মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
পাকিস্তানের ক্ষমতচ্যূত প্রধানমন্ত্রী ও মুসলিম লীগ (পিএমএল-এন) নেতা নওয়াজ শরিফ বলেছেন, কারা প্রাচীর ভোটারদের থেকে আমাকে আলাদা রাখতে পারবে না। এক অডিও বার্তায় তিনি ভোটারদের উদ্দেশে বলেন, ‘জাতির কন্যা মরিয়ম নওয়াজকেও কারাবন্দি করা হয়েছে। চক্রান্তকারীরা জানে না, কোনও কারাগারের দেয়ালই ভোটারদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কে ফাটল ধরাতে পারবে না।’ সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কোনও স্বৈরশাসকই এই সম্পর্ক ভাঙতে পারেনি, আর কোনও পাপী এই দীর্ঘ সম্পর্কে ফাটল ধরানোর পৈশাচিক পরিকল্পনায় সফল হতে পারবে না।’
অডিও বার্তায় নওয়াজ শরীফ আরও বলেন, পুরো দেশই এখন একটি বড় জেলখানায় পরিণত হয়েছে। আমরা এই শৃঙ্খল ভেঙে ফেলবো আর নিজেদের এই জেল থেকে মুক্ত করবো। কায়েদ-এ-আজমের পাকিস্তান দীর্ঘদিন ধরে নাটকের দেশ হয়ে আছে জানিয়ে পিএলএম-এন নেতা বলেন, ‘গত ৭০ বছর ধরে চলা এই নোংরা খেলার হাত থেকে আমাদের বাঁচতে হবে।’
নওয়াজ আরও বলেন, এই কারণে আমি ‘জনরায়ের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ জারি রাখুন’ কথাটিকে সেøাগান হিসেবে নিয়েছি। তাই আপনারাও এই পতাকা তুলে ধরুন আর আগামী ২৫ জুলাইয়ের নির্বাচনে বিশাল বিজয় উদযাপনের জন্য প্রস্তুত হন। অডিও বার্তায় ট্রাম্প আসন্ন নির্বাচনে পিএমএল-এন’র বড় জয় নিশ্চিত করতে কাজ করার জন্য তিনি কর্মীদের উৎসাহিত করেন।
বার্তার শেষের দিকে এসে নওয়াজ বলেন, ‘আমার এই বার্তা দেশের আনাচে কানাচে পৌঁছে দিন। আমাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারীদের এমনভাবে প্রতিহত করুন যাতে তারা আর কোনও দিন আমাদের সামনে দাঁড়াতে সাহস না করে। আপনাদের জন্য অপেক্ষমান একটি বিশাল জয়ের জন্য একসাথে আন্দোলন গড়ে তুলুন।’
তার দল মুসলিম লীগকে বিজয়ী করতে জনগণের প্রতি আহ্বান জানান নওয়াজ।
অ্যাভেনফিল্ড দুর্নীতি মামলায় পাকিস্তানের জবাবদিহিতা আদালত গত ৬ জুলাই তাদের তিনজনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড প্রদান করে। তার সবাই বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। উল্লেখ্য, নব্বইয়ের দশকে লন্ডনে পার্ক লেনের অ্যাভেনফিল্ড হাউসে চারটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট কেনে নওয়াজের পরিবার। এ নিয়ে নওয়াজ শরিফের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আনা হয়। নওয়াজ শরিফ বরাবরই দুর্নীতির এই অভিযোগকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত বলে দাবি করে আসছেন। আদালতের রায়ে বলা হয়েছে, ফ্ল্যাট কেনার অর্থের বৈধ উৎস দেখাতে ব্যর্থ হয়েছেন নওয়াজ। আদালত পিতা-কন্যার পাশাপাশি মরিয়মের স্বামী ক্যাপ্টেন সফদারকে এক বছরের কারাদন্ড দেয়। কারাদন্ডের পাশাপাশি নওয়াজকে ৮০ লাখ ব্রিটিশ পাউন্ড ও মরিয়মকে ২০ লাখ ব্রিটিশ পাউন্ড জরিমানা করা হয়।
