Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

থাই গুহা থেকে দু’দিনে উদ্ধার ৮

‘তারা বেশ উৎফুল্ল, বাসিল দিয়ে রান্না ভাত খেতে চেয়েছে’

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১০ জুলাই, ২০১৮, ১২:০০ এএম

থাইল্যান্ডে একটি গুহায় আটকে পড়া দলটির আরো চারজনকে উদ্ধারকারীরা বের করে এনেছেন বিভিন্ন সূত্র বলছে। এ নিয়ে আটকা পড়া ১৩ জনের মধ্যে মোট আট জনকে বের করে আনা হলো।
এরপর দিনের মতো উদ্ধার অভিযান স্থগিত ঘোষণা করা হয় এবং আজ ফের বাকি ৫ জনকে উদ্ধারে তৎপরতা শুরু করা হবে। এর আগে রোববার চার জনকে উদ্ধার করা হয় যারা সবাই এখন হাসপাতালে রয়েছে, তবে তাদের শারীরিক অবস্থা ভালো বলে জানানো হয়। এরপর উদ্ধার অভিযানে প্রায় ১০ ঘন্টার একটি বিরতি দেয়া হয়েছিল। গতকাল সোমবার ফের উদ্ধার অভিযান শুরু হয়। উদ্ধারকারীরা স্ট্রেচারে করে বের করে আনা কিশোরদের অ্যাম্বুলেন্সে তুলছেন বলে দেখা গেছে। সংবাদদাতারা ঘটনাস্থল থেকে জানাচ্ছেন, পুলিশ হেলিকপ্টারে করে উদ্ধারকৃতদের নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। চিয়াং রাই প্রদেশের ওই গুহাটিতে আটকা পড়ে ১২ কিশোর এবং তাদের ফুটবল কোচ দু’সপ্তাহেরও বেশি আগে। উদ্ধার করা কিশোরদের কারো পরিচয়ই এখনো প্রকাশ করা হয়নি এবং তাদের পরিবারের লোকেরাও এখনো তাদের সাথে দেখা করতে পারেননি।
কীভাবে উদ্ধার করা হচ্ছে আটকা পড়া দলটিকে?
গত রোববার রাত থেকে প্রবল বৃষ্টি শুরু হওয়ায় গুহার ভেতরে আটকা পড়াদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছিল। ভারী বৃষ্টির পর গুহার ভেতর পানির উচ্চতা আরও বেড়ে যেতে পারে এমন আশঙ্কায় রোববারই এই উদ্ধার অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। দক্ষ ডুবুরিরা আটকে পড়া কিশোরদের ডুবে যাওয়া সুড়ঙ্গের পানির ভেতর দিয়ে পথ দেখিয়ে গুহার প্রবেশ মুখে নিয়ে আসছেন। প্রত্যেক কিশোরকে পুরো মুখ ঢাকা অক্সিজেন মুখোশ পরতে হচ্ছে। প্রতিজনের সামনে এবং পেছনে দু’জন ডুবুরি থাকছেন গাইড হিসেবে। এরা তাদের এয়ার সিলিন্ডারও বহন করছে।
গুহার যে জায়গায় এই ছেলেরা আটকে পড়েছে, সেখানে যাওয়া এবং সেখান থেকে আবার গুহামুখ পর্যন্ত ফিরে আসতে সবচেয়ে অভিজ্ঞ ডুবুরিরও প্রায় এগারো ঘন্টা সময় লাগছে। এর মধ্যে কিছুটা পথ হাঁটতে হয়, বাকি পথটা পানির ভেতর দিয়ে হেঁটে এবং ডুব সাঁতার দিয়ে এগোতে হয়। অনেক চড়াই-উৎরাই আছে গুহার ভেতরে, অনেক জায়গা পানিতে ডুবে আছে। সেখানে ডুব সাঁতার ছাড়া উপায় নেই। আর এই পুরো যাত্রাটাই হচ্ছে ঘুটঘুটে অন্ধকারের মধ্যে।
সবচেয়ে কঠিন অংশটা মাঝামাঝি জায়গায়। এটিকে একটা টি-জাংশন বলে বর্ণনা করা হচ্ছে। এই জায়গাটা এতটাই সরু যে সেখানে ডুবুরিদের তাদের এয়ার ট্যাঙ্ক খুলে ফেলতে হচ্ছে। এরপর ক্ষণিকের যাত্রাবিরতির জন্য গুহার মধ্যে একটা ক্যাম্প মতো করা হয়েছে। সেখান থেকে বাকীটা পথ পায়ে হেঁটে তাদের গুহামুখে আসতে হচ্ছে। বেরিয়ে আসার পর তাদের সরাসরি নিয়ে যাওয়া হচ্ছে হাসপাতালে।
কেন এত গোপনীয়তা
থাইল্যান্ড থেকে বিবিসির সংবাদদাতা বলছেন, এটা বিস্ময়কর যে, রোববার উদ্ধার হওয়া চারজন কিশোরের বাবা-মাকেও হাসপাতালে নেওয়া হয়নি। স্বজনরাও নিশ্চিত নন যে, ঠিক কোন চারজনকে বের করে আনা হয়েছে। আটকে পড়া এক কিশোরের বাবা বার্তা সংস্থা রয়টরসকে বলেছেন, ‘কোন বাচ্চাদের বের করা হয়েছে, তা আমাদের জানানো হয়নি, আমরা হাসপাতালেও যেতে পারছি না’।
