পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
পরিবহন শ্রমিক সংগঠনগুলোর আপত্তি সত্তে¡ও নির্বাচনকে সামনে রেখে ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক ও রিকশাকে বৈধতা দিতে যাচ্ছে সরকার। সংগঠনগুলোর নেতৃবৃন্দ বলছেন, অবৈধ এ বাহনটির অনুমোদন দিলে সড়ক দুর্ঘটনা বৃদ্ধির পাশাপাশি এ খাতে অরাজকতা সৃষ্টি হবে। এদিকে অনুমোদন ছাড়াই রাজধানীসহ সারাদেশে এবং সড়ক-মহাসড়কে অবৈধ এ বাহনটির সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। এতে প্রতিদিনই সড়ক-মহাসড়কসহ সারাদেশেই দুর্ঘটনায় প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে। অথচ এই বাহনকে ২০১৫ সালের ১ আগস্ট দেশের ২২টি মহাসড়কে চলাচল নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার। তবে সেই নিষেধাজ্ঞা অকার্যকর ও অমান্য করেই বিপজ্জনক এ বাহনটি চলছে। পরিবহন শ্রমিক সংগঠনগুলো সড়ক-মহাসড়কে এই বাহন চলাচল নিষিদ্ধ করার দাবীতে বিভিন্ন সময়ে আন্দোলন সংগ্রামও করে। তাতে কোন কাজ হয়নি। বর্তমানে সারাদেশে প্রায় ১০ লাখ ইজিবাইক ও ব্যাটারিচালিত রিকশা চলছে। শুধু রাজধানীতে চলছে ৫০ হাজার এবং এর চারপাশে চলছে প্রায় দেড় লাখ। অবৈধ এসব বাহন চলাচলের নেপথ্যে রয়েছে ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী নেতারা। তারা মোটা অংকের চাঁদার বিনিময়ে এগুলোকে সড়ক-মহাসড়কে চলাচলের সুযোগ করে দিচ্ছে। এর ফলে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা, মহাসড়কে সৃষ্টি হচ্ছে যানজট এবং অন্যান্য যানবাহন স্বাভাবিক গতিতে চলতে পারছে না।
যেখানে উন্নয়নশীল দেশসহ উন্নত বিশ্ব যাতায়াত ব্যবস্থা আরও কীভাবে দ্রæত ও নিরাপদ করা যায় তার অবিরাম চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সেখানে আমাদের সড়ক-মহাসড়কে চলছে ধীরগতির যান্ত্রিক-অযান্ত্রিক যানবাহন। বিমানের গতি ট্রেনে আনার জন্য চীন-জাপান যখন চেষ্টা চালাচ্ছে এবং বিস্ময়কর সাফল্য দেখাচ্ছে তখন আমরা গতিহীনতার বৃত্তে আটকে পড়ছি। গতি উন্নতির উপায়। তাই উন্নত দেশগুলো ইন্টারনেটর গতি ফোর জি থেকে বাড়িয়ে আরও কত উপরে নেয়া যায়, তা নিয়ে প্রতিনিয়ত কার্যকর ব্যবস্থা এবং পরিকল্পনা করছে। আর আমাদের দেশ সেখানে চলছে উল্টো পথে। এখানে যাতায়াত ব্যবস্থা দ্রæত করার পরিবর্তে কীভাবে আরও ধীর করা যায়, এমন আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত গ্রহণের চিন্তাভাবনা চলছে। দেশের অর্থনীতির মূল প্রাণকেন্দ্র রাজধানীতে এমনিতেই পায়ে চালিত ধীর গতির রিকশার কারণে প্রতিনিয়ত যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে, তার সঙ্গে ব্যাটারি চালিত ইজিবাইক যুক্ত হয়ে তা ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। এই বাহন যে কতটা ক্ষতিকর তা বলে শেষ করা যাবে না। সড়ক-মহাসড়ক দখল করে চলাচলতো করছেই, দুর্ঘটনার কবলে পড়ে মানুষের প্রাণও হরণ করছে। অর্থনৈতিক দিক বিবেচনা করলে, এ ক্ষতি অপূরণীয়। