পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
ব্যাংকিং খাতে গ্রাহকের আমানতের সুদ এবং শিল্পঋণের সুদের হার নিয়ে চলছে নানা ধরনের কৌশল ও চাতুরি। সরকারি সিদ্ধান্তে ১ জুলাই থেকে শিল্প ঋণের সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনার ঘোষণা দেয়া হলেও তা নিয়ে চলছে টালবাহানা। কোনো ব্যাংক সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়েছে আবার কোনো ব্যাংক নামানোর নামে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করছে। সিঙ্গেল ডিজিট দেখিয়ে নানা ধরনের কমিশন, ফি, চার্জ, হিসাব খোলা, হিসাব পরিচালনা, কাগজপত্র তৈরি গ্রাহকের সঙ্গে যোগাযোগের ফিসহ ভ্যাট-ট্যাক্সের খরচ ঋণের সঙ্গে যুক্ত করা হচ্ছে। এছাড়া ক্ষুদ্র বা ভোক্তাঋণের বিপরীতে তদারকি এজেন্সি কমিশন নিচ্ছে ১ থেকে ২ শতাংশ। কোনো ঋণ আগাম পরিশোধ করে দিলে ক্লোজিং চার্জ নিচ্ছে ১ শতাংশ হারে। ব্যাংক ভেদে ঋণ নিতে গেলে ১ থেকে দেড় শতাংশ হারে ঋণ প্রসেসিং ফি দিতে হচ্ছে। যেমন ১০ কোটি টাকা ঋণ নিলে প্রসেসিং ফি দিতে হচ্ছে ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা। এসব মিলিয়ে দেখা যায়, ব্যাংকঋণ সিঙ্গেল ডিজিট ছাড়িয়ে ডাবল ডিজিটে চলে যায়। অর্থাৎ ব্যাংকঋণ নেয়ার ক্ষেত্রে সিঙ্গেল ডিজিটের কথা বলা হলেও বিভিন্ন চার্জের খরচ মিটাতে গিয়ে গ্রাহককে ডাবল ডিজিটেরই সুদ দিতে হচ্ছে। এটি একটি শুভংকরের ফাঁকি। অন্যদিকে আমানতকারিদের আমানতের সুদের হার ৬ শতাংশ করা হলেও বিভিন্ন চার্জ কাটার ফলে তা ৩ থেকে ৪ শতাংশে নেমে আসছে। ব্যাংকগুলোর এই চাতুরিপূর্ণ কার্যক্রমের কারণে ক্ষুদ্র থেকে বৃহৎ আমানতকারীর অনেকে ব্যাংক থেকে তাদের আমানত উঠিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। তারা সঞ্চয়পত্র কেনার দিকে ঝুঁকেছে। সেখানে সুদের হার ১১ শতাংশ। এর ফলে ব্যাংকগুলোতে আমানত সংকট বা তারল্য সংকট দিতে পারে।
বিগত কয়েক বছর ধরে ব্যাংকিং খাতে নানা কেলেংকারির কারণে এক ধরনের অস্থিরতা বিরাজ করছে। দেশে বিনিয়োগের হার কমে যাওয়ায় ব্যাংকগুলোতে অলস অর্থ পড়ে থাকার খবর প্রকাশিত হয়েছে। আবার কোনো ব্যাংক অর্থ লোপাটের কারণে সংকটে পড়েছে। সরকারি ব্যাংকে ভর্তুকি হিসেবে সরকারকে দুই হাজার কোটি টাকাও দিতে হয়েছে, যা নজিরবিহীন। সোনালি ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক, ফারমার্স ব্যাংকসহ অন্যান্য ব্যাংকে বৃহৎ অর্থ লোপাটের কারণে ব্যাংকিং খাত টালমাটাল। সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাংকের ওপর আস্থা কমছে। অন্যদিকে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসায়ী সংগঠন ও শিল্পদ্যোক্তারা ব্যাংকঋণের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনার দাবি জানিয়ে আসছিল। এতে বিনিয়োগ বৃদ্ধির পাশাপাশি অর্থনীতি গতিশীল হবে বলে তারা মতামত ব্যক্ত করেন। বাজেট ঘোষণার আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবনে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামন্ডলীর এক সভায় ব্যাংকঋণের সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনার নির্দেশ দেন। ঐ সভায় এফসিসিআই-এর সাবেক সভাপতি ও স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের চেয়ারম্যান কাজী আকরাম উদ্দিন আহমদ উপস্থিত ছিলেন। পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে এ বিষয়ে উদ্যোগ নেয়ার জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়া হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক নানা ধরনের বিচার-বিশ্লেষণ ও ব্যাংকের এমডিদের সঙ্গে বৈঠক করে এই হার কমানোর উদ্যোগ নেয়। এ প্রেক্ষিতে, ২০ জুন বেসরকারি ব্যাংকের উদ্যোক্তা পরিচালকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি)-এর সভায় সব ঋণের সর্বোচ্চ সুদের হার ৯ শতাংশে এবং আমানতের সুদ ৬ শতাংশে নামিয়ে আনার ঘোষণা দেয়া হয়। সুদের এই হার ১ জুলাই থেকে কার্যকর করার কথা জানানো হয়। দেখা যাচ্ছে, সিদ্ধান্ত মোতাবেক বাস্তবে অধিকাংশ ব্যাংক গ্রাহকদের সাথে লেনদেনের ক্ষেত্রে তা করছে না। নানা ছলচাতুরির আশ্রয় নিচ্ছে। কাগজে-কলমে আমানত ও ঋণের নতুন সুদের হার দেখালেও বিভিন্ন চার্জের অজুহাতে কৌশলে সুদের হার আগের মতোই রেখে দিচ্ছে। এর ফলে আমানতকারী এবং ঋণ গ্রহীতারা দিন দিন আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। সাধারণ আমানতকারী থেকে শুরু করে বড় বড় কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো হতাশ হয়ে ব্যাংক থেকে শত শত কোটি টাকার আমানত উঠিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। সাধারণত ব্যাংকে আমানতকারীরা অর্থ জমা রাখে লাভ পাওয়ার জন্য। তারা যখন দেখছে, ব্যাংকে অর্থ জমা রাখলে বিভিন্ন চার্জের নামে অর্থ কাটার ফলে প্রকৃত সুদ পাচ্ছে না, বরং তা কমে যাচ্ছে, তাহলে তারা কেন ব্যাংকে অর্থ জমা রাখবে? তারা যেখানে বেশি লাভ পাবে, সেখানে যাবে। তারা এখন সঞ্চয়পত্র কেনার দিকে ঝুঁকেছে। এতে ব্যাংকগুলো যেমন আমানত সংকটে পড়বে, তেমনি বিনিয়োগ ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব পড়াসহ অর্থ পাচারেরও শঙ্কা দেখা দেবে। ব্যাংকিং খাতে নতুন করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে। ব্যাংক যদি আমানত সংকটেই পড়ে, তবে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ হবে কিভাবে?
আমরা মনে করি, সরকারি সিদ্ধান্ত মোতাবেক আমানত ও ঋণের ক্ষেত্রে যে নতুন সুদের হার নির্ধারণ করা হয়েছে, তা যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। গ্রাহকদের যা প্রাপ্য তাই দিতে হবে। এ নিয়ে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করা প্রতারণার শামিল। সরকার হয়তো সামনে জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে নতুন এই সুদের হার নির্ধারণ করেছে। তাতে যদি চাতুরিতা থাকে, তবে ব্যাংকের ওপর থেকে মানুষের আস্থা যেমন নষ্ট হবে, তেমনি সরকারের ভাবমর্যাদাও ক্ষুন্ন হবে। সিদ্ধান্ত যখন নিতে হবে, তখন তা গ্রাহকের সুবিধা ও কল্যাণের কথা চিন্তা করে পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়ন করা উচিত। লোক দেখানো পদক্ষেপ কখনোই মঙ্গলকর হতে পারে না। অত্যন্ত সম্ভাবনাময় ব্যাংকিং খাতটি যাতে ধ্বংসের মুখে না পড়ে, এজন্য কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। যে কোনো মূল্যে ব্যাংক খাতে মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস ধরে রাখতে হবে। কোনো ধরনের ছলচাতুরির আশ্রয় নেয়া যাবে না। এ ব্যাপারে অর্থ মন্ত্রণালয়কে অবিলম্বে পরিস্থিতি মূল্যায়নে বৈঠকে বসা উচিত। এরকম হ য ব রল অবস্থায় চলতে পারে না। জনকল্যাণ ও বৃহত্তর অর্থনৈতিক স্বার্থে সিদ্ধান্ত নিতে হবে এবং তা বাস্তবায়নে তত্ত¡াবধান ও তদারকি করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।