কুলসুমের জন্য দোয়া কামনা
অসুস্থ স্ত্রী কুলসুম নওয়াজের সুস্থতায় সবার কাছে দোয়া চেয়ে ভোটারদের উদ্দেশে ধারণকৃত ওই অডিওবার্তায় নওয়াজ বলেন, জেলে আসার আগে তিনি তার স্ত্রী কুলসুম নওয়াজকে খুব গুরুতর অবস্থায় ফেলে এসেছেন। ‘যত সময় আমি জেলে আছি, আমি সবার কাছে অনুরোধ করবো আমার স্ত্রীর স্বাস্থ্যের জন্য দোয়া করবেন’।
হাইকোর্টে আপিল
এদিকে পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ, তার মেয়ে মরিয়ম নওয়াজ ও জামাতা ক্যাপ্টেন (অব) মোহাম্মদ সফদার তাদের দন্ডাদেশের বিরুদ্ধে সোমবার হাইকোর্টে আপিল করেছেন। নওয়াজ শরীফের পক্ষ থেকে ৩টি ও মরিয়ম ও সফদারের পক্ষ থেকে দু’টি করে মোট ৭টি পৃথক আবেদন করা হয়েছে।
নওয়াজ শরীফের আইনজীবী খাজা হারিস বলেন, জাতীয় জবাবদিহিতা ব্যুরো (এনএবি) বলেছে, নওয়াজ শরীফ তার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত অর্থ দিয়ে অ্যাভেনফিল্ড ফ্ল্যাটগুলো কিনেছেন। কিন্তু তারা ক্রয়কালীন সময়ে ফ্ল্যাটের মূল্য কত ছিল তা বলতে পারেনি। সে সাথে লন্ডনের সম্পত্তি যে নওয়াজের তারও কোনো প্রমাণ দাখিল করেনি।
কেপির রাজনীতিতে পরিবর্তন
পাকিস্তানের এবারের নির্বাচনে খাইবার পাখতুনখাওয়া (কেপি) প্রদেশের হাজারার রাজনীতিতে পরিবর্তন ঘটেছে। হাজারা দীর্ঘদিন থেকে অতি সম্প্রতি পর্যন্ত পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ -এর ঘাঁটি ছিল। এখান থেকে ন্যাশনাল পার্লামেন্টে ১০ জন ও প্রাদেশিক পার্লামেন্টে ১৭ জন সদস্য নির্বাচিত হয়ে থাকেন। কিন্তু ২০১৩ সালে তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) এ অঞ্চলে প্রবেশ করার পর থেকে চিত্র পাল্টাতে শুরু করে। সে বছর তারা কমপক্ষে ৪টি আসন লাভ করে। এবারের নির্বাচনে এখানে পিএমএল-এন ও পিটিআই-র মধ্যে লড়াই হবে। পিএমএল-এন-র নির্বাচন সমন্বয়কারী মালিক ইমরান বলেন, অবশ্যই লড়্ইা হবে আমাদের ও পিটিআই-র মধ্যে। সূত্র ডন,হুররিয়াত ও সাউথ এশিয়া মনিটর।
অর্থনৈতিক সঙ্কট বাড়ছে
এদিকে জানা গেছে, ২৫ জুলাইয়ের নির্বাচনের পর পাকিস্তানে যে সরকার গঠিত হবে, ৩৭.৭ বিলিয়ন ডলারের বিশাল বাণিজ্য ঘাটতির বোঝা চাপবে তাদের ঘাড়ে। স্টক মার্কেটও সেখানে পড়তির দিকে। সোমবার বছরের মধ্যে স‚চক সর্বনিম্ন ৩৯,২৮৮ পয়েন্টে নেমে দাঁড়িয়েছে। গত সাত মাসে মুদ্রার মানও কমেছে ১৫%।
পাকিস্তানের মুসলিম লিগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) দলীয় সরকারের বিরুদ্ধে একটা বড় সমালোচনা হলো অর্থনৈতিক নীতির ক্ষেত্রে তাদের ব্যার্থতা। তাদের ব্যর্থতার কারণে দেশ অর্থ সঙ্কটের মধ্যে রয়ে গেছে। রয়েছে বিশাল অঙ্কের ঋণও। আর ২০১৭ সালের ডিসেম্বর নাগাদ রুপির মান কমেছে তিন বার।
পাকিস্তানকে নিয়ে আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের (আইএমএফ) এক রিপোর্টে বলা হয়েছে,ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে পাকিস্তানের মধ্যম মেয়াদি সক্ষমতা অনেক কমে গেছে। বাইরের এবং আর্থিক চাহিদা এবং রিজার্ভের পতনের কারণে এই সঙ্কট তৈরি হয়েছে”।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, পাকিস্তানের বাহ্যিক আর্থিক চাহিদা বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ২০১৭ সালে এই চাহিদা ছিল ২১.৫ বিলিয়ন ডলার (জিডিপির ৭.১%)। ২০২৩ সালে এটা বেড়ে ৪৫ বিলিয়ন ডলারে (জিডিপির ৯%) দাঁড়াতে পারে। পরিসংখ্যান বলছে, বর্তমান ঘাটতি প‚রণের জন্য পরবর্তী সরকারের আরেকবার আইএমএফের কাছ থেকে ঋণ নেয়া ছাড়া অন্য কোন উপায় থাকবে না।
অর্থ মন্ত্রণালয় স‚ত্র এশিয়া টাইমসকে বলেছে, চলতি বছরের মে মাসে চীনের কাছ থেকে এক বিলিয়ন ডলার ঋণ নেয়ার ব্যাপারে চুক্তি হয়েছে। এর মাধ্যমে বিদেশী মুদ্রার ঘাটতির চাপটা অনেকাংশে কেটে যাবে। এছাড়া চায়না পাকিস্তান ইকোনমিক করিডোরের (সিপিইসি) জন্য পাকিস্তান চীনা বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে সা¤প্রতিক মাসগুলোতে ৩ বিলিয়ন ডলার ঋণ পেয়েছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা অবশ্য বলেছেন চীনা ঋণ স্বল্পমেয়াদে সমস্যার সমাধান করবে এবং ইসলামাবাদকে দীর্ঘমেয়াদী সমাধান খুঁজতে হবে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সাবেক ফেডারেল সচিব ওয়াকার মাসুদ খান বলেন, “গত দুই বছরে ইসলামাবাদ চীনের কাছ থেকে ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ নিয়েছে। কিন্তু আইএমএফের সহায়তাও জরুরি হয়ে পড়েছে। আর নতুন সরকারকেই এই সিদ্ধান্ত নিতে হবে”।
তিনি বলেন, “মনে হয় আগের সরকার যেন শপথ নিয়েছিল যে তারা আইএমএফের কাছে যাবে না। যদিও জানুয়ারিতে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য তারা না গিয়ে পারতো না। তাদের মধ্যে অনেক ধরনের আর্থিক শৃঙ্খলার অভাব ছিল এবং রেকর্ড জিডিপির ৭০.১% পরিমাণ ঋণ রেখে গেছে তারা”। তিনি আরও বলেন, ভেঙ্গে পড়া ম্যাক্রো-ইকোমনিক কাঠামো ঠিক করাটাই হবে আগামী সরকারের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
একদিকে, পিএমএল-এন সরকার অস্বীকার করেই যাচ্ছিল যে আইএমএফের সহায়তা চেয়েছে তারা। অন্যদিকে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী মিফতাহ ইসমাইল চলতি বছরের এপ্রিলে ওয়াশিংটনে ওয়ার্ল্ড ব্যাংক ও আইএমএফের সাথে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছিলেন।
ক‚টনৈতিক স‚ত্রগুলো নিশ্চিত করেছে যে, ওই সফরের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল নির্বাচনের পর সম্ভাব্য সহায়তা প্যাকেজের শর্তগুলো নিয়ে আলোচনা করা। পিএমএল-এন আশা করছে যে, তারা নির্বাচনে জিতে যাবে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন যে, অর্থ সহায়তার জন্য ওয়াশিংটনের সাথে আলোচনা করেছে ইসলামাবাদ। তিনি আরও বলেন, দেশের আর্থিক পরিস্থিতির অবনতি হলে জঙ্গিরা সেই পরিস্থিতির সুযোগ নিতে পারে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।