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সারাদেশে ১০ লাখ ইজিবাইকের ৪০ লাখ ব্যাটারি রয়েছে। এগুলো বিদ্যুতের মাধ্যমে চার্জ করতে হয়। তাও আবার চুরি করে। ফলে একদিকে যেমন শত শত মেগাওয়াট বিদ্যুৎ অপচয় হচ্ছে, অন্যদিকে লোডশেডিংসহ শত শত কোটি টাকা ক্ষতি হচ্ছে। আবার এসব ব্যাটারি যখন নষ্ট হয়ে যায় সেগুলো পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়ে উঠছে। এগুলোর রেডিয়েশন পরিবেশকে বিষিয়ে তুলছে। মানুষ স্বাস্থ্যগত ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে। পরিবহন সংগঠন থেকে শুরু করে নগরবিদরা বরাবরই ইজিবাইকের বিরোধিতা করে আসছেন। তাদের এ বিরোধিতায় সরকার কান দিচ্ছে না। বরং নতুন করে এগুলোর অনুমোদন দেয়ার পক্ষে। বলার অপেক্ষা রাখে না, এ অনুমোদন দেয়া হচ্ছে আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে। যেহেতু এগুলোর নেপথ্যে প্রভাবশালী নেতারা জড়িত, তাই তাদের সুবিধা দেয়ার জন্যই এমন সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। অথচ সাময়িক এ সুবিধার জন্য দেশের পরিবহন খাতকে যে কী ভয়াবহ পরিণতির দিকে ঠেলে দিচ্ছে, তা বিবেচনা করছে না। গুটিকয় নেতার জন্য দেশের এত বড় ক্ষতি কীভাবে সম্ভব! সরকার ক্রমাগত উন্নয়নের কথা বলছে, অথচ উন্নয়নের জন্য যে যাতায়াত ব্যবস্থা মসৃন রাখতে হয়, তে গুরুত্ব দিচ্ছে না। গুরুত্ব দিলে এ ধরনের চিন্তাই মাথায় আসার কথা নয়। এতে সরকারের দূরদর্শীতার অভাব রয়েছে বলে প্রতীয়মাণ হচ্ছে। কিছু লোকের সুবিধা দেয়ার জন্য যাতায়াত ব্যবস্থাকে স্থবির করে দেয়ার পথই অবলম্বন করছে। উল্লেখ করা প্রয়োজন, প্রতিদিন এবং প্রতিবছর যানজটে অর্থনীতির কী পরিমাণ ক্ষতি হচ্ছে, তা বিশ্বব্যাংক থেকে শুরু করে বিভিন্ন দেশি-বিদেশি সংস্থা প্রায় প্রতিনিয়তই পরিসংখ্যান প্রকাশ করছে। গত বৃহস্পতিবার বিশ্বব্যাংক এক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে বলেছে, ঢাকায় যানজটে প্রতিদিন নষ্ট হচ্ছে ৩২ লাখ কর্মঘন্টা। গত ১০ বছরে গাড়ির গড় গতি কমেছে ঘন্টায় ২১ কিলোমিটার থেকে ৭ কিলোমিটারে। যেখানে পায়ে হেঁটে চলার গতি ঘন্টায় ৫ কিলোমিটার। এ পরিসংখ্যান থেকে বোঝা যায়, রাজধানী কীভাবে দিন দিন স্থবির হয়ে যাচ্ছে। একটা সময় হয়তো চলাচলের জন্য গাড়ির আর প্রয়োজন পড়বে না। মানুষ পায়ে ছোঁটেই যাতায়াত করতে বাধ্য হবে। কোনো কোনো হিসাবে, যানজটে প্রতিদিন নষ্ট হয় ৮০ লাখ কর্মঘন্টা। যানজটে পড়ে মানুষের শারিরীক, মানসিক ও আর্থিক ক্ষতিও হচ্ছে। যেখানে যানজটে রাজধানীসহ সড়ক-মহাসড়ক অচল হয়ে থাকে, সেখানে নতুন করে ইজিবাইকের মতো ক্ষতিকর বাহন যুক্ত করে পুরো যানবাহন চলাচল ব্যবস্থাকেই অচল করে দেয়ার পদক্ষেপ নেয়া আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত ছাড়া আর কী হতে পারে!
পরিবহন শ্রমিক সংগঠন ও নগরবিদরা যেখানে পরিবহন খাতের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক ও থ্রি হুইলারের ঘোর বিরোধিতা করছে, আমরা মনে করি, সরকারকে তা বিবেচনায় নিতে হবে। তাছাড়া মটর অধ্যাদেশ ১৯৮৩ অনুযায়ী ব্যাটারিচালিত যানবাহনের অনুমোদন দেয়ার সুযোগ নেই। এখন সরকার যদি তা পরিবর্তন করে নতুন আইনে অনুমোদন দেয়, তবে তা যাতায়াত ব্যবস্থাকে স্থবির করে দেশের উন্নতি ও অগ্রগতির অন্তরায় হয়ে দাঁড়াবে। দেশের পরিবহন খাত সুশৃঙ্খল, যানজটমুক্ত এবং দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণ করতে এ ধরনের সিদ্ধান্ত থেকে সরকারকে সরে আসতে হবে। নতুন করে অনুমোদনের তো প্রশ্নই আসে না, বরং বিদ্যমান যেসব ইজিবাইক ও থ্রি হুইলার নগর ও সড়ক-মহাসড়কে চলছে তা সম্পূর্ন রূপে বন্ধ করে দিতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।