পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
খুলনা ও গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে নির্বাচন কমিশন ও স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষপাতমূলক ভ‚মিকার অভিযোগ নির্বাচনের স্বচ্ছতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। এই দুই সিটি নির্বাচনের অভিজ্ঞতাকে সামনে রেখে আসন্ন তিন সিটি নির্বাচনকে স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য করার জোর দাবী উচ্চারিত হচ্ছে নানা মহল থেকে। বিশেষত: নির্বাচনের আগে বিরোধি দলের প্রতিদ্বন্দি প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের গ্রেফতার, হয়রানি ও হুমকির কারণে নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। দলীয় ক্যাডারদের সাথে পুলিশ প্রশাসনের সহায়তায় ব্যাপক ভোট জালিয়াতির ঘটনার পরও নির্বাচন কমিশনের নিস্ক্রিয়তা নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতাকেও প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। এহেন বাস্তবতায় তিন সিটি নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনের ভ‚মিকা আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে তাদের জন্য সবচে গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। বিগত নির্বাচনে প্রশাসনের বিতর্কিত ভ‚মিকা ও ব্যর্থতার সমালোচনা ও গণদাবীর প্রেক্ষিতে সিলেট বরিশাল ও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের সময় কোন ওয়ারেন্ট ছাড়া বিরোধি দলীয় নেতাকর্মীদের গ্রেফতার না করা নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। তবে সাম্প্রতিক নির্বাচনের আগেও নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু, স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রতিশ্রæতি দিয়েও তা বাস্তবায়নে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। এমনকি বিরোধি দলের নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার-হয়রানি না করতে হাইকোর্টের নির্দেশনার পরও খুলনা ও গাজীপুরে ভোটের দিন পর্যন্ত গ্রেফতার,হুমকি ও হয়রানি অব্যাহত ছিল।
দেশের চলমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় সরকারের অধীনে দলীয় প্রতিকে স্থানীয় নির্বাচনে প্রশাসনের পেশাদারিত্ব ও নিরপেক্ষ ভ‚মিকা পালনের কোন সম্ভাবনাই হয়তো নেই। সাম্প্রতিক অতীতে এমন একটি উদাহরণও খুঁজে পাওয়া যায়না। অতএব তিন সিটি নির্বাচনে জনগন ও নির্বাচন কমিশন যে স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের প্রত্যাশা করছে তা এখনো সন্দেহ ও অনাস্থার আবর্তে ঘুরপাক খাচ্ছে। কোন ওয়ারেন্ট ছাড়া তিন সিটিতে বিরোধিদলের নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার না করতে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনার খবরটি গতকাল প্রকাশিত হয়েছে। একই খবরে বিরোধিদলের নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার ও হয়রানি অব্যাহত থাকার খবরও প্রকাশিত হয়েছে। যে সব নেতা-কর্মী ইতিমধ্যে গ্রেফতার হয়েছে তাদের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের কোন বক্তব্য বা ইতিবাচক ভ‚মিকা দেখা যাচ্ছেনা। এমনকি প্রতিদ্বন্দি প্রার্থীরা পরস্পরের বিরুদ্ধে নির্বাচনী আচরণ বিধি লঙ্ঘনের অনেক অভিযোগ করলেও নির্বাচন কমিশন এসব অভিযোগ খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করছেনা। এ থেকে নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা, স্বচ্ছতা ও সক্ষমতা সম্পর্কে নি:সংশয় হতে পারছেনা প্রতিদ্বন্দী প্রার্থী ও বিরোধিদলের নেতা-কর্মীরা। রাজশাহীতে বিএনপির মেয়র প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল খুলনা ও গাজীপুরের মত তার নির্বাচনী এজেন্টদের ভয়ভীতি দেখিয়ে এলাকা ছাড়া করার অভিযোগ করেছেন। বরিশালেও একই রকম অভিযোগ শোনা যাচ্ছে।
নির্বাচনের দিন সিটি কর্পোরেশন এলাকায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখাই নির্বাচন কমিশন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাজ নয়। নির্বাচনকে কোন পক্ষের একক প্রভাব থেকে মুক্ত রেখে ভারসাম্যপূর্ণ ও ভীতিমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করা স্বচ্ছ ও গ্রহনযোগ্য নির্বাচনের প্রধান শর্ত। সিটি নির্বাচনের তফশিল ঘোষিত হওয়ার পর রাজশাহীতে বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ ১৭৮ জন নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে তিনটি মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে এবং ইতিমধ্যে ২৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। বলাবাহুল্য, বিএনপি’র গুরুত্বপূর্ণ প্রায় সব নেতাকর্মী একাধিক মামলার অভিযুক্ত আসামী। এদের বিরুদ্ধে যে কোন সময় ওয়ারেন্ট ইস্যু করাও প্রশাসনের পক্ষে অসম্ভব নয়। এমনিতেই মামলায় জজর্রিত নেতাকর্মীরা প্রকাশ্য রাজনৈতিক কর্মকান্ডে অংশ নিতে ভয় পাওয়া স্বাভাবিক। এমন বাস্তবতায় দলীয় প্রতিকে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ভারসাম্যপূর্ণ পরিবেশ ও সুযোগসুবিধা প্রত্যাশা করাও বাতুলতা মাত্র। নির্বাচনের প্রচারকার্য চালানোর সময়ও নির্বাচনী এলাকায় সরকারী দলের এমপি নেতারা যে সব উন্নয়ন ও রিলিফ বিতরণ কর্মকান্ড চালাচ্ছেন তা’ও নির্বাচনী আচরণ বিধির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। বরিশালে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার এ ধরনের কর্মকান্ড বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন বলে প্রকাশিত খবরে জানা যায়। বিশেষত প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সদিচ্ছা ও নিরপেক্ষতা সম্পর্কে যে পারসেপশন তৈরী হয়েছে তিন সিটি নির্বাচনে তার কাছে প্রত্যাশিত ভ‚মিকা পাওয়া যাচ্ছেনা। এতদ সত্বেও নির্বাচনের আগে ওয়ারেন্ট ছাড়া গ্রেফতার না করার নির্দেশনা কিছুটা অগ্রগতি হিসেবেই গণ্য করা যায়। পাশাপাশি সরকারী দলের নেতা-কর্মীদের অস্ত্রবাজি, শক্তি ও ভীতি প্রদর্শন বন্ধ করতে হবে। বিরোধি দলের এজেন্টদের নিরাপত্তা ও নির্ভয়ে দায়িত্ব পালনের সুযোগ নিশ্চিত করতে নির্বাচন কমিশনের নজরদারি ও যথাযথ উদ্যোগ নিতে হবে। তা না হলে শুধুমাত্র গ্রেফতার না করার কাগুজে নির্দেশনা নির্বাচন কমিশনের আইওয়াশ বলে গণ্য হতে পারে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।