এসব অভাব-অভিযোগ সত্তে¡ও সরকার চুপ। তাদের পক্ষ থেকে শুধু বলা হচ্ছে - ঐ চারজন হাসপাতালে ভালো আছে, সুস্থ আছে। চ্যাং রাই প্রদেশের গভর্নর নারংসাক অসোতানাকর্ন, যিনি এই উদ্ধার তৎপরতার নেতৃত্ব দিচ্ছেন, গতকাল (সোমবার) সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ‘তারা (চারজন) বেশ উৎফুল্ল। সকালে জানিয়েছিল তাদের খিদে লেগেছে, তারা বাসিল দিয়ে রান্না ভাত খেতে চেয়েছে’।
বাসিল পাতা এবং গোশত দিয়ে রান্না ফ্রাইড রাইসকে থাইল্যান্ডে বলা হয় ‘প্যাড ক্রাপাও’। গভর্নর ছাড়াও অন্য কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন হাসপাতালে বাচ্চাগুলো প্যাড ক্রাপাও খেতে চেয়েছে। কেন উদ্ধারকৃতদের বাবা-মায়েদেরও আশপাশে ঘেঁষতে দেওয়া হচ্ছে না - সেই প্রশ্ন করা হলে, গভর্নর অসোতানাকর্ন বলেন, সংক্রমণের ঝুঁকি বিবেচনা করেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
‘সেই ঝুঁকি কাটলেই এ ব্যাপারে ডাক্তারারা সিদ্ধান্ত নেবেন। তখন বাবা-মায়েদের জানালার কাঁচের বাইরে থেকে তাদের ছেলেদের দেখতে দেওয়া হবে’।
কেন নাম-পরিচয় গোপন রাখা হচ্ছে - এই প্রশ্নে তিনি বলেন, এখনও সিংহভাগ বাচ্চাই গুহার ভেতরে আটকে আছে। এ অবস্থায় উদ্ধার হওয়ার নাম-পরিচয় বলা যথার্থ নয়। ‘নেতিবাচক মনোভাব তৈরি হতে পারে’।
কী ধরনের সংক্রমণের ঝুঁকি রয়েছে?
দু’সপ্তাহ ধরে পাহাড়ের গুহার গভীরে প্রায় অন্ধকারে আটকা পড়ে আছে এই কিশোর দলটি। অক্সিজেনের সমস্যা রয়েছে। ছয়দিন আগে সন্ধানের আগ পর্যন্ত প্রায় অনাহারেই ছিল তারা। এই অবস্থায় কোন ধরনের সংক্রমণের ঝুঁকিতে তারা পড়তে পারে?
অভিযাত্রীদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি বিষয়ে অভিজ্ঞ ব্রিটেনের চিকিৎসক ড অ্যালেক্স রো বলেন, ঐ ১২ জন কিশোর দু’ধরনের সংক্রমণের ঝুঁকিতে থাকবে। এক, গুহার ভেতরের স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়া এবং বাদুড় জাতীয় প্রাণীর শরীর থেকে ছড়ানো জীবাণু থেকে ফুসফুসে বিপজ্জনক সংক্রমণ হতে পারে। সেটা হলে শ্বাসকষ্ট হয়। দুই, গুহার ভেতরে সাধারণত ইঁদুরের উপদ্রব থাকে। ইঁদুরের প্রস্রাব থেকে ছড়ানো জীবাণুর কারণে জন্ডিস এবং লিভারের সমস্যা হতে পারে। এই উদ্ধার তৎপরতার খবরাখবর দিতে সারা পৃথিবীর প্রায় হাজার-খানেক সাংবাদিক গিয়ে হাজির হয়েছেন থাইল্যান্ডে। এই বাচ্চাদের এবং তাদের পরিবারের প্রতি ‘সম্মান’ দেখানোর জন্য সাংবাদিকদের অনুরোধ করেছেন গভর্নর অসোতানাকর্ন।
কিছু সাংবাদিকের আচরণ নিয়ে অভিযোগ করেছেন থাই কর্মকর্তারা। কোনো কোনা সাংবাদিক উদ্ধার-কর্মীদের ওয়ারলেস কথোপকথনে গোপনে আড়ি পাতছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। কারো কারো বিরুদ্ধে ভুল খবর দেওয়ার কথাও উঠেছে। সাংবাদিকদের ড্রোন ব্যবহারের কারণে উদ্ধারকাজে ব্যবহৃত হেলিকপ্টার ওঠা-নামায় অসুবিধা হচ্ছে - এমন অভিযোগও কর্মকর্তারা করেছেন। সূত্র : রয়টার্স ও বিবিসি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: থাইল্যান্ড


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