্তিটি যখন পুরোপুরি বাস্তবায়িত হবে, তখন ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে জাপানে চীজ বা ওয়াইনের মতো পণ্য রফতানির ওপর শুল্ক বলতে গেলে উঠেই যাবে। এতে ইউরোপীয় কোম্পানিগুলোর শুল্ক বাবদ বেঁচে যাবে প্রায় একশো কোটি ইউরো। অন্যদিকে জাপানও বিনা শুল্কে ইউরোপীয় বাজারে তাদের গাড়ি এবং যন্ত্রাংশ রপ্তানি করতে পারবে। ধারণা করা হচ্ছে, এর ফলে ইইউ›র অর্থনৈতিক উৎপাদন বাড়বে প্রায় শূন্য দশমিক আট শতাংশ, অন্যদিকে জাপানের শূন্য দশমিক তিন শতাংশ। দু পক্ষের অর্থনীতিই এর থেকে বিপুলভাবে লাভবান হবে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং জাপান, দুটিই বড় অর্থনীতি। তাদের মধ্যে মুক্ত বাণিজ্যে উভয় পক্ষের যত লাভই হোক, সেটা বাদ বাকী দুনিয়ার বাণিজ্যে কতটা কি প্রভাব রাখবে, সেটা নিয়ে অনেকে সন্দিহান। যুক্তরাষ্ট্র যদি বিভিন্ন দেশের রপ্তানি পণ্যের ওপর শুল্ক বসানো অব্যাহত রাখে, এই লাভ খুব গোনায় আসবে না বলে মনে করেন তারা। রয়টার্সের বিশ্লেষক সোয়াহ পটনায়েক বলেছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প চীনা পণ্যের বিরুদ্ধে আরও শুল্ক আরোপের হুমকি দিচ্ছেন। মোটর গাড়ির ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক বসানো যায় কিনা তার পরিকল্পনা করছেন। যদি এই ধারা অব্যাহত থাকে, তাহলে হয়তো ২০২০ সাল নাগাদ বিশ্ব অর্থনীতির যে প্রবৃদ্ধি হবে বলে আশা করেছিল আইএমএফ, প্রকৃত প্রবৃদ্ধি তার চেয়ে দশমিক পাঁচ শতাংশ কম হবে। তার মতে, এটি হবে বিশ্ব বাণিজ্যের জন্য এত বিরাট একটি ধাক্কা, জাপান আর ইইউ›র এই ব্যাপক তাৎপর্যপূর্ণ বাণিজ্য চুক্তি দিয়েও আসলে সেই ক্ষতি পোষানো যাবে না। বিবিসি, সিএনএন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চুক্তি


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