Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জনবসতিপূর্ণ অঞ্চলে শিল্পাঞ্চল নয়

| প্রকাশের সময় : ৫ জুলাই, ২০১৮, ১২:০৩ এএম | আপডেট : ৭:৪২ পিএম, ৪ জুলাই, ২০১৮

রাজধানী ঢাকা ও বন্দর নগরী চট্টগ্রামসহ দেশের বিভাগীয় শহরগুলো এখন বড় ধরনের পরিবেশগত বিপর্যয়ের সম্মুখীন। মানুষের মধ্যে পরিবেশগত সচেতনতা বাড়লেও সামগ্রিকভাবে পরিবেশগত বিপর্যয় রোধ করা যাচ্ছেনা। এহেন বাস্তবতায় জনবসতিপূর্ণ এলাকায় ঢালাওভাবে শিল্পাঞ্চল না করার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত ২৭ মে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)’র পরিচালনা পরিষদের ৬ষ্ঠ সভায় মোট ২৮টি নতুন অর্থনৈতিক অঞ্চল অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হলেও যাচাই বাছাই করে ৪টি সরকারী এবং ৬টি বেসরকারী মোট ১০টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। অর্থনৈতিক অঞ্চল ও শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার অনুমোদনের ক্ষেত্রে একাধিক ফসলি জমি এবং বসতবাড়ি আছে এমন স্থান পরিহারের নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তবে নগরী ও জনপদের বসবাসযোগ্যতা এবং পরিবেশগত বিপর্যয় রক্ষায় প্রধানমন্ত্রীর এই নির্দেশনা ছাড়াও দেশে নিশ্চয়ই এ সংক্রান্ত আইন ও নীতিমালা আছে। সাম্প্রতিক সময়ে এ সম্পর্কে নতুন আইন প্রণয়ণের দাবীও উঠে এসেছে। সরকারের পক্ষ থেকেও জনবসতি ও ফসলি জমি রক্ষায় আরো কঠোর ও সুনির্দ্দিষ্ট আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলা হচ্ছে। বিশেষত: ঢাকা নগরীর বাসযোগ্যতা ও পরিবেশগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কথিত উদ্যোগ ও পরিকল্পনাগুলোর সঠিক বাস্তবায়ন দেখতে চায় নগরবাসি।
নতুন নতুন শিল্প ও অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার মাধ্যমে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরী হয়। তবে অপরিকল্পিত শিল্পায়ণ ও নগরায়ণ বাস্তু ও জীবনমানের উপর শেষাবধি কি ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে বর্তমান ঢাকা ও চট্টগ্রাম নগরী তার বাস্তব উদাহরণ। গত ৫-৬ বছর ধরেই ঢাকা শহর বিশ্বের বসবাসের অযোগ্য শহরগুলোর তালিকার প্রথম দিকে স্থান পাচ্ছে। ঢাকার চারপাশের নদনদী, অর্ধশতাধিক খাল, শত শত পুকুর ও জলাশয় ভরাট করে অপরিকল্পিতভাবে আবাসন এবং শিল্প কারখানা গড়ে তোলার খেসারত দিচ্ছি আমরা। বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, বালু ও তুরাগ নদীর পানি স্বাভাবিক গুণাগুণ, পরিবেশগত বৈশিষ্ট্য ও উপযোগিতা হারিয়েছে বহু আগেই। এসব নদী পুনরুদ্ধার করার পাশাপাশি তার পরিবেশগত সুরক্ষা নিশ্চিত করতে গত দুই দশকে নানা উদ্যোগ ও পরিকল্পনার আওতায় শত শত কোটি টাকা ব্যয় করা করা হলেও অবস্থার তেমন কোন উন্নতি হয়নি। এই ব্যর্থতার মূল কারণ হচ্ছে, নদীর উপর দখলদার উচ্ছেদের সাথে সাথে পুনরুদ্ধারকৃত জায়গা সংরক্ষণে কার্যকর উদ্যোগ নিতে কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা এবং নগরীর অভ্যন্তরে গড়ে ওঠা দূষণ সৃষ্টিকারী শিল্প কারখানা সরিয়ে বিকেন্দ্রিকরণের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ বাস্তবায়নে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সীমাহীন ব্যর্থতা।
অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও শিল্পায়ণের ফলে একদিকে বড় বড় শহরগুলো পরিবেশগত ভারসাম্য বিনষ্ট হয়ে বসবাসযোগ্যতা হারাচ্ছে, অন্যদিকে দেশের বিশাল জনগোষ্ঠির জন্য অপ্রতুল ফসলি জমি থেকে প্রতিবছর বিপুল পরিমান জমি অনাবাদি খাতে চলে যাচ্ছে। গত চারদশকে এভাবে প্রায় ৫০ লাখ একর কৃষিজমি অকৃষিখাতে চলে গেছে। সামগ্রিক হিসাবে তা শতকরা ২০ ভাগের বেশী। কৃষিজমি সুরক্ষায় আইনগত ব্যবস্থা যর্থাথভাবে কার্যকর না থাকায় দেশে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের নামে যত্রতত্র শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপন, ইপিজেড ও অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার মাধ্যমে একই সাথে জনবসতি ও কৃষিব্যবস্থাকে বিপর্যস্ত করে তোলা হয়েছে। ফসলি জমি রক্ষা এবং পরিকল্পিত নগরায়ণে প্রধানমন্ত্রীকে বরাবরই সোচ্চার দেখা গেলেও এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোর দায়িত্বহীন ভ‚মিকার কারণে প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছার যথাযথ বাস্তবায়ণ ঘটেনি। আমাদের দেশের সামগ্রিক বাস্তবতায় শিল্পের বিকেন্দ্রিকরণ একটি বহুকথিত প্রত্যাশা। অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও শিল্পায়ণের কারণে ঢাকায় ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাপ কমিয়ে আনা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এরফলে যানজট থেকে শুরু করে গ্যাস, বিদ্যুত,পানিসহ নাগরিক জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই অতিরিক্ত চাপ ও বিশৃঙ্খলা দেখা দিচ্ছে। নগরীর অভ্যন্তরে গড়ে ওঠা নানা ধরনের শিল্প কারখানা শহরের বাইরে পরিকল্পিত ব্যবস্থার অধীনে সরিয়ে নেয়া হলে নগরীর স্বাভাবিক সৌন্দর্য ও পরিবেশগত ভারসাম্য ফিরিয়ে আনা অসম্ভব নয়। জনবসতিপূর্ণ অঞ্চলে শিল্পাঞ্চল না করতে প্রধানমন্ত্রীর সময়োপযোগি নির্দেশনা প্রশংসনীয়। তবে এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে শুধুমাত্র সাময়িক নির্দেশনাই যথেষ্ট নয়, প্রয়োজন স্থায়ী আইনগত ব্যবস্থা। ফসলি জমি রক্ষা, শহরে ও গ্রামীন জনপদের পরিবেশগত সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সামগ্রিকভাবে সমন্বিত জাতীয় উদ্যোগ ও মহাপরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ণ করতে হবে। সেই সঙ্গে ঢাকা ও চট্টগ্রামের মত জনবহুল নগরীতে শিল্পকারখানার নামে যে জঞ্জাল গড়ে উঠেছে সর্বাগ্রে তা অপসারণ বা স্থানান্তর করতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন